আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আনারস আমরা ছোট-বড়, নারী-পুরুষ কম-বেশি সবায় খেয়ে থাকি। কিন্তু এই আনারসের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কি আপনারা কি জানেন ? না জানা থাকলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আপনাদের সামনে আনারসের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
এখানে আরো জানতে পারবেন- আনারস খেলে কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। আনারস এবং দুধ এক সঙ্গে খেলে কি হয় এবং এর পার্শ্বপতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তো আসুন আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
সূচীপত্রঃ
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আনারসের পুষ্টিগুণ
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়
আনারস খেলে কি ক্ষতি হয়
জ্বরে আনারসের উপকারিতা
আনারস খাওয়ার সঠিক সময়
রাতে আনারস খেলে কি হয়
আনারস এবং দুধ এক সঙ্গে খেলে কি হয়
লেখকের শেষকথাঃ
আনারস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আগে আনারসকে মৌসুমী ফল হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু এখন সারা বছরই পাওয়া যায় টক স্বাদের এই ফল। খেতে টক হলেও হাজার গুণে ভরা আনারস। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে আনারস। আনারস বহু শতাব্দী ধরে ঔষধি উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক রাখে।
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এ সব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শুধু কী তাই আরও আছে অনেক উপকারিতা।
১.হজমে সহায়তা করেঃ আমাদের দেহের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে এটি খুব ভালো কাজ করে। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন যা আমাদের হজমশক্তিকে অনেক উন্নত করে।
২. ওজন কমায়ঃ আনারসে প্রচুর ফাইবার রয়েছে এবং অনেক কম ফ্যাট। সকালের যে সময়ে ফলমূল খাওয়া হয় সে সময় আনারস এবং সালাদে আনারস ব্যবহার অথবা আনারসের জুস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এটি খেলে ওজনও কমে।
৩. রোগব্যাধি দূর করেঃ আনারস জ্বর ও জন্ডিস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় রোগের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস এই অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
৪.কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহয়তা করে আনারস। আবার আনারস ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। যে কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচির জন্য আনারস খাওয়া যেতে পারে।
৫. দাঁতের সুরক্ষাঃ আনারস খেলে ভালো থাকবে আপনার দাঁত। এতে আছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য উপকারী।
৬. রক্ত পরিষ্কারঃ আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ আনারসের যৌগগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
৮. চোখ ভালো রাখেঃ আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এ রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
৯. কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করেঃ কৃমিনাশক হিসেবেও আনারসের সুনাম আছে। প্রতিদিন সকালে আনারস খেলে কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়।
আনারসের অপকারিতা / পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
১. অ্যালার্জীর আক্রমনঃ আনারস খাওয়ার ফলে অনেক নারী ও পুরুষের দেহে অ্যালার্জী দেখা দিতে পারে। আনারস খাওয়ার ফলে অ্যালার্জীর উপসর্গ হল ঠোঁট ফুলে যাওয়া ও গলায় সুরসুরি বোধ হওয়া।তাই আনারস খাওয়ার আগে তা কেটে লবন পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়া উচিত। এভাবে ধুয়ে নিয়ে খেলে কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা।
২. রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়ঃ আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমানে প্রাকৃতিক চিনি। আনারসের ২ টি চিনি উপাদান সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু দেহের ক্ষতি, এটি খাওয়ার উপর নির্ভর করে। এবং আনারসের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি আমাদের দেহে রক্তের চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
৩. কাঁচা আনারস মুখ ও গলার জন্য ক্ষতিকরঃ কাঁচা আনারসে আছে অনেক বেশি পরিমানে এসিডিটি যা আমদের মুখের ভিতর ও গলায় শ্লেষ্মা তৈরি করে। এবং ফলটি খাওয়ার পর মাঝে মাঝে অনেকের পেটে ব্যথাও হতে পারে।
৪। দাঁতের জন্য ক্ষতিকরঃ আনারস আমাদের দাঁতের জন্য উপকার করলেও আবার অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। যাদের দাতে কেভিটিস ও জিংজাইভেটিভস এর সমস্যা আছে তাদের আনারস না খাওয়াই ভালো। তবে শেষ কথা না বললেই নয়। যে কোনো মৌসুমী ফল অল্প হলেও খাওয়া উচিত।
আনারসের পুষ্টিগুণ
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আনারস। পুষ্টিগুণে আনারস অতুলনীয়। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যা শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
১০০ গ্রামে আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। এতে ভিটামিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম রয়েছে লৌহ।
আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিস জাতীয় অসুখ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হজমে সাহায়তা করে। সঙ্গে শরীরের অন্য অঙ্গগুলোকেও ভালো রাখে।
দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে আনারস। আবার আনারস ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। যে কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচির জন্য আনারস খাওয়া যেতে পারে।
আনারস খেলে ভালো থাকবে আপনার দাঁতের মাড়ি আর দাঁত দুটোই। আর ভুলে যাবেন না এতে আছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য উপকারী।
আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের নানা রকম অসুখে থেকে আনারস দেয় সুরক্ষা।
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। ত্বকের অসুখ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির যে কোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনারস। দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এছাড়াও আনারসের প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়
দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে। ফলে রক্ত শোধনে এই ফলের ভূমিকা রাখে।
আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত। তবে অবশ্যই অ্যাসিডিটি থাকলে খালি পেটে আনারস ক্ষতি করতে পারে।
প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে আনারসে। যা হাড় ও কানেক্টিভ টিস্যুকে করে শক্তিশালী। এক কাপ আনারসের জুস আমাদের দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭৩ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম।
খালি পেটে আনারস খেলে কি হয়
রোজ সকালে খালি পেটে ফল খেলে তা উচ্চ রক্তচাপ এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। কারণ সকালে ফল খেলে আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, মিনারেল ও ভিটামিন পায়। ফল খেলে হার্ট সুস্থ থাকে তাই নিয়মিত সকালের নাস্তায় ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
খালি পেটে সকালবেলা আনারস খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আনারসে এনজাইম ব্রমেলেইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি উপাদান আছে। যা রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকর।
খালি পেটে আনারস খেলে যাদের গ্যাষ্টিক আছে তাদের গ্যাষ্টিক আরও বেড়ে যেতে পারে। কৃমি হলে খালি পেটে আনারস উপকারী।
খালি পেটে সকালবেলা আনারস পানি খেলে শরীরের উপকার হয়। আনারসে আছে এনজাইম ব্রমেলেইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি। দুটো উপাদানই রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকর। অন্য রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আনারস খাবেন।
আনারস খেলে কি ক্ষতি হয়
আনারস সুস্বাদু একটি মৌসুমি ফল। অনেকেই এটি পছন্দ করেন আবার অনেকে খেতে চান না। আনারস মানব দেহের জন্য উপকারি হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না
রক্ত তরল রাখার ঔষধ হিসেবে আনারস ব্যবহৃত হয়। আনারস দেহে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করে। এজন্য যাদের আনারস খেলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তারা আনারস খাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।
এলার্জি
আমাদের মাঝে অনেকেরই আনারসে এলার্জি রয়েছে যেমন, ফুস্কুরি ও চুলকানি ইত্যাদি। তাই যাদের আনারসে এলার্জি আছে তারা অবশ্যই থেকে দূরে থাকতে পারেন।
পেট ব্যথা
আনারসে প্রচুর পরিমাণে এসিড রয়েছে। যার ফলে খালি পেটে এটি খেলে পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। প্রচলিত আছে, আনারস ও দুধ একসঙ্গে খেলে মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আনারস ও দুধে এমন কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া পাওয়া যায়নি যার ফলে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। আসলে এটি একটি সামাজিক কুসংস্কার। তবে কোন গ্যাষ্ট্রিকের রোগী যদি খালি পেটে আমারস ও দুধ একই সময়ে পান করে, তাহলে তার পেটে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
রক্তে সুগার
আনারসে প্রচুর পরিমাণে সুগার বা চিনি রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগিদেরকে চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। যার কারণে ডায়াবেটিস আক্রান্তরা যদি আনারস খায় তবে তার দেহে সুগার বা চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
জ্বরে আনারসের উপকারিতা
ঋতু পরিবর্তনের ফলে এখন সব বয়সের মানুষ ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। হুটহাট করে ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। হঠাৎ জ্বর এলেই ওষুধ খেয়ে থাকেন অনেকে।তবে জ্বর এলেই কী ওষুধ খাবেন। একদম নয়। এমন অনেক খাবার আছে যা খেলে জ্বর এমনিতে সেরে যায়।
জ্বর ভালো হওয়ার জন্য আনারস খুবই উপকারি।জ্বরে খেতে পারেন আনারস। আর কারো জ্বর যদি তিন দিনের অধিক থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত সর্দি-কাশি বা ভাইরাল জ্বরের চিকিৎসা ঘরেই হয়ে থাকে। তাই জ্বরের তীব্রতা কমানোর পাশাপাশি রোগীর দেহের সঠিক পুষ্টি চাহিদা বজায় রাখার জন্য জ্বরের পথ্য ব্যবস্থাপনা জানা খু্বই প্রয়োজন।
গরম-ঠাণ্ডার জ্বর, জ্বর-জ্বর ভাব দূর করতে আনারস খেতে পারেন। এতে রয়েছে ব্যথা দূরকারী উপাদান। আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য খালি পেটে (সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে) আনারস খাওয়া উচিত।
আনারস জ্বরের ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারি। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। প্রোটিন খাবার এ ফলটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়। আনারস টাটকা খাওয়াই ভালো।
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আনারস। পুষ্টিগুণে আনারস অতুলনীয়। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। জ্বরে শুধু ওষুধ খেলেই হবে না। জ্বর সারাতে আনারস খুবই কাজে দেয়। তাই জ্বরে আনারস জুস খেতে পারেন।
জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। জ্বর সেরে উঠতে যেমন সময় লাগে, তেমনি সময় লাগে জ্বর সেরে যাওয়ার পর দুর্বলতা কাটাতে। দুর্বলতা কমানোর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়।
আনারস খাওয়ার সঠিক সময়
আনারস খাওয়ার মজা দিনের যে কোন সময় উপভোগ করা যেতে পারে, তবে কিছু লোক খাবারের মধ্যে বা ফলের সালাদের অংশ হিসাবে এটি খেতে পছন্দ করে। আনারস যখন পাকা এবং মিষ্টি হয় তখন খাওয়া ভাল, কারণ এটি সবচেয়ে স্বাদযুক্ত এবং উপভোগ্য। যাইহোক, কিছু লোক খালি পেটে আনারস খাওয়া এড়াতে পছন্দ করতে পারে, কারণ এর অম্লীয় প্রকৃতি কখনও কখনও কিছু ব্যক্তির জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
খালি পেটে সকালবেলা আনারস পানি খেলে শরীরের উপকার হয়। আনারসে আছে এনজাইম ব্রমেলেইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি। দুটো উপাদানই রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকর। অন্য রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আনারস খাবেন।
আনারস গ্রীষ্মের মরসুমে (মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত) তাজা পাওয়া যায়। আনারস বা অন্য কোনো ফল খাওয়ার সেরা সময় হল সকালের নাস্তা বা খালি পেটে কারণ এটি আপনার শরীরের সিস্টেমকে ডিটক্সিফাই করে। সকাল সকাল সবচেয়ে ভালো সময় কারণ আনারসে প্রচুর পরিমাণে তরল ফল থাকে তাই আপনি যদি খুব সকালে খেয়ে থাকেন তাহলে সারাদিন আপনার শরীর কখনো পানিশূন্য হয় না।
রাতে আনারস খেলে কি হয়
আনারসের নানা উপকারিতার কথা আপনার জানা আছে নিশ্চয়ই। এই ফল আমাদের শরীরের নানা কাজে লাগে। তবে এটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ হওয়ায় তা রাতের বেলা এড়িয়ে চলাই উচিত। রাতে আনারস খেলে তা পেট ফাঁপা সহ নানা সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনকী দেখা দিতে পারে বদহজমও।
আনারস অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে রাতের বেলা একদমই খাবেন না। আনারসও কমলালেবুর মতো একটি অ্যাসিডিক ফল, যা থেকে অম্বল হতে পারে। এছাড়াও রাতে আনারস খেলে পেট ফাঁপা হতে পারে, যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
আনারস এবং দুধ এক সঙ্গে খেলে কি হয়
অনেকেই মনে করেন, আনারস এবং দুধ একসঙ্গে খেলে বিষক্রিয়া হয়। এটা কুসংস্কার ছাড়া কিছুই না। আনারস একটি অ্যাসিটিক এবং টকজাতীয় ফল। দুধের মধ্যে যেকোনো টকজাতীয় জিনিস দিলে দুধ ছানা হয়ে বা ফেটে যেতে পারে। ফলে হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপা বা পেট খারাপের মতো সমস্যা। তবে এতে বিষক্রিয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
লেখকের শেষকথাঃ
বন্ধুরা এতক্ষনে জেনে গেছেন আনারসের উপকারিতা ও নানা পুষ্টিগুণের কথা। উপরে বর্ণিত নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে আনারস খেলে উপকার নিশ্চয়ই পাবেন। নানা গুণে গুণান্বিত এই আনারস যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টির আধার। এতো পুষ্টি থাকার পরও কিছু মানুষ এই ফলটি খেতে চান না।
একটা কথা মনে রাখবেন যখন যেই মৌসুমের ফল, সেই মৌসুমের ফল অল্প পরিমান হলেও খাবেন, যদিও আপনার সেটি খেতে ভালো না লাগে তবুও। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মানুষের শরীরের পুষ্টির চাহিদা অনুযায়ী একেক মৌসুমে একেক ফল আমাদের জন্য নেয়ামত স্বরুপ পাঠিয়েছে। আনারস খান, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url