ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও ডাবের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন
ডাব চেনেন না বা ডাব খাননি এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা। কিন্তু ডাবের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেকের কাছে অজানা। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে ডাবের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করবো।
ডাবের পানি শরীরের কোন কোন পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সহায়তা তাও জানতে পারবেন এখানে। কেন মানুষ অসুস্থ হলে ডাবের পানি পান করানো হয়। ডেঙ্গুজ্বরের প্র্রতিষেধক হিসেবে ডাবের পানির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সূচীপত্রঃ
ডাবের পুষ্টিগুণ
ডাবের উপকারিতা
ডাবের পানির অপকারিতা
খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়
কচি ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের শাসের উপকারিতা
লেখকের শেষকথাঃ
ডাবের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে রয়েছে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৩ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ১-০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৩ কিলোক্যালরি।
ডাবের উপকারিতা
বৈশাখের তীব্র গরমে এক গ্লাস ডাবের পানি যেন নিমিষেই প্রশান্তি এনে দেয় দেহ-মনে। সুমিষ্ট এই পানি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। জেনে নিন কেন ডাবের পানি পান করা জরুরি।
- নারিকেলের পানিতে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। ম্যাংগানিজ, কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন, কপার, ফসফরাস, পটাসিয়াম ও সোডিয়ামের উৎস ডাবের পানি। এগুলো আমাদের সুস্থতার জন্য আবশ্যক।
- ডাবের পানি শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে। ডায়ারিয়া, বমি এবং অতিরিক্ত ঘামের পর শরীরের খনিজের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই পানি। এ কারণে অতিরিক্ত গরমে ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
- ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল জানার্লে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, ডাবের পানিতে থাকা বিভিন্ন উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল বা এলডিএল-এর পরিমাণ কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে ডাবের পানি। এছাড়া শরীরের জন্য উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের আশংকাও কমায়।
- ডাবের পানিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের কোষের যত্ন নেয়।
- সাইটোকিনিস নামের একটি অ্যান্টি-এজিং উপাদান পাওয়া যায় ডাবের পানিতে, যা শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
- ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম মেলে উপকারী ডাবের পানি থেকে। এই দুই উপাদান আমাদের হাড় মজবুত রাখে।
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ডাবের পানিতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম।
- ডাবের পানির অপকারিতাপ্রতিদিন ডাবের পানি পান রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ডাবের পানিতে প্রচুর সোডিয়াম থাকে। তাই অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
ডাবের পানির অপকারিতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে যদি কেউ অ্যালার্জি, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হন তবে সে সময় ডাবের পানি পান করাটা নিরাপদ নয়। এতে শারীরিক জটিলতা কমবে না বরং বাড়বে।
ডাবের পানি কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। তবে আপনি যদি কিডনি রোগী হন সেক্ষেত্রে এই পানীয় মোটেও নিরাপদ নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, কিডনি ভালো রাখার সেরা উপায় পানি পান করা। কিন্তু কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে এই পানির পান করার পরিমাণ আপনার কমিয়ে আনতে হবে আক্রান্ত কিডনিকে ভালো রাখার জন্য।
অতিরিক্ত ডাবের পানি পান করার অভ্যাসে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমার সুযোগ পায়। যা কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে দিতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই অবস্থায় রোগীর মুত্যু অনিবার্য হতে পারে। তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না, তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক নয়।
ডাবের পানিতে থাকা সোডিয়াম শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা সপ্তাহে একদিনের বেশি ডাবের পানি পান করবেন না। তাই যাদের এসব সমস্যা রয়েছে তারা ডাবের পানি পান করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
একটু একটু করে বাড়ছে উষ্ণতা । গরমে একটু স্বস্তি এনে দিতে ডাবের পানির কোনও বিকল্প নেই। তবে শুধু তেষ্টা মেটাতেই নয়, গরমে শরীর ভালো রাখতেও ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী। গরমের ফলে শরীরে ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বেরিয়ে যায়। এতে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।
ডাবের পানি শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তি বাড়ায়। খালি পেটে ডাবের পানি খেলে আরও উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন-
১. ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ থাকে। অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর ক্লান্ত শরীরকে চাঙ্গা করতে ডাবের পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ডাবের পানি বেশ কার্যকর।
২. ডাবের পানিতে কোনও ফ্যাট নেই। ফলে ওজন বৃদ্ধির কোনও চিন্তাও নেই। যারা ওজন নিয়ে সচেতন তারা নিশ্চিন্তে এই পানি খেতে পারেন।
৩. ডাবের পানি হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতেও সাহায্য করে। হৃদরোগীরা খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ডাবের পানি রাখতে পারেন।
৪. খালি পেটে আপনি যদি নিয়মিত ডাবের পানি সেবন করতে পারেন তবে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের উন্নতি দেখতে পাবেন। সারা বছর ধরে আপনি যত নিয়ম মেনে নিয়ম করে যদি ডাবের পানি সেবন করতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার পাবেন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে আপনার শরীরে।
ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো
পুষ্টিবিদদের মতে, সকাল বেলা শুধু পানির বদলে ডাবের পানি খেতে পারলে সেটি বেশি উপকারি। সকালে ডাবের পানি পান করলে তা আপনার শরীরের জন্য দারুণ কার্যকরী হতে পারে। অনেকে ভেবে থাকেন যে ডাবের পানিতে অনেক বেশি কার্ব থাকে তাই এটি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কিন্তু এটি তারচেয়েও বেশি উপাদেয় একটি পানীয়।
বেশি উপকার পেতে সকালে ডাবের জল খাওয়া ভাল। আর না হলে খেতে হবে সন্ধ্যাবেলায়। সারা দিনের মধ্যে এই দু'টি সময়েই সবচেয়ে উপকার মেলে ডাবের জল থেকে।
গরম বলে নয়, সারা বছর এই পানীয় শরীরের যত্ন নেয়। গরমে শরীর অল্পেতেই কাহিল হয়ে পড়ে। শরীর চাঙ্গা রাখতে ডাবের পানির সত্যিই জুড়ি মেলা ভার। বহু চিকিৎসক-পুষ্টিবিদ গরমে রোজ একটি করে ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এমনকি, নিয়মিত শরীরচর্চা যাঁরা করেন, জিম থেকে ফিরে ডাবের জল খেতে পারলে সুফল মিলবে বলছেন পুষ্টিবিদরা।
ত্বকের জেল্লা বাড়াতেও ডাবের জলের উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করে যেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু তা হলেও যে কোনও সময়ে ডাবের পানি খাওয়া যায় না। সবের যেমন সময় আছে, ডাবের পানি খাওয়ার বিষয়েও তেমনটা মানতে পারলে মিলবে সুফল।
প্রতিদিন ডাব খেলে কি হয়
পানি তো আপনি পান করেনই। এবার সেই তালিকায় ডাবের পানি জুড়ে দিলে কিন্তু আরও লাভ মিলতে পারে। আসলে আমাদের হাতের কাছে থাকা এই পানীয়ে রয়েছে একাধিক গুণ। বহু ঘাতক অসুখ দূরে থাকে। তাই আপনি অনায়াসে এই পানীয় খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, পানি পান করা আমাদের সকলেরই প্রয়োজন।
কারণ শরীরের বেশিরভাগ অংশই হল তরল। তবে সাধারণ পানির তুলনায় ডাবের পানি কিন্তু বেশি উপকারী। তবে এই কথার এমন অর্থ ধরে নেবেন না যে সারাদিন ডাবের পানি পান করবেন। বরং সাধারণ পানি পান করুন। এর পাশাপাশি ডাবের পানিও খান। তাহলেই দেখবেন সব সমস্যার সহজ সমাধান করে ফেলতে পারবেন।
কচি ডাবের পানির উপকারিতা
ছোট বড় কিংবা লেখাপড়া জানুক বা না জানুক, ডাব যে ঔষধী গুণের ১টা উপকারি ফল তা সবাই মনে হয় জানে এবং মানে। এই ডাবকে বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, যখন ভেতরে শুধু পানি ভর্তি থাকে তখন কচি ডাব, ভেতরে শাস নরম নরম হলে তখন শাসডাব আর পানি কিছুটা শুকিয়ে শাস শক্ত হয়ে গেলে তখন বলে নারিকেল। সব রকমের সময়েই ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ ও উপকার রয়েছে।
কচি ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এমাইনো এসিড এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। শরীরকে চাঙ্গা করতে দ্রুত কার্যকরিভাবে কাজ করে। তবে ডায়াবেটিক রোগীরা খাওয়ার আগে ভেবে খাবেন কারণ এতে চিনি বিদ্যমান। কচি ডাবের কেরামতিতে মাত্র সাত থেকে সত্তর। ব্লাড প্রেসার কমায়। হার্ট টনিকের কাজ করে। মাথা ব্যথার মহৌষধ।
ওজন কমায়। বয়স কমায়। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে কচি ডাবের পানি। এই গরমে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে একগ্লাস কচি ডাবের পানি। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, নারকেলে পরিণত হওয়ার আগে ডাবের ভিতর যে পাতলা শাঁস তৈরি হয় তার মধ্যেও বিভিন্ন ভিটামিন, প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় বেশ কিছু খনিজ থাকে। এ ছাড়া, ডাবের শাঁস শরীরের নানা উপকারে লাগে।
ডাবের শাসের উপকারিতা
ডাবের শাঁসে যে তৈলাক্ত পদার্থ থাকে, তা হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং 'ভালো' কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। ডাবের শাঁসে ফাইবারের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তাই পরিমিত পরিমাণ ডাবের শাঁস যদি নিয়মিত খাওয়া যায়, তা কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
ডাব অতি পরিচিত একটি ফল। ডাবের পানির রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। ডাব পরিপক্ব হলে এর ভেতরে পাওয়া যায় শাঁস। কিন্তু আমরা কি জানি ডাবের শাঁস আমাদের কতটা উপকার করতে পারে? নয়া শতাব্দীর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো ডাবের শাঁসের উপকারিতা-
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ অনেকের ধারণা, ডাবের শাঁস খেলে তা ক্যালোরি বাড়িয়ে তোলে। আপনি যদি পরিমিত খান তাহলে ভয় নেই। এতে শরীরে ফ্যাট জমে না বা ওজনও বাড়ায় না। ডাবের শাঁস দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারবার ক্ষুধা লাগে না। তাই বারবার খাওয়ার প্রয়োজনও হয় না। তাই ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকে না।
হজমে সাহায্য করেঃ অনেক ধরনের খাবার রয়েছে যা খেতে সুস্বাদু হলেও হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। ডাবের শাঁসের ক্ষেত্রে এমন কোনো সমস্যা নেই। বরং ডাবের শাঁস খেলে তা হজমে সাহায্য করে।
ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী হতে পারে ডাবের শাঁস। কারণ ডাবের শাঁস রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে।
লেখকের শেষকথাঃ
বন্ধুরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন ডাবের গুণাগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে। বর্তমান বাজারে ডাবের অনেক দান। এর পরও আমার পক্ষ থেকে পরামর্শ হচ্ছে, হাবাজাবা অন্য কিছু না খেয়ে যখনই পারবেন একটা ডাব খান। আমরা সাধারণত কোমল পানীয় বেশি পছন্দ করে থাকি বা খেতে ভালোবাসি। কোমল পানীয় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।
অপরদিকে ডাবের পানি মানব দেহের জন্য অত্যান্ত উপকারি। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে ডাবের পানি। পানি শুন্যতা দুর করে এবং হজমের সমস্যা দূর করে। ডাবের পানি ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। তাই নিয়মিত না পারলেও মাঝে মাঝে ডাব খান এবং সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url