গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়া ভালো নাকি ক্ষতিকর বিস্তারিত জেনে নিন
অনেকে গরম থেকে ঘরে ফিরেই ফ্রিজ থেকে বরফজমা ঠান্ডা পানি খাওয়া শুরু করেন। আপনারা কি জানেন ? ঠান্ডা পানি পান করা কতটা ক্ষতিকর ? আজকের আর্টিকেলটি পড়ে জেনে নিন।
প্রতিদিন বাড়ছে তাপমাত্রা। বাড়ছে গরম। এ সময় পিপাসায় গলা শুকিয়ে যায়। পানির চাহিদা বেশি থাকে। নরমাল পানির চেয়ে ফ্রিজের পানির প্রতি চাহিদা বেশি থাকে। পাওয়া মাত্রই খাওয়া শুরু করে দেন অনেকেই। কিন্তু এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
সূচীপত্রঃ
ঠান্ডা পানি পানের উপকারিতা ও অপকারিতা
ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার উপকারিতা
ঠান্ডা পানি পান কী সত্যিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়
ঈষদুষ্ণ পানি পান করুন
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
লেখকের শেষকথাঃ
ঠান্ডা পানি পানের উপকারিতা ও অপকারিতা
মেটাবলিজম বাড়ায়
ঠান্ডা পানি বিপাকক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। বেশ কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ঠান্ডা পানি পান করার ফলে বিপাকীয় হারে সাময়িক উন্নতি হতে পারে। আমাদের শরীরঅভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার সঙ্গে মিলে ঠান্ডা পানির তাপমাত্রা বাড়াতে কাজ করার সময় কিছু অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরে। এটি পাচনতন্ত্রের জন্য একটি ছোট ওয়ার্কআউটের মতো!
হাইড্রেশনের জন্য আদর্শ
ঠান্ডা পানি তুলনামূলক বেশি দ্রুত নিঃশেষ হয়, যার ফলে হাইড্রেশনের মাত্রা উন্নত হয়। শরীরের সামগ্রিক কার্যকারিতার জন্য সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি নেই
জার্নাল অফ হিউম্যান নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিক্স অনুসারে, ঠান্ডা পানি পান করলে তা সারাদিনে কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণে সহায়তা করে ফলে ওজন কমানো সহজ হয়। পানি ঠান্ডা, উষ্ণ বা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় যাই হোক না কেন, এতে কোনো ক্যালোরি নেই। অতএব, এমনকি যদি আপনি ঠান্ডা পানি বেছে নেন, আপনার ওজন বাড়বে না।
তাপ মোকাবিলা করে
গরমের দিনে বা তীব্র ব্যায়ামের পরে, ঠান্ডা পানিতে চুমুক দিলে তা আপনাকে সতেজ করবে। ঠান্ডা পানি আপনার শরীরের তাপমাত্রা ও হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে। এই দ্রুত শীতল প্রভাব দ্রুত সতেজ করে, ঠান্ডা পানিকে হাইড্রেশন হিরো করে তোলে।
ব্যথা উপশম করে
মাথাব্যথা বা পেশী ব্যথার কারণে সৃষ্ট অস্বস্তি কমাতে ঠান্ডা পানি আপনাকে সাহায্য করতে পারে। ঠান্ডা তাপমাত্রা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করতে, প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ঠান্ডা পানি পানের অপকারিতা
হজমের সমস্যা
ঠান্ডা পানি পাচনতন্ত্রকে সংকুচিত করতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনার হজমশক্তি সংবেদনশীল হয়। ঠান্ডা পানি পাকস্থলীর রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে, সম্ভাব্যভাবে হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে
ঠান্ডা পানি কিডনিকে দুর্বল করে দিতে পারে। এই পরিস্থিতি এড়াতে খাবারের সঙ্গে ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি তৈলাক্ত খাবারকে শক্ত করতে পারে, সেইসঙ্গে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
ঠান্ডার সমস্যা বাড়াতে পারে
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা পরামর্শ দেয় যে, ঠান্ডা পানি পান করলে শ্লেষ্মা ঘন হতে পারে। সুতরাং, আপনি যদি সর্দি বা কাশির সমস্যা থাকে তবে ঠান্ডা পানি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হৃদস্পন্দন কমিয়ে দেয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা পানি পান হৃদস্পন্দন কমিয়ে দিতে পারে। তাইওয়ানের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা পানি পান করা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। তাই বিপদ থেকে বাঁচতে ঠান্ডা পানি পানের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা রয়েছে, তারা ঠান্ডা পানি পুরোপুরি এড়িয়ে চলবেন।
শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যহীনতা
শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করার কারণে দেহের তাপমাত্রা তখন আর ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটে থাকে না। তখন শরীরে টনসিলের সমস্যা, মাইগ্রেনের সমস্যা, দাতে ব্যথা, খাদ্যনালির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া সর্দি, কাশি বা জ্বরের ঝুঁকি বেড়ে যায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে।
ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার উপকারিতা
এই প্রচন্ড গরমে যখন বাইরে বের হওয়াই কঠিন। তখন গরমের হাত থেকে বাচতে একটু পর পর বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে মুখের ত্বক ঠিক রাখার জন্য ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সম্ভব হলে যতবার পানি পান করবেন ততোবার মুখ ধুয়ে নিন এতে করে আপনার মুখের ত্বক সুস্থ থাকবে এবং আপনি আরাম অনুভব করবেন।
মুখের ফোলাভাব কমায়
ঘুম থেকে ওঠার পর এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেকেরই মুখ ফোলা ফোলা লাগে। অনেকের আবার চোখের নিচে ফোলা থাকে। কারও ফুলে থাকে গাল। এই ফোলাভাব দূর করার জন্য ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। এতে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক থাকবে। ভালো থাকবে ত্বক
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে চাইলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। শীতের সময়ে ত্বক ভালো রাখতে ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি। সেইসঙ্গে ক্লিনজার ব্যবহারের পর সব সময় টোনার ব্যবহার করবেন। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হবে।
ব্রণ দূর করে
মুখে ব্রণ থাকলে কখনো গরম পানিতে মুখ পরিষ্কার করবেন না। এর বদলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকার পাশাপাশি সেবাম উৎপাদনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে কমবে ব্রণের সমস্যা। সেইসঙ্গে পান করুন প্রচুর পানি ও খান তাজা ফল, শাক-সবজি। এতে ত্বক ভালো থাকবে।
অতিরিক্ত গরম পানিতে মুখ পরিষ্কার করলে কী হয়?
শীতে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়। এসময় ত্বক আর্দ্রতা হারাতে থাকে, লালচে হয়ে যায়, ব়্যাশও হতে পারে। শীতে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করা জরুরি। এসময় অতিরিক্ত গরম পানিতে মুখ পরিষ্কার করলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়। জার্নাল অফ ক্লিনিকাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ বিষয়ে কিছু তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ত্বকে দীর্ঘক্ষণ গরম পানি ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরম পানি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
ঠান্ডা পানি পান কী সত্যিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর ?
ঠাণ্ডা পানি পানে সহজে ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে। ফলে টনসিল ফুলে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি জ্বর, কাশি ও শরীরে ব্যথা হতে পারে। মাইগ্রেনের সমস্যা মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে তোলার জন্য ঠাণ্ডা পানি পান একটি বড় অনুঘটক।
গরমে ঠান্ডা পানি পান করা যেতেই পারে। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করা শরীরের জন্য খারাপ হতে পারে। ঠান্ডা পানি হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। গ্রীষ্মের গরমের কথা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু গরম বলে নয়, যেকোনো সময় ঠান্ডা পানি খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।
এমন তীব্র দাবদাহে একটু প্রশান্তির খোঁজে সকলেই ঠাণ্ডা পানি গলায় ঢালছেন। আবার অনেকে গরম থেকে ঘরে ফিরেই হুটহাট করে একেবারে ফ্রিজ থেকে বের করেই বরফজমা ঠান্ডা পানি খাওয়া শুরু করেন। তবে ঠান্ডা পানি পান করা নিয়েও নানা সময়ে বারণ শুনতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো, ঠান্ডা পানি পান করলে কী সত্য়িই শরীরের ক্ষতি না, নাকি সবটাই ভুল ধারণা ?
ঈষদুষ্ণ পানি পান করুন
অসহনীয় গরম পড়েছে বলে অনেকেই কুসুম গরম পানি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বরং ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাচ্ছেন। কিন্তু এ ভুল করতে যাবেন না। সকালে উষ্ণদুষ্ণ পানি পান করলে শরীরের ফ্যাট কমে, হজম প্রক্রিয়া ঠিকমতো কাজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তাও ভালো হয়ে যায়। তাই রোজ সকালে হালকা গরম পানি পান করতে মোটেও ভুল করবেন না।
পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র এ গরমে দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি অবশ্যই পান করতে হবে। পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের জুস, ঘোল, লেবুর শরবত খেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ
চিকিৎসকরা বলছেন, রোদ থেকে ঘুরে এসে ঢক ঢক করে ঠান্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এতে সাময়িক আরাম পাওয়া গেলেও শরীরের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
হঠাৎ করে শরীরে ঠান্ডা পানি প্রবেশ করার ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে প়ড়ে। বিশেষ করে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। শ্বাসনালীতে শ্লেষ্মার একটা অতিরিক্ত আস্তরণ তৈরি হয়। যার শ্বাসযন্ত্রজনিত বিভিন্ন সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, গরম থেকে ফিরেই পানি খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। শরীরের ঘাম শুকিয়ে এলে তারপর সাধারণ পানি খাওয়া যেতে পারে। এমনি পানির পরিবর্তে কেউ চাইলে ডাবের পানিও খেতে পারেন। ডাবের পানি শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
গরমের সময় শরীর ঘামতে থাকে। শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে শীতের তুলনায় গরমে বেশি দুর্বল লাগে। শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে ও দুর্বলতা কাটাতে খেতে পারেন বিভিন্ন ফলের রস। গ্রীষ্মে লিচু, আঙুর, তরমুজ, আম, জামরুলের মতো অনেক রসালো ও জলসমৃদ্ধ ফলে বাজার ছেয়ে থাকে।
এগুলো দিয়ে ফলের রস বানিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও গ্রীষ্মে শরীর সুস্থ রাখতে রোজ সকালে খালি পেটে খেতে পারেন আমলকির রস। শরীরের যত্ন নিতে আমলকির জুড়ি মেলা ভার। গ্যাস, হজমের সমস্যার চটজলদি সমাধানও রয়েছে আমলকিতে।
লেখকের শেষকথাঃ
আমাদের দেশে শীতের সময় প্রচন্ড শীত পড়ে। আবার গরমের সময় তীব্র তাপদাহ শুরু হয়ে যায়। যার ফলে জীবন হয়ে ওঠে অতিষ্ঠ। কিছু মানুষ এই গরমকে সহ্য করতে না পেরে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করে থাকেন নির্দিধায়। অথচ এর দ্বারা তার উপকরের চাইতে যে ক্ষতি বেশি হতে পারে সে সম্পর্কে তার ধারনায় নাই।
অল্প সময়ের জন্য আরাম পেতে কখনোই ফ্রিজের পরম জমা ঠান্ডা পানি পান করবো না। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেয়ে মনে হতে পারে খুব আরাম পাচ্ছি, কিন্তুু এর যে ক্ষতি হবে সেটা আপনার ধারনার চাইতেও বেশি হতে পারে। তবে হ্যাঁ টিউবয়েল বা পাম্প থেকে টাটকা তোলা ঠান্ডা পানি কোন ক্ষতি করে না। ফ্রিজের পানি পরিহার করুন, ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url