এক মিনিটে পানির ট্যাংক পরিস্কার করার দূর্দান্ত উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

আমাদের দৈনন্দিন কাজে পানির ব্যবহার সব চেয়ে বেশি। তাইতো পানিকে জমা রাখার জন্য পানির ট্যাংক ব্যবহার করতে হয়। পানির অপর নাম জীবন হওয়া সত্বেও, এই পানি একসময় মরনের কারণ হতে পারে অপস্কিার ট্যাংকের কারণে।
এক মিনিটে পানির ট্যাংক পরিস্কার করার দূর্দান্ত উপায় সম্পর্কে জেনে নিন

আজ আপনাদের জানাবো কিভাবে অল্প সময়ে, কোন প্রকার ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়া পানির ট্যাংক পরিস্কার করবেন। পানির ট্যাংকি অনেক দিন ব্যবহারের ফলে ট্যাংকের ভেতরে শ্যাওলা ও ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যা পানির সাথে মিশে মানব শরীরের জন্য মারাত্বক হতে পারে। আসুন ট্যাংক পরিস্কার করার সঠিক উপায় জানা যাক।

সূচীপত্রঃ

ট্যাংকটি খালি করুন এবং শুকাতে দিন
ট্যাংকের ভিতরটি পরিস্কার করুন
দেয়ালের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন
ময়লা ধুয়ে ফেলুন
ট্যাংকের পাইপ পরিস্কার করুন
ট্যাংকটি জীবাণুমুক্ত করুন
পানি ভরার আগে শুকিয়ে নিন
সতর্কতা অবলম্বণ করুন
লেখকের শেষকথাঃ

ট্যাংকটি খালি করুন এবং শুকাতে দিন

সবার আগে জলের ট্যাংকের কলটা খুলে ট্যাংকটি খালি করে নিন। সব পানি বেরিয়ে গেলেও নিচের পানিটুকু সহজে বের হবেনা। তার জন্য প্রথমে বালতি ব্যবহার করুন এবং পরে প্লাস্টিকের মগ বা কাপ ব্যবহার করুন। একদম তলানির পানিটা ওয়েট বা ড্রাই ভ্যাকুয়ামের সাহায্যে বের করে নিন, তারপরে শুকনো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে মুছে ফেলুন।

যদি ট্যাংকটি আকারে ছোট হয় তাহলে কয়েকজনে মিলে ট্যাংকটি উল্টে পানিশূন্য করতে পারেন। পানিশূন্য করার পরে ট্যাংকটি শুকানোর জন্য কিছুক্ষণ রেখে দিন। কড়া রোদে শুকাতে পারলে সব থেকে ভালো হয়।

ট্যাংকের ভিতরটি পরিস্কার করুন

ট্যাংকের সাইজ অনুযায়ী গরম পানি ও লিকুইড ডিটারজেন্ট বা ডিটারজেন্ট পাউডার একসাথে মিশিয়ে একটি ক্লিনিং সলিউশন তৈরি করে নিন। এরপরে নাইলনের ব্রাশ বা স্পঞ্জ সলিউশনে ডুবিয়ে ট্যাংকের ভিতর ভালো করে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। ছোট হাতলের ব্রাশ হলে আড়াআড়িভাবে ঘষতে হবে।

আর বড় হাতলের ব্রাশ হলে লম্বালম্বিভাবে ঘষতে হবে। ট্যাংকের নিচ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বড় হাতলের ব্রাশ হলে ভালো হবে। স্টিলের ব্রাশ বা স্পঞ্জ ভুলেও ব্যবহার করতে যাবেন না, এগুলো ট্যাংকের প্লাস্টিক নষ্ট করে দিবে। স্টিলের ব্রাশ বা লোহার ব্রাশ দিয়ে ঘষলে ট্যাংকটি ছিদ্র হয়ে যেতে পারে।

দেয়ালের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন

ডিটারজেন্ট পানিতে ট্যাংকের দেয়াল পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। যদি না হয়, তাহলে বেকিং সোডা ট্যাংকের দেয়ালে ছিটিয়ে দিন এবং ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন। কর্ণার এবং জয়েন্টের ময়লা তোলা বেশ কঠিন, তাই এসব জায়গায় ছোট টুথব্রাশ দিয়ে ঘষতে হবে। কঠিন জায়গার দাগ-ময়লাগুলো ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত সেগুলো পরিষ্কার হচ্ছে।

ময়লা ধুয়ে ফেলুন

ট্যাংকের ভিতরের এলাকা পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর পাইপযোগে জল দিয়ে ময়লা ধুয়ে ফেলুন। কঠিন জায়গার ময়লা যতক্ষণ না পর্যন্ত পানিতে মিশছে ততক্ষণ পর্যন্ত পানি স্প্রে করতে থাকুন। তারপর ট্যাংকের কল ছেড়ে পানিটা বাইরে ফেলে দিন। চাইলে গরম পানি ট্যাংক ঢেলে কয়েক ঘন্টা রেখে দিতে পারেন, পরে সেটা বের করে ফেলুন।

প্রয়োজনে কয়েকবার পানি বদলে ট্যাংক ধুতে হবে পরিপূর্ণভাবে ময়লা ও ডিটারজেন্ট পরিষ্কার করার জন্য। বড় ট্যাংকের ক্ষেত্রে তলানির আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে ভ্যাকুয়াম এবং শুকনো তোয়ালে/মপিং ব্রাশের সাহায্যে।

ট্যাংকের পাইপ পরিষ্কার করুন

ট্যাংকের পাইপে একটু ক্লিনিং সলিউশন ঢেলে দিন। তারপরে ওয়াটার পাম্পের সাহায্যে সলিউশনটা পাইপের ভিতর পাম্প করুন ময়লা সরানোর জন্য। তারপর গরম পানি পাম্প করে পরিষ্কার করে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও কয়েকবার সলিউশন ও গরম পানি পাম্প করে পাইপ পরিষ্কার করুন।

ট্যাংকটি জীবাণুমুক্ত করুন

পরিষ্কারের পরে ট্যাংকটি জীবাণুমুক্ত করতে প্রথমে এটি চার ভাগের তিন ভাগ পরিষ্কার পানি দিয়ে ভরে দিন। তারপরে এতে পরিমাণমতো ক্লোরিন ব্লিচ ঢেলে দিন। কতটুকু পরিমাণে ঢালতে হবে তার জন্য নির্দিষ্ট একটি মাপ আছে।

* ২৫০ গ্যালন ট্যাংকের জন্য ৪ কাপ ব্লিচ।
* ৫০০ গ্যালন ট্যাংকের জন্য আধা গ্যালন ব্লিচ।
* ৭৫০ গ্যালন ট্যাংকের জন্য পৌনে এক গ্যালন ব্লিচ।
* ১০০০ গ্যালন ট্যাংকের জন্য পুরো এক গ্যালন ব্লিচ লাগবে।

ব্লিচ ঢালার পরে ট্যাংকের বাকি অংশ পানিপূর্ণ করে দিন, তাহলে ব্লিচ পানির সাথে ভালোভাবে মিশে যাবে। তারপরে ২৪ ঘন্টা ট্যাংক ওভাবেই রেখে দিন। নির্দিষ্ট সময় পরে কল খুলে ক্লোরিন পানি বের করে দিন। তলানির পানির জন্য আগের মতোই তোয়ালে এবং ভ্যাকুয়াম ব্যবহার করুন।

পানি ভরার আগে শুকিয়ে নিন

ব্লিচিং শেষে ট্যাংকটা আবার শুকিয়ে নিন। ভালোমতো শুকিয়ে নিয়ে পানি ভরলে গন্ধ থাকবেনা। এক্ষেত্রে ৭-৮ ঘন্টা খালি রাখলে ভালো হবে। কড়া রোদে শুকালে কয়েক ঘন্টাতেই শুকিয়ে যাবে। রোদে শুকালে এমনিতেই জীবাণু মরে যায়। তারপর যেই সমস্ত উপকরণ দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে সেই সমস্ত উপকরণের গন্ধও থাকবেনা রোদে শুকালে।

সতর্কতা অবলম্বণ করুন

পানির ট্যাংক পরিষ্কারের পুরো প্রসেসে খেয়াল রাখবেন যেন কোনভাবেই এর ময়লা বা কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি কোন গাছপালা, অন্য কোন পানির উৎস, মানুষ, বা প্রাণীর সংস্পর্শে না আসে। এমনকি ট্যাংক পরিষ্কার করাও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কাজেই পরিষ্কারের সময় প্লোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করবেন। সতর্ক না হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

লেখকের শেষকথাঃ

পানি প্রাণী কুলের জীবন বাঁচায়। আবার এই পানি দূষিত হলে হতে পারে মারাত্বক বিপদ। তাই পানি রাখার ট্যাংকগুলি বছরে ১/২ বার পরিস্কার করা খুবই জরুরি। আর এই পানি ট্যাংক পরিস্কার করা মোটেও সহজ কাজ নয়। দূর থেকে মনে হতে পারে কাজটা খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি করে ফেলা যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও সেই রকম নয়। 

পরিস্কার করার সঠিক কৌশল না জানলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। পরিস্কার করতে কোন কোন উপকরণ লাগবে তা জানা থাকতে হবে এবং হাতের কাছেও থাকতে হবে। অনেক সময় বিষাক্ত গ্যাসে পূর্ণ থাকে এই ট্যাংক, যাক কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই কাজ করার সময় সতর্কতা অবলম্বণ করুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪