বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান - বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সমূহ
আপনি কি সঙ্গী সাথী বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কোথায় ভ্রমনে যেতে চাচ্ছেন ? কোথায় গেলে বেশি আনন্দ পাবেন বুঝতে পারছেন না ? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্যই। এখানে জানতে পারবেন বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের সেরা এবং বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সমূহের কথা।
আরো যা জানতে পারবেন- কোথায় গেলে পাহাড়-পর্বত দেখতে পাবেন। কোন স্থানে গেলে গভীর সমূদ্রের দেখা মিলবে। সর্ব পরি আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সৃষ্টির রহস্য দেখে নিজেকে মুগ্ধ করতে পারবেন। তাই বাংলাদেশেরে সেরা দর্শনীয় স্থান - বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সমূহ সম্পর্কে জেনে নিন।
ভূমিকা
আপনি যদি সমস্ত পৃথিবীর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এই সমস্ত ঐতিহাসিক জায়গার পেছনের অজানা গল্প জেনে আপনার জ্ঞানের পরিধি আরো বাড়বে।
এছাড়াও আমাদের বাংলাদেশের অনেক সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থানের বিশদ বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এই সব জায়গা ভ্রমণ করলে বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মধ্যে একটা ইতিবাচক ধারণা জন্মাবে। বাংলাদেশটা যে সত্যি এতো সুন্দর তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। যদি আপনি ঘুরে না দেখেন।
সূচীপত্র
বাংলাদেশের সেরা ১৫ টি দর্শনীয় স্থান
কক্সবাজার
সেন্ট মার্টিন
সিলেটের জাফলং
পতেঙ্গা, চট্রগ্রাম
কুয়াকাটা
শ্রীমঙ্গল
বান্দরবান
রাঙ্গামাটি
সাজেক ভ্যালী
সুন্দরবন
জাতীয় চিড়িয়াখানা, ঢাকা
বগুড়া মহাস্থান গড়
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, নওগাঁ
বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ
বিশ্বের ৫ টি দর্শনীয় স্থান
ভারতের তাজমহল
মিশরের পিরামিড
ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার
আমেরিকার স্ট্যাচু অ লিবার্টি
ইস্টার দ্বীপ, চিলি
বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থান
চীনের প্রাচীর
রোম, ইতালি
নায়াগ্রা জলপ্রপাত
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
অ্যান্টার্কটিকা, দক্ষিণ মেরু
সান্তরিনি, গ্রীস
বাংলাদেশের সেরা ১৫ টি দর্শনীয় স্থান
“এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবে নাকো তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভুমি” কবির এই কবিতায় বলে দেয় বাংলাদেশের প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এই অপরুপ সৌন্দর্যের সুধা পান করতে শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয় সারা পৃথিবী থেকে মানুষ ছুটে আসে এখানে।
আমাদের এই দেশে দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই, তবুও আজকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। আপনি হয়তো এর মধ্যে অনেক জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। যারা এখনো যাননি তাদের কাজে লাগবে আশাকরি।
কক্সবাজার
অপরূপ সৌন্দর্য মন্ডিত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার। শুধু বাংলাদেশেরই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আসেন এ কক্সবাজার ভ্রমন করার জন্য। চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা হলো এই কক্সবাজার যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পুর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। কক্সবাজারের আয়তন ১৫৫ কিলোমিটার।
কক্সবাজারে ভ্রমণের জন্য যে সকল জায়গাগুলোতে আপনারা যেতে পারেন সেগুলো হলো, লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানি বীচ ইত্যাদি। এখানকার সারি সারি ঝাউ বন, নরম বালুর বিছানা ও বিশাল সমুদ্র মনকে করে তোলে আবেগময় ও আনন্দময়।
এছাড়া ছোট ছোট দ্বীপ যেমন:মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরী ও সেন্টমার্টিন কক্সবাজারকে করে তুলেছে আরো আর্কষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন।
সেন্টমার্টিন
একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভ্রমনের জন্য খুব প্রিয় স্থান তা হচ্ছে সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপটি মুল ভুখন্ড কক্সবাজার থেকে ১২০ কিলোমিটার দুরে সাগরের মাঝখানে অবস্থিত। এর আয়তন ১৭ বর্গকিলোমিটার। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। অপরুপ সৌন্দর্যের এই দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে ভ্রমণ পিপাঁসুদের মনে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে হলে আপনাকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতে হবে। তারপর টেকনাফ থেকে সমুদ্র রুটে আসা যাওয়ার জন্য কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন সহ আরো অনেক জাহাজ রয়েছে তাতে করে ভ্রমন করতে পারেন। ইদানিং চট্রগ্রাম থেকে বিলাশ বহুল জাহাজ চালু হয়েছে।
সিলেটের জাফলং
প্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি জাফলং। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়।
পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের খেলা জাফলংকে করেছে অনন্য। জাফলং, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি পর্যটনস্থল।
জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত। একেক ঋতুতে জাফলং একেক রকম রুপের প্রকাশ ঘটায়, যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই আগ্রহী করে রাখে।
পতেঙ্গা, চট্রগ্রাম
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সুন্দর ও জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকতে সহজেই যাওয়া যায় বলে পর্যটকদের কাছে এই স্থানটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এছাড়া এই সৈকতকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যে বেশ কিছু পরিকল্পণা বাস্তবায়নের পথে। ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পতেঙ্গা সৈকতকে আধুনিক ও বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা নজর কেড়েছে পর্যটকদের।
কর্ণফুলী নদী ও সাগরের মোহনায় অবস্থিত পতেঙ্গায় সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই মনোরম ও সুন্দর। বিশেষ করে বিকেল বেলা, সূর্যাস্ত ও সন্ধ্যার সময়টুকু অবশ্যই ভাল লাগবে।
কুয়াকাটা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা "সাগর কন্যা" হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
সৈকতের পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতির বাঁক থেকে সূর্যোদয় সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। আর সূর্যাস্ত দেখার উত্তম জায়গা হল কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত। কুয়াকাটার বেলাভূমি বেশ পরিচ্ছন্ন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকেই কেবল সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
মুদ্রের গর্জন দিনের বেলা সাধারণত আশে পাশের শব্দের কারনে শোনা যায় না। সমুদ্রের যে একটা ভয়ংকর রূপ আছে তা বোঝা যায় রাতের বেলা। যদি রাতে সমুদ্রের গর্জন শুনতে চান তবে অবশ্যই যেতে পারেন সেখানে। যদিও নিরাপত্তা জনিত কোন ভয় নেই সেখানে। তবে সাবধানে থাকাই ভালো।
শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – বাইক্কা বিল, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নীলকণ্ঠের সাত রংয়ের চা, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ৭১’এর বধ্যভূমি, দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শিতেস বাবুর চিরিয়াখানা, চা গবেষণা কেন্দ্র, চা জাদুঘর প্রভৃতি। এখানে এলে যে কোন মানুষের মন ভালো হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এছাড়াও হাতে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন বিভিন্ন পাহাড়-টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, খাসিয়া পল্লী, সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, চা কণ্যা ভাষ্কর্য, নিমাই শিববাড়ী মন্দির, লালটিলা মন্দির, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান, বর্ষীজোড়া ইকোপার্কসহ প্রত্যক্ষ করতে পারবেন স্থানীয় উপজাতিদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি।
বান্দরবান
চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর অনেক স্থানের কারণে বান্দরবান বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশের দর্শনীয় উচ্চতম স্থান বান্দরবান। বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর ।
আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ।
এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে "ম্যাঅকছি ছড়া " হিসাবে । অর্থ্যাৎ মার্মা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ । কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে । বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবানের নাম "রদ ক্যওচি ম্রো"।
চিম্বুক
চিম্বুক হলো বাংলাদেশের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত। বান্দরবান পার্বত্য জেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড়ের উচ্চতা ১ হাজার ৫০০ ফুট। চিম্বুক পাহাড় থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত যে কোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করবে। তবে আজও এই পাহাড়ি জনপদে গড়ে ওঠেনি পর্যটন কেন্দ্র।
চিম্বুকে রয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে একটি রেস্টহাউস, কিন্তু তা পর্যটকের জন্য উন্মুক্ত নয়। চিম্বুকের চৌহদ্দির মধ্যে নেই কোনো আবাসিক হোটেল-মোটেল, যেখানে গিয়ে রাত যাপন করা যেতে পারে। অথচ এই চিম্বুক পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে সুন্দর একটি উপজেলা শহর, আর তা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের চিম্বুক হতে পারে একটি শৈলশহর।
নীলাচল
বান্দরবান শহরের সবচেয়ে নিকটবর্তী পর্যটন স্পট হলো নীলাচল। এর অবস্থান টিগেরপাড়ায় যা বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলাচলের উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট।
এখান থেকে পাখির চোখে দেখতে পারবেন পুরো বান্দরবান শহরটাকে। বর্ষা মৌসুমে এখানে পাবেন মেঘের মধ্যদিয়ে হেঁটে যাওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভুতি।
নীলগিরি
বাংলাদেশের উচ্চতম ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর একটি হলো নীলগিরি। প্রায় ৩,৫০০ ফুট উঁচু জায়গাটির অবস্থান থানচি থানায়। বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি রোডে অবস্থিত নীলগিরি বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে।
এর কাছাকাছিই আছে আদিবাসীদের গ্রাম। ক্যাম্পফায়ার করার জন্য জায়গাটি খুবই উপযোগী। জায়গাটির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
রাঙ্গামাটি
রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোর মধ্যে একটি এবং আয়তনে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা। ১০টি ভাষাভাষীর ১১টি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক কৃষ্টি এবং প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই জেলা বাংলাদেশের পর্যটনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
রাঙ্গামাটি জেলার জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ হলো: কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার, শুভলং ঝর্ণা, সাজেক ভ্যালী, নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট, কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
সাজেক ভ্যালী
এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণের জন্য দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সাজেক ভ্যালি । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফিট উচ্চতায় এর অবস্থান। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আপনাকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭৩ কিঃমিঃ আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিঃমিঃ এর মতো।
ভ্রমণ পিপাসুদের অনেকে সাজেক ভ্যালিকে বাংলার ভূস্বর্গ নামে অভিহিত করেন। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাজেক ভ্যালি। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। দিনের প্রতিটি মুহুর্তে আপনি সাজেকের আলাদা রূপ দেখতে পাবেন।
সুন্দরবন
কাজের একঘেমি থেকে মুক্তি পেতে অথবা শহরের কোলাহলের বাইরে গিয়ে অপরূপ প্রকৃতি দেখতে সুন্দরবনের জুড়ি মেলা ভার। চাইলে সময় করে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বা লবণাক্ত পানির বন সুন্দরবন। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে আসেন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানটি দেখতে।
সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্রের মূল আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনে গেলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা সবসময় না পাওয়া গেলেও এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীরবতা ও জীববৈচিত্র্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এ ছাড়া, দেখতে পাওয়া যায় হরিণ, বানর, বন্য শুকর, বন বেড়াল, ডলফিন, বিভিন্ন পাখি।
জাতীয় চিড়িয়াখানা, ঢাকা
রাজধানীর মিরপুর-১ এ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা তৈরি করা হয়েছে । জনসাধারণের বিনোদন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রজনন, গবেষণা এবং বন্যপ্রাণি সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে ১৯৫০ সালে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে অল্প সংখ্যক বন্যপ্রাণি নিয়ে বাংলাদেশে চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়।
পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে মিরপুরে চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ১৯৭৪ সনের ২৩ জুন বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। চিড়িয়াখানার মোট আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার মূল আকর্ষণ পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং অন্যান্য প্রাণির মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, নীলগাই, সিংহ, জলহস্তি, গন্ডার, ভালুক, সিংহ, অজগর, গোখরা সাপ, কুমির, জেব্রা, পানকৌড়ি অন্যতম।
এছাড়া রয়েছে কবুতর, ময়ুর, ঘুঘু, টিয়া, উটপাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি। চিড়িয়াখানা তথ্যকেন্দ্র হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় প্রায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টিরও বেশি প্রাণী রয়েছে।
মহাস্থান গড়, বগুড়া
মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। প্রাচীন পুন্ড্রনগরীতে প্রায় ৪০০০ বছর পুরাতন স্থাপনার রয়েছে। মাউর্যা এবং গুপ্ত রাজারা মহাস্থানগড়কে তাদের প্রাদেশিক রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে পাল রাজা পুন্ড্রনগর বা মহাস্থানগরকে মূল রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করেন।
প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর ধংসস্তুপ দেখতে চাইলে যেতে হবে বগুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা করতোয়া নদীর পশ্চিম প্রান্তে। রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, মালদাহ, রাজশাহী অর্থাৎ বরেন্দ্র অঞ্চল পুন্ড্রদের আদি বসবাসের স্থান ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায় ৬৯৩ সালে বিখ্যাত চীনা ভ্রমনকারী ওয়ান চুন বৌদ্ধ স্থাপনা পরিদর্শনের জন্যে পুন্ড্রনগরী তথা মহাস্থানগড়ে আসেন।
তাঁর বর্ণনা মতে, তৎকালীন সময়ে ছয় মাইল আয়তনের পুন্ড্রনগরী একটি সমৃদ্ধ জনপদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল, যা অনেকটা ব্যবলিওন, এথেন্স, মিশরের কাঠামোর মত। মুসলিম শাসনামলে ধীরে ধিরে পুন্ড্রনগরী মহাস্থানগড়ে পরিণত হয়। ১৮০৮ সালে “বুচানন হামিল্টন” সর্বপ্রথম মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৩১ সালে মহাস্থানগড়কে প্রাচীন পুন্ড্রনগরী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, নওগাঁ
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে প্রায় ৭০.৩১ একর জমির উপর অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। পাহাড়পুরের প্রাচীন নাম ‘সোমপুর’। সোমপুর অর্থ চাঁদের নগরী। আর মহাবিহার হচ্ছে বৃহদাকৃতির মঠ। স্থানীয় লোকজন একে সোমপুর বৌদ্ধ বিহারও বলে থাকেন।
৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজা ধর্মপালের সময় এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অষ্টম ও নবম শতাব্দিতে পাল বংশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাজা ধর্মপাল এবং তার পুত্র দেবপালের পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়পুর বিহার ও মন্দির গড়ে ওঠেছিল। ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।
পাহাড়পুর বিহারকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার বলা যেতে পারে। আয়তনের দিক থেকে এর সঙ্গে কেবল ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা করা হয়। ঐতিহাসিক, অপূর্ব এই বিহারটি এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ বিহার হয়ে এখনও সগৌরবে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
বাগের হাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ
বাগেরহাট জেলায় হজরত খান জাহান আলী (র.) দরগাহ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ষাট গম্বুজ মসজিদ অবস্থিত। লাল পোড়ামাটির উপর লতাপাতার অলংকরণে এর স্থাপত্য মোড়ানো। এর শৈল্পিক সৌন্দর্য মসজিদটিকে বিশেষ স্থান করে দিয়েছে।
এ মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে, স্থানীয় ভাষায় যা খাম্বা নামে পরিচিত ছিল। প্রতি সারিতে ১০টি করে উত্তর - দক্ষিণে ছয়টি সারিতে এই স্তম্ভগুলো দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো হয়েছে, শুধু পাঁচটি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া আছে।
এই ৬০টি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেওয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ। মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও এর গম্বুজের সংখ্যা আসলে ৭৭টি। মিনারের চারটি গম্বুজ যুক্ত করলে এর মোট গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮১টিতে।
ষাট গম্বুজ নামকরণ নিয়ে জনশ্রুতি আছে, সাতটি করে সারিবদ্ধ গম্বুজ আছে বলে এ মসজিদের নাম ছিল আসলে সাত গম্বুজ। মানুষের মুখে মুখে ষাট গম্বুজ হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, গম্বুজগুলো ৬০টি স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলে ‘ষাট খাম্বা’ কালে কালে ‘ষাটগম্বুজ’ হয়ে গেছে।
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মৃতির স্মরণে। ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে ৪৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে সাভার উপজেলায় এই স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়েছে। স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশায় ১৯৮২ সালের শেষের দিকে স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূলকাঠামো সাত জোড়া ত্রিভূজাকৃতির দেয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। দেয়ালগুলো ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় রূপে সাজানো হয়েছে। সর্বমাঝের দেয়ালটি দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও উচ্চতায় অন্য দেয়াল থেকে সবচেয়ে বেশি উঁচু। স্মৃতিসৌধের সর্বোচ্চ বিন্দুর উচ্চতা ১৫০ ফুট। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো কংক্রিটের তৈরী।
সৌধের অন্যান্য সব স্থাপনায় লাল ইটের ব্যবহার করা হয়েছে যা লাল রক্তে রঞ্জিত জমিতে স্বাধীনতার উপাখ্যান রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে স্মৃতিসৌধটি দেখতে একেক রকম লাগে, যা এই সৌধের সতন্ত্রতা নির্দেশ করে।
বিশ্বের ৫ টি দর্শনীয় স্থান
জ্ঞান বিকাশের অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ভ্রমন করে জ্ঞান অর্জন করা। পৃথীবিতে অনেক আশ্চর্যজনক, ঐতিহাসিক ও মনোরম পরিবেশ, মনকে প্রফুল্লো করার মতো জায়গা আছে যা দেখে বিমোহিত না হয়ে পারবেন না।
মনের মধ্যে জমে থাকা সকল বিষাদ দুর করতে এই সকল জায়গায় বেড়াতে গেলে আপনার মনের মধ্যে জমে থাকা দুঃখ, কষ্ট সব দুর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ভারতের তাজমহল
পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের অন্যতম হলো নিদর্শণ হলো এই তাজমহল। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার ৩য় পত্নী মমতাজ মহলের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ১৬৩১ সালে এই স্মৃতি সৌধটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মিত হয় শ্বেতপাথর দিয়ে যা মুঘল স্থাপত্য কলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শণ। পারস্য, ইসলামি ও ভারতীয় এই তিন ঐতিহ্য মিলে নির্মিত হয়েছে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য তাজমহল।
এই স্মৃতি সৌধটি তৈরী করতে সময় লেগেছিলো প্রায় ১৬ বছর অর্থাৎ (১৬৩১ থেকে ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত)।ওস্তাদ আহমদ লাহৌরি ছিলেন এই আজব স্থাপত্য কলার স্থপতি।কয়েক সহস্র শিল্পীর নিপুন হাতের সাহায্যে তিনি এটি নির্মান করেন। ১৯৮৩ সালে সাংস্কৃতিক সম্পত্তির অধীনে UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় এটিকে স্বীকৃতি দেয়।
৪২ একর জমির উপর যমুনা নদীর তীরে এই সৌধটি অবস্থিত। সৌধটি অষ্টভুজাকার ভিত্তির উপর নির্মিত হয়েছে। এর চারকোনে চারটি মিনার রয়েছে। সমাধিটি অবস্থিত ভুগর্ভস্থ কক্ষের কেন্দ্র স্থলে। সমাধিটির উপরে নয়নাভিরাম একটি গম্বুজ রয়েছে। নিপুন হাতের অঙ্কিত ক্যালিওগ্রাফি দ্বারা লেখা স্মৃতি সৌধের গায়ে, যা সকলকে অভিভুত করে।
মিশরের পিরামিড
প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের বেশি আগে মিশরের রাজারা তাদের মৃত দেহ এবং অন্যান্য স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষন করে রাখার জন্য পিরামিড নির্মান করেন যা সপ্তশ্চর্যের তালিকায় ২০০৭ সালে ৭ জুলাই এটি স্থান পায়। এই তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে গিজার পিরামিডগুলো।মিশরের প্রচীনতম পিরামিডগুলো আবিস্কৃত হয়েছে মেমফিসের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত সাক্কারা নামক জায়গায়।
এই পিরামিডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো তৃতীয় রাজবংশের আমলে নির্মিত জোসারের পিরামিড। মিশরে যতগুলো পিরামিড আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো কায়রো শহরের উপকন্ঠে গিজায় অবস্থিত। গিজার পিরামিডগুলো সবচেয়ে বড়, পুরোনো ও আর্কষনীয়।
বিশেষজ্ঞরা ধারনা করেন এগুলো খ্রিস্টপুর্ব প্রায় ৫ হাজার বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। প্রায় ৪৮১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পিরামিডগুলো ৭৫৫ বর্গফুট এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার
ফ্রান্সের প্যরিসে আইফেল টাওয়ারটি অবস্থিত। এই টাওয়ারটি পুরোটাই নির্মিত হয়েছে লোহা দিয়ে। এর উচ্চতা ৩২০ মিটার বা ১০৫০ ফুট। ১৮০৩৮ খন্ড ছোট বড় লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরী হয়েছে এই টাওয়ারটি। ১৮৮৯ সাল থেকে পরবর্তী ৪০ বছর যাবৎ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ছিলো এটি। এই টাওয়ার নির্মাণ করতে সময় লাগে ২ বছর, ২ মাস, ২ দিন।
যাতে শ্রমিক কাজ করে ৩০০ জন। ফরাসি বিপ্লবের স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্যারিসে সেইন নদীর তীরবর্তী এলাকায় এটি নির্মিত হয়। পর্যটকদের আর্কষনের মুল কারন হচ্ছে সুর্য যখন ডুবে যায় তার প্রতি ৫ মিনিট পর ২০০০০ বাল্বের আলোক ছটা পরে যা ঐ এলাকাকে এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলা ভুমিতে পরিনত করে। যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টি
স্ট্যাচু অব লিবার্টি অবস্থিত আমেরিকায়। এই মুর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছিল মুলত আমেরিকা ও ফ্রান্সের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে। এই স্থাপনাটি মুলত এক নারীর অবয়ব রোমান দেবী লিবার্টাসের আদলে গড়া যে সবুজ রঙের ঢিলে ঢালা গাউন পড়ে আছে।ফ্রান্সের দুই স্থপতি এই স্থাপত্য কলার মুল কারিগর প্রথম জনের নাম স্থপতি ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি।
যিনি ভাষ্কর্যটির বাইরের দিকটি নকশা করেন আর স্থপতি গুস্তাভ আইফেল যিনি ভেতরের দিকটি নকশা করেন।আমেরিকার স্বাধীনতার ১০০ বছর পুর্তি উপলক্ষে ফ্রান্স এই ভাষ্কর্যটি ১৮৮৬ সালে আমেরিকাকে উপহার দেয়। প্রতিবছর ৩৫ লক্ষ পর্যটক স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখার জন্য আসে সেখানে।
ইস্টার দ্বীপ, চিলি
এই দ্বীপটিকে পৃথিবীর নিঃসঙ্গ দ্বীপ বলা হয়ে থাকে। চিলির উপকুল থেকে ৩৬০০ কিলোমিটার দুরে দ্বীপটি অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝামাঝি অবস্থিত চিলির মালিকানাধীন এই দ্বীপটি ।
রহস্যময় দ্বীপটি ১৭২২ সালে ইস্টার সানডের দিনে আবিষ্কার করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয় ইস্টার দ্বীপ। ইউনেস্কো এই দ্বীপটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থান
প্রাচীনকালে এই পৃথিবীতে বহু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল আবার কালের বিবর্তনে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই সভ্যতাগুলোর মধ্যে থাকা সভ্য ও জ্ঞানী মানুষগুলো তাদের মেধা, মনন ও নিপুন হাতের দক্ষতা দিয়ে গড়ে তুলেছিল অসাধারণ কিছু স্থাপনা।
যার সৌন্দর্য ও নির্মাণ কৌশল আজও মানুষকে অবাক করে তোলে। যা ভ্রমন পিপাসুদের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত।
চীনের প্রাচীর
চীনের প্রাচীর (গ্রেট ওয়াল) তৈরি হয়েছে পাথর ও মাটি দিয়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬০০ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর তৈরি করা হয়। এই ধরনের প্রাচীর অনেকগুলো তৈরি করা হয়েছিল তবে ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট এর অধীনে যে প্রাচীন নির্মিত হয় তাই সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত।
মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য এই চীনের প্রাচীর। প্রাচীরের উচ্চতা ১৫ থেকে ৩০ ফুট চওড়া ৩২ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৮৮৫১ কিলোমিটার। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই থেকে শেষ হয়েছে লোপ নুর নামক স্থানে।কথিত আছে ১২ জোড়া ঘোড়া একসঙ্গে এই প্রচীরের উপর দিয়ে চলতে পারতো।
রোম, ইতালি
ইতালির রাজধানী রোমের ইতিহাস হাজার বছরের। পৃথিবীতে যত বড় বড় শহর রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এই প্রাচীন রোম। পাশ্চাত্য সভ্যতা গঠিত হয়েছিলো এই প্রাচীন রোমকে ঘিরে। এই শহরটি খ্রিষ্টপুর্বাব্দ ৭৫৩ শতকে আবিষ্কৃত হয়। এই রোম শহর ইউরোপের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প সংস্কৃতির এক অনন্য তীর্থস্থান। রোমন সভ্যতা খুব নামকরা একটি সভ্যতা।
রোমের বিখ্যাত ফোয়ারা ট্রেভি। এখানে নানা কারণে প্রতিদিন মানুষ কয়েন ছুঁড়ে ফেলে। আর এ অর্থের পরিমাণ প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার ইউরো। এ ফোয়ারা থেকে অর্থ কুড়ানো নিষেধ। প্রতি রাতে এখানে জমাহ হওয়া কয়েন উঠিয়ে দান করে দেয়া হয়।
নায়াগ্রা জলপ্রপাত
নায়াগ্রা জলপ্রপাত প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। এই বৃহৎ জলপ্রপাতের টানে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায়। যুক্তরাষ্ট্রের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নায়াগ্রা নদী পতিত হয়েছে কানাডায়। ফলে কানাডা থেকে নায়াগ্রার সৌন্দর্য অবাক করার মতো।
পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে যা আমাদের অবাক করে। নায়াগ্রা জলপ্রপাত তার মধ্যে একটি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম জলপ্রপাত। এটি প্রকৃতির এক মহাবিস্ময়। যা সব প্রকৃতি পিপাসু পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানে গেলে মনে হতে পারে পৃথিবীর সমস্ত পানির মোহনা বুঝি এটাই।
পর্যটকদের মতে নায়াগ্রা যতোই দেখি ততোই অবাক হতে হয়। জানতে ইচ্ছে করে অপরূপ সৃষ্টির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। জানি এসব কিছু অজানা থেকে যাবে। নায়াগ্রা ফলসে পানিপ্রবাহ সব সময় অবাক করার মতো।
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত
এই জলপ্রপাতটি জিম্বাবুয়ে সীমান্ত দিয়ে জিম্বাজি নদীর ধার দিয়ে অবস্থিত। ১০৮ মিটার উচ্চতা ও ১৭০৩ মিটার চওড়া এই জলপ্রপাত থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৯৩৫ ঘনমিটার জল নীচে গিয়ে পড়ে। এই জলপ্রপাতটি প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে। জল পড়ার এই আওয়াজটিকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় “মোজি ওয়া তুনিয়া” যার অর্থ হলো বজ্রের ধোঁয়া।
এই জলপ্রপাতের ফলে সৃষ্ট জলীয় বাষ্পের কারণে যে মেঘ তৈরী হয় তা ৪০০ মিটার উচ্চতায় ভাসতে থাকে এবং এই মেঘ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুর থেকে দেখা যায়। এখানকার জলীয় বাষ্পের আলো পড়ে রংধনুর সৃষ্টি হয় যা শুধু দিনে নয় রাতেও দেখা যায়। এই জলপ্রপাতের নামকরন করা হয় ১৮৫৫ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে।
অ্যান্টার্কটিকা, দক্ষিণ মেরু
পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। ১,৪২,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর এই পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশে নেই কোনো দেশ। সবচেয়ে ঠান্ডা, শুষ্কতম স্থান এই অ্যান্টার্কটিকা। বরফে ঢাকা সাদা এই মহাদেশের অনেকাংশে এখনো পা পড়েনি মানুষের। অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে এই মহাদেশের।
এই মহাদেশকে আপন বৈশিষ্ট্যে অক্ষুন্ন রাখতে ১৯৫৯ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল অ্যান্টার্কটিক চুক্তি। এ অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ, যেখানে স্থানীয় মানব জনসংখ্যা নেই। আলাদা করে কোনো দেশ এর মালিক নয়। তাই সামরিক কর্মকান্ড এবং খনিজ সম্পদ খনন নিষিদ্ধ।
এই চুক্তিতে ইন্টারন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল ইয়ার (আইজিওয়াই) অ্যান্টার্কটিকায় সক্রিয় ১২টি দেশ আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, চিলি, ফ্রান্স, জাপান, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করে এবং পরে ৫০টির অধিক দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যা অ্যান্টার্কটিক চুক্তি নামে পরিচিত।
সান্তরিনি, গ্রিস
এজিয়ান সাগরে অবস্থিত গ্রিক দ্বীপগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সমুদ্র সৈকত, উঁচুনিচু পাহাড়পর্বত আর নীল-সাদা বাড়িঘরের জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করে। সান্তরিনি দ্বীপটি খ্রিস্টপূর্ব ১৬ শতকে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে বিধ্বস্ত হয়। তারপর থেকেই এটির সৈকত উঁচুনিচু আর এবড়োথেবড়ো রূপ ধারণ করে আছে।
ফিরা আর ওইয়া শহরের সাগরপাড়ে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে রয়েছে চমৎকার সব বাড়ি, যেখান থেকে সাগরকে এক অন্য দৃষ্টিতে অবলোকন করা যায়। এর পশ্চিমে রয়েছে লাভায় গঠিত মনোমুগ্ধকর কালো, লাল আর সাদা নুড়িপাথরের বেলাভূমি। সান্তরিনি দ্বীপে ১৩ টি গ্রাম রয়েছে যার প্রত্যেকটির আছে ঐতিহ্যপূর্ণ স্থাপত্যশৈলী।
প্রকৃতপক্ষে, এই দ্বীপটির স্থাপত্য হল এক অনন্য ও পোসকাফো (গুহা ঘর) প্রকৃতির। পোসকাফো (গুহা ঘর) গুলি সান্তরিনি এর মধ্যে ঝোড়ো হাওয়া-বাতাস থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সান্তরিনি দ্বীপে তিনশ ক্যাথলিক এবং অর্থডক্স গির্জা আছে। এই দ্বীপে আছে লাল বিচ, ব্ল্যাক বিচ এবং হোয়াইট বিচ।
উপসংহার
এখন পর্যন্ত যে আলোচনাগুলো পড়লেন তা থেকে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন ভ্রমনের জন্য বিখ্যাত জায়গাগুলো সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে কোথায় বেড়াতে যাবেন তা এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার পছন্দের জায়গাটি নির্বাচন করুন। এবং হাতে সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।
আজকের পোস্টটি পড়ে নিশ্চয় আপনারা উপকৃত হয়েছেন। যদি এই পোস্ট থেকে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি শেয়ার করবেন । ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url