খেজুর খাওয়ার উপকারিতা - খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন
খেজুর আমরা প্রতিনিয়তই খেয়ে থাকি। বিশেষ করে রামজান মাস আসলে ইফতারের সময় খেজুর খাওয়া বেশি হয়। কিন্তু আমরা কি জানি খেজুরের উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে। তাই আসুন খেজুর খাওয়ার উপকারিতা - খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন।
এখানে আরো জানতে পারবেন- খেজুর খাওয়ার নিয়ম এবং খালি পেটে খেজুর খেলে কি উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত খেজুর খেলে যে সব রোগ থেকে প্রতিকার মিলবে তাও জানতে পারবেন আজকের আলোচনায়।
ভূমিকা
খেজুর একটি সুস্বাদু মরু ফল। এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, খনিজ এবং ভিটামিন। প্রতিদিন সকালে ৩-৪ টি খেজুর খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। বিশেষত যারা কনস্টিপেশন বা কোনো ধরনের পেটের রোগে ভুগছেন তাদের জন্য তো এই ফলটি মহৌষধ! খেজুর খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো,
আবার তেমনই চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতেও খেজুরের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ খেজুরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, বি ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার এবং আয়রন। আর দেরি না করে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা - খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন।
সূচীপত্রঃ
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুরের পুষ্টিগুণ
দুধ ও খেজুর এক সাথে খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
পুরুষদের খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
উপসংহার
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর অনেক সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়ে যায়। খেজুরের মধ্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে। যার মধ্য থেকে কিছু তুলে ধরা হলো-
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই যারা নিয়মিত খেজুর খান, তাঁদের বেলায় ক্যান্সারের ঝুঁকিটাও অনেক কমে যায়।
দুর্বল হৃদপিণ্ডঃ হৃদপিণ্ডের সবচেয়ে নিরাপদ ঔষধ হলো খেজুর। নিয়মিত খেজুর খেলে হৃদপিন্ডের যে কোন রোগ প্রতিহত করতে সহায়তা করে।
মুটিয়ে যাওয়া রোধঃ মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। অল্পতেই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে বলে বেশি খেতে হয়না, আর বেশি না খেলে মোটাও হবে না।
মায়ের বুকের দুধঃ খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য উৎকৃষ্ট এক খাবার, যা মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ আরো বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
হাড় গঠনঃ ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। এজন্য নিয়ম করে খেজুর খান এবং হাড়কে শক্তিশালি করুন।
অন্ত্রের গোলযোগঃ অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে এবং ক্ষতিকারক পরজীবী গুলোর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিঃ খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে রাতকানা প্রতিরোধেও সহায়ক। যারাা চোখে অল্প দেখেন, যাদের দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে তারা নিয়মিত খেজুর খান, দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন ইনশাআল্লাহ।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে না তারা নিয়মিত খেজুর খান কোষ্ঠকাঠিন্য থাকবে না।
সংক্রমণ রোধঃ যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডায় বেশ উপকার করে। শরীর গরম রাখতে সহায়তা করে।
শিশুদের রোগবালাইঃ খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সহায়তা করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে। তাই শুধু রমজান মাসে কেন, বছরজুড়েই খাদ্যতালিকায় খেজুর রাখুন।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয়, চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরে রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।
খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি। যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
পাকা খেজুরে প্রায় ৮০% চিনিজাতীয় উপাদান রয়েছে। বাদ-বাকী অংশে খনিজ সমৃদ্ধ বোরন, কোবাল্ট, ফ্লুরিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান রয়েছে। খেজুরে রয়েছে ভিটামিন কে, যা কাটা-ছেড়ায় রক্তক্ষরণ রোধ করতে অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধাতে সাহায্য করে। তাছাড়া হজম ও হাড়ের গঠনেও সহায়তা করে খেজুরের উপাদান।
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, কপারের মতো প্রায় ১৫টি খনিজ উপাদান রয়েছে খেজুরে। কপার লহিত রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে, আয়রন রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়।
খেজুরে স্যাচারেইটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স ফ্যাট নেই। তাছাড়া এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। খেজুর পরিপাকতন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া উৎপাদনে সাহায্য করে। তাছাড়া এর ফাইবার অ্যাবডমিনাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। খেজুরে আছে ভেষজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে।
দুধ ও খেজুর এক সাথে খাওয়ার উপকারিতা
দুধ খেতে অনেকেই ভালবাসেন না অথচ সুস্বাস্থ্য পেতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ রাখতেই হবে। দুধের স্বাদ বাড়াতে তার মধ্যে দুইটি খেজুর মিশিয়ে খেলে মন্দ লাগে না। তবে কেবল স্বাদ বাড়াতেই নয়, এই পানীয় পুষ্টিগুণেও ভরপুর। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি- একাধিক রোগ-ব্যাধি দূর করতে এই পানীয়টির কোনও জুড়ি নেই।
গ্রীষ্মকালে খুব বেশি শুকনো ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন না পুষ্টিবিদরা। তবে পানিতে বা দুধে ভিজিয়ে রাখলে গরমের দিনেও খেজুর খেলে শরীরের ক্ষতি হবে না।
দুধ ও খেজুর উপকারিতার দিক থেকে কোনোটিই কম যায় না। দুধের উপকারিতার কথা সবার জানা। অন্যদিকে খেজুর প্রয়োজনীয় খনিজ, ভিটামিনে পরিপূর্ণ। আপনি যদি গরম দুধের সঙ্গে খেজুর মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধে দুটি খেজুর মিশিয়ে খান। এ ছাড়াও খেজুরের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধেও সহায়তা করে থাকে। মন ভালো রাখতেও কার্যকর দুধ ও খেজুর। খেজুরে প্রচুর আয়রন থাকে, যা রক্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সহায়তা করে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুধে খেজুর ভিজিয়ে তা কিছুক্ষণ গরম করার পর ১৮-৫৫ বছর বয়সী কয়েকজন মানুষকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাওয়ানোর পর ১০ দিনের মধ্যে তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়েছে। দুধ ও খেজুরের এই কম্বিনেশন খেলে অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তস্বল্পতা রোগ সেরে উঠে।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
সকালে খালি পেটে খান। দুপুরে খাওয়ার আগে। যখনই মিষ্টি খেতে ইচ্ছা হবে তখনই খেজুর খান। * ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘি দিয়ে (অবশ্য যদি ওজন বাড়াতে চাইলে)। মনে রাখবেন যে কোনও কিছুর অতিরিক্ত সেবন উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই খেজুরের ক্ষেত্রেও আপনার এটি মাথায় রাখা উচিত।
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের মতে, প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি খেজুর খাওয়া উচিত। যারা ওজন বাড়াতে চান তারা প্রতিদিন ৪টি খেজুর খেতে পারেন।
সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অন্তত দুটি খেজুর যদি খান তবে আপনার ধারে কাছে ভিড়বে না অনেক রোগ। কারণ খেজুরে রয়েছে অনেক উপকারিতা। শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের অনেকটাই এই খেজুর থেকে পাওয়া যায়। চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতেও খেজুরের অনেক গুণ রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ছাড়াও খেজুরে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, প্রোটিন, ফাইবার এবং আয়রন। আমাদের ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরমিাণ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম এই খেজুর।
বিআরবি হসপিটালের প্রধান পুষ্টিবিদ ইশরাত জাহান বলেন, পাকা খেজুরে প্রায় ৮০% চিনিজাতীয় উপাদান রয়েছে। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে উপকার বেশি হয়। তাছাড়া ব্যায়াম করার ৩০ মিনিট আগে কয়েকটি খেজুর খাওয়া ভালো।
সকালে নাস্তায় খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্য জন্য উপকারী। খালি পেটে খেজুর খেলে শক্তি পাওয়া যায়। যে কোন কাজ করতে শক্তি দরকার হয় সেটা জোগায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম আগে ২/৩ টা খেজুর খেলে শরীরে জন্য উপকারী।
পুরুষদের খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
- খেজুরে রয়েছে অনেক ভিটামিন ও পুষ্টি যা পুরুষদের কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে ।
- যাদের ডায়াবেটিস সমস্যা তাদের জন্য নিয়মিত খেজুর খেলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- খেজুর খেলে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব মত সমস্যা হয় না।
- যে সকল পুরুষের হার্টের সমস্যা তাদের জন্য খেজুর খেলে হার্ট ভালো থাকে।
- পুরুষদের রক্তচাপ কমাতে সক্ষম খেজুর।
- খেজুর ছেলেদের বার্ধক্য দূরে করতে পারে।
- খেজুর খেলে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে।
- যেই পুরুষের বীর্য পাতলা তাদের বীর্য ঘন হয় নিয়মিত খেজুর খেলে।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
দিনে ৪-৫টি খেজুর খেতে পারে। এতে স্বাস্থ্য উপকারিতা মিলবে। ৪-৫টি বা ১০০ গ্রাম খেজুরেই মিলবে প্রায় ২৭৭ ক্যালরি। প্রচণ্ড মিষ্টি হওয়ার কারণে এ ফল যদি বেশি খেতে থাকেন; তাহলে ওজন কমার বদলে দ্রুত বাড়তেও সময় লাগবে না। খেজুরের নানা উপকারিতা থাকলেও সকাল বিকাল খেজুর খাওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত যেকোনো খাবারই বিপদের কারণ হতে পারে। দিনে ৪-৫টি খেজুর খেতে পারে। এতে স্বাস্থ্য উপকারিতা মিলবে। ৪-৫টি বা ১০০ গ্রাম খেজুরেই মিলবে প্রায় ২৭৭ ক্যালরি। প্রচণ্ড মিষ্টি হওয়ার কারণে এ ফল যদি বেশি খেতে থাকেন, তাহলে ওজন কমার বদলে দ্রুত বাড়তেও সময় লাগবে না।
উপসংহার
বন্ধুরা এতক্ষণ পর্যন্ত আজকের আর্টিকেলে যে সমস্ত আলোচনা করা হলো নিশ্চয় তা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। খেজুর এমন একটি ফল যার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। খেজুর আপনি যেভাবেই খান না কেন আপনি উপকার পাবেনই। তবে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করলে তার গুণাগুণ আরো বেড়ে যায় এবং বেড়ে যায় কার্যকারিতা।
তাই শুধু মাত্র রোজাতে ইফতারির সময় খেজুন রাখবো এমনটি যেন না হয়। বছর জুড়ে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখুন, এবং নিয়ম খান দেখবেন আল্লাহর রহমতে আপনার সমস্ত রোগ বালাই দূর হয়ে যাবে। শরীরের ক্লান্তি দূর করে আপনাকে এনার্জিটিক মানুষ বানিয়ে দেবে। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, খেজুন খান, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url