হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিক ও হস্তমৈথুন থেকে বাচার উপায় জেনে নিন
হস্তমৈথুন একটি ক্ষতিকর আসক্তি। আপনি কি এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানেন ? আপনি কি হস্তমৈথুনের মত খারাপ অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েছেন ? এখান থেকে বের হতে পারছেন না ? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্যই। আসুন হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিক ও হস্তমৈথুন থেকে বাচার উপায় জেনে নিন
এখানে আরো জানতে পারবেন- হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশনের অপকারিতা এবং ইসলামের দৃষ্টি কোন থেকে সমাধান কি। অল্প সময়ের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে সারা জীবনের জন্য কত বড় ক্ষতি করে ফেলছেন নিজের অজান্তে সেই সব দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন আসলে মুলত আসক্তি। যৌবনে এবং বিশেষ করে বিবাহিত জীবনে বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। হস্তমৈথুন কি তা আমরা সাধারণত সবারই জানা আছে । বিশেষ করে ছেলেদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে যৌন ইচ্ছা ও চাহিদা বাড়তেই থাকে। এখন তে ইন্টারনেটের যুগ যে কেউ খুব সহজেই ইউটিউবে ঢুকে খারাপ ভিডিও দেখার নেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
এতে করে যৌন চাহিদা না মিটাতে পেরে জড়িয়ে পড়ছে হস্তমৈথুন বা মাস্টাবেশনের দিকে। যৌবনের প্রথম দিকে এটি সবার কাছে অনেক আনন্দদায়ক হলেও ধীরে ধীরে এর ক্ষতিকর দিকগুলো দৃশ্যমান হতে থাকে। তাই হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিক ও হস্তমৈথুন থেকে বাচার উপায় জেনে নিন।
সূচীপত্রঃ
হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন কি
হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলো
হস্তমৈথুন বা মাস্টাবেশন থেকে বাচার উপায় ও ইসলাম
মেয়েদের হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর প্রভাব ইসলাম
হস্তমৈথুনের মত বাজে অভ্যাস ও হোমিও চিকিৎসা
হস্তমৈথুনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার উপায়
হস্তমৈথুনের প্রধান প্রধান সমস্যা গুলো হলো
উপসংহার
হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন কি
হস্তমৈথুন হলো শারীরবৃত্তীয় একটি প্রক্রিয়া। হস্ত মৈথুনের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের হাত ব্যবহার করেই বীর্য স্খলন বা অর্গাজমের মাধ্যমে যৌনসুখ লাভ করেন। হস্ত মৈথুন মানে যৌন পরিতোষের জন্য পুরুষের লিঙ্গ অথবা নারী তার ভগাঙ্কুর ঘর্ষণ এবং স্তন স্পর্শ করেই যৌন আনন্দ উপভোগ করা।
হস্তমৈথুন এক বিকৃত যৌনক্রিয়া। যাকে পাবে তাকে নিঃশেষ করেই ছাড়বে। তবে একটি কথা- আজকাল কিছু সাইট বা ডাক্তার নিজেদের ব্যবসা চাঙ্গা রাখার জন্য দেদারছে হস্তমৈথুন করতে বলছে।
সাবধান! তাদের কথায় কান দিবেন না। কেউ বা কৌশলে সাপ্তাহে একবার করতে বলছে। যে একবার করবে সে কি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে? আর হস্তমৈথুন করেই ওভার কন্ট্রোলে গিয়ে। তাই আসুন এটা ত্যাগ করি।
হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলো
- লিঙ্গের শিথিলতা।
- দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।
- স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ...
- পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করা যায় না।
- খাবার হজম ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ফলে ক্ষুধামন্দা দেখা যায়।
- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি এসে বাসা বাঁধে।
- বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়ার কারনে সর্বদা সামান্য সামান্য বীর্য নির্গত হতে থাকে, প্রস্রাবের নালীতে বীর্য জমে থাকে ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। ফলে প্রস্রাবের নালীতে ক্ষত হয়ে যায় এবং ক্ষতস্থান হতে পুঁজ বের হয়।
- বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে কোন কল্পনা ব্যতীত প্রস্রাবের আগে বা পরে প্রস্রাবের সাথে বীর্য নির্গত হয়। একে প্রমেহ রোগ বলা হয়, যা কঠিন কঠিন রোগ সমূহের মূল।
- অঙ্গ বিকল হয়ে যায়।
- বিবাহের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।
- যদিও স্ত্রীর সাথে মিলন করার ক্ষেত্রে সফলও হয়, কিন্তু সন্তান সন্তুতি জন্ম নেয় না, ফলে নিঃসন্তান থেকে যায়।
- কোমরে ব্যথা অনুভব হয়।
হস্তমৈথুন বা মাস্টাবেশন থেকে বাচার উপায় ও ইসলাম
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন, ইমাম শাফেয়ি এবং যারা তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন তারা সবাই এ আয়াত দিয়ে হস্তমৈথুন হারাম হওয়ার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। আয়াতটির ভাবানুবাদ হচ্ছে-
“আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে হেফাযত করে। নিজেদের স্ত্রী বা মালিকানাভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এক্ষেত্রে (স্ত্রী ও দাসীর ক্ষেত্রে) অবশ্যই তারা নিন্দিত নয়। যারা এর বাইরে কিছু কামনা করবে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।”[সূরা মুমিনুন, আয়াত: ৫-৬]
ইমাম শাফেয়ি (নিকাহ অধ্যায়ে) বলেন, ‘স্ত্রী বা দাসী ছাড়া অন্য সবার থেকে লজ্জাস্থান হেফাযত করা’ উল্লেখ করার মাধ্যমে স্ত্রী ও দাসী ছাড়া অন্য কেউ হারাম হওয়ার ব্যাপারে আয়াতটি সুস্পষ্ট। এরপরও আয়াতটিকে তাগিদ করতে গিয়ে আল্লাহ্ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “যারা এর বাইরে কিছু কামনা করবে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।”
সুতরাং স্ত্রী বা দাসী ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গ ব্যবহার করা বৈধ হবে না, হস্তমৈথুনও বৈধ হবে না। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
আলেমগণ এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) এর হাদিস দিয়ে দলিল দেন যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আমরা এমন কিছু যুবক ছিলাম যাদের কিছু ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যার باءة (বিয়ের খরচ বহন ও শারীরিক সামর্থ্য) রয়েছে সে যেন বিয়ে করে ফেলে।
কেননা, তা তার দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করায় সহায়ক হয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কারণ তা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।”[সহীহ বুখারী (৫০৬৬)]
শরিয়ত প্রণেতা, বিয়ে করতে অক্ষম হলে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। হস্তমৈথুন করার পরামর্শ দেননি। যদিও হস্তমৈথুনের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে, হস্তমৈথুন করা রোযা রাখার চেয়ে সহজ। কিন্তু তদুপরি তিনি সে অনুমতি দেননি।
হস্তমৈথুন করার জন্য খালি সুযোগ খুজতে থাকে একা নিরিবিলি এবং নির্জনতা কোথায় সেদিকে তারনজর উদ্দেশ্য এরকম বদ অভ্যাসের চাহিদা মেটানো । তাই একাকী থাকা থেকে বিরত থাকুন। যখনই হস্তমৈথুনের প্রবল আকাঙ্খা জাগ্রত হবে, একাকী না থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়ুন, যেখানে লোকজন আছে সেখানে চলে যান।
মেয়েদের হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর প্রভাব ইসলাম
মেয়েদের হস্ত মৈথুনের ক্ষতিকর প্রভাব ইসলাম ইসলামে হস্তমৈথুনকে একটি হারাম কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। হস্তমৈথুনের ফলে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।
শারীরিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে
প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস
বীর্যস্বল্পতা
স্পার্মের গুণগতমান হ্রাস
প্রোস্টেট ক্যান্সার
মূত্রনালীর সংক্রমণ
যৌনাঙ্গে চুলকানি
যৌনাঙ্গে ঘা
হতাশা
উদ্বেগ
অপরাধবোধ
লজ্জা
আত্মবিশ্বাসের অভাব
যৌন সমস্যা
ইসলামে হস্তমৈথুনকে হারাম কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ এটি প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিবাহের বাইরে যৌন মিলনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও, হস্তমৈথুনের ফলে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইসলামে হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকার জন্য বিভিন্ন উপায়ের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
বিবাহঃ বিবাহ হস্তমৈথুনের সবচেয়ে ভালো প্রতিকার। বিবাহের মাধ্যমে স্বাভাবিক যৌন মিলনের মাধ্যমে যৌন চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
রোজাঃ রোজা রাখার ফলে যৌন চাহিদা কমে যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজঃ তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। এতে মন শান্ত হয় এবং যৌন চাহিদা কমে যায়।
নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াতঃ কুরআন তিলাওয়াতের ফলে মন পবিত্র হয় এবং যৌন চাহিদা কমে যায়।
হস্তমৈথুনের মত বাজে অভ্যাস ও হোমিও চিকিৎসা
হস্তমৈথুন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের দেশে সাধারণত কিশোর বয়সের ছেলে-মেয়েরা এটা করে থাকেন। হস্তমৈথুনের সবচেয়ে বড় কারণ হলো অশ্লীল ভিডিও এবং ছবি দেখা, যা আপনাকে মানসিকভাবে বিপদগামী করে তুলবে। কিশোর বয়স থেকে সাধারণত মানুষের এ অভ্যাস শুরু হয়, আর ধীরে ধীরে এটা নেশায় পরিণত হয়।
তবে এটা আমাদের জীবনে অনেক সম্যসার সৃষ্টি করতে পারে। তাই ইসলাম ধর্ম এটাকে সরাসরি মহাপাপ বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হোমিওপ্যাথিতে এর সমাধানঃ
হস্তমৈথুন অভ্যাস দূর করতে এবং হস্তমৈথুন সংক্রান্ত কুফল সমূহ দূর করতে একমাত্র হোমিওপ্যাথি ছাড়া আর কোনো চিকিৎসা বিজ্ঞান আজও ততটা সাফল্য দেখাতে পারে নি। তাই ভালো কোনো হোমিওপ্যাথের কাছ থেকে প্রপার ট্রিটমেন্ট নিন। আশা করি আবার আপনার জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
ঔষুধের নাম সমূহ
Staphisagria.
Moschus Moschiferus.
Salix nigra.
Lycopodium clavatum.
Natrum carbonicum.
Caladium seguinum.
Agnus Castus.
Nux Vomica.
Phosphoricum Acidum.
একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়ে মেডিসিন খাবেন, নিজে নিজের ডাক্তারি করতে যাবেন না, কারন রোগীর রোগের লক্ষন মিলতে হবে। রোগীর লক্ষন, রোগের লক্ষন ব্যতীত ঔষুধ প্রয়োগ করলে কোন ফল পাবেন না। যদি আমার চিকিৎসা নিতে চান তাহলে বিস্তারিত রোগ লক্ষন ও মানষিক লক্ষণ সব ডাক্তারের কাছে খুলে বলুন।
হস্তমৈথুনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার উপায়
প্রথমত আপনি যদি অতিরিক্ত হস্তমৈথনে অভ্যাস্ত হয়ে থাকেন । তাহলে সবার আগে হস্তমৈথুনের মত বদ অভ্যাসটি পরিত্যাগ করুণ। জীবনের তো অনিক ক্ষতি করেফেছেন, আর কত ? ছাড়তে না পারলে হস্তমৈথুনের পরে নিয়মিত মধু অথবা খাঁটি ছানার সন্দেশ খান। এতে করে আপনার হস্তমৈথুনের ফলে যে শক্তি শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং এগুলো খেলে তার সাথে সাথে পূরণ যাবে।
এছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত খেজুর খান তাহলে কিন্তু খেজুর শরীরের ক্ষতিকর পুষ্টি ঘাটতি মিটিয়ে দেয়। তাই আপনি যদি হস্তমৈথুন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই নিয়মিত প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যায় খেজুর খাবেন। দুধ, ডিম ভিটামিন ও আমিষ যুক্ত খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
এতে যদি হস্তমৈথুনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভাব না হয়। তাহলে অবশ্যই আপনার একজন ভালো ডাক্তারের বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
হস্তমৈথুনের প্রধান প্রধান সমস্যা গুলো হলো
- অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে পুরুষের পূরুষাঙ্গকে দুর্বল করে দেয়।
- শারীরিক ব্যথা এবং মাথা ঘোরা।
- দ্রুত বীর্যপাত অল্প সময়ে বীর্যপাত ঘটে ফলে স্বামী তার স্ত্রীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দিতে অক্ষম হয়।
- চোখের ক্ষতি হয় স্মরণ শক্তি কমে যায়।
- হজম প্রক্রিয়া এবং প্রস্রাব প্রক্রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করে।
- অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে যৌনাঙ্গ ঠিক মতো কাজ না করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
উপসংহার
বন্ধুরা আশা করি হস্তমৈথুন ছাড়ার উপায় কি, হস্তমৈথুনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার উপায় এগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই আলোচনা থেকে আরও জানতে পেরেছেন হস্তমৈথুনের প্রধান সমস্যা গুলো কি কি, হস্তমৈথুনের ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো কি কি, হস্তমৈথুনের পর কি খেতে হবে, ইত্যাদি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পেরেছে।
আজকের এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনাদের আশেপাশে কারো যদি এই অভ্যাসটি থেকে থাকে তাহলে দ্রুত পরিত্যাদ করতে সাহায্য করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url