শসা খাওয়ার উপকারিতা এবং শসার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন
শসা খায় না বা পছন্দ করে না এমন মানুষ নাই বললেই চলে। কিন্তু আমরা সবায় কি জানি শসার উপকারিতা এরং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ? হ্যাঁ বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটিতে শসা উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
শুধুকি খাবারের স্বাদ বাড়াতেই বা মেহমানদারি করার জন্যই এই শসার ব্যবহার ? আসুন জেনে নেয়া যাক শসার যত সব উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।
সূচীপত্রঃ
শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসার পুষ্টিগুণ
রাতে শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা খাওয়ার অপকারিতা
খালি পেটে শসা খাওয়ার উপকারিতা
ওজন কমাতে শসার উপকারিতা
শসা খাওয়ার নিয়ম
শসা খাওয়ার সঠিক সময়
ত্বকে শসার উপকারিতা
লেখকের শেষকথাঃ
শসা খাওয়ার উপকারিতা
হাড় মজবুত করেঃ শসাতে আছে ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। ভিটামিন কে হাড়ের ক্ষয়ের ঝুঁকি কমাতে এবং ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
হজমে সহায়তাঃ শসার ভিটামিন, খাদ্য আঁশ এবং পানি খাবার হজমে সাহায্য করে। প্রতিদিন শসা খাওয়া হলে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
চুল ও নখের উন্নতিঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং এর প্রভাব দেখা যাবে চুল ও নখে।
হৃদযন্ত্রের সুস্থতাঃ শসাতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন কে। এই তিনটি উপাদান হৃদযন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত শসা খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তে ক্যালসিয়াম প্রবাহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমায়ঃ ভিটামিন বি ওয়ান, ভিটামিন বি ফাইভ এবং ভিটামিন বি সেভেন শসাতে মিলে। যা উদ্বেগ ও চাপ কমাতে সাহায্য করে।
আর্দ্রতা রক্ষাঃ শসার ৯৫ শতাংশই পানি যা শরীরকে আর্দ্র রাখতে ও পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পানি পানের কথা ভুলে গেলেও প্রতিদিন শসা খাওয়া হতে পারে উপকারী।
ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল করেঃ এর ঠাণ্ডা ও আর্দ্র রাখার উপাদান মলিন ও শুষ্ক ত্বক সতেজ করতে সহায়তা করে। এর ভিটামিন বি-নায়াসিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি এবং জিংক ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষা করে। বিউটি ক্রিমের বদলে নিয়মিত শসা খাওয়া ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।
হরমোনের ভারসাম্য রক্ষাঃ শসাতে আছে ফসফরাস যা হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী মূল পুষ্টি উপাদান। শসাতে প্রায় চার শতাংশ ফসফরাস থাকে যা প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রয়োজন। ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় শসা রাখুন।
শসার পুষ্টিগুণ
শসায় রয়েছে ভিটামিন কে, সি, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, রাইবোফ্লাভিন, বি সিক্স, ফোলেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক প্রভৃতি। শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতেও এর জুড়ি নেই। এ ছাড়া খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও উপকারী ভূমিকা পালন করে। ১০০ গ্রাম শসাতে থাকে ১৩ ক্যালরি।
রাতে শসা খাওয়ার উপকারিতা
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে নিলে রাতে ঘুম ভালো হয়। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা হালকা লাগে। মাথাধরা থেকে মুক্তি মেলে। ম্যাজম্যাজ করা শরীর ফ্রেস লাগে।
শসা হজম হতে সময় নেয় তাই রাতে শসা বেশি খাবেন না। ঘুম খারাপ- রাতে বেশি শসা খেলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। শসায় বেশি জল থাকে, যা পেটে ভার করে। যাদের হজমশক্তি দুর্বল তাদের খাওয়া উচিত নয়- যাদের হজম সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তাদের শসা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
শসা খাওয়ার অপকারিতা
শসা হচ্ছে, একটি লো ক্যালরি বা খুব কম ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। শসার মধ্যে পানির পরিমাণ অনেক। ১০০ গ্রাম শসাতে পানির পরিমাণ ৯৪.৯ গ্রাম এবং ক্যালরি ২২ কিলো ক্যালরি এছাড়াও শসা একটি ভালো মানের এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার। শসাতে কিছু পরিমাণ ভিটামিন, মিনারেলস এবং আঁশ থাকে।
কিন্তু ভাল একটি খাবার শসাও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায় যখন কেউ মনে করে শুধুমাত্র শশা খেয়ে ওজন কমানো যায়। শসাকে ওজন কমানোর একমাত্র ওষুধ মনে করে। আমরা ডায়টেশিয়ানরা ডায়েট চার্টে শসাটা রাখে। কিন্তু শুধু শসা খেয়ে আমরা ওজন কমাতে বলি না। অথচ অনেকেই ওজন কমানোর জন্য শসাকে ঔষধ হিসবে ধরে নিয়ে সারাদিন ধরে শসা খেতে থাকে। যখনই ক্ষুধা লাগে শসা খেতে শুরু করে।
যেহেতু শসা একটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার তাই শসা কেন অন্য যেকোনো কম ক্যালরি যুক্ত খাবার একটানা কয়েকদিন খেতে থাকলে ওজন কমে যাবে। কিন্তু সেই সঙ্গে আপনার শরীরে দেখা দেবে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদনের ঘাটতি। অন্য খাবার কম খেয়ে সারাদিন বা অতিরিক্ত পরিমানে শসা খেতে থাকলে বা ক্ষুধা লাগলেই শসা খেলে বদহজম, গ্যাসের সমস্যাসহ পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়।
প্রায় এক মাস ধরে ওজন কমাতে সারাক্ষণ শসা খেলেই ঘটবে নানা বিপত্তি। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে যাবে। কাজ করার শক্তি পাবেন না। রক্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও রক্তে গ্লুকোজের অভাবে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে।
খালি পেটে শসা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে শসার জল বা জুস, সালাড খেলে শরীর ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকে। এটি শরীরকে ডিটক্স করার জন্য সেরা পানীয় হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
ওজন কমানো শসার রসের অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারের মধ্যে একটি। এটি সহজেই সোডা পানীয়ের জায়গা নিতে পারে। খালি পেটে শসার জল ওজন কমানোর জন্য দুর্দান্ত ফিলার হতে পারে। তাই ওজন কমানোর জন্য শসার রস পানের পরামর্শ দেন খাদ্য বিশেষজ্ঞরা।
ওজন কমাতে শসার উপকারিতা
শসার অনেক গুণ রয়েছে ৷ শসার মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম থাকে ৷ এদিকে শসায় সন্ধান মেলে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে এবং ফোলেটের ৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফোলেট থাকার জন্য এটি অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতেও বিশেষ ভূমিকা নেয় ৷ এছাড়া শসার জুস ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে খেলে মাত্র ২০ দিনের মধ্যেই ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন কমিয়ে ফেলা ।
শসা খাওয়ার নিয়ম
শসা আপনি আপনার অন্য যেকোনও খাবারের সঙ্গে যোগ করে খেতে পারেন। যেমন— সকালের নাস্তার পর, দুপুরের খাবারের সঙ্গে সালাদ হিসাবে, বিকালে নাস্তার সঙ্গে, টক দইয়ের সঙ্গে কিংবা রাতের খাবারের সঙ্গে।
অন্য খাবারের সাথে শসা থাকলে খাবার সুস্বাদু হয়। এছাড়া খাবারটা আপনার শরীরে ধীরে ধীরে হজম হয়; যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। তখন রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সম্পূর্ণ খাবারের ক্যালরি আপনার শারীরিক গঠন, বয়স, শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে ঠিক করে নিতে হবে।
সকালে যদি শসা খাওয়া হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। সকালে না খেয়ে থাকলে দুপুরের খাবারে অবশ্যই শসা খান। রাতে শসা খেলেও অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই সবসময় সকালে বা দুপুরের খাবারে শসা খাওয়া শ্রেয়।
খালি পেটে নয়, ভারী খাবার খাওয়ার পরেই শসা খান। সকাল বা বিকেলের টিফিনে শসার রায়তা, দই-শসা রাখতে পারেন। শসা দিয়ে বানানো স্মুদিও খাওয়া যেতে পারে। তবে অনেকের ধারণা রয়েছে, তেল-মশলার খাবার বা ভাজাভুজির সঙ্গে শসা খেলে তেল-মশলার ক্ষতিটা শরীরে লাগে না।
শসা খাওয়ার সঠিক সময়
আমরা আগেই বলেছি শসা খাওয়ার পরে হজম হতে একটু বেশি সময় নিয়ে থাকে। তাই শসা রাতে ঘুমানোর ঠিক আগে কখনোই খাওয়া উচিত হবে না। তবে প্রতিদিন রাতে খাবারের ৩০ মিনিট আগে খেলে তা অনেকক্ষণ পেটে থাকবে এবং রাতে খাবার অনেকটাই হালকা করবে যার ফলে মানুষের ওজন কমাতে সহায়তা করবে।
আর কখনোই সকালে খালি পেটে শসা খাওয়া একদমই উচিত নয়। কারণ শসায় বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম, ব্লাড প্রেশার এর জন্য দায়ী থাকে তাই সকালে খালি পেটে শসা খেলে ব্লাড প্রেশার অ্যাটাক হতে পারে। আপনারা প্রতিদিন দুপুরে শসার সালাত তৈরি করে খাওয়া শুরু করতে পারেন।
ত্বকে শসার উপকারিতা
- উজ্জ্বল ত্বকের জন্য রোদে পোড়া দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করতে পারে শসা।
- দাগমুক্ত ত্বকের জন্য শসার রসে প্রাকৃতিক ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বকের কালচে দাগ দূর করতে পারে।
- হাইড্রেটেড ত্বকের জন্য শসায় প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি।
- ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য
- ত্বক টানটান করে
- চোখের ফোলা ভাব দূর করে
- ব্রণ প্রতিরোধ করে
- ত্বকের প্রদাহ কমায়
- সানবার্নের চিকিৎসা করে
- ত্বক শক্ত করে
- ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে
- অকাল বার্ধক্য রোধ করে
- সেলুলাইট কমাতে পারে
লেখকের শেষকথাঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে, শসায় প্রচুর পরিমাণে পানিসহ ভিটামিন সি এবং কে রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। শসায় যে পানি থাকে, তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাড়ুর মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খাওয়ায় কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায়।
উপরের আর্টিকেলটি নিশ্চয় মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন এবং শসা খাওয়ার উপকারিতা ও সঠিক নিয়ম এবং সময় সম্পর্কে জেনে গেছেন। আজকের আলোচনা থেকে সামান্য কিছু উপকার পেলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন। নিয়মিত নিয়ম করে শসা খান, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url