শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে যে ছয়টি রোজা রাখা হয় তার ফজিলত আপনি কি জানেন ? না জানলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আসুন শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
এখানে আরো যা জানতে পারবনে- শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখান বিধান কি ? এই ছয়টি রোজা শাওয়াল মাসের কোন সময় রাখতে হবে ? রজমান মাসের কোন রোজা ছুটে গেলে, আগে সেটা করতে হবে, নাকি শাওয়ালের রোজা রাখতে হবে। এসব কিছু জানতে পারবেন আজকের আলোচনায়।
ভূমিকাঃ
রমজানের সিয়াম পালনের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত-মুস্তাহাব, ফরজ নয়। শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখার বিধান রয়েছে। এ রোজা পালনের মর্যাদা অনেক বড়, এতে প্রচুর সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি এ রোজাগুলো পালন করবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।
আবু আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল এরপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় রাসুল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পরে ছয়দিন রোজা রাখবে সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।
সূচীপত্রঃ
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার ফজিলত
শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখার নিয়ম
শাওয়াল মাসের আমল
ঈদুল ফিতর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল
নারীদের শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা আগে নাকি কাজা রোজা ?
শাওয়াল মাসে বিয়ে করার ফজিলত
আরাফার দিনের রোজার ফজিলত
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজার ফজিলত
পবিত্র রমজানব্যাপী যারা সিয়াম সাধনা করেছেন তাদের জন্য শুভ সংবাদ হলো- শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখলেই মিলবে সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব। এ ছয়টি রোজা রাখা মোস্তাহাব। এর ফজিলত বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের ফরজ রোজাগুলো রাখল, অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম: ১১৬৪)
বস্তুত এই হাদিসটি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের সঙ্গে মিলে যায়। আয়াতটি হলো, ‘কেউ কোনো নেক আমল করলে, তাকে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে।’ (সুরা আনআম: ১৬০) রমজানের এক মাসের দশগুণ হলো ১০ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয়দিনের দশগুণ হলো ৬০ দিন অর্থাৎ দুইমাস। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন,তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে’ (তিরমিজি: ১/১৫৩৪)
যাদের ভাংতি রোজা আছে, অসুস্থতা কিংবা নারীদের মাসিক তথা হায়েজ-নেফাসের কারণে রমজানের রোজা অপূর্ণ থাকে, তাদের জন্য নিয়ম ও করণীয় হলো শাওয়াল মাসে তাদের ভাংতি রোজাগুলো আগে পূর্ণ করে নেবে। তারপর তারা শাওয়ালের ৬ রোজা পালন করবে।
শাওয়ালের ছয় রোজার গুরুত্ব
ইসলামি মাসগুলোর মধ্যে শাওয়াল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের বহুবিধ তাৎপর্য রয়েছে। আরবি চান্দ্রবর্ষের দশম মাস শাওয়াল। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) অগ্রণী। এ মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর। পয়লা শাওয়াল সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব।
এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে ঈদের, এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোজা ও রমজানের এবং এর সঙ্গে যোগ রয়েছে সদকা ও যাকাতের। এ মাসের ৭ তারিখে তৃতীয় হিজরি সনে (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে) ওহুদ যুদ্ধে বিজয় হয়েছিল। এই মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে, তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করল’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪; আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ্-আলবানি)।
চান্দ্র মাস হিসেবে তিন শত চুয়ান্ন বা তিন শত পঞ্চান্ন দিনে এক বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬০)। এই হিসাবে রমজান মাসে এক মাসের (৩০ দিনের) রোজা ১০ গুণ হয়ে তিন শ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট চুয়ান্ন বা পঞ্চান্ন দিনের জন্য আরও ছয়টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’
শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্যান্য সব রোজার নিয়ত সাহ্রির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে নতুন নিয়ত না হলেও চলবে এবং সাহ্রি না খেতে পারলেও রোজা হবে। (ফাতাওয়া শামি)।
শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখার নিয়ম
শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখাই ফজিলতপূর্ণ। তবে লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা যায়। শাওয়াল মাস চলে গেলে তা কাযা করা জরুরি নয়। যেহেতু তা কারো কাছে সুন্নত আবার কারো কাছে মোস্তাহাব। তাই ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় হোক যথাসময় পার হয়ে গেলে তা কাজা করা আবশ্যক নয়।সম্ভব হলে ঈদের পরপরই এ রোজা একাধারে পালন করা। অথবা বিচ্ছিন্নভাবেও এ রোজা পালন করা যায়।
মনে রাখবেন, শাওয়ালের ৬ রোজায় বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন এবং শাওয়ালের রোজা পালন করেন। আবার যাদের রমজানের রোজার ভাংতি বা কাজা আছে, তাদের জন্য শাওয়ালের রোজা রাখা জরুরি নয়, কিন্ত ইচ্ছে করলে রাখতে পারেন।
সেক্ষেত্রে আগে রমজানের রোজার কাজা আদায় করে নেয়া জরুরি নয়। শাওয়ালের রোজা আদায় করার পর রমজানের কাজা রোজা আদায় করতে পারবেন। কারণ শাওয়াল মাস শেষ হয়ে গেলে এই ছয়টি রোজা আর রাখতে পারবেনা, পক্ষান্তরে বাকি ১১ মাসের যে কোন সময় রমজানের কাজা রোজা আদায় করা যায়। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজা রোজা আদায় করে নেওয়া ভালো। মানুষ কতদিন বাচবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেনা।
শাওয়াল মাসের আমল
শাওয়াল মাসের আমলে উন্নতি লাভ হয়, নেকির পাল্লা ভারী হয়, আমলে সাফল্য আসে, কল্যাণ প্রত্যাশী আল্লাহর কাছে উভয় হাত প্রসারিত করে প্রার্থনায় মগ্ন হয়। রমজানের পূর্ণ মাস রোজা পালনের পর আরও ছয়টি রোজা রাখার আনন্দে বিভোর হয় মুমিন। যে রোজার বরকতে বছর জুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব মিলে। এ সবই শাওয়াল মাসের আমলের সার্থকতা।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে ও জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে আক্দ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ, মা আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। ছয় রোজা শাওয়াল মাসের বিশেষ সুন্নত।’ (মুসলিম)
শাওয়াল মাসের এ ছয়টি রোজা মূলত সুন্নত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা আমল করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়। কারণ, এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, অতিরিক্ত তথা নফল। এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
ঈদুল ফিতর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল
রমজানের ফরজ রোজাকে এভাবেই অন্যান্য দিনের রোজা থেকে পৃথক করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরের দিনটি রোজাদারের জন্যে পুরস্কারস্বরূপ-এ কথা ঠিক, পাশাপাশি এ বিধানের মধ্য দিয়ে ফরজ ও নফল রোজা মিশে যাওয়ার আশংকাও দূর হয়েছে।
কিন্তু যে অনন্য মহিমায় ভাস্বর হয়ে থাকে পবিত্র মাহে রমজান, অতুলনীয় যে ফজিলতকে তা ধারণ করে রাখে, পরের মাস শাওয়ালের চাঁদ ওঠার সাথে সাথেই কি তা একেবারে শেষ হয়ে যাবে? মহামহিম আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনুগত বান্দাদের জন্যে ব্যবস্থা ঠিক এরকম নয়।
শাওয়ালের প্রথম তারিখ ঈদুল ফিতরের দিন রোজাকে নিষিদ্ধ করে রমজানের অনন্যতাকে একদিকে অধিক স্পষ্ট করা হয়েছে, অপরদিকে ঈদের পরদিন থেকেই পুরো মাসজুড়ে ঐচ্ছিকভাবে আরেকটি ফজিলতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ
‘যে রমজান মাসের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পুরো বছরই রোজা রাখল।’ (হাদীস নং ১১৬৪)
যে কোনো ভালো কাজ করলে দশগুণ নেকি পাওয়া যায়-এটি কুরআনের ঘোষণা। সুরা আনআমে আল্লাহ তায়ালার ইরশাদ-
مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
‘যে কেউ কোনো ভালো কাজ করবে, সে এর দশগুণ নেকি লাভ করবে।’ [আয়াত : ১৬০]
রমজানের ত্রিশটি রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে মোট রোজার সংখ্যা দাঁড়ায় ছত্রিশটি। আর ছত্রিশটি রোজার দশগুণ হচ্ছে তিনশত ষাটটি রোজা। এ অর্থেই শাওয়ালের ছয় রোজার মাধ্যমে পুরো বছরের রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
হাদীসের ভাষ্য থেকে এটাও স্পষ্ট, শাওয়ালের ছয় রোজা দিয়ে পুরো বছরের রোজার নেকি হাসিল করতে হলে অবশ্যই রমজানের পুরো মাস রোজা রাখতে হবে। রমজানের রোজা না রেখে, কিংবা কিছু রেখে কিছু না রেখে শাওয়ালের রোজা রাখলে এ ফজিলত পাওয়া যাবে না। রমজান মাস যদি উনত্রিশ দিনে শেষ হয়ে যায়, তবু এ সওয়াব প্রাপ্তির জন্যে শাওয়ালের ছয়টি রোজাই যথেষ্ট।
এক্ষেত্রে এমনটি মনে করার অবকাশ নেই, রমজান মাস উনত্রিশ দিনে শেষ হলে হয়তো শাওয়াল মাসে সাতটি রোজা রাখতে হবে। কারণ হাদীসে স্পষ্টভাবেই রমজান মাসের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। রমজান মাস ত্রিশ দিনে শেষ হলো, না উনত্রিশ দিনে-তা এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়।
নারীদের শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা আগে নাকি কাজা রোজা ?
অবশ্যই রমজান মাসের ছুটে যাওয়ার রোজার কাজা রোজা আগে রাখতে হবে। তারপর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখতে হবে। তবে কেউ যদি শাওয়ালের ৬টি রোজা আগে রাখে, এতে দোষের কিছু নেই। যেহেতু শাওয়াল মাস পার হয়ে গেলে এই ৬টি রোজা রাখার ফজিলত থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন তাই কাজা রোজা বাদ দিয়ে এই ৬টি রোজা আগে করে নিতে পারেন।
মনে রাখবেন রমজানের কাজা রোজার জন্য আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হবেন, কিন্ত শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা না রাখলে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন না। এর ফজিলত থেকে বঞ্জিত হবেন। যদি মনের করেন, কাজা রোজা রাখতে গেলে শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখতে পারবেন না, তবে ফজিলতের কারণে শাওয়ালের ৬টি রোজা আগে আদায় করতে পারেন।
শাওয়াল মাসে বিয়ে করার ফজিলত
সাহাবাদের মতে, শাওয়াল মাসে বিয়ে করা মুস্তাহাব। নবীজি (সা.) আয়েশা (রা.)-কে এই মাসে বিয়ে করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বিয়ে করেন শাওয়াল মাসে এবং শাওয়াল মাসেই আমাদের বাসর হয়।
আর আয়েশা (রাঃ) শাওয়ালে তাঁর (সম্পর্কীয়) মেয়েদের বাসর হওয়া পছন্দ করতেন। (তিনি বলতেন), তাঁর কোন স্ত্রী তাঁর কাছে আমার চাইতে অধিক ভাগ্যবতী ছিল? (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩৬)
ইমাম নববী (রঃ) সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে এই হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন, এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে শাওয়াল মাসে বিয়ে দেওয়া, বিয়ে করা ও বাসর করা মুস্তাহাব। আমাদের পূর্বসূরিরাও এই হাদিস দ্বারা শাওয়াল মাসে বিয়ে মুস্তাহাব হওয়ার দলিল দিতেন।
আয়েশা (রাঃ) এই মাসে বিয়ে মুস্তাহাব বলার কারণ হলো, জাহেলি যুগে এই মাসে বিয়ে দেওয়া, বা বিয়ে করা ও বাসর করাকে অপছন্দনীয় মনে করা হতো। যার কোনো ভিত্তি ছিল না।
আরাফার দিনের রোজার ফজিলত
বছরের যেকোনো সময়ই নেক আমল করা যায়। নফল রোজা রাখা যায়। তবে কিছু কিছু সময়ের আমল আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক প্রিয় এবং এর সওয়াবও বেশি। তেমনি একটি আমল হলো আরাফার দিবসের রোজা। এই দিনের রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার আগের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'ইয়াওমে আরাফার রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন'। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১১৬২)।
আরাফার এ রোজা ফরয ওয়াজিব বা মুস্তাহাব এরকম কিছু না। এ রোজা না রাখলে গুনাহ হবে না। তবে এ রোজার ফজিলত অন্যান্য নফল রোজার চেয়ে অধিক। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ছওয়াব এক হাজার দিন রোজা রাখার সমান’। (তারগিব)।
হাজিদের জন্য আরাফার ময়দানে রোজা রাখা মুস্তাহাব নয়। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে রোজাবিহীন অবস্থায় ছিলেন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আরাফা দিবসের রোজা পালনের মাধ্যমে হাদীসে বর্ণিত ফজিলত হাসিলের তাওফিক দান করুন।
উপসংহারঃ
শাওয়াল শব্দের মধ্যেও এ মাসের মাহাত্ম্য লুকায়িত আছে। শাওয়াল অর্থই হচ্ছে- প্রসারিত করা, পূর্ণতা দান করা কিংবা উন্নতকরণ। মূল কথা হলো- মহান রাব্বুল আলামিন বান্দার আবেদন-নিবেদনে চাওয়ার হাতকে বরকত ও কল্যাণে ভরপুর করে দেন। আমল-ইবাদত ও রোজা পালনে নিজের আমলকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করে নেন মুমিন।
ফলে এ মাসে খুব সহজেই মহান রবের সন্তুষ্টি পেয়ে যায় মুমিন। প্রিয় মুসল্লিগণ! আল্লাহ তাআলা সবাইকে বছরজুড়ে রোজা রাখার সওয়াব ও ভরপুর কল্যাণ পাওয়ার জন্য শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। শাওয়াল মাসের আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url