ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও ডুমুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন

সবজি হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত ডুমুর খেয়ে থাকি। কিন্তু সবায় কী জানি এর জাদুকরি গুনের কথা ? তাহলে এই পোস্টের মাধ্যমে ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও ডুমুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন।
ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও ডুমুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন
এখানে আরো জানতে পারবেন- এই ফলটি খাওয়ার ফলে কোন রোগব্যধি থেকে আরগ্য লাভ করা যায় এবং এর মধ্যে কোন কোন ভিটামিন রয়েছে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ডুমুরের অবদান এবংক্যালসিয়ামের প্রাকৃতিক উৎস সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ভূমিকা

ডুমুর এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সহ অনেক জটিল রোগ প্রতিরোধ করে এ ফল। গ্রামে যেখানে সেখানে এই ডুমুর পাওয়া যায়। শহরের মানুষকে ডুমুর কিনে খেতে হয় কিন্তু গ্রামে কোন দিন কাওকে কিনে খেতে হয়না। গ্রামের মধ্যে দুচারটি গাছ থাকলেই পুরো গ্রাম কভার হয়ে যায়।

সূচীপত্র

ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা
ডুমুরের পুষ্টিগুণ
ত্বীন ফল কি ডুমুর
ডুমুরের ভেষজ গুণ
ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি

ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা

প্রত্যেকটা মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য প্রচুর শাকসবজি খেতে বলা হয়। সেই সাথে রান্নায় তেল মশলার ব্যবহার কমাতে অভ্যাস করার কথা বলা হয়। এর পাশাপাশি আমাদের খাদ্য তালিকায় কিছু শুকনো ফল যোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রকম শুকনো ফল রয়েছে যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে খাওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া যায়। 

যেমন শুকনো ডুমুর খাবার অনেক উপকারিতা। এই অতি সামান্য ছোট ফলটি ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ দ্বারা পরিপূর্ণ যার স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।

ডুমুরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্র্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে আপনার প্রাকৃতিক ঢালের দায়িত্ব পালন করে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে রক্তের শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে যা স্বাস্থ্যের জন্য আবশ্যক। হাড়কে শক্তিশালী করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। প্রজনন ব্যবস্থাকে সজল রাখে এবং কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে।

ডুমুরের পুষ্টিগুন

ডুমুরের পুষ্টিগুন বা উপকারিতার কথা যদি বলা হয় তাহলে এর ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও খনিজ পদার্থের ভান্ডার এস উল্লেখ করতে হয়। ডুমুরের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করা সহ নানা জটিল রোগ প্রতেরোধ করে এই ডুমুর। ডুমুরে থাকা ফেনোলিত ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এই ফল। 

এই ফলে থাকা ফ্ল্যাভনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলন, প্রস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধ করে। ডুমুরের পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। ডুমুরের প্রাকৃতিক উপাদান ব্রংকাইটিস, অ্যাজমার মতো শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত কিছু রোগ দুর করে বলে অনেক ডাক্তার এই ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। 

যাদের ইউরিনের মাধ্যমে শরীরের ক্যালসিয়াম বের হয়ে যায় তাদের জন্য ডুমুর অত্যাধিক উপকারি। এই ফলে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণ স্থিতিশীল রাখে।

ত্বীন ফল কি ডুমুর ? 

ত্বীন আর ডুমুর ফল কি একই ? আসুম বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। সুরা ত্বীনের প্রথম আয়াতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা দুটি ফলের আলোচনা করেছেন। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা সেই ফল গুলোর নামে শপথ করেছেন। এক নাম্বার হচ্ছে ত্বীন, অন্যটি হচ্ছে যাইতুন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বাংলা ভাষায় দুটো শব্দের ঝাপসা অর্থ দাঁড় করিয়েছেন। 

মোটামুটি ত্বীন ফলকে চিরচেনা ডুমুর আর যায়তুনকে যায়তুন হিসেবেই দেখিয়েছেন। এগুলোর আসল চিত্রপট অধিকাংশ লেখক বা অনুবাদকরা আকেন না। ফলে অপ্রত্যাশিত ভ্রান্তিতে অটোগ্রা থেকে যাচ্ছেন। যেমন যায়তুনকে অনেকে ই যে জলপাই হিসেবে ধরেন। আসলে কি তায় ? না দুটোর মাঝে ভিন্নতা সুস্পষ্ট। 

প্রথমে বলে রাখা ভালো, কোরআনে যে ত্বীনের উল্লেখ রয়েছে তা আমাদের দেশে নেই। বাংলাদেশের মানুষের কাছে অপরিচিত ফল। অথচ আমাদের দেশের বন জঙ্গলে বাড়ির আশপাশে গজে উঠা আগডুমের সাথে কাকডুমুরের আমরা তামিলিয়ে ফেলি। আমাদের দেশের কাকডুমুর আর ত্বীন যে একই ফল নয় অনেকেরই তা জানা নেই। 

বাংলাদেশে এই কাকডুমুরের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয় না। অপরদিকে ত্বীন ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে থাকেন। সাধের সুমিষ্ট এবং অত্যাধিক সুস্বাদু রসালো এই ত্বীন ফল।

ডুমুরের ভেষজ গুন

ডুমুর অত্যন্ত উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। অনেক রোগের চিকিৎসায় বহোকার আগে থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি কার্যকর ভাবে ব্যব মূলহার হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে খাদ্যশক্তি ৩৭ কিলোক্যালরি, ১২৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনসহ ভিটামিন এ, বি, সি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে গুটি বসন্ত, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও মুত্রসংক্রান্ত নানা সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করুন, সর্দি কাশি, ফোড়া, টিউমার ও স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় জগডুমুর উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা পালন করে। 

কৃষিবিদ অবিনাশ দাস বলেন, ডুমুরের পুষ্টিগুণ হচ্ছে ক্যালসিয়াম ক্যালরি ও ক্যারোটিন এতে তিনটিই গুন আছে। এই ওষুধে গুণ হচ্ছে ডুমুর টিউমার অন্যান্য অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নিবারণে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি

বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায় একটি শব্দের নাম হচ্ছে ডুমুর। বহুবিধ ওষুধি গুণ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ এসবজি বিলুপ্তি প্রায় হলেও এখনো গ্রাম-বাংলায় এবং শহরে লক্ষ্য করা যায়। ডুমুর রান্না করার রেসিপি নিচে উল্লেখ করা হলো-

উপকরণঃ নম্বর ২৫০ গ্রাম, চিংড়ি ১৫০ গ্রাম, হলুদ গুঁড়া ১চিমটি, পেয়াজ কুঁচি ৩ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ কুঁচি ২ চা চামচ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমত।

প্রণালীঃ ডুমুর মাঝখান থেকে কেটে এর ভেতরের বীজ বের করে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে বেচে নিন। চিংড়ির মাথা ও শিরা ফেলে কুুঁচি করে নিন। হলুদ ও সামান্য লবণ দিয়ে মাখিয়ে অল্প তেলে ২ মিনিট ভেজে নিন। পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচ হালকা ভাজুন। 

এবার ডুমুর ও চিংড়ি এক সাথে মিশিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবণ ও সরিষার তেল মিশিয়ে ভর্তা তৈরি করুন। পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ,

উপকরণঃ ডুমুর, ভাজা জিরা গুড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, গরম মসলার গুঁড়া ১ চা চামচ, তেল পরিমাণ মতো, ৩/৪ টা কাঁচা মরিচ।

প্রণালীঃ ডুমুর কেটে ২/৪ পিস করে কেটে নিন ও ভেতরের বিচি কেটে ফেলে দিন। পানিতে কাটা ডুমুর ভিজিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ যাতে ডুমুরের কষ বের হয়ে যাবে। এবার ভাল করে ধুয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে একে একে সমস্ত মসলা দিয়ে দিন। 

তারপর পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢেকে দিন। সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে মাখোমাখো হয়ে গেলে ভাজা জিরার গুঁড়া ও গরম মসলার গুঁড়া দিয়ে ও কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে নেড়ে ঢেকে রাখুন আরো কিছুক্ষণ। সুন্দর একটা ঘ্রান বের হবে ( মাংস রান্নার মতো )। এরপর নামিয়ে নিন ও গরম গরম খাওয়ার টেবিলে পরিবেশন করুন।

শেষকথাঃ ডুমুর উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন একটি ফল। ডুমুর ফল প্রায় সকলেরই কাছে পরিচিত। কাঁচা ডুমুর ফল ওতে উন্নত একটি সবজি। শুধু ডুমুর কিংবা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে ডুমুর ভাজি বা এর ভর্তা ভীষণ প্রিয় খাদ্য। এছাড়াও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আদিকাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল ইত্যাদ ব্যবহার হয়ে আসছে। 

হাড়ের গঠন মজবুত করা, উচ্চারিত চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ডুমুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই আসুন সবজি বা ফল হিসেবে আমরা আমাদের খাদ্য তালিকায় ডুমুরকে রাখি। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪