ধূমপান বিষপান - ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আসসালামু আলাইকুম। বন্ধুরা কেমন আছেন ! ভালো আছেন নিশ্চয় ? আপনাদের মধ্যে কেউকি ধূমপানে অভ্যাস্ত হয়ে পড়েছেন ? এর খারাপ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না ? তাহলে ধূমপান বিষপান - ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
এখানে আরো জানতে পারবেন- ধূমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখার উপায়। ধূমপানের ফলে আমাদের কোন কোন মরণব্যাধী রোগ হতে পারে। ধূমপায়ীদের ব্যাপারে ইসলাম কি সমাধান দিয়েছেন। ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
ভূমিকা
ধূমপান এমন একটি বস্তু (দ্রব্য) যার প্যাকেটেই লেখা থাকে ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। আর কোন খাবারের গায়ে বা প্যাকেটে এই ধরনের সতর্কতা লেখা থাকে কিনা আমার জানা নাই। ধূমপানের ভালো দিন একটিও নেই। অনেকে ধূমপানকে বৈধ্য করার জন্য অনেক ধরনের যুক্তি তুলে ধরেন, কিন্ত সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই।
ধূমপান নিশ্চিত ক্ষতি করে হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে। ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) (এমফাইসিমা ও ক্রনিক ব্রংকাইটিস সহ), ও ক্যান্সার (বিশেষত ফুসফুসের ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, ল্যারিংস ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার) এর ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। আসুন ধূমপান বিষপান - ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
সূচীপত্রঃ
ধূমপান কি ?
ধূমপান বিষপান
ধূমপানের ক্ষতিকর দিক
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন
ধূমপান থেকে বিরত থাকার উপায়
মদপান ও ধূমপানের ব্যাপারে ইসলামী সমাধান
ধূমপান কি ?
ধূমপান হচ্ছে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শ্বাসের সাথে তার ধোঁয়া শরীরে গ্রহণের প্রক্রিয়া। সাধারণ যেকোনো দ্রব্যের পোড়ানো ধোঁয়া শ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাকে ধূমপান বলা গেলেও মূলত তামাকজাতীয় দ্রব্যাদির পোড়া ধোঁয়া গ্রহণকেই ধূমপান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অর্থ্যত তামাকপাতা পুড়িয়ে তার ধোঁয়াকে নি:শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করানোই ধূমপান। সিগারেট, সিগার, বিড়ি এবং পাইপ এধরণের পদ্ধতি। এগুলো সবই নিকোটিন আসক্তি এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে যুক্ত।
ধূমপান বিষপান
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে এটা সর্বজন স্বীকৃত। ধূমপানের ফলে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয় শরীরের সব অঙ্গ। ধূমপানের কুফল হিসেবে ফুসফুসের ক্যানসার, হার্টের অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে। ধূমপানের কারণে চোখে কম বয়সে ছানি পড়তে পারে।
এছাড়া নিয়মিত ধূমপান চোখে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়। হেয়ার ফলিকলে প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিস্তার করে ধূমপান, যার জেরে চুলের গোড়ার ক্ষতি হয়। ধীরে ধীরে চুল পড়তে শুরু করে। ধূমপানের জন্য শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব দেখা দিতে পারে। এর ফলে ত্বকে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।
ফলে ত্বক অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে দেখাতে পারে। ধূমপান শুধু স্ট্রোক,ও ক্যানসারের কারণ নয়, তা জীবনের আনন্দও কেড়ে নিয়ে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। এত কিছু জেনেও কেন তবে ধূমপান। ধূমপান ক্ষতিকর জেনেও মানুষ বিষ খাচ্ছে আবার অনেকে ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেও পারছেন না! তবে যত তাড়াতাড়ি ধূমপান ছাড়বেন, ততই আপনার জন্য মঙ্গল।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিক
ধূমপানে বিষপান সবারই জানা। তবু আজও বহু মানুষ ধূমপানের নেশায় ডুবে আছেন। নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা তাঁরা হয়তো ভাবেন না। কিন্তু অন্যদেরও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেন। দেশে ধূমপানসংক্রান্ত আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। তাই গণপরিবহন বা গণজমায়েতের স্থানে হামেশাই চলে ধূমপান।
বাড়িতে ধূমপান করলে বাড়ির সদস্যরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। ফ্যান-এসি চালিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে এই বাতাস বিশুদ্ধ করা যায় না। এমনকি বারান্দা কিংবা পৃথক ঘরে ধূমপান করলেও অন্যরা ঝুঁকিমুক্ত থাকেন না।
সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে চার হাজারের বেশি রাসায়নিক উপাদান, যার অন্তত ২৫০টিই ক্ষতিকর। পরোক্ষ ধূমপান কেবল স্বাস্থ্যগত বিষয়ই নয়, বরং এর সঙ্গে অন্যের ঝুঁকিও জড়িত বলে এটি নৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা হিসেবেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ও মারাত্মক অপরাধ, যা অনেকের কাছে অপরাধ বলে মনেই হয় না।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেন
ধূমপানের কারণে ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস ও দীর্ঘস্থায়ী অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিসি (সিওপিডি) সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি যক্ষ্মা এবং চোখের রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। ধূমপান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনই যারা এর সংস্পর্শে আসে তাদের জন্যও ক্ষতিকর।
২০২২ সালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭ মিলিয়ন ব্যক্তি ধূমপানের কারণে বিভিন্ন অসুখে ভোগেন। আরও ১.২ মিলিয়ন মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। ধূমপান সরাসরি ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। এটি শ্বাসনালি ও ফুসফুসের ছোট বায়ু থলির (অ্যালভিওলি) ক্ষতি করে।
ফলে ফুসফুসের বিভিন্ন ব্যাধি যেমন- সিওপিডি, যা এমফিসেমা ও দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিসের কারণ। যাদের হাঁপানি আছে তাদের জন্য ধূমপান অনেক বেশি ক্ষতিকর। ধূমপান ত্যাগ করলেই আপনার ফুসফুসের স্বাস্থ্যও ভালো হতে শুরু করে। ফলে শ্বাস নেওয়া ও দীর্ঘক্ষণ শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা আরও বাড়ে।
ধূমপান থেকে বিরত থাকার উপায়
এই মরণ নেশার প্রতি প্রবল আকর্ষণ প্রতিনিয়ত মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এ থেকে বাঁচার জন্য রয়েছে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি। আসুন জেনে নিই ধূমপান ছাড়ার ছয় উপায়-
(১) দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের ফলে শরীরে একেবারে ভেতর পর্যন্ত চলে যায় নিকোটিন। শরীরে টক্সিন হিসেবে জমতে থাকা নিকোটিনকে ধুয়ে বার করে দিতে পানির কোনো বিকল্প নেই। ধূমপান ছাড়তে প্রচুর পানি পান করুন।
(২) আদা খেতে পারেন। এতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান নানাভাবে সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাকে দমিয়ে দেয়। আদা চা বা কাঁচা আদা খেতে পারেন।
(৩) নিকোটিনের মতো টক্সিনের সঙ্গে লড়াই করতে প্রতিদিন ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ ক্যাপসুল অথবা খাবার খান। এতে সিগারেটের নেশা কমে যেতে পারে।
(৪) খেতে পারেন আঙুরের রস। এটি নিকোটিনের কারণে শরীরের ভেতরে জমতে থাকা টক্সিন দূর করে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া সিগারেট খাওয়ার প্রবল ইচ্ছাও কমতে শুরু করে।
(৫) ধূমপানের নেশা ছাড়াতে ওটস খেতে পারেন। ২ কাপ ফোটানো পানির সঙ্গে ১ চামচ ওটস মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন। পর দিন সকালে পুনরায় ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিয়ে প্রতিটি খাবারের পর অল্প করে খেতে থাকুন। এতে শরীর থেকে নিকোটিন বেরিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে কমে যাবে ধূমপানের ইচ্ছাও।
(৬) মধুতে থাকা ভিটামিন, এনজাইম এবং প্রোটিন শরীর থেকে নিকোটিন বের করে দেয় ও সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাকেও নিয়ন্ত্রণে করে।
মদপান ও ধূমপানের ব্যাপারে ইসলামী সমাধান
ধূমপান একটি ঘতকের নাম। এটি শুধু ব্যক্তিগত বদভ্যাসই নয়, সত্যিকারের অর্থে একটি সামাজিক ব্যাধি। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিকুলের সেরা হিসেবে সৃজন করেছেন। আর তার জন্য সুন্দর জীবনযাপনের যাবতীয় উপায়-উপকরণ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
মানুষের জন্য যা কল্যাণকর, পবিত্র, উত্তম ও উপাদেয় তা গ্রহণীয় আর যা অকল্যাণ, অপবিত্র, ক্ষতিকর ও অনুপাদেয় তা বর্জনীয় হিসেবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘পবিত্র বস্তু থেকে তোমাদের যা জীবিকা হিসেবে দিয়েছি, তোমরা তা আহার কর।’ (সুরা তাহা : ৮১)। আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক সর্বনাশা বর্জনীয় জিনিসের ফাঁদে পড়ে নিজের, পরিবারের ও সমাজের সর্বনাশ ডেকে আনে।
ধূমপান খুবই নিকৃষ্ট কাজ এবং বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি অত্যন্ত নিকৃষ্ট বস্তু। আর সকল নিকৃষ্ট বস্তুই তো শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
“আরো তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য পবিত্র ও উত্তম বস্তুসমূহ হালাল করে দেন এবং হারাম করেন নিকৃষ্ট ও অপবিত্র বস্তুসমূহ”। সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭।
ধূমপানে সম্পদের বিশেষ অপচয় হয়। আর সম্পদের অপচয় তো হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا ٢٧﴾ [الاسراء: ٢٧]
“কিছুতেই সম্পদের অপব্যয় করো না। কারণ, অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ”। সূরা আল-ইসরা, আযাত: ২৬-২৭
প্রথমত আল্লাহকে ভয় করুন।
দ্বিতীয়তঃ এই চিন্তা করুন, এটা একটা বাজে অভ্যাস। লোকে খারাপ চোখে দেখে। টাকার অপচয়।
আপনি নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করুন। আপনার এতটুকু জ্ঞান-বিবেক নেই যে এই সামান্য কাজটি ছাড়তে পারছেন না; নিজেকে নিজে ধিক্কার দিন।
ধুমপায়ীদের থেকে দূরে থাকুন।
ভালো মানুষের সাথে বেশি উঠাবসা করুন। এবং আপনার আশেপাশের যারা তা অপছন্দ করে তাদের সাথেও।
শেষ কথাঃ
ধূমপান মৃত্যু ঘটায়, ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করে জানা সত্ত্বেও অনেকে এই মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়েন। এবং এক সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়, তখন সংসারে নেমে আসে অশান্তি। উপার্যনকারী ব্যক্তি হয়ে উঠেন সংসারের বোঝা। আপনি যত দামি সিগারেট খান না কেন ক্ষতির প্রভাব কিন্তু একই।
যে ধূমপান করে শুধু তারই ক্ষতি হয় না বরং এর আশেপাশে যারা থাকেন তাদেরও সমানভাবে ক্ষতি হয়। এটা অনেকে খেয়াল করে না। এই সমস্ত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে। আর ধূমপান থেকে বিরত থাকার একমাত্র কেবল মাত্র পথ হচ্ছে নিজের ইচ্ছা শক্তি।
অন্যকেউ শাসন করে বা ভয় ভীতি দেখিয়ে ধূমপান ছাড়াতে পারবে না। আপন আপন মনের ইচ্ছায় যথেষ্ট। আপনাদের কাউরি এই অভ্যাস থাকলে বেরিয়ে আসুন এখান থেকে। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে, উপকৃত হলে অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করুন এবং শেয়ার করে দিন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url