দুধের পুষ্টিগুণ ও দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

দুধ এমন একটি খাবার, পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে দুধের কোন বিকল্প নেই। মানবদেহের সব কটি প্রয়োজনীয় উপাদান দুধে পাওয়া যায়। অথচ আমরা অনেকেই এই দুধের এই পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানিই না। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সাথে দুধের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করবো।
দুধের পুষ্টিগুণ ও দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এখানে আরো জানতে পারবেন- দুধকে কেন পরিপূর্ণ খাবার বলা হয়ে থাকে ? পৃথিবীতে একটি মাত্র খাবার আছে, যেটা খেয়ে সারা জীবন মানষ বেচে থাকতে পারবে পানি বা অন্য কিছু না খেয়ে, সেটা হচ্ছে দুধ। আসুন আর দেরি না করে দুধের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।

সূচীপত্রঃ

দুধের পুষ্টিগুণ
দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ খাওয়ার অপকারিতা
দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়
রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা
সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত
গরুর দুধের পুষ্টি উপাদান
অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়
গরম নাকি ঠান্ডা দুধ খাবেন
দুধ খাওয়ার পদ্ধতি
লেখকের শেষকথাঃ

দুধের পুষ্টিগুণ

দুধে আছে প্রোটিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-বি১২, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান পেশিকে মজবুত ও শক্ত করে। পাশাপাশি শরীরে পুষ্টি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। দুধ পান করা শরীরের জন্য ভালো।

তবে সঠিক পুষ্টি পেতে নিয়ম মেনে দুধ পান করতে হবে। এক কাপ (২৪৪ গ্রাম) গরুর দুধে ক্যালোরি ১৪৬, প্রোটিন ৮ গ্রাম, চর্বি ৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৮ শতাংশ, ভিটামিন ডি ২৪ শতাংশ, রিবোফ্লাভিন (B2) ২৬ শতাংশ, ভিটামিন বি ১২- ১৮ শতাংশ, পটাসিয়াম ১০ শতাংশ, ফসফরাস ২২ শতাংশ, সেলেনিয়াম ১৩ শতাংশ রয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দুধের বিভিন্ন পুষ্টিগুলো হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যেমন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে পারে এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি কমায়। দুধে থাকা ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করেঃ দুধে আছে প্রচুর পরিমানে ক্যাসলিয়াম ও ভিটামিন ডি যা আমাদের শরীরের হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায়তা করে। প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেলে আমাদের হাড় মজবুদ ও শক্তিশালী হবে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত সবারই দুধ খাওয়া উচিত কারন দুধের উপকারিতা অনেক।

ফিটনেস ভালো ও সুস্থ রাখেঃ ফিটনেস ঠিক রাখতে আমরা কতকিছুই না করে থাকি। অনেকে জিম করে, কেই জগিং করে। আপনি কি জানেন শরীর সুস্থ রাখার একমাত্র উপায় হলো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে দুধ খুবই উপকারি। নিয়মিত দুধ খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে এবং মন সতেজ থাকবে। তাই সবাইকে প্রতিদিন একগ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত।

শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দুর করেঃ শরীরে শক্তি যোগাতে দুধের উপকারিতা অনেক। আপনি হয়তো জানেন না দুধ খেলে আপনার শরীলে শক্তি সঞ্চয় হয় এবং আপনার ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আমরা প্রতিদিন কত কাজেই না ব্যস্ত থাকি। আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আপনি যদি নিয়মিত দুধ খেতে পারেন তাহলে এই ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে।

মানসিক চাপ দূর করেঃ দুধে থাকা পুষ্টিগুন আমাদের মানসিক চাপ দূর করতে সাহায়তা করে। আমরা যখন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ি বা দুশ্চিন্তা করি তখন অনেক ক্লান্তি অনুভব করি। আমরা যদি প্রতিদিন দুধ খাই তাহলে এই ক্লান্তিগুলো দূর হয়ে যাবে ফলে মন এবং শরীর তাজা থাকবে। তাই আমাদের প্রতিদিন দুধ খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

শরীরের ওজন হ্রাস করেঃ প্রতিদিন দুধ খেলে শরীরের ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে। আমাদের প্রতিদিন দুধ খাওয়া উচিত।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ প্রতিদিন দুধ খেলে হার্ট ভাল থাকে। কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেলে রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধি পায় ও খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস পায়। হার্ট ভাল রাখতে প্রতিদিন দুখ পান করুন।

ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতেঃ দুধের উপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা জানি দুধে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি তে ভরপুর। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি প্রতিদিন দুধ খায় তাহলে এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তবে কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে হবে।

পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমায়ঃ পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমাতে দুধের উপকারিতা অনেক। দুধে থাকা ক্যাসলিয়াম ও ভিটিমিন ডি পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি দুর করে কিন্তু লো ফ্যাট যুক্ত দুধ খাওয়া উচিত।

রাতে ভাল ঘুম হয়ঃ অনেকেরই রাতে ঘুম হয় না। রাতে ঘুম ভাল করতে গরম দুধ খুবই উপকারি একটি খাদ্য। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন দেখবেন আপনার ঘুমের সমস্যা আর থাকবে না।

দাঁত ভাল রাখেঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে। অনেকেরই আবার ছোট থেকেই ক্ষত শুরু হয়ে যা। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের পাশাপাশি দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং দাঁত ভাল রাখে।

শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দুর করেঃ আমরা তো জানি যে দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম তাই নিয়মিত দুধ খেলে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়ে যাবে নিমিশেই।

ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতেঃ ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখাতে নিয়মিত দুধ খান।

স্ট্রেস দূর করতেঃ রিসার্সে জানা যায় দুধ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা স্ট্রেসে ভুগছেন তারা প্রতিদিন অনতত এক গ্লাস করে দুধ পান করুন।

ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখেঃ আপনি না জানলে জেনে রাখুন ত্বক ভালো রাখতে দুধের উপকারিতা আছে। নিয়মিত লো ফ্যাট দুধ খেলে নাকি ত্বক কম ফাটে, এর কারণ হল কম ফ্যাট যুক্ত দুধে থাকে ট্রাই-গ্লিসারাইড। নিয়মিত ত্বকে দুধ লাগালে ত্বকের থেকে অতিরিক্ত তেল কমে যায়।

চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলেঃ দুধ চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের নানা প্যাক দুধ দিয়ে বানান।

পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়ঃ পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে দুধ খুবই উপকারি একটি খাদ্য। দুধ যেহেতু পানীয় খাবার তাই এটি খুব সহজেই পাকস্থলী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যাদের হজমে সমস্যা তারা নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ দুধে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকার জন্য আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে যে দুধ নাকি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই দুধ নিয়মিত খাওয়া খুবই ভালো ।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দুধের উপকারিতা অধিক। দুধে থাকা ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

দুধ খাওয়ার অপকারিতা

১। যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধের ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনি রোগীদের জন্য দুধ কম খাওয়া এবং রাতে দুধ না খাওয়াই উত্তম।

২। যাদের শরীরে ‘ল্যাক্টেজ’ (lactase) নামক এনজাইমের অভাব আছে, তাদের উচিত দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা।

৩। এলার্জি থাকলে, দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, এলার্জির রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। অকেনের আবার দুধে এলার্জি আছে বলে জানা যায়।

৪। যারা পাকস্থলীর আলসার তথা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী, তাদেরও দুধ খাওয়া উচিত নয়। এই সকল রোগীদের দুধ খেলে পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে।

৫। যাদের পেটে অপারেশান করা হয়েছে, তাদের দুধ খাওয়া উচিত না, যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠছেন তখন দুধ খেতে পারে।

পুষ্টিসম্পন্ন এই মহৌষধি পানীয়ও আবার অনেকের সহ্য হয় না। আর এই সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। এই রোগে ভুক্তভোগীদের দুধ খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, ডায়ারিয়ার মতো সমস্যার ফাঁদে পড়তে পারেন। তাই এই সমস্যা থাকলে দুধ এড়িয়ে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

অতি মাত্রায় দুধ খাওয়া উচিত না। অনেকে আছেন প্রতিদিন অনেক দুধ খেয়ে থাকেন। প্রতিদিন নিয়ম করে এক গ্লাস বা ২ গ্লাস দুধ খেতে পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত দুধ খেলে উপকারের চেয়ে অপকারি বেশি হতে পারে। তবে দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা হিসাবে করলে দেখা যাচ্ছে দুধের উপকারিতার পরিমানি বেশি।

দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময়

আসলে পুষ্টি পেতে প্রতিদিনই দুধ পান ভালো। তবে দুধ খাওয়ার সঠিক সময় নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকের মতে, প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো সময় দুধ পান করা যায়। আবার অনেকে বলেন, দুধ পানের সঠিক সময় হলো বিকেল বা রাত। এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, সকালে দুধ পান না করাই ভালো। কারণ, এটি সকালে খেলে হজমের জন্য একটু ভারী বা কঠিন হয়ে যায়। পাশাপাশি এটি ব্যক্তিকে অবসন্ন করে তোলে। এই শাস্ত্রমতে, দুধ বিকেল বা রাতে খাওয়াই উত্তম। এতে হজমের সমস্যা কম হয়। আর ট্রিপটোফিন নামের উপাদান থাকার কারণে এটি ঘুম ভালো করতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া ব্যায়ামের পর দুধ খাওয়া ভালো।

দুধে ৮৭ শতাংশ জলীয় পদার্থ থাকলেও বাকি ৩৭ শতাংশই শরীরের পুষ্টি যোগানোর জন্য যথেষ্ট। কারণ এতে রয়েছে ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ৬ সহ একাধিক উপকারী উপাদান।

তাই নিয়মিত দুধ খেলেই যে মজবুত হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, তা তো বলাই বাহুল্য। এমনকী দুধের গুণে ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ১ গ্লাস দুধ খাওয়া উচিত বলে মনে করেন পুষ্টিবিদেরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার খাওয়ার পরপরই দুধ পান করা উচিত নয়। এর পাশাপাশি দুধ খাওয়ার আগে টক জিনিস বা ফল, দই, টক জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না । এটি করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে, খাবার খাওয়ার ৪০ মিনিট পর দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী বলে।

বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, দিনের যে কোনও সময়ই দুধ খাওয়া যায়। তাতে দেহের উপকারই হবে। এমনকী দেহে এনার্জির চাহিদাও মিটবে। তবে বেশি উপকার পেতে চাইলে দুধ খেতে হবে রাতে। জানলে অবাক হবেন, ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ খেলে শরীরে তা ম্যাজিকের মতো কাজ করবে। এমনকী স্ট্রেস, অবসাদ মিটিয়ে দুচোখের পাতায় নেমে আসবে ঘুমপরীরা।

রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

ভালো ঘুমের জন্য রাতে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে– গরম দুধ খেলে কি আসলেই রাতে ঘুম ভালো হয় ?

পুষ্টিবিদরা জানান, দুধে সব ধরনের মিনারেলই পরিমিত পরিমাণে থাকে। তাই ঘুমও ভালো হয়। দুধে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। এতেই শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন শরীর শান্ত করে, ফলে ঘুম ভালো হয়।

ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ ও পটাশিয়াম ইত্যাদি দুধে পাওয়া যায়। দুধ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অনেক গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। ডায়েটিশিয়ান রোহিত যাদব বলেন, ঘুমের অভাবে যারা ভুগছেন তাঁরা উপকার পেতে পারেন। অর্থাৎ রাতে ভাল ঘুমের জন্য গরম দুধ খাওয়া ভাল।

সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

দুধ হল একটি সুষম পানীয়। এতে রয়েছে উপকারী ফ্যাট, প্রোটিন, ফসফরাস, ভিটামিন ডি, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়ামের মতো জরুরি উপাদান সমূহ। তাই তো সারা বিশ্বের সকল চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দুধের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। এমনকী বিজ্ঞানীরা সকল বয়সী মানুষের জন্য দুধ পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তবে জানলে অবাক হবেন, সারাদিনের যে কোনও সময় দুধ খাওয়ার পরিবর্তে সকাল বেলায় খালি পেটে দুধ খেলে মিলবে আরও বেশি উপকার। এতে দুধে উপস্থিত সমস্ত ভিটামিন ও খনিজ সহজেই দেহে সংগৃহিত হবে। আপনিও খালিপেটেই দুধ খাবেন।

১. হাড় হবে শক্তপোক্ত​

হাড়ের জোড় বাড়ানোর ইচ্ছে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব রোজ সকালে উঠে খালিপেটে একগ্লাস দুধ পান করুন। এতেই আপনার ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়ামের চাহিদা মিটে যাবে। ফলে হাড় থাকবে সুস্থ-সবল। এমনকী অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো অসুখের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তাই তো ফেরাতে হাড়ের হাল দুধের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নেওয়া দরকার।

​২. বুদ্ধির গোড়ায় শান দিতে পারবেন​

ফেলুদার মতো বুদ্ধির অধিকারী হতে চাইলে কাল সকাল থেকে এক গ্লাস দুধ খেয়ে নিন। কারণ দুধে রয়েছে গ্লুটাথায়ন নামক একটি অক্সিডেন্ট। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই যাঁরা নিজের বুদ্ধির কেরামতি দেখাতে হলে দুধ খাওয়া শুরু করুন। হলফ করে বলতে পারি, এতেই মিলবে উপকার।

​৩. কমবে প্রেশারও​

হাই প্রেশার একটি ঘাতক অসুখ। এই রোগকে ঠিক সময়ে বাগে না আনতে পারলে হার্ট, কিডনি সহ দেহের একাধিক অঙ্গের বারোটা বাজতে সময় লাগবে না। তাই প্রকারেণ ব্লাড প্রেশার কমাতে হবে। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে এক গ্লাস গরম দুধ। প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধে চুমুক দিলেই কিন্তু প্রেশার কমবে তাড়াতাড়ি। এমনকী সুস্থ থাকবে হার্টও।

৪. পেশি বহুল শরীর পাবেন​

ফ্যাটের আস্তরণ ঝরিয়ে পেশি বহুল চেহারা বানাতে চান ? তাহলে কাল সকাল থেকেই এক গ্লাস গরম দুধের গ্লাসে চুমুক দিন। এতেই দেহের প্রোটিনের চাহিদা মিটবে। এমনকী বাড়বে পেশিশক্তি। বিশেষত, যাঁরা স্ট্রেনথ ট্রেনিং বা ওয়েট ট্রেনিং করছেন, তাঁদের ডায়েটে অবশ্যই দুধ থাকাটা মাস্ট। এতেই দেখবেন মাসল পাওয়ার বাড়বে। আপনি থাকবেন সুস্থ-সবল।

৫. অবসাদ কাটাতে সিদ্ধহস্ত​

আজকাল অনেকেই অবসাদের মতো মানসিক সমস্যায় পড়েছেন। তবে চিন্তা নেই, এই সমস্যার সহজ সমাধান হল এক গ্লাস দুধ। জানলে অবাক হবেন, রোজ সকালে এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ খেলেই কিন্তু মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ অনেকটাই বেড়ে যাবে। ফলে মন থাকবে ফুরফুরে। এমনকী কেটে যাবে অবসাদ। তাই দুধের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিন।

প্রতিদিন কতটুকু দুধ খাওয়া উচিত

দুধ আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারি। তবে মনে রাখবেন, এহেন অমৃত পানীয়ও কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে একাধিক সমস্যার ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই তো বিশেষজ্ঞরা দিনে ১ থেকে ২ গ্লাস দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ রোজ রোজ এর থেকে বেশি পরিমাণে দুধ খেলে স্বাস্থ্যের কাউরি কাউরি সমস্যা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাইয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, কতটুকু দুধ প্রতিদিন পান করবেন, সে বিষয়ে।

১. শূন্য থেকে ৬ মাস

শূন্য থেকে ১২ মাসের শিশুদের গরুর দুধ খাওয়া ঠিক নয়। এ সময় কেবল মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার পরামর্শই দেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুর ক্ষুধা লাগলে প্রয়োজন অনুযায়ী বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

২. ১ থেকে ১০ বছর

এক থেকে তিন বছরের শিশুদের ৩৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রতিদিন প্রয়োজন হয়। এই চাহিদা পূরণে ১০০ এমএল দুধ খেতে হবে। ১০০ থেকে ১২৫ গ্রাম দুধের তৈরি পনির বা দই খাওয়া যেতে পারে এর পাশাপাশি। আর ৪ থেকে ১০ বছরের শিশুদের ১৩০ থেকে ১৫০ এমএল দুধ খাওয়া প্রয়োজন প্রতিদিন।

৩. ১১ থেকে ১৮ বছর

এ সময় সাধারণত ৮০০ থেকে এক হাজার মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রতিদিন প্রয়োজন পড়ে। এ বয়সে দুধ খাওয়া প্রয়োজন ২০০ থেকে ২৫০ এমএল। দুধের বাইরেও অন্যান্য দুগ্ধজাতীয় খাবারও খাওয়া যায়, যেমনঃ দই খেতে পারেন ২০০ গ্রাম এবং পনির খেতে পারেন ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম।

৪. ১৯ থেকে ৫০ বছর

১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সের লোকদের জন্য প্রতিদিন ২০০ এমএল দুধ খাওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি দুগ্ধজাতীয় পণ্য দই (১৫০ গ্রাম) ও পনির (৩০ গ্রাম) খাওয়া প্রয়োজন। এই পরিমাণ খাবার ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে অনেকটা সাহায্য করে।

৫. ৫০ বছর বয়সে

ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পাশাপাশি ২০০ এমএল দুধ, দই ১৫০ গ্রাম, পনির ৩০ গ্রাম খাওয়া প্রয়োজন। ৭০ বছর বয়সের লোকদের প্রতিদিন ২৩০ থেকে ২৫০ এমএল দুধ খাওয়া প্রয়োজন।

গরুর দুধের পুষ্টি উপাদান

গরুর দুধে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্যানসার ও হৃদেরাগ প্রতিরোধে দুধ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে। খাদ্যের প্রধান ছয়টি উপাদানই এক সাথে পাওয়া যায় গরুর দুধে।

ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ উৎসের ভিত্তিতে দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। এতে রয়েছে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরুর দুধ যেমন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর তেমনই এটি সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। তাই নিয়ম মেনে দেশি-বিদেশি কোন গাভীর দুধ খান।

গরুর দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সমৃদ্ধ উপাদানগুলির একটি মূল উৎস। শিশুদের উন্নত বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, গরুর দুধ নিয়মিত গ্রহণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত দুধ খেলে কি হয়

  • অতিরিক্ত দুধ খেলে হজমপ্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। যেমন-গ্যাসের সমস্যা, পেটে ক্রাম্প করা অথবা ডায়রিয়া হতে পারে।
  • দুধে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত দুধ খেলে হাড় ক্ষয়রোগ হতে পারে।
  • রাতে দুধ খেলে স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত দুধ খেলে অন্ত্রে সমস্যা হতে পারে। এর ফলে শরীরে অলসতা বেড়ে যায়।
  • বেশি দুধ খেলে শিশুদের নানা ধরনের অ্যালার্জি, চর্মরোগ এবং পেটে সমস্যা হতে পারে।
  • বেশি দুধ খেলে হৃদরোগজনিত জটিলতা বাড়তে পারে।
  • অতিরিক্ত দুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট সংক্রান্ত অন্যান্য রোগ হতে পারে।

গরম নাকি ঠান্ডা দুধ খাবেন

শরীরের শক্তি যোগানোর ক্ষেত্রে ঠান্ডা বা গরম- উভয় ধরনের দুধই সমান ভূমিকা রাখে। তবে ঘুমের সমস্যা দূর করার জন্য গরম দুধ উপকারী। আবার অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে ঠান্ডা দুধ বেশি উপকারী। গরম দুধের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো তা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়।

  • দুধ থেকে তৈরি খাবার যাঁদের হজম হয় না, তাঁদের খেতে হবে গরম দুধ। ঠান্ডা দুধ তুলনায় ভারী। হজম করা কষ্ট। আর গরম দুধে ল্যাকটোজেনের পরিমাণ কম থাকে। তাই এই দুধ সহজে হজম হয়।
  • রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করলে ঘুম ভালো হয়। দুধে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে। দুধ গরম করা হলে অ্যামিনো অ্যাসিড সক্রিয় হয়ে ওঠে।
  • ঠান্ডা দুধ স্থূলতা কমায়। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়, এতে ক্যালরি খরচ হয় বেশি। এ ছাড়া এক গ্লাস দুধ পান করলে আপনি অনেকক্ষণ ধরে আর কিছু খাওয়ার আগ্রহ বোধ করবেন না। এতে করে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে ওজন কমবে।
  • যাঁরা গ্যাস্ট্রিক বা স্থূলতার সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য ঠান্ডা দুধ ভীষণ উপকারী। এতে বুক ও পেট জ্বালাপোড়া কমে। তাই খাবার খাওয়ার পর রোজ আধা গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করুন। ওষুধ ছাড়াই সমস্যা কমবে।
  • তা ছাড়া ঠান্ডা দুধে প্রচুর ইলেকট্রোলাইট থাকে, যা ডিহাইড্রেশন দূর করে। এটি শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রেখে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • আবহাওয়া পরিবর্তনে বা এমনিতে আপনি যদি সাধারণ ঠান্ডায় আক্রান্ত হন, তাহলে হালকা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা দূর হয়।
  • মেয়েদের পিরিয়ডের অসুস্থতায় প্রশান্তি মেলে গরম দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে। দুধে থাকা পটাশিয়াম পিরিয়ডকালীন ব্যথা দূর করে এবং হলুদ শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়।

দুধ খাওয়ার পদ্ধতি

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার খাওয়ার পরপরই দুধ পান করা উচিত নয়। এর পাশাপাশি দুধ খাওয়ার আগে টক জিনিস বা ফল, দই, টক জাতীয় খাবার খাওয়া চলবে না । এটি করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে, খাবার খাওয়ার ৪০ মিনিট পর দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী বলে।

লেখকের শেষকথাঃ

বন্ধুরা আজকের আলোচনা থেকে নিশ্চয় জেনে গেছেন দুধ খাওয়ার উপকারি এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। নিয়ম মেনে দুধ খান শরীর মন ভালো থাকবে। জীবন হবে আরো সুন্দর। যেহেতু দুধকে বলা হয় সুপার ফুড, তাই এটা খেলে যেকোন বয়সী মানুষের জন্য রয়েছে উপকারি উপাদান। তবে যাদের হজমের সমস্যা আছে তার দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

নির্ভেজাল দুধ খেতে হলে একটি গাভী পালন করুন। আর গাভী পালন সম্ভব না হলে বিশ্বস্ত জায়গা থেকে দুধ সংগ্রহ করে খান। ভেজাল দুধ খেয়ে দুধের বদনাম করবেন না প্লিজ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪