কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
যে কোন খাবার কে অনেক টেস্টি করে তোলে কাঁচা মরিচ। কাঁচা মরিচ খায় না এমন মানুষ এই জগতে মেলা ভার। কিন্তু আমরা সবায় কি জানি কাঁচা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ? হ্যাঁ বন্ধুরা আজকে আপনার সামনে কাঁচা মরিচের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এখানে জানতে পারবেন কি ভাবে কাঁচা মরিচ খাবেন। কতটা পরিমান কাঁচা মরিচ খাওয়া যাবে। এর মধ্যে কোন কোন ভিটামিন পাওয়া যায়। তো আর দেরি না করে আসুন শুরু করা যাক কাঁচা মরিচের যত উপকারিতা ও গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা।
সূচীপত্রঃ
কাঁচা মরিচ এর উপকারিতা
কাঁচা মরিচের পুষ্টিগুণ
ভাতের সঙ্গে প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়া কি ভালো
কাঁচা মরিচ যেসব রোগ প্রতিরোধ করে
কাঁচা মরিচ বেশি খেলে কি হয়
শুকনা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা মরিচ খাওয়ার নিয়ম
লেখকের শেষকথাঃ
কাঁচা মরিচ এর উপকারিতা
কাঁচা মরিচে থাকে ক্যাপসাইকিন, যা মূলত মরিচকে ঝাল করতে ভূমিকা রাখে। কাঁচা মরিচে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, কে, বি৬, থিয়ামিন, রিবোফ্লাবিন, নিয়াসিন এবং ফলেট, সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ উপাদান। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর ডায়াটারি ফাইবার, পানি, অল্প পরিমাণে কার্বহাইড্রেট ও প্রোটিন।
পাতে কাঁচা মরিচ ছাড়া অনেক বাঙালির খাওয়াই হয় না। কিন্তু কাঁচা মরিচের ব্যবহার কি কেবল রান্নায় ঝাল আর সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য? মোটেও তা নয়। এই কাঁচা মরিচ ভিটামিনের এক চমৎকার উৎস। রয়েছে নানা পুষ্টিগুণও। আধা কাপ পরিমাণ কুচি কাঁচা মরিচে প্রায় ৮০০ ইউনিটের বেশি ভিটামিন এ রয়েছে।
আর ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির জন্য ভালো, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সমপরিমাণ কাঁচা মরিচ কুচিতে পাবেন প্রায় ১৮২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদার সমান। তার মানে আধা কাপ কাঁচা মরিচ সালাদে বা অন্যান্য তরকারিতে ছড়িয়ে দিলে আপনার অন্য কোনো ভিটামিন সি যুক্ত খাবার দরকারই পড়বে না।
তবে গবেষকেরা বলছেন, কাঁচা মরিচের ভিটামিন সি তাপ, অতিরিক্ত আলো ও বাতাসের কারণে একটু একটু করে হ্রাস পায়। তাই তাজা কাঁচা মরিচ না খেতে পারলে তা ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করুন। এ জন্য বাজার থেকে আনা তাজা কাঁচা মরিচ জিপার ব্যাগে মুখ আটকে ফ্রিজে রাখুন এবং তিন-চার দিনের মধ্যেই শেষ করতে চেষ্টা করুন।
সব ধরনের মরিচেই আছে ক্যাপসেইসিন নামের একটি উপাদান। এই ক্যাপসেইসিন প্রদাহ কমায়, বাতব্যথা কমায়, ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায়তা করে। আমেরিকার ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ বলছে, তাজা সবুজ কাঁচা মরিচে যে ক্যাপসেইসিন আছে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। তাই কাঁচা মরিচ খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, আছে নানা উপকারও।
প্রতিদিন যাদের ভাতের সাথে একটি কাঁচা মরিচ না খেলে চলেই না তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে কাঁচা মরিচ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মরিচকে ঝাল বানায় এর বিশেষ উপাদান ক্যাপসাইকিন। কাঁচা মরিচ সাধারণত কাঁচা, রান্না কিংবা বিভিন্ন ভাজিতে দিয়ে খাওয়া হয়। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, কে, বি-৬, আয়রন, পটাশিয়াম এবং খুবই সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট।
এই উপাদান গুলো মুখে লালা আনে ফলে খেতে মজা লাগে। এছাড়াও এগুলো ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দেখে নিন কাঁচা মরিচের বিস্ময়কর ১০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ-
১. গ্রীষ্ম কালে মসলা জাতীয় খাবারের সাথে কাঁচা মরিচ খেলে তা ঘামের সাথে বেড়িয়ে যায় ফলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে।
২. চর্বি জাতীয় খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ খেলে মোটা হওয়ার কোনা ভয় থাকে না। কারণ কাঁচা মরিচ খাদ্যের সঙ্গে থাকা চর্বিকে ধ্বংস করে । ফলে স্লিম থাকা যায়।
৩. কাঁচা মরিচে অবস্থিত ক্যাপসাইসিন খাদ্যে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বি শুষে নিয়ে শরীরে মেদ রোধ করতে সাহায্য করে।
৪. এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন আছে যা কার্ডোভাস্ক্যুলার সিস্টেম কে কর্মক্ষম রাখে।
৫. ত্বক ও চুল ভালো রাখতে কাঁচা মরিচে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দারুণ উপকারি। তাছাড়াও রক্তনালী আর তরুনাস্থি গঠনে সাহায্য করে।
৬. প্রতিদিন একটি করে কাঁচা মরিচ খেলে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়। ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা কমে যায়।
৭. কাঁচা মরিচ মেটাবলিসম বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। ফলে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৮. এতে আছে ভিটামিন এ যা হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা মাড়ি ও চুলের সুরক্ষা করে।
৯. নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে নার্ভের বিভিন্ন সমস্যাও কমে যায়। প্রতিদিন খাবার তালিকায় অন্তত একটি করে কাঁচা মরিচ রাখলে ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়ে না।
১০. কাঁচা মরিচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরকে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। ও যে কোনো ধরণের কাটা-ছেড়া কিংবা ঘা শুকানোর জন্য খুবই উপকারী
কাঁচা মরিচের পুষ্টিগুণ
রোজকার তরকারির ঝোল থেকে আধুনিক পেপার স্প্রের বোতল, পান্তা ভাত থেকে পিৎজার সিজনিং-কাঁচা মরিচের জার্নি যেমন আন্তর্জাতিক, তেমনই বৈচিত্র্যময়। চলুন জেনে নিই কাঁচা মরিচের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-
মরিচের আদি নিবাস আমেরিকা, আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে মেক্সিকো। প্রাচীন অ্যাজটেকদের রান্নাবান্না যে মরিচ ছাড়া হতই না, তার অজস্র প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঝাল ও স্বাদের জন্য এটি এশিয়ায় বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় খাবারের অপরিহার্য উপকরণে পরিণত হয়। যার চাহিদা এমন অপরিহার্য তার গুণপনাও যে কম হবে না, বলাই বাহুল্য।
অর্ধেক কাপ কাঁচা মরিচে থাকে ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৫ গ্রাম প্রোটিন, ১ গ্রাম ফাইবার ও ০.১৫ গ্রাম ফ্যাট। এ ছাড়া মরিচে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, আয়রন ও পটাশিয়াম, যেগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রয়োজনীয়। এগুলো বাদেও মরিচের রয়েছে নানা উপকারিতা।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদিন অন্তত দুইটি কাঁচা মরিচ খেলে অনেক রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে।
হজমে ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা খেতে পারেন কাঁচা মরিচ। তেল-মসলার রান্নায় ঝালের পরিমাণ কমিয়ে দিন। হালকা ঝাল হজমে সাহায্য করে।
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
কাঁচা মরিচ শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায়তা করে। উচ্চরক্তচাপ ও কোলেস্টেরলে ভুগতে থাকা রোগীদের পাতে কাঁচা মরিচ রাখুন।
ডায়াবেটিস দূরে রাখে
কাঁচা মরিচের বিভিন্ন উপকারী উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়। যার কারণে ডায়াবেটিস দূরে থাকে।
সাইনাসের কষ্ট কমে
কাঁচা মরিচে রয়েছে ক্যাপসিসিন নামক একটি উপাদান, যা ঝাল স্বাদের জন্য দায়ী। এই ক্যাপসিসিন প্রবেশ করা মাত্র মিউকাস মেমব্রেনের মধ্যে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে সাইনাস ইনফেকশনের প্রকোপ দ্রুত কমাতে সহায়তা করে।
ক্যান্সার দূরে রাখে
কাঁচা মরিচে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং ক্যান্সারকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
ভাতের সঙ্গে প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়া কি ভালো
বাঙালির খাবারের তালিকা এত দীর্ঘ যে লিখে শেষ করা মুশকিল। সেসব খাবার আবার স্বাদেও অনন্য। বেশিরভাগ বাঙালিই জমিয়ে খেতে ভালোবাসেন। ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, ভর্তা, ভাজি, ডাল যত পদই থাকুক সঙ্গে একটি অথবা দু’টি কাঁচা মরিচ না থাকলে যেন ঠিক স্বাদ লাগে না।
ভাতের সঙ্গে কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস আপনারও থাকতে পারে। আপনি কি জানেন এই অভ্যাস ভালো নাকি খারাপ ? ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কাঁচা মরিচ খাওয়ার এই অভ্যাস যথেষ্ট ভালো। কাঁচা মরিচে থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান শরীর থেকে বিভিন্ন অসুখ দূরে রাখে। সেইসঙ্গে শরীরে জমে থাকা বাড়তি মেদ ঝরাতেও কাজ করে এটি।
ত্বকের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে
আপনি যদি ভাতের সঙ্গে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করেন তবে দূরে থাকা যাবে ত্বকের সংক্রমণ থেকে। কাঁচা মরিচে থাকে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি। সেইসঙ্গে এতে আরও থাকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। ফলে কাঁচা মরিচ খেলে ত্বকের সংক্রমণ তো কমেই, সেইসঙ্গে ব্রণ দূর হয় দ্রুত। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও কাজ করে কাঁচা মরিচ। আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন, কাঁচা মরিচ সব সময় ঠান্ডা স্থানে রাখবেন। নয়তো এর ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
ওজন কমাতে কাজ করে
কাঁচা মরিচে আছে থার্মোজেনিক উপাদান যা শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে দারুণ কাজ করে। সেইসঙ্গে এটি মেটাবলিক রেট বাড়াতেও কাজ করে। এই মেটাবলিক রেট বাড়লে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তাই আপনি যদি বাড়তি ওজন কমাতে চান তাহলে নিয়মিত খাবারের সঙ্গে একটি করে কাঁচা মরিচ খাবেন। এতে উপকার পাবেন দ্রুতই।
হার্ট ভালো রাখে
হার্ট ভালো রাখতে কাজ করে কাঁচা মরিচ। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রক্তে ক্লট হওয়ার আশঙ্কা কমে। ফলে কমে হার্ট অ্যাটাকের ভয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিনের খাবারে কাঁচা মরিচ রাখলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে থাকে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও। যে কারণে হার্ট থাকে অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যদি ডায়াবেটিসের হিস্ট্রি থাকে তবে আগেভাগেই সতর্ক হোন। এর অংশ হিসেবে প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে একটি করে কাঁচা মরিচ যোগ করুন। এতে মিলবে উপকার। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
কাঁচা মরিচ যেসব রোগ প্রতিরোধ করে
কাঁচা মরিচ খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। শুধু কী তাই? কাঁচা মরিচ কাজ করে ওষুধের মতো। প্রতিদিন একটি কাঁচা মরিচ খেলে নীরবে মুক্তি পেয়ে যাবেন হাজারো রোগ থেকে। আমরা সবাই জানি কাঁচা মরিচে ভিটামিন সি’র চাহিদা পুরণ হয়। চেষ্টা করতে হবে তাজা মরিচ খেতে। তাহলে জেনে নেয়া যাক মহাষৌধ হিসেবে কাঁচা মরিচ কোন কোন রোগের প্রতিরোধ করে-
১. প্রতিদিন একটি করে কাঁচা মরিচ খেলে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়।
২. নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা কমে যায়।
৩. কাঁচা মরিচ মেটাবলিসম বাড়িয়ে ক্যালরি পোড়াতে সহায়তা করে।
৪. কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন আছে, যা কার্ডোভাস্ক্যুলার সিস্টেম কে কর্মক্ষম রাখে।
৫. নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৬. কাঁচা মরিচ রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
৭. কাঁচা মরিচে আছে ভিটামিন এ যা হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
৮. কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে, যা মাড়ি ও চুলের সুরক্ষা করে।
তবে কাঁচা মরিচ কাঁচা খাওয়া ভালো। কারণ ৩৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি তাপমাত্রায় কাঁচা মরিচ সেদ্ধ করলে কিংবা ভেজে খাওয়ার ফলে এর বিদ্যমান ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এর আসল উপকারিতা পেতে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কাঁচা খেতে অভ্যাস করুন।
কাঁচা মরিচ তাজা রাখতে অতিরিক্ত আলো, বাতাসের কাছে রাখা থেকে বিরত থাকুন। পারলে ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় সংরক্ষণ করুন। জিপার ব্যাগে মুখ আটকে ফ্রিজে রাখলে তিন-চার দিন তাজা থাকে এবং গুণাগুণ ঠিক থাকে।
কাঁচা মরিচের ক্ষতিকর দিক
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা মরিচ বেশি খেলে এতে থাকা ক্যাপসাইসিন রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত কাঁচা মরিচ খেলে তা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এটি শরীরে অতিরিক্ত তাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটার ভয় থাকে।
কাঁচা মরিচ বেশি খেলে কী হয়?
- অন্ত্রে ব্যথা কাঁচা মরিচে ক্যাপসাইসিন নামক একটি যৌগ থাকে যা অন্ত্রে ব্যথার কারণ হতে পারে।
- পাকস্থলীতে উচ্চ ফলিক অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে কাঁচা মরিচ খেলে পাকস্থলীতে ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ বর্তমানে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন।
- ঘুমের ব্যঘাত ঘটে।
- অ্যাসিডিটি হয়।
শুকনা মরিচ খাওয়ার উপকারিতা
শুকনা মরিচে শুধু ঝালই নয়, সুস্বাস্থে রয়েছে শুকনা মরিচের হাজারো গুণ। তাহলে জানা যাক সেই বহুমুখি উপকারিতার কথা-
বাতের ব্যথার উপশম করে
আর্থারাইটিস বা বাতের ব্যথায় শুকনা মরিচ দারুণ কাজ দেয়। শুকনা মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন যেকোনও ধরনের মাসল্ পেইন, জয়েন্ট পেইন, অস্টিও আর্থারাইটিসের যন্ত্রণা কমায়।
যৌন উদ্দীপনা বাড়ায়
শুকনা মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন যৌন উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। যা এন্ডোরফিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে, যৌন চাহিদা বাড়ায়।
চোখ ভালো রাখে
শুকনা মরিচে থাকে ভিটামিন-এ, যা চোখের জন্য খুব উপকারী। রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। রেটিনার কোষের ক্ষয় আটকায়।
ক্যানসার রোধ করে
শুকনা লাল মরিচে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস কোলন ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার রোধে কাজ করে।
রক্তচাপ কমায়
শুকনা মরিচ কোলেস্টেরল কমায়। প্লেটলেট বা অনুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে দেয় না। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়। ধমনীকে প্রসারিত করে। হাইপারটেনশন কমায়। যার ফলে কমে রক্তচাপ। কমে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি।
ইমিউনিটি বাড়ায়
শুকনা মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ ও সি থাকে। রোজ যদি কেউ শুকনা মরিচ খায়, তবে তার নাসিকাপথ পরিষ্কার থাকবে। অন্ত্র, মূত্রনালী ও ফুসফুসে কোনও সংক্রমণ হবে না।
কাঁচা মরিচ খাওয়ার নিয়ম
কাঁচা মরিচ খেতে অনেকে ভয় পান! কিন্তু স্বাদে ঝাল হলেও এমনিতে এটি অনেক উপকারী। গুণাগুণও অনেক! সুস্থ থাকতে প্রতিদিন নিয়ম করে ১টা থেকে ২টা কাঁচা মরিচ খাওয়া উচিৎ। চেষ্টা করুন, রান্না নয়, কাঁচা অবস্থায় খেতে। পারোপক্ষে ২টি করে কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস করুন প্রতিদিন। ভাতের সাথেও খেতে পারেন বা যে কোন খাবারের সাথে।
লেখকের শেষকথাঃ
ইতিমধ্যে আপনারা জেনে গেছেন যে, কাঁচা মরিচ শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতেই ব্যবহার করলেও এর দ্বারা যে আমরা প্রতিনিয়ত উপকার পাই সেই সম্পর্কে। যারা কাঁচা মরিচ খেতে ভয় পান তারা প্রথমে যেগুলো কম ঝাল সেই মরিচ গুলো চিহিৃত করে খাওয়া শুরু করুন। এর পর আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না।
আমাদের শরীরে প্রতিদিন অনেক ধরণের ভিটামিন লাগে, ক্যালোরি লাগে। প্রতিদিন তো ভিটামিন ও ক্যালোরি মেপে খাদ্য খাওয়া সম্ভব নয়। তাই যেগুলো খাবারে ভিটামিনের পরিমান বেশি সেগুলো নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখুন। বিশেষ করে কাঁচা মরিচ। এটি খুব সহজ লভ্য ও সস্তা এবং সব সময় সব জায়গায় পাওয়া যায়। আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url