ডেঙ্গু জ্বরে কখন কী ধরণের টেস্ট করাতে হয় বিস্তারিত জেনে নিন

 ডেঙ্গু জ্বর (সমার্থক অন্য বানান ডেঙ্গি) এটি একটি এডিস মশা বাহিত ভাইরাস জ্বর। আগে শুধু গ্রীষ্মকালে হলেও এখন সারা বছরজুড়ে রয়েছে এই ডেঙ্গু জ্বরের ঝুকি। ডেঙ্গ জ্বরে কখন কী ধরণের টেস্ট করাতে হয় তা না জানলে রুগির অনেক বড় বিপদ হতে পারে।


জ্বর, মাতাব্যথা, বমি ভাব, পেটব্যথা, পেশিতে ও গোটা শরীরে ব্যথা হলে আর দেরি করবেন না। আপনার নিকটতম সরকারি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখান। এডিস মশা কামড়ালে সাধারণত তিন থেকে পনের দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

ভূমিকা

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাস জ্বর যা এডিস মশার দ্বারা ছড়ায়। এই মশা সাধারণত ভোর বেলা এবং সন্ধ্যা নামার আগে কামড়ায়। ডেঙ্গু যে শুধু বাংলাদেশেই আছে তা কিন্তু নয়। বিশ্বের অনেক দেশেয় ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে। 

তবে সঠিক সময় এই জ্বরের চিকিৎসা করালে মৃত্যু ঝুকি এড়ানো সম্ভব। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা কিন্তু শুধু অনুমান করে বলা যাবেনা যতক্ষন না টেস্ট করা হবে। একমাত্র সেস্টের মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়।

সূচীপত্র

ডেঙ্গু জ্বরে কখন কী ধরণের টেস্ট করাতে হয়
ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ
ডেঙ্গু নিয়ে যা জানা জরুরি
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু রোগীর পরিচর্যা

ডেঙ্গু জ্বরে কখন কী ধরণের টেস্ট করাতে হয়

বর্তমানে ডেঙ্গু এক আতঙ্কের নাম। এডিস মশার কামড়েই কেবল ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে যখন এডিস মশা কামড় দেয় তখন সেই ব্যক্তি থেকে মশা সংক্রমিত হয়ে সুস্থ্য যেকোন মানুষকে কামড়ালে সেও সংক্রমিত হয়। জ্বর হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে।

 জ্বর হলে তা ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা জানার জন্য সবার আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা শনাক্ত করা হয়। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে ৪/৫ দিনের মধ্য রোগীর অ্যান্টিবডি টেস্ট করাতে হবে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরে নির্দিষ্ট পরিমান অ্যান্টিবডি তৈরি প্রয়োজন। 

পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্যান্য মশা বাহিত রোগ যেমন- চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের প্লাটিলেট এর পরিমান দেখতে হয় প্রায় প্রতিদিন।

ডেঙ্গু রোগের কারণ ও লক্ষণ

প্রথমেই আমাদের জানা দরকার ডেঙ্গু কেন হয় ? এডিস মশা কামড়ালেই কি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ? চিকিৎসকের মতে পরিবেশে উপস্থিত ভাইরাস যদি কোন এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয় তখনই কেবল মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিন থেকে পনের দিনের মধ্যে সংক্রমিত মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। লক্ষন গুলো নিম্নরূপ-

জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রী পর্যন্ত হতে পারে।
বমি ও মাথা ব্যথা দেখা দিবে।
পেট ব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হবে।
চামড়া লালচে হবে এবং ক্ষুধা কমে যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হবে ও পেশিতে ও স্বাদের পরিবর্তন হবে।

ডেঙ্গু নিয়ে যা জানা জরুরি

গত বছরের চেয়ে এবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। ১৯৭৯ সালে প্রথম ডেঙ্গু জ্বরের নির্ভরযোগ্য বিবরণ পাওয়া যায়। সেই সময় এই রোগের কারণে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায়। ১৯০৬ সালে প্রথম বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন যে এডিস মশায় ডেঙ্গুর বাহক।

২০০১-০২ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ডেঙ্গুর কংক্রমনের উচ্চ হার লক্ষ করা যায় বেশি বর্ষকালে এবং শহরে। তবে এবছর শীতের মধ্যে এবং গ্রামেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থামছেই না। সবায়কে সাবধানে এবং সতর্কতার সাথে থাকতে হবে। 

দিনে ও রাতে মশারির মধ্যে ঘুমাতে হবে। অন্য সময় এ্যারোসল অথবা কয়েল ব্যবহার করে মশা থেকে দুরে থাকতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

ডেঙ্গু রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার দেয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের। সেই সাথে বাড়িতে তৈরি ফলের জুস, ডাবের পানি, স্যালাইন এবং বিশুদ্ধ পানি বেশি খাওয়াতে হবে। কমলা, মালটা ও পাকা পেপ বেশি বেশি খাওয়ালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও রক্তের পস্ন্যাটিলেট বাড়বে। অর্থাৎ অধিক ক্যালরি যুক্ত খাবার খেতে হবে। 

যেমন স্যুপ, মাগ ডালের পাতলা খেচুড়ি, দই ইত্যাদি। পানি শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য তরল, বিশেষ করে যখন আপনি ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে উঠছেন। পানিসহ অন্যান্য তরল মিলে সারা দিনে ৩ লিটার তরল নিশ্চিত করতে হবে। 

অন্যান্য তরল যেমন তাজা ফলের শরবত (অবশ্যই বাসায় তৈরি), মুরগি অথবা সবজির স্যুপ দেওয়া যেতে পারে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা অন্তর, যা পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

খুব ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকা এবং বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখা, ‍মশারি ব্যবহার করা। মাঝে মাঝে মশা মারার/মশা তাড়ানোর ঔষধ ছিটানো উচিৎ। বাড়িতে কোন জায়গায় যেন তিন দিনের বেশি পানি জমে না থাকে। ফুলের টবে, ফ্রিজের নিচে, এসিতে অথবা বাসার যেকোন জায়গার আবদ্ধ পানি নিয়মিত ফেলে দিতে হবে। 

এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যার আগে কামড়ায় তাই এই সময় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যেন মশা কামড়াতে না পারে। মশা ঘরে প্রবেশের সময় জানালা দরজা বন্ধ রাখতে হবে। মশা নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্প্রে, কয়েল, ব্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করে মশা মেরে ফেলতে হবে। 

শরীর ঢেকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে ফুলহাতা জামা ব্যবহার করতে হবে। ঘর অন্ধকার রাখা যাবেনা। সব সময় আলোবাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর সারতে কয়েক দিন সময় গেলে যায়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এক থেকে দুই সপ্তাহ লাগে জ্বর ভালো হবে। আবার কাউরি ক্ষেত্রে চরম ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে। চিকিৎসকের মতে ডেঙ্গু জ্বর দুই প্রকার- ক্লাসিক্যাল এবং হেমোরেজিক। 

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় তবে কাউরি ক্ষেত্রে ১০ দিন সময় লাগতে পারে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর সারার পরপরই অনেকের প্লাটিলেট ও রক্তচাপ কমে যায়।

ডেঙ্গু রোগীর পরিচর্যা

পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে এবং মশারির ভেতর থাকতে হবে। জ্বরের তাপমাত্রা খুব বেশি হলে পাতলা সুতির নরম কাপড় পানেতে ভিজিয়ে শরীর ঘন ঘন মুছে দিতে হবে। রোগী শুয়ে বসে যে ভাবে আরাম বোধ করে সেই ভাবেই থাকতে দিন। 

হাসপাতালে থাকলে তো ভ্যানের ডাক্তারের চিকিৎসা চলবে, স্যালাইন চলবে সেই সাথে ডাবের পানি,লেবুর শরবত, ফলের জুস, বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন একটু পরপর খাওয়াতে থাকুন। আর ঔষধের ক্ষেত্রে শুধু মাত্র প্যারাসিটামল খাওয়াবেন। জ্বর ভালো হচ্ছেনা বলে কখনোই অ্যান্টিবায়োাটিক ঔষধ খাওয়াবে না। এতে রোগীর মৃত্যু ঝুকি বেড়ে যেতে পারে। 

প্লাটিলেট বাড়াতে পাঁকা পেপে অথবা পেপে পাতার রস করে খাওয়ালে দ্রুত প্লাটিলেট বেড়ে যাবে। যদিও এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত না তবে আমার ছেলের হয়েছিল আমি তাকে পেপে পাতার রস খাওয়াইছিলাম এতেকরে প্লাটিলেট অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়েগেলে রোগীকে খুব সাবধানে রাখতে হবে যেন পূনরায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হয়। 

আমার ছেলেকে (বয়স ১২ বছর) গত ১৯ আগষ্ট ২০২৩ তারিখ ফজরের নামাজের সময় হঠাৎ পেট ব্যথায় ঝটপট করতে থাকে এবং বলতে থাকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলো আমরা ফজরের নামাজ পড়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ভর্তি করালাম ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতরে কোন জায়গা পেলামনা বারান্দায় জায়গা হলো।

পেট ব্যথার ঔষধ খাওয়ানো হলো এবং ভ্যানে স্যালাইন দেয়া হলো আর কিছু রক্তের সেস্ট দিলেন। সেই সেস্ট করানো হলো। হ্যাঁ পেটের ব্যথা কিন্তু ভালো হয়েগেছে ঔষধ খাওয়ার পর। রিপোর্ট পেলাম রাত ৯ টায় তখন মোটামোটি আমার ছেলে সুস্থ্য। ভাবছি রিপোর্ট দেখিয়ে বাসায় চলে যাব। কর্তব্যরত চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে বললো ডেঙ্গু পজেটিভ। 

২৫ অথবা ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যান বেড ফাঁকা যেখানে পাবেন। ৪০ নম্বর ওয়র্ডে ৪দিন থাকার পর রিলিজ দিয়ে দিল। কিন্ত বাসায় এসেও জ্বর ভালো হয় না। তিন দিন পর আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলাম আবার পরীক্ষা দিলেন। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বললেন টাইফয়েড হয়েছে। সাতদিনের ঔষধ লিখে দিলেন। ঔষধ খাওয়ালাম কিন্তু জ্বর ভালো হয়না। 

আরার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম আবার টেস্ট দিলেন পরীক্ষা করালাম রিপোর্ট দেখে বললেন প্যারা টাইফয়েড। আবার ১৪ দিনের ঔষধ লিখে দিলেন এইবার ঔষধের ডোজ শেষ করার পর জ্বর চলে গেল। এখন বর্তমানে আল্লাহর রহমতে সুস্থ্য আছে তবে আগের মত সবল হয়নি এখনো।

উপসংহারঃ

 পরিশেষে বলতে হয় ডেঙ্গু হলে বিচলিত হবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন ভালো হয়ে যাবে। কিছু মনে করবেন না আবেগে আমার ছেলের কথাগুলো বলে ফেললাম বলে। ভালো লাগলে অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করুন এবং শেয়ার করে দিন। আল্লাহ আপনাদের এবং আমাদের সকলকে সুস্থ্য রাখুন, আমিন। আল্লাহ হাফেজ--

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪