তীব্র তাপপ্রবাহে নিজেকে ঠান্ডা রাখবেন কিভাবে বিস্তারিত জেনে নিন

গ্রীষ্মের তপ্ত রোদ দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহের মধ্যে নিজেকে ঠান্ডা রাখবেন কিভাবে তাকি জানেন ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। জেনে নিন এই গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার উপায়।
তীব্র তাপপ্রবাহে নিজেকে ঠান্ডা রাখবেন কিভাবে বিস্তারিত জেনে নিন

বাংলাদেশে এই মূহুর্তে চলছে প্রচন্ড গরম, তাপপ্রবাহ। স্বাভাবিকভাবেই জনজীবনে চলছে হাসফাঁস অবস্থা। আপাতত আবহাওয়া অধিদপ্তরও বলছে চলমান তাপপ্রবাহ আরও চলবে, এমনকি গরম আরও বাড়তে পারে।

সূচীপত্রঃ

তাপপ্রবাহে নিরাপদে থাকুন
বাসা ঠান্ডা রাখতে যা করবেন
নিজের খেয়াল রাখুন
পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ
হালকা ও তাজা খাবার খান
যথা সময়ে আহার
হালকা, ঢিলেঢালা এবং অনুজ্জ্বল রঙের কাপড়
ছায়ায় থাকুন
ছাতা ও পানি ভুলবেন না
শোবার ঘরটি ঠান্ডা রাখুন
এই গরমে ফলের রস নাকি স্যালাইন, কোনটা খাবেন?
লেখকের শেষকথাঃ

তাপপ্রবাহে নিরাপদে থাকুন

  • অতি উচ্চ তাপমাত্রা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাপপ্রবাহ কারো কারো জন্য একটু বেশি ক্লান্তিকর এবং হিট ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও থাকে অনেকের।
  • যাদের শারীরিক ওজন বেশি, বয়স্ক কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক, নিয়মিত কোন রোগের ওষুধ সেবন করছেন কিংবা যারা কোন দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
  • যাদের আগে থেকেই কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে যেমন হৃদরোগ বা বক্ষব্যাধী রয়েছে, এই গরম আবহাওয়ায় তাদের শরীরে উপসর্গ আরো খারাপ হতে পারে, ফলে তাদের সচেতন থাকাটা জরুরী। কারণ গরম আবহওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে আমাদের হৃদপিন্ড ও শ্বাসযন্ত্রের কাজ বেড়ে যায়।
  • এই চরম আবহাওয়ায় আপনার নিজেকে এবং অন্যদের নিরাপদে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনি যখন বাইরে থাকেন কিংবা বাইরে বের হওয়ার চিন্তা করছেন বা জনসমাগম রয়েছে এমন কোথাও রয়েছেন তখন নিজেকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করুন।
  • রোদের মধ্যে বাইরে জরুরি প্রয়োজনে যেতে হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন ও সাথে পানি রাখুন।

বাসা ঠান্ডা রাখতে যা করবেন

  • আপনার বাড়িতে সহজ কিছু পদক্ষেপ নিলে সেটি ঘরের পরিবেশকে আরো তাপ সহনশীল করে তুলবে। এগুলো হচ্ছে-
  • দিনের বেলা ঘরের সব পর্দা টেনে রাখুন। সরাসরি সূর্য্যের আলো প্রবেশ করে এমন স্থান বন্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করুন।
  • ঘর যখন ঠান্ডা হয়ে আসবে তখন জানালা খুলে দিন। যেমন- বাড়িতে ছায়া থাকলে সেটি বাতাস চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাড়িতে বাতাসের চলাচলের ব্যবস্থা রাখাটা ঘর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করতে পারে।
  • বৈদ্যুতিক পাখা বাতাস চলাচল বাড়ানোর জন্য সুবিধাজনক। তবে আপনার বাড়িতে যদি কারো বায়ুবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে পাখা চালানো থেকে বিরত থাকুন।
  • অনেক সময় বাইরের বাতাস ঘরের ভেতরের বাতাসের তুলনায় ঠান্ডা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাইরে বের হতে হলে জনসমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • ঘরে ঠান্ডা করার যেসব যন্ত্রপাতি আছে যেমন ফ্রিজ বা ফ্রিজার-সেগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখুন।

নিজের খেয়াল রাখুন

উচ্চ তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে চলার জন্য আপনি নিজের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিতে পারেন তা হলো-

পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ

গরমের সময় আপনার দেহে তরলের চাহিদা বেড়ে যায় কারণ ঘামের জন্য আপনার দেহ থেকে যে তরল বের হয়ে যায় তার ঘাটতি পূরণের জন্য অতিরিক্ত তরল পানের দরকার হয়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন।

এমন গরমে যে কারোরই পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে তবে বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু এবং নবজাতকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। পানিশূন্যতা দূর করার জন্য পানি পান করাটাই সবচেয়ে ভাল উপায়।

এছাড়া কম চর্বিযুক্ত দুধ, চা এবং কফিও খাওয়া যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

হালকা ও তাজা খাবার খান

গরমে হালকা এবং তাজা খাবার বেশি পরিমাণে হাওয়ার চেষ্টা করুন। দেহে পানিশূন্যতা দূর করার একটি সহজ উপায় হচ্ছে তাজা ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া। যেমন স্ট্রবেরি, তরমুজ, শশা, লাউ ইত্যাদি খাবারে পানির পরিমাণ বেশি থাকে সাথে পুষ্টি ও পাওয়া যায়।

যথা সময়ে আহার

ব্যস্ত জীবনে সবসময় খাওয়া আর ঘুমের সময় ঠিক রাখা অনেকের জন্য কেবল কঠিনই নয়, কারো কারো জন্য সেটি প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। কিন্তু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা বলেন সুস্থতার জন্য সেটি জরুরী। আর অন্য যেকোন সময়ের মত গরমেও ঠিক সময়ে খাওয়া এবং ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন।

হালকা, ঢিলেঢালা এবং অনুজ্জ্বল রঙের কাপড়

গরমের সময়ে যথাসম্ভব হালকা, ঢিলেঢালা এবং উজ্জ্বল রঙের নয়- এমন কাপড় পরার চেষ্টা করুন। গরমে আরাম পেতে সুতি বা লিনেন কাপড় বেছে নিতে পারেন। এসব কাপড় ঘাম শোষণ করে এবং বায়ু চলাচলও স্বাভাবিক রাখে।

ছায়ায় থাকুন

দিনের যে সময়টাতে সবচেয়ে বেশি সূর্য্যের তাপ বেশি থাকে, যেমন সকাল ১১টা থেকে বিকেল তিনটা- এ সময়টাতে সরাসরি তাপ এড়িয়ে চলুন। কোনও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এ সময়ে বাইরে না যাওয়াই ভালো। যখন বাইরে আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা থাকবে তখন শারীরিক ব্যায়াম, ঘরের কোন ভারী কাজ জমে থাকলে সেগুলো করুন।

ছাতা ও পানি ভুলবেন না

বাড়ির বাইরে যাওয়ার দরকার হলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন। যেখানে সম্ভব সানগ্লাস বা হ্যাট পড়ুন। আর সানস্ক্রিন ব্যবহারের চেষ্টা করুন, এতে আপনার ত্বক সরাসরি রোদে পোড়ার হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে। আর বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সাথে পানি নিয়ে বের হবেন।

শোবার ঘরটি ঠান্ডা রাখুন

আপনার শোয়ার ঘরটি ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন, যাতে আপনার ঘুমে কোন ব্যাঘাত না ঘটে। তীব্র রোদের সময়টুকুতে ঘরে যাতে সরাসরি তাপ প্রবেশ না করে, খেয়াল রাখুন। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘরের পর্দা টেনে রাখুন। এছাড়া ঘরের মেঝে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে পারেন।

এই গরমে ফলের রস নাকি স্যালাইন, কোনটা খাবেন?

বৈশাখ শুরুর পর থেকেই তীব্র তাপদাহ শুরু হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত জনজীবন। এদিকে গরমের কারণে সারাদেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই গরমে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়। আর তাই পানিশূন্যতা দূর করতে পানীয় জাতীয় খাবারের কোনো বিকল্প নেই।

অনেকেই মনে করেন দ্রুত পানিশূন্যতা পূরণে স্যালাইন খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেকে আবার ভরসা রাখেন ফলের রসে। আর এ কারণে ওআরএস এবং ফলের রস খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।

ফলের রসে মহৌষধি

পুষ্টিবিদদের মতে, গরমে তাজা ফলের রস নিয়মিত খাওয়া যেতেই পারে। তাতে যেমন পানির ঘাটতি মিটে যায়, ঠিক তেমনই শরীরে প্রবেশ করবে অত্যন্ত উপকারী সব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেলস, জিংক ইত্যাদি। আর গরমে তৃষ্ণা মেটায় ফলের রস, আর এটি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তবে ফলকে পরিস্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

স্যালাইন বা ওআরএস

ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস) বা খাবার স্যালাইন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই আল্লাহর রহমতে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। ডিহাইড্রেট হলে শরীর থেকে পানির পাশাপাশি সোডিয়াম-পটাশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান দ্রুত গতিতে বাইরে বেরিয়ে যায়। আর ওআরস দেহে পানি এবং অন্যান্য খনিজের ভারসাম্য ফেরানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

তাই পৃথিবী জুড়ে ওআরএস-এর চাহিদা ব্যাপক। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদরা বলছেন, গরমের সময়ে ওআরএস ও ফলের রস এই দুই পানীয়ই শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকতে চাইলে এই দুই পানীয়ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পান করতে হবে। তবে ডিহাইড্রেশন হলে বা ডায়রিয়ার কবলে পড়লে তখন ওআরএসই একমাত্র ভরসা।

লেখকের শেষকথাঃ

গরমের তীব্রতা ও তাপপ্রবাহ তো আর আমরা নিজেরা কমাতে পারবো না। তাপপ্রবাহের মধ্যেই নিজেকে খাপ খাওয়ে শরীর এবং ঘর-বাড়ি ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। খুব প্রয়োজনে বের হলে ছাতা ও পানির বোতল সঙ্গে নিতে হবে।

অসুস্থ্যতা বোধ করলেই সাথে সাথে হাসপাতালে নিতে হবে। কোন অবস্থায় অবহেলা করা যাবে না। এই তাপপ্রবাহের কারণে হাসপাতালগুলোতে অনেক রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। যারা কঠোর পরিশ্রম করেন, তারা প্রয়োজনে কাজের সময় বদলাতে পারেন এবং মাঝে মাঝে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত জায়গাই বিশ্রাম নিবেন। এই গরমে নিজেকে সুস্থ রাখুন, ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪