চুল পাকে কোন ভিটামিন / হরমোনের অভাবে বিস্তারিত জেনে নিন
অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়া নিয়ে সমস্যায় আছেন ? কোন ভাবেই চুল পাকা বন্ধ করতে পারছেন না ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আসুন চুল পাকে কোন ভিটামিন / হরমোনের অভাবে বিস্তারিত জেনে নিন।
বন্ধুরা আজকের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আরো জানতে পারবেন- বর্তমানে অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েদের চুল পাকার অন্যতম কারণ হিসেবে অসুস্থ্যতা, ঔষধের প্রভাব ও খাদ্যাভাস কতটা দায়ি তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
চুল হচ্ছে সৌন্দর্য্যের প্রতীক। ছেলে কিংবা মেয়ে সবারই স্বপ্ন থাকে মাথা ভর্তি চুল থাকবে। তবে সেই চুল যেন হয় কালো। আজকের আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন কোন ভিটামিন ও মরমোনের কারনে সাধারনত চুল পাকে, কি ধরনের খাবার খেলে সাদা চুল কালো হয়।
কিছু ভিটামিন আছে যা চুল গজাতে সাহায্য করে, আবার কিছু ভিটামিন আছে চুল পড়া রোধে সহায়তা করে। আরোও আলোচনা করা হয়েছে চুল পাকা সমাধানে কি কাজ করবেন। কপার এবং আয়রনের কারণেও অকালে চুল পাকতে পারে সে সম্পর্কেও এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
সূচীপত্রঃ
কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পেকে যায়
চুল পাকে কোন হরমোনের অভাবে
কি খেলে সাদা চুল কালো হয়
কোন ভিটামিন চুল গজাতে সাহায্য করে
ভিটামিন বি ৬ ও ১২ যুক্ত খাবার
ভিটামিন বি ৩ যুক্ত খাবার
বায়োটিন যুক্ত খাবার
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
কপার সমৃদ্ধ খাবার
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার
কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে যায়
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়
অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান
লেখকের শেষকথা
কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পেকে যায়
আগেকার দিনে দেখেছি সাধারনত বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুলে পাক ধরে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার আগেই চুল পেকে যাচ্ছে। এটা হয় মুলত অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাব হলেও চুল পেকে যেতে পারে। ভিটামিন বি৬,বি১২ ও ভিটামিন ডি এর অভাব হলে চুল ধুসর হয়ে যেতে পারে। ভিটামিন সি এর অভার হলে চুল দুর্বল ও সাদা হয়ে যায়।
কম বয়সে চুল পাকার কারন
- বংশগত কারনে এই সমস্যাটি হতে পারে। আবার রক্ত সর্ম্পকীয় কোন আত্মীয় স্বজনের মধ্যে চুল পাকার ইতিহাস থাকলেও এই সম্যাটি হতে পারে।
- হরমোনঘটিত কোন সমস্যা থাকলেও চুল পেকে যেতে পারে। যদি কারো হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম এই দুই ধরনের সমস্যা থাকলেও চুল পেকে যেতে পারে। রক্তে যদি থাইরয়েড হরমোন কমে যায় তাহলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলা হয় আর রক্তে এই হরমোনের পরিমানে বেড়ে গেলে একে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হয়।
- মানসিক চাপ, অবসাদগ্রস্ততা ,দুঃখ, কষ্ট, দুঃচিন্তা থাকলেও চুল পেকে যেতে পারে। বলা হয়ে থাকে সেরাটোনিন হরমোন তারুন্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এই হরমোন মানসিক চাপ, অবসাদগ্রস্ততা ,দুঃখ, কষ্ট, দুঃচিন্তা কমিয়ে দেয়।ফলে চুল থাকে কালো ও ঝলমলে।এটির অভাবে চুল পেকে যায়।
- আপনি যদি চুলে অতিমাত্রায় রং ব্যবহার করেন তাহলে রংয়ের অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার চুলকে সাদা করে দেয়।
- ভেজাল খাবার, পরিবেশ দুষনের কারনে চুল পেকে যেতে পারে।
- উচ্চমাত্রার প্রোটিন, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড গ্রহন, কোমল পানীয় পান ও কায়িক শ্রমের মাত্রা কমে গেলে এবং বয়স অনুযায়ী ওজন বেড়ে গেলে চুল অকালে পেকে যেতে পারে।
- রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় তাহলে অকালে চুল পেকে যেতে পারে।
- শারীরিকভাবে আপনার ভিটামন বি ১২, ৬ ,৩ ও বায়োটিন এবং ভিটামিন ই, আয়রন, কপারের অভাবে অকারে চুল পেকে যেতে পারে।
চুল পাকে কোন হরমোনের অভাবে
আমাদের সকলের ত্বকে মেলানোসাইট নামে কোষ থাকে এই কোষগুলো মেলানিন নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ উৎপাদন করে থাকে। যাদের শরীরে মেলানিনের পরিমান কম তাদের গায়ের রং ফর্সা আর যাদের শরীরে মেলানিনের পরিমান বেশি তাদের গায়ের রং হয় কালো। চুলের ক্ষেত্রেও যাদের চুলের গোড়ায় মেলানোসাইট কোষ মেলানিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাদের চুল সাদা হয়।
এই সমস্যা যেকোনো বয়সে হতে পারে। আমাদের দেশের মেয়েদের মধ্যে ধারনা আছে প্রতিদিন তেল না মাখলে চুল পেকে যায়। কিন্তু তেল মাখার সাথে চুল পাকার কোন সম্পর্ক নেই। এখনো পর্যন্ত চুল কালো করার কোনো ঔষধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে অস্থায়ী সমাধান হিসেবে কলপ ব্যবহার করে চুল কালো করা যায়। কোন রোগের কারনে যদি চুল সাদা হয়ে যায়।
তাহলে তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে সাদা চুল কালো হতে পারে। আমাদের দেশের বিভিন্ন কম্পানী চুল কালো করার বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে কিন্তু এগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই সকল ঔষধ ও তেল মাখলে সাময়িক কালো প্রলেপ পড়ে চুল কালো দেখায় যা দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে চুল ও মাথার ত্বকের ক্ষতি করে।
কি খেলে সাদা চুল কালো হয়
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন থাকে যা চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে বেশ উপকারী। দৈনিক অর্ধেক গ্লাস গাজরের রস খেলে পাকা চুলের সমস্যার থেকে মুক্তি পাবেন। ছোলায় থাকে বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ছোলা খেলে সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি কালো চুলও পাওয়া যায়।
তি দিন সকালবেলা গুড় ও মেথি খেতে পারলে যে কোনও চুলের সমস্যার গোড়া থেকে সমাধান হয়। পাকা চুলের সমস্যায় সমাধান মিলতে পারে এই উপায়। সামান্য একটু গুড়ের সঙ্গে কয়েক দানা মেথি মিশিয়ে খেয়ে নিন। তবে ডায়াবিটিস থাকলে গুড় খাবেন না। চুল কালো রাখতে কালো তিল বেশ উপকারী।
সপ্তাহে তিন / চার দিন এক চামচ কালো তিল খেলে মিলবে সুফল। বাদাম খেলেও পাকা চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পাশাপাশি বাদামের চুলে তেল মাখলেও উপকার পাবেন।
কোন ভিটামিন চুল গজাতে সাহায্য করে
ভিটামিন বিঃ সমৃদ্ধ খাবার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। তাই চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার জন্য মেনুতে রাখতে পারেন ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার। ভিটামিন বি৭ এবং ভিটামিন বি১২ নতুন হেয়ার সেল বা চুলের কোষ গঠনে সাহায্য করে।
একগুচ্ছা কালো চুল পাওয়া কি মুখের কথা ? ইদানিং চুল নিয়েই মাথার চুল ছেঁড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সবার অভিযোগ সারাবছরই এত চুল পড়ছে যে নতুন চুল গজানোর সুযোগ পাচ্ছে না। শ্যাম্পু, সিরাম, তেল, পেঁয়াজের রস লাগিয়েও কোনও উপকার পাওয়া যাচ্ছে না।
সেই সঙ্গে কখনও খুসকি, কখনও ডগাফাটা রুক্ষ চুল, একের পর এক সমস্যা লেগেই থাকে! এ সব সমস্যা সামলানোর একাধিক উপায় রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আজকের ব্যস্ত দিনে অত কিছু করার সময় কোথায়! কিন্তু জানেন কি এই কয়েকটি ভিটামিনের গুণেই দারুণ সুন্দর চুলের অধিকারী হতে পারেন আপনি!
ত্বকের জন্য ভিটামিন A খুবই ভালো, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ভিটামিন a-এর মধ্যে থাকা রেটিনল চুলকেও ভালো রাখে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকে সেবাম। যা চুলকে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। বায়োটিন চুলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন। এটি ভিটামিন বি৭ নামে পরিচিত। বায়োটিনের জন্য চুলের ঘনত্ব বাড়ে। সেই সঙ্গে চুলের গ্রোথও বজায় থাকে।
শরীরের জন্য ভিটামিন সি খুবই ভালো। তেমনই চুলের জন্যেও খুব ভালো। ভিটামিন সি চুলের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে। সেই সঙ্গে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় আয়রন আসে ভিটামিন সি থেকে। এতে চুল পড়া কমে। তৈরি হয় নতুন কোলাজেন। ভিটামিন ই প্রাকৃতিক ভাবে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে।
সেই সঙ্গে রক্ত সঞ্চালনের কাজও ঠিক রাখে ভিটামিন ই। ভিটামিন ই চুল বাড়তে সাহায্য করে, চুলের স্ক্ল্যাপও ভালো রাখে। ভিটামিন ডি হাড়ের গঠনের জন্য খুবই জরুরি। তেমনই চুলের গঠন, নতুন চুল গজানো এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন বি ৬ ও ১২ যুক্ত খাবার
চিকেন লিভার বা সকলের অতি পরিচিত কলিজায় রয়েছে ভিটামিন বি ৬-এর খনি। এমনকী এতে ভিটামিন বি ১২-ও পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। শুধু তাই নয়, একাধিক প্রয়োজনীয় খনিজের ভাণ্ডার হল চিকেন লিভার। তাই তো স্বাস্থ্যের ফেরাতে হাল, নিয়মিত মুরগির মেটে খাওয়া দরকার।
গাজরের মতো একটি উপকারি সবজি নিয়মিত খেলেই আপনার শরীরে ভিটামিন বি ৬ এর চাহিদা অনেকটা পূরণ হয়ে যাবে। পালং শাকে প্রর্যাপ্ত ভিটামিন বি ৬ থাকে। নিয়মিত এই শাক খাবারের তালিকায় রাখা উচিৎ।
একটা মাঝারি সাইজের মিষ্টি আলু খেলেই ভিটামিন বি ৬-এর দৈনিক চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। শুধু তাই নয়, এই সবজি হল ভিটামিন এ, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবারের ভাণ্ডার। তাই তো হেসেখেলে নীরোগ জীবন কাটাতে চাইলে রোজের পাতে এই আলুকে জায়গা করে দিতেই পারেন।
কোন কোন খাবারে পাবেন বি ১২
প্রাণীজ প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস ও ডিমে মেলে ভিটামিন বি ১২।
দুধের পাশাপাশি দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই ও পনিরে পাবেন এই ভিটামিন।
সিরিয়াল ও সয়ামিল্কেও পাওয়া যাবে ভিটামিন বি ১২।
গাঢ় সবুজ শাক এই ভিটামিনের উৎস।
বাদাম, রুটি, পাস্তায় মিলবে।
পেতে পারেন বিভিন্ন ফল থেকেও।
ভিটামিন বি ৩ যুক্ত খাবার
রেড মিটের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৩। এছাড়াও চিকেন, মাছ, ব্রাউন রাইস, সিরিয়ালস, রুটি, বিভিন্ন বাদাম, বীজ, শিম, কলা-এর মধ্যেও থাকে ভিটামিন বি৩। ভিটামিন বি-৩ এর অধিক ঘাটতি শরীরে অনেক রকম গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ভিটামিন বি-৩ এর ঘাটতি থেকে পেলাগ্রা হতে পারে।
পুষ্টিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে ভূমিকা রয়েছে নিয়াসিন বা ভিটামিন বি৩- এর। ডিএনএ তৈরিতে, ভালো কোলেস্টেরল, চর্বি তৈরি করতে, মাথাব্যথা, ক্লান্তি দূর করে ভিটামিন বি ৩ শরীরের যাবতীয় কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিয়ম মাফিক প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন-সি এসব নিয়মিত ভাবে খেতে হবে।
একই ভাবে শরীরের বৃদ্ধি এবং অন্যান্য কাজের জন্য জরুরি হল ভিটামিন বি-৩। যা নিয়াসিন নামেও পরিচিত। ভিটামিন বি-৩ হল জলে দ্রবণীয় ভিটামিন বি, যা কিছু খাবার এবং পানীয়ের মধ্যে পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তা সম্পূরক হিসেবেও কাজ করে। কেন শরীরের জন্য ভিটামিন বি ৩ এত গুরুত্বপূর্ণ? এই নিয়াসিন জলে দ্রবণীয় এবং অতিরিক্ত পরিমাণ প্রস্রাবের সঙ্গে তা নির্গত হয়।
সেই সঙ্গে তা শরীরের এনজাইম হিসেবেও কাজ করে। শরীরের পুষ্টিতে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে এবং কোলেস্টেরল, চর্বি তৈরি করতে ভূমিকা রয়েছে এই নিয়াসিনের। DNA তৈরি এবং মেরামত করতে সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কিন্তু কাজ করে এই ভিটামিন বি।
শরীরে ভিটামিন বি৩ এর অভাব হলে সেখান থেকে অকারণ টেনশন, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, হ্যালুসিনেশন এসব লেগেই থাকে। হতে পারে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মত সমস্যাও। আর এই সব সমস্যা-লক্ষণ এড়াতেই নিয়ম করে ভিটামিন বি খেতে হবে। রোজকার পাতে যেন ভিটামিন বি থাকে সেদিকে অবশ্যই নজর রাখুন।
বায়োটিন যুক্ত খাবার
কাঠবাদাম, চিনেবাদাম, আখরোট, সূর্যমুখী ফুলের বীজ এবং ফ্ল্যাক্সসিড বা তিসির মতো খাবার বায়োটিনে সমৃদ্ধ। প্রতি দিন একমুঠো বাদাম এবং বিভিন্ন বীজের মিশ্রণ খেলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়োটিন পৌঁছয়।
মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলু বায়োটিন-সহ একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ মূল সবজি
মাছঃ যে সব মাছে তেলের পরিমাণ বেশি, সেই ধরনের মাছে বায়োটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
ডিমঃ ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, প্রোটিন, আয়রন ও ফসফরাস পাওয়া যায় । বিশেষ করে ডিমের কুসুমে বায়োটিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । ডিমের কুসুমে ভিটামিন বি ঘনত্ব পাওয়া যায়, যা বায়োটিনের ভালো উৎস ।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার
ত্বক ও চুলের খেয়াল রাখতে ডায়েট ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার রাখার দরকার। এর জন্য আপনি আমন্ড, টমেটো, বাদাম, সূর্যমুখীর দানা, আম, গাজর, ক্যাপসিকাম, সবুজ শাকসবজি খেতে পারেন। ডায়েট ছাড়াও আরও এক উপায়ে ভিটামিন ই কাজে আসতে পারে আপনি রূপচর্চায়। তা হল ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
১। কলিজা আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে কলিজা।
২। ডার্ক চকলেট আপনারা সবাই জেনে খুশি হবেন যে ডার্ক চকলেট আমাদের জন্য ভালো।
৩। ছোলা এক কাপ ছোলাতে ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং এতে প্রোটিন ও থাকে।
৪। কুমড়ার বীচি এক কাপ কুমড়ার বীচিতে ২ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
৫। ডাল- লাল মাংস
৬। পালং শাক
৭। সিদ্ধ আলু
৮। বীট- কাঁচা কলা
কপার সমৃদ্ধ খাবার
ঝিনুক এবং অন্যান্য শেলফিশ, গোটা শস্য, মটরশুটি, বাদাম, আলু এবং অঙ্গের মাংস (কিডনি, লিভার) তামার ভাল উৎস। গাঢ় পাতাযুক্ত সবুজ, শুকনো ফল যেমন প্রুন, কোকো, কালো মরিচ এবং খামিরও খাদ্যতালিকায় কপার এর উৎস।
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার
- বিভিন্ন শাক। যেমনঃ পালং শাক, পুঁইশাক, পাট শাক, কচু শাক, মেথি শাক, সজনে পাতা, লাল শাক, নটে শাক, সবুজ ডাঁটা শাক, মুলা শাক ও লাউ শাক
- বিভিন্ন সবজি। যেমনঃ বরবটি, মটরশুঁটি, ঢেঁড়স, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ব্রকলি
- ছোলার ডাল, মাসকলাই ডাল ও মুগ ডাল
- বিভিন্ন ফল। যেমনঃ কমলা, পেঁপে, কলা, অ্যাভাক্যাডো, চিনাবাদাম
- কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে যায়
- বেশ কয়েকটি ভিটামিনের ঘাটতি চুল পড়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেঃ
- বায়োটিন (ভিটামিন বি 7) ঘাটতিঃ চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য, একটি ঘাটতি ভঙ্গুর চুল এবং চুলের ক্ষতি হতে পারে।
- ভিটামিন এ-এর ঘাটতিঃ ভিটামিন এ-এর অতিরিক্ত বা অভাব চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
- ভিটামিন ডি এর অভাবঃ চুল পড়া এবং অপর্যাপ্ত ফলিকল স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত।
- ভিটামিন ই এর অভাবঃ এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব চুলের ফলিকলগুলিতে অক্সিডেটিভ চাপে অবদান রাখতে পারে, যার ফলে চুল পড়ে যায়।
- ভিটামিন সি এর অভাবঃ কোলাজেন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে, যা চুলের গঠনের জন্য অপরিহার্য। এর অভাবে দুর্বল চুল ভেঙ্গে যেতে পারে।
- ভিটামিন বি এর ঘাটতি (বিশেষ করে বি১২ এবং বায়োটিন)ঃ চুলের বৃদ্ধি এবং শক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বি ভিটামিনের ঘাটতির ফলে চুল পাতলা হতে পারে বা ক্ষতি হতে পারে।
পর্যাপ্ত ভিটামিন এবং পুষ্টির সাথে একটি সুষম খাদ্য বজায় রাখা চুলের ক্ষতিতে অবদান রাখতে পারে এমন ঘাটতিগুলি প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ। যদি উল্লেখযোগ্য চুল ক্ষতির সম্মুখীন হয় বা ভিটামিনের অভাবের সন্দেহ হয়, তাহলে সঠিক মূল্যায়ন এবং নির্দেশনার জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করার দরকার।
কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়
ঘুম না আসার অন্যতম কারণ হল শরীরে ভিটামিন ডি কম থাকা। ভিটামিন ডি শরীরকে রেস্ট নিতে সাহায্য করে। এই ভিটামিনের অভাব হলে শরীরে অনেক গুরুতর অসুখ হয়। এক্ষেত্রে ঘুমও হয় না অনেকের। এই পরিস্থিতিতে ঠিকমতো ঘুমাতে গেলে ভিটামিন ডি খান। এবার ভিটামিন ডি বেশি পাওয়া যায় মাছ, ডিম, দুধে।
ভিটামিন বি৬ হল খুবই জরুরি এক ভিটামিন। এই ভিটামিন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা উচিত। ভিটামিন বি৬ কম থাকলে শরীরে মেলাটোনিন ও সেরোটোনিন কম বের হয়। এই দুই হরমোন ভালো পরিমাণে থাকলে ঘুম ঠিকমতো হয়। অন্যথায় সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। এবার এই ভিটামিন বি৬ পেতে গেলে কিন্তু চিকেন থেকে শুরু করে দুধ, মাছ ইত্যাদি খেতে হবে।
অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান
পাকা চুলের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে প্রতিদিন ৪ চা চামচ নারিকেল তেল এর সাথে আড়াই চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে উক্ত মিশ্রণ চুলের গোড়ায় এবং মাথার চামড়ায় লাগান। দুই সপ্তাহের মধ্যেই পাকা চুল কালো হয়ে উঠবে। তার পাশাপাশি আপনার মাথার চামড়া সুস্থ থাকবে, খুশকি হবে না এবং চুলও হবে উজ্জ্বল।
১. অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে স্ট্রেস থেকে দূরে থাকুন।
২. অল্প বয়সে চুল পাকা রোধে ধূমপান পরিহার করুন।
৩. শরীরের আদ্রতা বজায় রাখুন।
৪.কপার সমৃদ্ধ খাবার খান।
৫. আয়োডিন যুক্ত খাবার খান।
৬. অত্যাবশ্যকীয় উপাদান প্রোটিন।
৭. পর্যাপ্ত ঘুমান।
৮. বি গ্রুপের ভিটামিনের উপর গুরুত্ব দিন ।
৯. ইম্প্রুভ সার্কুলেশন।
১০. সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন করুন।
লেখকের শেষ কথাঃ
বন্ধুরা আশা করছি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আপনারা জেনে গেছেন চুল পাকা রোধ করতে কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে। আশা করছি উপরের সমস্ত নিয়ম মেনে চললে উপকৃত হবেন। এরপরও যদি কারো সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভূলবেন না।
তাহলে আশা করা যায় আপনাদের চুল পাকা রোধ হবে। কালো একগুচ্ছো চুল সবারই স্বপ্ন। এই স্বপ্ন অনেকের অল্প বয়সেই শেষ হয়ে যায়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই আপনি উক্ত সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি লাভ করে সুন্দর জীবন যাপন করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url