গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা ও সুন্দর হয় বিস্তারিত জেনে নিন
আপনি কি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছেন ? সংসারে নতুন অতিথি আশার অপেক্ষা করছেন ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজকের আলোচনাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা ও সুন্দর হয় বিস্তারিত জেনে নিন।
সব মা-বাবা চায় তার সন্তান যেন ফর্সা ও সুন্দর হয়। এখানে আরো যা জানতে পারবেন- কোন কোন খাবার গুলো নিয়মিত খেলে আপনার গর্ভের বাচ্চা সুস্থ্য, সবল, সুন্দর ও ফর্সা হবে। তাই আসুন আর দেরি না করে মূল আলোচনা থেকে জেনে নেয়া যাক।
ভূমিকাঃ
নিম্নের আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন কলা, দুধ, খেজুর, পেয়ারা, কিসমিস ও বাদাম গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভবতী মায়ের এবং পেটের সন্তানের উপকারিতা সম্পর্কে । খাবারগুলো নিয়মিত খেলে আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার স্বস্থ্য থাকবে রোগ মুক্ত, সুস্থ ও সবল যা আপনার সন্তানের উপরে প্রভাব ফেলবে। ফলে আপনি সুস্থ, সুন্দর ও ফুটফুটে একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
সূচীপত্রঃ
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভাবস্থায় ৮টি টিপস মেনে চলুন বাচ্চা বুদ্ধিমান হবে
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা লম্বা হয়
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চার চুল ঘন হয়
গর্ভাবস্থায় নুডুলস খেলে কি হয়
বাচ্চা ফর্সা হওয়ার দোয়া
বাচ্চা কালো হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভবতী মহিলাদের স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ক্ষুধা লাগে এবং সেই সময়ে ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করাটা আসলে তাদের জন্য খুব জরুরি। কেননা এই খাবার মায়ের সাথে সাথে শিশুর জন্যও অনেক বেশি দরকারী। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই চান তার অনাগত সন্তানের গায়ের রং যেন উজ্জ্বল হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে খাদ্য নির্বাচনের উপর সন্তানের শরীরের বর্ণ কেমন হবে তা নির্ভর করে না, এটা নির্ভর করে তার বাবা-মা এর কাছ থেকে যে জিন পেয়েছে তার উপর। তবে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী গর্ভবতী অবস্থায় যে খাবারগুলো খেলে বাচ্চার বর্ণ ফর্সা হতে পারে, এমন কিছু খাবারের তালিকা পরিবারের বয়োবৃদ্ধরা দিয়ে থাকেন। সেগুলো জেনে নিই আসুন।
দুধ
গর্ভবতী মহিলাদের দুধ পান করা অত্যাবশ্যকীয়। দুধ শিশুর শরীর গঠনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। প্রচলিত ধারণা মতে দুধও ত্বকের রঙ ফর্সা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ডিম
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় যে, যদি ফর্সা বাচ্চা চান তাহলে গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয় তিনমাসে ডিমের সাদা অংশ গ্রহণ করা উচিৎ। তবে সত্য এই যে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডিম খাওয়া মায়ের জন্য খুব জরুরি। ডিমের অধিকাংশ পুষ্টি গুণ এর কুসুমের মাঝেই থাকে। তাই কুসুম খাওয়া বাদ দেয়া চলবে না।
জাফরান দুধ
অনেক মহিলা গর্ভবতী অবস্থায় জাফরান দেয়া দুধ পান করে থাকেন। মনে করা হয় জাফরান গর্ভের শিশুর গায়ের রঙ ফর্সা করে।
চেরি ও বেরি জাতীয় ফল
চেরি ও বেরি জাতীয় ফলে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের ক্ষতি রোধ করে। তাই স্ট্রবেরি, ব্ল্যাক বেরি, ব্লু বেরি ইত্যাদি ফল খাওয়া হয় সুন্দর ত্বকের জন্য।
টমেটো
টমেটোতে লাইকোপেন থাকে যা ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। বিশ্বাস করা হয় যে, গর্ভাবস্থায় টমেটো খেলে বাচ্চার বর্ণ ফর্সা হয়।
কমলা
কমলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ তাই শিশুর শরীর গঠনের জন্য অপরিহার্য। গর্ভাবস্থায় কমলা খেলে শিশুর ত্বক ভালো হবে।
নারিকেল
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী নারিকেলের সাদা শাঁস গর্ভের শিশুর বর্ণ ফর্সা করে। তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত নারিকেল খাওয়া মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। খেতে পারেন, তবে পরিমিত।
শুধুমাত্র ত্বকের সৌন্দর্যই কোন মানুষের একান্ত আকাঙ্ক্ষিত বিষয় হতে পারে না। গর্ভবতী মায়ের উচিৎ সুস্থ, মেধাবী ও স্বাভাবিক শিশু জন্মের জন্য চেষ্টা করা। তাই পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে নিজের জীবনধারাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় ৮টি টিপস মেনে চলুন বাচ্চা বুদ্ধিমান হবে
যদি আপনি চান আপনার আগত সন্তান আপনার মতোই বুদ্ধিমান হোক, তবে মেনে চলুন এই ৮ টিপস--
১. বলা হয়ে থাকে থার্ড ট্রায়মেস্টার থেকে বাচ্চা গর্ভের মধ্যে থেকেই নানা ধরনের শব্দ শুনতে পায়। এবং ভাষা শিক্ষার প্রথম ধাপ ওটাই। এমনকী, এই সময় আপনি যদি কোনও গান গুনগুন করেন, কোনও বইয়ের বিশেষ অংশে পড়েন রোজ জোরে জোরে, আপনার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তা চিনতে পারে।
২. বাচ্চার মস্তিষ্ক ভালো করে গঠন হওয়ার জন্য ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাছ, সোয়াবিন, পালংশাক রাখুন আপনার ডায়েটে। সঙ্গে শাকে থাকা আয়রন বাচ্চার মস্তিষ্কে আক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
৩. প্রেগন্যান্সির সময় হালকা যোগা, হাঁটাচলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এক্সারসাইজের সময় শরীর থেকে যে হরমোন নিষ্কৃত হয় তা প্লেসেন্টাতে পৌঁছায়। সঙ্গে সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো মতো হয়। এমনকী আপনার গর্ভেও। ফলে বাচ্চার উন্নতিও ভালো হয়।
৪. আপনার সন্তানের সাথে কথা বলুন রোজ। এটাও আপনার আগত সন্তানের মস্তিষ্কের বেড়ে ওঠায় খুব সাহায্য করে। হয়তো আপনার সন্তান বুঝতে পারে না আপনি কী বলছেন, তবে এটি তাঁর মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে।
৫. থাইরয়েড শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা হরমোন। গর্ভাবস্থায় যদি আপনার থাইরয়েড হরমোনে তারতম্য দেখা না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য সন্তানের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
৬. এই সময় ভিটামিন ডি-ও শরীরের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যা সরাসরি সূর্যের আলো থেকেই পাবেন। দিনে অন্তত ২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন এই সময়টা।
৭. Time magazine article-র মতে পেটে ম্যাসাজ করাও খুব ভালো উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। ২০ সপ্তাহ থেকেই আপনার গর্ভস্থ সন্তান আপনার স্পর্শ অনুভব করতে পারে। এমনকী, আপনার স্পর্শ ভ্রূণের নার্ভাস সিস্টেমের উপরেও প্রভাব ফেলে।
৮. ঔষধের পাশাপাশি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাবার খান। যাতে খাবারের থেকে আপনার শরীর মিনারেলস, ভিটামিন, ফাইবার থেকে শুরু করে সব কিছু পায় বাচ্চার বেড়ে ওঠার জন্য।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা লম্বা হয়
রোগ বিশেষজ্ঞের কথা অনুসারে— একটি শিশু যে জিন নিয়ে জন্মায়, সেটাই তার বুদ্ধিমত্তা (Intelligence) ও চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যের মূল কারণ হয়। কিন্তু, নতুন গবেষণায় একটি শিশুর ‘আইকিউ লেভেল’(IQ level) মাত্র ৫০% নির্ভর করে তার জিনের উপর।
বাকিটার জন্য দায়ী থাকে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা। কি করলে এবং কোন কারণে আপনার শিশুটি বুদ্ধিমান (Intelligent) হয়ে জন্মাবে, গবেষণায় উঠে আসা সেই কারণগুলি আজ দেয়া হলো।
পুষ্টিকর খাবারঃ শিশুর ‘ব্রেইন ডেভলপমেন্ট’-এর জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega 3 fatty acids) খুবই জরুরি। তাই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মাছ (Fish), সোয়াবিন, পালং শাক খাওয়া খুবই প্রয়োজন। অন্যান্য শাক যাতে আয়রন রয়েছে, এমন শাকও শিশুর ব্রেইনে অক্সিজেন (Oxygen) সাপ্লাই করতে সাহায্য করে। আমন্ড ও ওয়ালনাটও এ সময় কার্যকরী।
গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চার চুল ঘন হয়
চুল বাচ্চার জেনেটিক্যাল হবে। অর্থাৎ বাবা মায়ের যেমন ওরকম হবে বেবির চুল। তবুও তুমি শাক সবজি বেশি করে খাও। তাতে সবাই বলে যে বেবির চুল নাকি ভালো হয়।
প্রোটিন অর্থাৎ মাছ মাংস ডিম এগুলো বেশি করে খাবে সবুজ শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করবে ।যতধরনের শাক আছে খাওয়ার চেষ্টা করবে এখন আমি শুনেছি শাকসবজি বেশি করে খেলে বাচ্চার চুল ভালো হয়।
সবুজ শাকসবজি বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা কর যত বেশি বারবে এখন সব প্রকারের শাক খাবে তাহলে গর্ভস্থ সন্তানের চুল ভালো হয় এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার সবসময় খাওয়ার চেষ্টা করবে।
গর্ভাবস্থায় নুডুলস খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় নুডুলস খেলে অকাল গর্ভপাত ঘটতে পারে। কারণ নুডুলস ভ্রুণের স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিহত করে। ইনস্ট্যান্ট নুডুলস মেদবহুল করে তোলে। এর চর্বি ও অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রাখে।
বাচ্চা ফর্সা হওয়ার দোয়া
একটা ছোট দোয়া আছে যা পড়ার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চা ফর্সা হয়। কেননা সবকিছু মালিক আল্লাহ তা'আলা তাই আপনি যদি আল্লাহতালাকে সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে আল্লাহতালা নিশ্চয়ই আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ করবে এবং আপনার গর্ভে সন্তানকে খরচ করে দিবে। তাহলে চলুন জেনে আসি বাচ্চা ফর্সা হওয়ার দোয়া সম্পর্কে-
বাচ্চার ফর্সা হওয়ার দোয়া আমল করার ক্ষেত্রে যখন থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার গর্ভে বাচ্চা আছে সেই দিন হতে আপনি এই দোয়াটি পাঠ করবেন, দোয়াটি হল "আল্লাহুম্মা জাম্মিলহু ইয়া নুর"। এই দোয়াটি ৭বার পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পেটে মাসাজ করবেন। যার ফলে আপনার গর্ভের সন্তান এবং ফর্সা হয়ে উঠবে।
আশা করি বাচ্চা ফর্সা হওয়ার দোয়া সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। সুতরাং নিয়মিত এই দোয়াটি পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর অনুগত লাভ করুন, যাতে আল্লাহ আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ করে দেয়। নিম্নে আপনাদের জানাবো গর্ভাবস্থায় কি খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়।
বাচ্চা কালো হওয়ার কারণ
মানুষের ত্বকে থাকে মেলানোসাইট কোষ, যেখান থেকে মেলানিন নামে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়, যা ত্বকের স্বাভাবিক রং তৈরিতে জরুরি ভূমিকা নেয়। এই কোষের কার্যকলাপে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে চামড়ার রং তৈরির প্রক্রিয়াতেও সমস্যা দেখা দেয়। আর মেলানোসাইটের সক্রিয়তা বাড়লে মেলানিন নিঃসরণও বাড়ে, ফলে চামড়া কালো হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা প্রতিটি মায়ের জানা থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া মা ও সন্তান উভয়ের পক্ষেই বেশ উপকারী।গর্ভাবস্থায় শিশু গর্ভে থাকার ফলে গর্ভবতী নারীর খাবারের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়।
গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু সবজি এড়িয়ে চলা উচিত যা উভয়কে নিরাপদ রাখতে পারে পাশাপাশি বেশি বেশি কলা খাওয়ার উপকারিতা কি তাও জানা থাকা দরকার। আজকে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা কি।
১। পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ
কলায় আছে পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও বি-সহ বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল। এইগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবারও আছে।
২। মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করে
কলা খেলে পেট ভাল থাকে এবং বমি বমি ভাব কমে যায়। অনেক গর্ভবতী মহিলারা বলেছেন যে সকালে একটি কলা খেলে তা তাঁদের মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করেছে।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্যে দুর করে
কলায় থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। এই উচ্চ ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সাহায্য করে। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাঁদের উচিত প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি কলা খাওয়া।
৪। বুকের জ্বালা কমাতে সাহায্য করে
কলাকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। তাই কলা বুক-জ্বালা কমাতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিস বা জিইআরডি (একটি হজমের ব্যাধি) হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
৫। ওজন বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে
কলাতে প্রচুর পরিমান স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি থাকে এবং এটি ওজন বৃদ্ধি আটকাতে সাহায্য করতে পারে। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন এবং পাশাপাশি কলা খাওয়া। এগুলা স্বাস্থ্যকর ডায়েটের কাজ করতে পারে।
৬। শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা হ্রাস করে
কলা ফোলেটের একটি ভাল উৎস যা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার ফলে শরীরে ফোলেটের (পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বি নাইন এর রূপ) মাত্রা উন্নত হয়। ফলে ফোলেটের ঘাটতির সম্ভাবনা কমে যায় যা শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয় বলে জানা যায়।
৭। রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে
কলা পটাসিয়ামের প্রধান উৎস। ২২৫ গ্রাম ওজনের এক কাপ খোসা ছাড়ানো কলাতে ৮০০ মিলিগ্রামেরও বেশি পটাসিয়াম থাকে। এটি একটি প্রয়োজনীয় খনিজ যা শরীরে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই গর্ভাবস্থায় পরিমানমতো কলা খাওয়া রক্তচাপের স্তরে ওঠানামা রোধে সহায়তা করতে পারে।
৮। হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে
কলা যেহেতু ক্যালসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস যা শিশু এবং মা উভয়েরই হাড়ের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। শরীরে পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই প্রয়োজনীয়। তাই গর্ভাবস্থায় পরিমানমতো কলা খাওয়া উচিত।
৯। স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে সহায়তা করে
কলা ভিটামিন সি এর একটি উৎস। এই ভিটামিন সি যাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডও বলা হয়। এটি শরীরের আয়রন শোষণের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি হাড়ের বৃদ্ধি, টিস্যুগুলি মেরামত এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় ধরে রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।
১০। ক্ষুধা বৃদ্ধি করে
কলা ক্ষুধার উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। গর্ভবতী মহিলারা যাদের ক্ষুধা কমে যায় তাদের কলা খাওয়া উচিত, কারণ এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করতে পারে।
১১। দ্রুত এনার্জি বুস্ট দেয়
গর্ভাবস্থার শেষ তিনমাসে, আপনার শক্তির স্তর সঠিক থাকা খুবই প্রয়োজন। কলা খেলে আপনাকে দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং, এই ফলটি হাতের কাছেই রাখুন। কলা খাওয়া আপনাকে ক্লান্তির সাথে লড়াই করতে এবং আপনার শক্তির স্তর বাড়াতে সাহায্য করবে।
দিনে কতগুলি কলা খাওয়া উচিত ?
কলা খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই যে আপনার গর্ভাবস্থায় কি পরমান খাওয়া উচিত বা উচিত নয়। তবে, বেশিরভাগ ডাক্তাররা দৈনিক দুই থেকে তিনটি কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই পরিমাণ শরীরে যথাযথ পুষ্টিউপাদান সরবরাহ করে, যা অতিরিক্ত হয় না। গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্যান্য ফল ও সবজি খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় গর্ভের সন্তান এর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য দুধ পানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
১. গর্ভাবস্থার শুরু থেকে দুধ পান শুরু করলে প্রিমেচিউর প্রসব হওয়ার আশঙ্কা কমে প্রায় ২১ শতাংশ। একলামশিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও কমে প্রায় ২০ শতাংশ।
২. দুধে উপস্থিত ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়ামসহ পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা শিশুর বিকাশে ভূমিকা রাখে।
৩. গর্ভাবস্থায় মায়েরা একটি সাধারণ সমস্যায় ভুগেন সেটি হলো অনিদ্রা। অনিদ্রা থেকে শারীরিক নানা জটিলতার সূত্রপাত হয়। যেহেতু তখন নিদ্রার কোনো ঔষধ সেবন ও সম্ভব হয়না তাই রাতের বেলা এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমালে এই সমস্যা অনেকটাই দূর করা সম্ভব হয়।
৪. গর্ভের শিশুর হাড় এবং দাঁতের বিকাশে দুধ অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দুধে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান শিশু হাড়ের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে।
৫. দুধে রয়েছে উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন যা গর্ভের শিশুর মাংসপেশি গঠন এবং শারীরিক গড়ন সুন্দর করতে সাহায্য করে।
৬. পটাসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফসফরাস ও ভিটামিন নিয়মিত দুধ পান করলে এসব পুষ্টি ও পাবেন যা গর্ভের সন্তানের মানসিক বিকাশ ও শারীরিক বৃদ্ধি করে।
৭. কোনো গর্ভবতী নারী যদি আন্ডার ওয়েট হয়ে থাকেন অথবা খাওয়া দাওয়া তুলনামূলক কম করে থাকেন তাদের গর্ভের বাচ্চাও আন্ডার ওয়েট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এমতাবস্থায়, আপনি যদি দিনের বেলা সকালের নাস্তায় দুধের সাথে বাদামের গুড়ো মিক্স করে খান তাহলে মা ও শিশুর ওজন ঠিক রাখা সম্ভব হবে।
৮. গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রজেস্টেরন হরমোনের জন্য শরীরে অনেক বেশি ক্লান্তি অনুভব হয়। নিয়মিত দুধ খেলে শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যায় এবং শরীরের শক্তি সঞ্চার ঘটে।
৯. গর্ভাবস্থায় কোন নারী যদি ঠান্ডা জনিত জটিলতায় ভোগেন তাহলে সেটা গর্ভের শিশুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে রাতে ঘুমানোর পূর্বে গরম দুধ পান করার অভ্যাস করা উচিত।
১০. এসময়কার আরেকটির জটিল সমস্যা হল হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। এই সমস্যাগুলো দূর করার জন্য নিয়মিত সকালে এবং রাতে এক কাপ করে গরম দুধ পান করতে পারেন। যা আপনার হজম শক্তিকে ত্বরান্বিত করবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর অপরিহার্য ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের একটি প্রাকৃতিক উৎস যা একটি সুস্থ গর্ভাবস্থাকে মেইনটেইন করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় যে কোন খাবার পরিমিত ও সুষম হওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং গর্ভবতী নারীদের সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে খেজুর খাওয়া উচিত।
২০০ টিরও বেশি গর্ভবতী মহিলার উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে নিয়মিত খেজুর খেলে জরায়ু নরম হয় যা প্রসবকালীন সময়ে কষ্ট কমিয়ে দেয়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় প্রসবের প্রত্যাশিত তারিখের চার সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন ছয়টি খেজুর খেলে ডেলিভারির প্রথম স্টেজের সময় কমে যায় এবং জরায়ুকে নরম করে দেয়।
গর্ভাবস্থায় নারীদের খাদ্যাভাসে নানান পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এসময় উচ্চ পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। জীবনধারণ ও খাদ্যের ব্যাপারে সচেতন হলেই এই অবস্থায় অনেক ঝুঁকি এড়িয়ে একটি সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করা সম্ভবপর হয় একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য।
তাই এ সময় নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা উচিত। অন্যান্য ফলের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় খেজুর গ্রহণ মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই বেশ উপকারী ।
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রায়ই মুখরোচক খাবার খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু বেশি ফাস্ট ফুড কিংবা বাইরের খাবার এই সময় না খাওয়াই ভাল, তাহলে নানান শারীরিক সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকরা সাধারণত ফলমূল, শাকসবজি, ড্রাই ফ্রুটস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।
তবে বেশ কিছু ফল আবার শরীরের ক্ষতি করে দিতে পারে। কিন্তু পেয়ারা এমন একটি ফল যা স্বাস্থ্য উপযোগী এবং অনেকেই খেতে ভালোবাসেন। তাই খিদে পেলে পেয়ারা খেতেই পারেন। এতে মুখের স্বাদও বদলাবে আর পুষ্টিও পাবেন ভরপুর।
পেয়ারা খুবই পুষ্টিকর ফল। অনেক চিকিৎসকই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার কথা বলেন। পেয়ারা নানাবিধ ভিটামিন, খনিজ এবং ফলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। গর্ভাবস্থায় মায়েদের পেয়ারা খাওয়ালে যে সকল উপকারিতা রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
- অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কমায়
- পেশী এবং স্নায়ু রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে
- ইনফেকশন প্রতিরোধ করে
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
- হজমশক্তি বাড়ায়
- শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
শিশুর হাড়কে মজবুত করার জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। ডেইরি মিল্ক, ব্রকলি, বাদাম,দই ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামের যোগান দিতে পারে। এ সময়ে প্রয়োজন বাড়তি ক্যালরি। কিসমিস, খেজুর ইত্যাদি শুকনো ফল যোগান দেবে বাড়তি ক্যালরির।
কিসমিশ সচরাচর হেলদি স্ন্যাক্স হিসাবে খাওয়া হয়, কিন্তু আপনি কি জানেন এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য যথেষ্ট উপকারী? এখানে গর্ভাবস্থায় কিসমিশের উপকারিতার বিশেষ কয়েকটি বলা হলঃ
কিসমিশে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়, যেমন আয়রন এবং পটাসিয়াম। কিসমিশে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের কোষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
গর্ভাবস্থায় কালো কিসমিশ আপনার হজম নিয়ন্ত্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ এবং এই দুয়ের নিয়মানুবর্তিতা রক্ষায় সাহায্য করে। কিসমিশ এনার্জির ভাল উৎস, তাই গর্ভাবস্থায় আপনার ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। আপনার খাদ্যতালিকায় কিসমিশ অন্তর্ভুক্ত করলে আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর পদার্থের বর্ধিত চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খাওয়ার ফলে বিভিন্ন উপকারিতা লাভ করা যেতে পারে। কয়েকটি প্রধান উপকারিতা নীচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছেঃ
- এগুলি ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই সহ প্রোটিন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি ভাল উৎস।
- চিনাবাদাম গর্ভবতী মহিলাদের বর্ধিত ক্যালোরি চাহিদা মেটাতে সহায়তা করতে পারে এবং ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
- এগুলি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতেও সহায়তা করতে পারে। চিনাবাদামে ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা ভ্রূণের বিকাশ এবং গর্ভাবস্থার ফলাফলগুলিতে লাভজনক প্রভাব ফেলতে পারে।
- চিনাবাদাম, প্রকৃতপক্ষে, সমস্ত বাদামই আয়রন সমৃদ্ধ, যা রক্তাল্পতার মতো রক্ত-সম্পর্কিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে পরিচিত। প্রসবের সময় রক্তাল্পতা বেশ সমস্যার কারণ হতে পারে।
- চিনাবাদাম গর্ভাবস্থার জন্য ভালো হওয়ার আরেকটি কারণ হ'ল মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট-এর উপস্থিতি। এই ফ্যাট-গুলি, বিশেষত ওলিক অ্যাসিড, হার্ট-এর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পরিচিত।
উপসংহারঃ
আপনার খাবারে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত করুন। ভিটামিন এ, সি, এবং ই, ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো কিছু পুষ্টি উপাদান, গর্ভাবস্থায় শিশুর স্বাস্থ্যকর ত্বকের বিকাশ এবং ফর্সা বর্ণের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
আরো একটা কথা মনে রাখবেন, গর্ভবতী মায়ের এবং পেটের সন্তানের ক্ষতি হয় এমন খাবার কখনোই খাবেন না। যতই ইচ্ছে করুক ফাস্ট ফুড, ঝাল খাবার এবং বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার এডিয়ে চলুন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, ছোট্ট নতুন অতিথির জন্য শুভ কামনা জানিয়ে শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url