লেবু বা লেবু জাতীয় ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

আপনি কি লেবুর বিভিন্ন উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে জানতে চান ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। নিয়মিত লেবু খেলে আমাদের কি কি উপকার হয় তা জানতে পারবেন।
লেবু বা লেবু জাতীয় ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

এখানে আরো জানতে পারবেন কিভাবে লেবু খেলে ক্যান্সারের ঝুকি কমে, কোষ্ঠকাঠিন্য দুর হয়, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগসহ নানা সমস্য থেকে রক্ষা পাবেন। এটি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে কতটা কাজ করে তাও জানতে পারবেন। তাহলে আর দেরি না করে আসুন জেনে নেয়া যাক লেবুর পুষ্টিগুন সম্পর্কে।

সূচীপত্রঃ

লেবুর উপকারিতা
খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবু খাওয়ার অপকারিতা
ভাতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবুর ক্ষতিকর দিক
ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
লেবু ও মধু পানির স্বাস্থ্য উপকারীতা
উপসংহারঃ

লেবুর উপকারিতা

পুষ্টির পাওয়ার হাউস হিসেবে বিবেচিত সাইট্রাস বা লেবুজাতীয় ফলগুলো ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এতে ভিটামিন 'সি'-সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে। যা কোষের ক্ষতি থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।

জলে দ্রবণীয় ভিটামিন 'সি' শুধুমাত্র প্রদাহই কমায় না, এটি আয়রন শোষণেও সাহায়তা করে। যা টিস্যুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে জনপ্রিয় লেবু- কমলা, জাম্বুরা এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফলে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম রয়েছে। এগুলো আমাদের শরীরে ঘটে যাওয়া অনেক বিপাকীয় প্রক্রিয়া সম্পাদনে সহায়তা করে।

সাইট্রাস ফলের মধ্যে থাকা 'সাইট্রিক অ্যাসিড' একটি টক উপাদান। যা প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটি প্রস্রাবের পিএইচ-এর মাত্রা পরিবর্তন থেকে শুরু করে কিডনিতে পাথরের বৃদ্ধি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে কাজ করে। সেইসঙ্গে সর্দি ও ফ্লুর লক্ষণ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধেও লড়াই করে। এক গ্লাস হালকা গরম পানির সঙ্গে সামান্য লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এই পানীয় সর্দি ও কাশি দূর করতে সাহায্য করবে।

খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

এক গ্লাস পানি এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে যদি মিশিয়ে পান করা যায় তাহলে দেখবেন ডাক্তারের চেম্বারের ঠিকানা আপনি একেবারে ভুল গেছেন। আসুন জেনে নেই সকালে লেবু পানি পানের উপকারিতা:-

পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়

লেবু পানির ভেতরে যে কেবল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মজুত থাকে তা নয়, সেই সঙ্গে উপস্থিত থাকে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও কত কী, যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে শরীরকে শক্তপোক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হজম শক্তি বাড়ায়

লেবু পানিতে যে এসিড রয়েছে তা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এতে আছে সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস যা পাকস্থলীতে খাবারকে ভেঙে সহজেই হজম করে। বয়সের সাথে সাথে হজম ক্ষমতা কমে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই লেবু পানি না খেলেও টুকরা লেবু পানিতে দিয়ে বা লেবুর ছোলা পানিতে দিয়ে খেলে উপকার পাবেন।

শরীর হাইড্রেট রাখবে

লেবুর গুণ আপনাকে সরাসরি হাইড্রেট রাখবে না। তবে লেবুর স্বাদ এ বিষয়ে পালন করবে এক অনন্য ভূমিকা। শরীরে পানির পারফেক্ট ব্যালেন্স বজায় রাখতে সারাদিনে আপনার প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা দরকার। পানিতে কোনো স্বাদ নেই বলেই হয়তবা বারবার খাবার আগ্রহটা কাজ করে না। সেক্ষেত্রে লেবু পানি পানে স্বাদও পাবেন এবং হাইড্রেটও থাকবেন।

দেহের ভেতরে পি এইচ লেভেল ঠিক থাকে

ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু পানি খেলে দেহের ভেতরে পি এইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে ভেতর এবং বাইরে থেকে শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

আপনি যদি ডায়েট করার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন, তাহলে লেবু পানিকে আপনার সেরা বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে হবে। লেবুতে আছে পলিফেনলস যা ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। এছাড়া খাওয়ার আগে পানি পান করলেও ক্ষুধা কিছুটা কম লাগে। সকালে উঠে যদি আপনার কমলার জুস পানের অভ্যাস থাকে, তাহলে অভ্যাসটি বদলে লেবু পানি পানের চেষ্টা করুন। কারণ কমলার জুসে ক্যালরি থাকে যাতে আপনার ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৮-১২ আউন্স নরমাল বা ঠান্ডা পানিতে পুরো একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তবে ওজন কমানোর জন্য ঠান্ডা লেবুর পানিই বেশি কার্যকরী।

কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে

লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর জমা প্রতিরোধ করে। এই সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের পাশাপাশি জমে থাকা পাথর বের করতেও সাহায্য করে।

লেবু খাওয়ার অপকারিতা

লেবুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড রয়েছে। ফলে এতে ঘন-ঘন প্রস্রাব পায় এবং কিডনিতে চাপ পড়ে ও শরীরে জলশূন্য়তা দেখা দেয়। খালি পেটে লেবুর জল পান করলে হাড়েরও ক্ষতি করে। খালি পেটে এই পানীয় খেলে হাড়ের মধ্যে উপস্থিত ফ্লুইড শোকাতে শুরু করে, যার কারণে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়

অতিরিক্ত লেবু খেলে এর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড থেকে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দাঁতের ওপর সাদা স্তর পড়ে যায়। সম্প্রতি ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেন্টাল অ্যান্ড ক্র্যানিওফেসিয়াল রিসার্চের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে সফট ড্রিংক খেলে দাঁতের যে সমস্যা হয়, লেবু থেকেও ঠিক একই সমস্যা হয়।

এ ছাড়াও যারা প্রতিদিন সকালে উঠে লেবু পানি খান, তারা যদি দিনে অন্তত দুবার ব্রাশ করেন তাহলে দাঁতের সমস্যা অনেক কম হয়। দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে মুখের মধ্যে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ যে কোনও ফল খেলেই এই সমস্যা হতে পারে।

অ্যাসিড এবং বমির আশঙ্কা থাকে

ভিটামিন সি শরীরের জন্য প্রয়োজন, কিন্তু অতিরিক্তও ভালো নয়। অতিরিক্ত লেবু বা লেবুর রস খেলে সেখান থেকে অ্যাসিড তো হবেই, সেই সঙ্গে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। শুধুমাত্র লেবু পানি নয়, যে কোনও ডিটক্স ডায়েট ড্রিংক থেকেই এ সমস্যা হতে পারে। অ্যাসিডিটির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।

পেট খারাপ

খাবার হজম করতে অনেকেই লেবুর রস পান করে থাকেন। কারণ, লেবুতে থাকা অ্যাসিড হজমে সহায়তা করে। কিন্তু জানেন কি, অতিরিক্ত অ্যাসিডের কারণেও পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সব সময় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে লেবু খাওয়া উচিত।

মাইগ্রেনের সমস্যা

বিশেষজ্ঞদের মতে, লেবু বা অন্যান্য সাইট্রাস জাতীয় ফল কোনও ব্যক্তির মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। সাইট্রাস ফলগুলিতে থাকা টাইরামাইন নামক একটি বিশেষ উপাদানের জন্যই এমনটা হয়।

ডিহাইড্রেশন

গরমকালে ডিহাইড্রেশনের হাত থেকে বাঁচতে লেবু পানি পান করে থাকেন? কিন্তু এই লেবু পানি খাওয়ার ফলেই আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লেবু পানি পান করার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যা থেকে শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়। আসলে ইলেক্ট্রোলাইটস এবং সোডিয়ামের মতো উপাদানগুলিও প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়। যা ডিহাইড্রেশনের অন্যতম কারণ।

ভাতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

ভাতের পাতে, দিনে একটা পাতিলেবু খেলে কী কী উপকার হতে পারে? * অন্যান্য ফলের চেয়ে লেবুতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামেও সমৃদ্ধ লেবু। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের জোগান হিসেবে এবং ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

ভাতের সাথে লেবু খাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে । লেবু খেলে যেমন মুখে রুচি বাড়ে তেমনি আমাদের শরীরে ভিটামিনের অভাবও পূরণ করে । লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বক সুন্দর করে । ভিটামিন সি রোদে বা তাপে নষ্ট হয়ে যায় তাই ত্বক সুস্থ রাখতে আমাদের বারবার ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন যা ভাতের সাথে লেবু খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে ।

আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকেই গরম ভাতের সঙ্গে লেবু খাওয়ার একটি রেওয়াজ রয়েছে। এটি আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী।

শরীরের জন্য লেবু অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ও নানান জাতের লেবু পাওয়া যায় যেমন, পাতিলেবু, গন্ধরাজ লেবু, কাগজি লেবু, শরবতিলেবু, বাতাবিলেবু ইত্যাদি। লেবুতে পরিপূর্ণ রূপে ভিটামিন সি থাকে। গরমের দিনে লেবুর শরবত পান করলে অত্যন্ত উপকার পাওয়া যায়।

গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুতে রয়েছে ভিটামিন 'সি', পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, যা দেহের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে। লেবুর শরবত লিভারে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে। ফলে লিভারের যেকোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

আসুন জেনে নিই সকালে গরম পানিতে লেবুর রস খেলে কি উপকার পাবেন-

১. ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস খেলে দেহের ভেতরে পিএইচ লেভেলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। ফলে দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

২. লেবু ত্বক ভালো রাখে, শরীরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ করে এবং কিডনির পাথরও প্রতিরোধ করে।

৩. লেবু ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। লেবু ব্যবহারে চেহারায় বয়সের ছাপ কমবে।

৪. প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে সারা দিনের হজমশক্তি ভালো থাকে।

৫. লেবুতে থাকা ভিটামিন 'সি' দেহের হরমোনকে সক্রিয় রাখে ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

৬. তবে লেবুর শরবত খেতে হলে অবশ্যই চিনি ছাড়া পান করা ভালো।লেবুর ভিটামিন 'সি' স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা

এই ছোট্ট ও সবুজ সাইট্রাস ফলটি সহজে পাওয়া যায়, উপকারে ভরপুর এবং এতে ক্যালোরি কম। লেবুতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জিঙ্ক। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা-

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে

টক স্বাদের ফল লেবু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণ কাজ করে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে কাজ করে। সেইসঙ্গে সর্দি ও ফ্লুর লক্ষণ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধেও লড়াই করে। এক গ্লাস হালকা গরম পানির সঙ্গে সামান্য লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এই পানীয় সর্দি ও কাশি দূর করতে সাহায্য করবে।

২. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়

প্রতিদিন লেবু খাওয়ার অভ্যাস আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জার্নাল অফ চিরোপ্রাকটিক মেডিসিন দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা অনুসারে, ভিটামিন সি এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কাজ করে। এছাড়া লেবুতে ফ্ল্যাভোনয়েডও রয়েছে, যা ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল-এর মাত্রা কমাতে প্রমাণিত।

৩. হজমের উন্নতি করে

এই সাইট্রাস ফলের মধ্যে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে যা নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হজমে সহায়তা করে। লেবুতে থাকা প্রধান ফাইবার পেকটিন, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে সহায়তা করে এবং চিনি ও স্টার্চের হজমের হারকে ত্বরান্বিত করে।

৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে

এক গ্লাস পানিতে মধুর ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে তা শরীরের জন্য বিস্ময়কর ভাবে কাজ করে। লেবুতে থাকা ফাইবার খাওয়ার পরে প্রসারিত হয়, যা আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য তৃপ্ত রাখে। এটি আপনাকে অপ্রয়োজনীয় খাবার থেকে বিরত রাখবে, ফলে ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকবে না।

৫. কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করে

আপনি যদি কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভোগেন বা এ ধরনের কোনো ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে লেবু আপনাকে সেই সমস্যা থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। এই সাইট্রাস ফলে প্রচুর সাইট্রিক অ্যাসিড উপস্থিত রয়েছে যা কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে। লেমনেড বা লেবুর রস মূত্রনালী সাইট্রেট গঠন করে যা পাথরের স্ফটিক বিকাশ রোধ করতে সাহায্য করে।

লেবুর ক্ষতিকর দিক

  • ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে খালি পেটে লেবু পানি খেলে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভেঙে যায়।
  • দাঁতের ক্ষতি করতে পারে
  • হাড়ের উপর প্রভাব ফেলে
  • ঘন ঘন প্রস্রাব এবং ডিহাইড্রেশন
  • মাইগ্রেন সমস্যা হতে পারে
  • আয়রনের পরিমাণ বাড়াতে পারে
  • জিইআরডি এবং আলসারের কারণ
  • পেট খারাপ হতে পারে

ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

আমরা প্রাত্যহিক জীবনে লেবু, সকলেই কম বেশি খেয়ে থাকি। সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয় । আবার অনেকে এটির আচার তৈরি করেও খেয়ে থাকেন। লেবু আকারে ছোট ফল হলেও এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর।

আসুন জেনে নিন লেবুর অসাধারণ কিছু উপকারিতা-

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

লেবুতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমারোহ যা শরীরকে বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। নিয়মিত লেবু খাদ্যতালিকায় রেখে আমারা ক্যান্সারের হাত থেতে রক্ষা পেতে পারি।

পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে

যারা পেটের গোলযোগে ভুগছেন তাদের জন্য লেবু আদর্শ টনিক। পেটের গোলযোগের মধ্যে ডায়রিয়া, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য, আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়, শুরুতে এক গ্লাস লেবু+লবন পানি আপনাকে এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দেবে। লেবুর সঙ্গে এক চা চামচ মধু হলে আরো ভাল।

ফুসফুসের জন্য ভাল

লেবু ফুসফুসের যত্ন নেয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দেয়, লেবু শরীরের চর্বি ও লিপিডের মাত্রা কম রাখে।

ক্ষত সারায়

লেবুর উচ্চ ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যে কোন ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যেমন ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর দমনে লেবু খুব কার্যকারী, মুত্রনালীর ক্ষত সারাতেও লেবুর গুরুত্ব রয়েছে।

হাইপার টেনশন কমায়

যারা খাবারে যথেষ্ট পটাশিয়াম গ্রহণ করে না, তারা সহজেই নান রকম হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে পড়ে। লেবুর রসে যথেষ্ট পরিমান পটাশিয়ামরয়েছে যা হাইপার টেনশন কমাতে সাহয্য করে।

ত্বকের যত্নে

প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসাবে লেবুর জুড়ি নেই, এটি ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে, মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। চামড়ার অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে। লেবুর রস প্রাকৃতিক অ্যানটি সেপটিক। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করে। ব্রণ সারিয়ে তোলে, ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। বয়সের বলিরেখা দূর করে।

মুখের দুর্গন্ধ দুর করে

মাড়ির ব্যথা, দাঁতের সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। লেবুর পানি খাবার পর দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই।

নখকে সুন্দর করে

একটুকরা লেবু দিয়ে নখ পলিশ করলে নখ তার বিবর্ণতা থেকে উজ্জল রং ফিরে পায়। লেবুর পানিতে পা, হাত, ডুবিয়ে রাখলেও একটি উপকার হয়।

ওজন কমাতে

নিয়মিত ফ্রেশ লেবুর জুস+পানি খেলে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহয্য করবে।

পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

শুনলে অবাক হতে হয়, লেবু অম্লীয় হওয়া সত্ত্বেও শরীরে প্রয়োজনে ক্ষারধর্মী আচরণ করে। এটি শরীরে এসিডিটি তৈরি করে না। এটি শরীরের পিএইচ মাত্রাকে সঠিক অবস্থায় রাখে। লেবুর রস+লবণপানি পান করলে পিএইচ মাত্রা ঠিক থাকে।

গর্ভবতী নারীদের সুস্থতায়

গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই ভালো লেবুজল। এটা শুধু গর্ভবতীর শরীরই ভালো রাখে না বরং গর্ভের শিশুর অনেক বেশি উপকার করে। লেবুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।

শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে

যাদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তারা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন। যারা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।

বয়সের ছাপ দূর করে

বয়সের ছাপ পড়ে বলিরেখার মাধ্যমে। তাছাড়া অনেকের এমনিতেই বলিরেখা পড়তে পারে। লেবুর রস এই বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর। রেখাগুলোতে লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন ও ধুয়ে ফেলুন।

লেবুর কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

১) যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের অতিরিক্ত লেবু খেলে বুক জ্বালা করে।

২) লেবুতে কারো কারো অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তাই আগে থেকে জেনে নিয়ে লেবু চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ তা নাহলে হিতে-বিপরীত হতে পারে৷

৩) ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাসে লাগাম টানা হলে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণের অভাব দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে লেবুপানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে।

৪) অতিরিক্ত লেবু সেবনে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।

৫) অতিরিক্ত লেবু ও লেবুর শরবত পানের ফলে পেটে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

৬) লেবুর শরবত বেশি পান করলে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।

৭) যেকোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।

লেবু ও মধু পানির স্বাস্থ্য উপকারীতা

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • ব্রণ কমাতে সাহায্য করে
  • শরীর পরিশোধিত করে
  • শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দূর করে
  • গলাব্যথা কমায়
  • হজম নালী ঠিক রাখতে
  • বিষাক্ত পদার্থ দূর করে
  • কীভাবে তৈরি করবেন মধু-লেবুর পানীয়

উপসংহারঃ

লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে কাজ করে। সেইসঙ্গে সর্দি ও ফ্লুর লক্ষণ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধেও লড়াই করে। এক গ্লাস হালকা গরম পানির সঙ্গে সামান্য লেবুর রস ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এই পানীয় সর্দি ও কাশি দূর করতে সাহায্য করবে। তাই আসুন নিয়ম মেনে লেবু খান এবং আপনার শরীরকে সুস্থ্য রাখেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪