পাইলস হওয়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আপনি কি দীর্ঘ দিন ধরে পাইলস এর সমস্যায় ভূগছেন ? অনেক চেষ্টার পরও ভালো করতে পারছেন না ? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্যই। মনোযোগ সহকারে পড়ে পাইলস হওয়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
পাইলস হওয়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এখানে আরো জানতে পারবেন- কোন কোন খাবার খেলে পাইলস এর হাত থেকে মুক্তি পাবেন। এবং কোন কোন খাবার হালাল হওয়া সত্বেও আপনার জন্য নিষিদ্ধ। কোন কোন অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি ভালো থাকবেন।
ভূমিকা
পাইলস মূলত আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি ব্যাধির নাম। এতে মলদ্বারের ভেতরের শিরা ফুলে ওঠে। ফলে মল ত্যাগের সময় দেখা দেয় প্রদাহ ও রক্তপাত। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এই সমস্যা অধিক বেড়ে যায়। তাই এর থেকে প্রতিকার পেতে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে মল যেন কিছুতেই শক্ত না হয়। তাছাড়া নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যাভ্যাস পারে এই রোগের হাত থেকে পরিত্রাণ দিতে। আজকের আর্টিকেলটিতে এই সব নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। আর দেরি না আসুন জেনে নেয়া যাক-

সূচীপত্রঃ

পাইলস হওয়ার কারণ
পাইলস এর লক্ষণ
পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়
কি খেলে পাইলস ভালো হয়
পাইলসের ঔষধ
পাইলস থেকে চিরতবে মুক্তির উপায়

পাইলস হওয়ার কারণ

পাইলস হওয়ার পিছনে যেসব কারণকে সন্দেহ করা হয় সেগুলো হলো- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া , স্থূলতা, বেশি সময় বসে থাকা, দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকা, হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্য , পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায় ঘাটতি, ব্যায়াম না করা , পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধি , জন্মগত, গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হতে থাকে।

কোলনের শিরায় চাপ পড়ে বলে শিরা স্ফীত হয়। যে কারণে পাইলস হয়। প্রথম দিকে ওষুধ ও সাবধানতা মেনে চললে এই রোগ সেরে যায়। তবে, জটিল আকার ধারণ করলে অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।

পাইলস এর লক্ষণ

পাইলস হলে সাধারণত যে যে লক্ষণ দেখে বোঝা যায়-
(ক) মলের সাথে রক্ত পড়া পাইলসের প্রধান লক্ষণ। এক্ষেত্রে ফেলে না রেখে যখনই দেখবেন আপনার          মলের সাথে রক্ত পড়ছে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
(খ) মলদ্ধারে ব্যথা হওয়া। ফলে, বসতে অসুবিধা হওয়া।
(গ) মলদ্বারের চারপাশে ফুলে যায় ও চুলকানি হয়।
(ঘ) পাইলস এ আক্রান্ত হলে মলদ্বারের রক্তনালীতে চাপ বৃদ্ধি পায় বলে মল নির্গমনের সময় ব্যথা হয়।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

যেসব খাবারে ফাইবার কম থাকে, সেই খাদ্যগুলো এড়িয়ে চলাই ভাল। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাতকরণ দানা শস্য খেলে বাড়তে পারে সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইলস বা অর্শ রোগীদের মাংস খাওয়া উচিত নয়। কারণ বাজারচলতি প্রক্রিয়াজাত মাংস বাড়িয়ে দিতে পারে অর্শের সমস্যা। দুধ ও পনির বা চিজের মতো দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ কামালে উপকার মিলতে পারে।

আবার অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবারও ডেকে আনতে পারে নানা সমস্যা। খাবারে অত্যাধিক তেল, মসলা ও লবণ পেটের গোলযোগের কারণ হতে পারে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে এখুনি বন্ধ করুন।

পাইলস হলে কি কি সমস্যা হয়

  • মল ত্যাগ করার সময় কোন ব্যথা ছাড়াই রক্তপাত
  • মলদ্বার এলাকায় চুলকানি
  • পায়ূ এলাকায় ব্যথা বা অস্বস্তি
  • মলদ্বারের কাছে সংবেদনশীল বা বেদনাদায়ক পিণ্ডের উপস্থিতি
  • মলদ্বারের চারপাশে ফুলে যাওয়া

দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা, ক্রনিক ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘ ক্ষণ শৌচাগারে বসে থাকা পাইলসের সমস্যার কিছু মূল কারণ। অর্থাৎ বেগ আসছে না, কিন্তু এক জন টয়লেটে বসে দীর্ঘ ক্ষণ মলদ্বারে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, এটাই হচ্ছে পাইলস হওয়ার প্রধান কারণ। এ ছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, ফাইবার যুক্ত খাবার কম খাওয়া, গর্ভাবস্থা ও ভারী জিনিস তোলার কারণেও পাইলস হতে পারে।

কি খেলে পাইলস ভালো হয়

ব্রোকলি, গাজর, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পেঁয়াজ, শসা, টমেটো এই সব সবুজ সবজি পাইলসের রোগীরা খেতে পারেন। ফলে বিশাল পরিমাণে পুষ্টি,খনিজ এবং ভিটামিন থাকে যা অন্ত্র আন্দোলনে সাহায্য করে। আপেল, আঙুর, আলুবোখারা, কিশমিশ ইত্যাদি তন্তুজ ফল গুলি খোসাসহ খাওয়া খুব উপকারী। খোসা ছাড়া যে সব ফল খুব উপকারী সেগুলি হল-কলা,পেঁপে ইত্যাদি।

  • দ্রবণীয় ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কিংবা শাকসবজি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এর ফলে অর্শরোগীদের কষ্ট অনেকটাই কমতে পারে। ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি খেলে দেহে তরলের ভারসাম্য বজায় থাকে ও মল নরম হয়। তখন পাইলসের সমস্যা দূর হবে। তাই দিনে অন্তত পক্ষে ৩ লিটার পানিপান করতেই হবে।
  • ডাল, মটরশুঁটি ও রাজমার মতো খাবার অর্শ রোগীদের জন্য বেশ উপযোগী।
  • পাশাপাশি হোল গ্রেন থেকে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য খেতে পারেন। ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল খেতে পারেন।
  • কলা খেতে পারেন নিয়মিত।

ইউসুফ গুলের ভুসি তো খেতেই হবে। আসলে ইউসুফ গুলের ভুসির মধ্যে রয়েছে ভালো পরিমাণে ফাইবার। এবার এই ফাইবার আপনার অন্ত্রের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। ফলে পায়খানা নরম হয়। এমনকী স্টুল আটকে থাকে না। তাই আপনাকে অবশ্যই ভুসি খেতে হবে। তবে কম পরিমাণে হলেও খান। তবেই ভালো থাকবেন। নইলে সমস্যা আরও বাড়বে।

বাংলাদেশের লোকদের মধ্যে অনেকেই রাতেরবেলা ভাত খেয়ে থাকেন। ভাত খেলে কোনও অসুবিধা সাধারণত নেই। তবে পাইলস থাকলে রাতে রুটি খাওয়া ভালো। কারণ রুটিতে ভাতের তুলনায় বেশি ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার আপনার শরীর সস্থ রাখতে পারে। এমনকী স্টুল নরম করে দেয়। তাই রাতে রুটি খান।

ডাক্তারদের মতে শাক, সবজি, ফল হল দারুণ উপকারী খাবার। এক্ষেত্রে এই খাবারগুলিতে থাকে ভালো পরিমাণে ফাইবার। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই ফল, শাক, সবজি খেতে হবে। এই খাবারের মাধ্যমেই সমস্যা দূর করা সম্ভব। তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।

পাইলসের ঔষধ

সাধারণত, হেমোরয়েড পিলো, হেমোরয়েড ক্রিম, রেক্টাল সাপোজিটোরি ইত্যাদির ব্যবহারই সবচেয়ে পছন্দের চিকিৎসা। ড্য়াফলন ৫০০ এম জি ট্যাবলেট (Daflon 500mg Tablet) সম্পর্কে জানুন ড্য়াফলন ট্যাবলেট (৫০০ এম জি) আধা-কৃত্রিম ওষুধ বিভাগের মধ্যে পড়ে। এটি প্রধানত রক্তবাহী নালীগুলির সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলিকে চিকিৎসা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রিস্টিন কেয়ার-এ আমরা পাইলস রোগীদের জন্য লেজার হেমোরয়েডেকটমি নামে পরিচিত USFDA অনুমোদিত লেজার সার্জারি করে থাকি। স্থানীয় অ্যানেস্থেশিয়া করে ডেকেয়ার পদ্ধতি হিসেবে এই সার্জারি করা হয়। রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া করার পরে একটি লেজার রশ্মি হেমোরয়েডগুলিকে পোড়াতে এবং সংকুচিত করতে ব্যবহার করা হয়। 

পদ্ধতিটি ন্যূনতম কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে হয় এবং কোনও কাটা বা রক্তক্ষরণ ছাড়াই পাইলস অপসারণ করা যায়। যেহেতু কাটা হয় না, তাই রোগীর কোনও সেলাই প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তারা দু’দিনের মধ্যেই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অবাধে শুরু করতে পারে।

একজন হোমিও চিকিৎসক রোগীর শারীরিক মানসিক ও দৈহিক সহ সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করেই ঔষধ নির্বাচন করেন এবং এটি আশানুরূপ ফল প্রদান করে, যদিও এটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। সেক্ষেত্রে কিছু কার্যকরী হোমিও ওষুধের নাম —-

নাক্সভূমিকা,সালফার, পডোফাইলাম, পালসেটিলা, ইস্কিউলাস, কলিনসোনিয়া, কার্বোভেজ, কলিনসোনিয়া, হ্যামামেলিস, অ্যাসিড মিউর, অ্যালো, ইগনেসিয়া, হ্যামামেলিস, পিওনিয়া, এব্রোটেনাম, ক্যাপসিকাম, এসিড নাইট্রিক, এমন কার্ব, আর্সেনিক এল্ব,একোনাইট ন্যাপ, ইস্কুইলাস হিপ, এসিড মিউর, এমন মিউর, প্লান্টেগো,ক্যালিকার্ব, এন্টিম ক্রড,হিসার সালফ, লাইকোপডিয়াম

পাইলস থেকে চিরতবে মুক্তির উপায়

পাইলস রোগটিকে কাবু করতে গেলে প্রথমে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে যেতে হবে। কনস্টিপেশন (Constipation) কমাতে পারলেই এই সমস্যা কমবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক পাইলস থেকে দূরে যাওয়ার কয়েকটি সহজ উপায়। এর মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান (Piles Remedies) করা সম্ভব-

ডা: পাল বলেন, আগেই বলেছি যে কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে হবে। তাই সেক্ষেত্রে শরীরে ফাইবার জাতীয় খাবার পৌঁছে দেওয়া দরকার। আসলে ফাইবার পয়খানা নরম করতে এবং নিয়মিত পায়খানা হতে সাহায্য করে। তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ওটস, ডালিয়া, গমের খাদ্যের মধ্যে অনেকটা ফাইবার থাকে। এছাড়া ফল, সবজিতেও থাকে ফাইবার। তাই চিন্তার কারণ নেই।

এক্ষেত্রে বহু মানুষ ঠিকমতো জলপান করতে চান না। এবার জলপান না করতে থাকলে অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। আসলে এই কারণেই বহু মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। তাই জলপান করতেই হবে। এবার অনেকে প্রশ্ন করেন কতটা জলপান করা উচিত? এভাবে ঠিক বলা যাবে না। তবে নিয়ম হলে তৃষ্ণা পেলেই জলপান করুন। এই উপায়েই ভালো থাকতে পারবেন।

ডাঃ পালের কথায়, সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে ব্যায়ামের কোনও বিকল্প নেই। ব্যায়াম করলে শরীরের অনেক লাভ। এছাড়াও দেখা গিয়েছে যে ব্যায়াম করতে পারলে অন্ত্রের চলন ঠিকমতো হয়। এই কৌশলেই কনস্টিপেশন থেকে দূরে যাওয়া সম্ভব হয়। 

তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই করতে হবে ব্যায়াম। এক্ষেত্রে ব্যায়াম করা সম্ভব হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় অনেকটাই। তাই দিনে অন্ততপক্ষে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করুন।

ডাঃ পাল বলেন, এই কয়েকটি নিয়ম মানলে পাইলস দ্রুত কমে। তবে এক্ষেত্রে অনেকটা সময় গড়িয়ে গেলে সঙ্গে কিছু ঔষধ খেতে হবে। এই অবস্থায় ল্যাক্সেটিভ সহ বেশকিছু ঔষধ দারুণ কার্যকরী। এছাড়া রোগ আরও গভীরে চলে গেলে ঔষধে কাজ হয় না। তখন করতে হয় সার্জারি। এই অপারেশন খুবই নিরাপদ। রোগী খুব সহজেই সেরে ওঠেন।

শেষ কথাঃ

পরিশেষে বলা যায় যে, পাইলস একটি কমন সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। ভিতরে ভিতরে এই সমস্যায় ভূগছেন অনেক মানুষ। কেউ মুখ খুলে, ডাক্তারের পরামর্শ নেয়, কেউবা সারা জীবন কষ্ট সহ্য করে এই রোগ বয়ে নিয়ে বেড়ায়। অসুখ বিসুখ মানুষের হতেই পারে। তার জন্য চিকিৎসা আছে। এখানে লজ্জা বাপার কিছু নেই।

সময় মত চিকিৎসা করলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পাবেন। আশা করছি মনোযোগ দিয়ে উপরের লেখাগুলি পড়েছেন। উপরে বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলুন ইনশাআল্লাহ উপকার পাবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪