উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায় জেনে নিন
আপনি লেখাপড়া করে চাকরি পাচ্ছেন না ? আপনি কি আপনার জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন? আর নয় হতাশা। জেনে নিন উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায়। অল্প পুজি নিয়ে শুরু করে দিন এই দূরদশা একদিন থাকবেনা।
এখানে আরো জানতে পারবেন কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয় । কোন দেশের কোন জাত ভালো এবং রোগ বালায় কম হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য কোন জাতের গাভি পালন করলে বেশি লাভবান হবে এই সব কিছু জানতে পারবেন।
ভূমিকা
বাংলাদেশে চাকরি যেন সোনার হরিণ। অনেক ছেলে খেলা পড়া শেষ করে বসে আছে চাকরির আশায়। অনেকে অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে যাচ্ছে চাকরি করতে, কেউ পাচ্ছেন আবার অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। এসবের পিছনে না ছুটে অল্প পুজি দিয়ে শুরু করতে পাবেন গরুর খামার।
এই অবস্থায় চাকরির পেছনে না ছুটে উন্নত জাতে গাভি/গরুর খামার শুরু করে আপনিও সাবলম্বি হতে পারেন। উন্নত জাতের গরু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বি হবেন কিভাবে তা নিচের অর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে জেনে নিন।
সূচীপত্র
উন্নত জাতের গরু পালনে স্বাবলম্বি
কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়
কোন ধরনের গরু বাংলাদেশে বেশি উপযোগী
উন্নত জাতের গরুর বীজের নাম
কম খরচে গরু পালন
গরু পালন প্রশিক্ষণ
গরুর রোগ পরিচিতি ও চিকিৎসা
উন্নত জাতের গরু পালনে স্বাবলম্বি
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ সাব-সেক্টরের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। অনাদিকাল থেকেই এদেশের মানুষ তাদের জীবন-জীবিকার তাগিদে গবাদিপশু-পাঁখি লালন পালনে সম্পৃক্ত রয়েছে। জিডিপি’তে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ২.৫%। এই উপখাত থেকে মানব দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান প্রাণিজ আমিষ (দুধ, মাংস ) উৎপাদিত হয়।
প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৫০% প্রাণিসম্পদ সাব-সেক্টরে থেকে আসে। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ২২% সরাসরি এবং ৫০% পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের উপর নির্ভরশীল। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য দারিদ্র বিমোচন, নারী-পুরুষে সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রাণিসম্পদ খাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
তাই বর্তমান সরকার এ খাতের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই উপখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষ গতানুগতিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু-পাঁখি লালন পালনে অভ্যস্ত, যদিও এ কর্মকান্ডসমূহের অধিকাংশই প্রযুক্তি নির্ভর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর গবাদিপশু-পাখি পালনে উন্নত প্রযুক্তি উদ্বাবন, এর ব্যবহার ও সম্প্রসারণ, খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি, খামারের জীব নিরাপত্তার উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, মার্কেট চেইন উন্নয়ন, উন্নত ঘাস চাষ, উন্নত জাতের সিমেন ব্যবহার করে গবাদিপশুর জাত উন্নয়নসহ নানাবিধ কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়
গাভীর দুধ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর আদর্শ খাদ্য যা জাতীর মেধা বিকাশের জন্য প্রয়োজন। গাভী পালনের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র হ্রাসকরণসহ অর্থনৈতিক সচ্চলতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। উৎপাদিত দুধ বিক্রি করে দৈনিক নগদ অর্থ উপার্জন করা যায়।
জাত নির্বাচনঃ ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী হচ্ছে দুধের খামারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি জাত। এটি দেখতে সাদা-কালো অথবা লাল-সাদা মিশ্রণ হয়ে থাকে। নেদারল্যান্ড ও জার্মানিতে এই জাতের গাভী পালন করা হয়। এই জাতের গাভী সাধারণত ওজনে ৬৮০ কেজি থেকে প্রায় ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং একটি গাভী দৈনিক ২৫ থেকে ৩৫ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়।
জার্সিঃ জার্সি জাতের গাভীও দুধ উৎপাদন খামারের জন্য অনেক পরিচিত একটি জাত। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে মধ্যবর্তী একটি দ্বীপ জার্সি এখানে এই জাতের গাভী পালন হয়। এর নাম অনুসারে এই জাতের নাম জার্সি রাখা হয়েছে। এটি ফ্রিজিয়ান গাভী থেকে একটু ছোট হয়ে থাকে।
এর ওজম ৩৫০ কেজি থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং দৈনিক ১৫ থেকে ২৫ লিটার পর্যন্ত দুধ প্রদান করে থাকে।
কোন ধরনের গরু বাংলাদেশে বেশি উপযোগী
ব্যবসায় লাভবান হতে গেলে কোন জাতের গরু কতোটা দুধ দেয় তা ভাবার আগে খামারীরা যদি বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর জন্য উপযোগী এমন পশু লালন-পালন করে তবেই তা বুদ্ধিমানের কাজ। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ দু’টি রাষ্ট্র হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তান।
তবে ফ্রিজিয়ান, জার্সি এবং সংকর জাতের গরু এদেশের অনেক খামারে জায়গা করে নিয়েছে। অধিক দুগ্ধ উৎপাদন এবং লালন-পালনের সুবিধার জন্য লোকসমাজে দিনে দিনে এসব গরুর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
উন্নত জাতের গরুর বীজের নাম
ব্রাহমা জাতের গরুর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপপরিচালক ডাক্তার ভবতোষ কান্তি সরকার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাহমা জাতের গরুর বীজ এনে সরকার কয়েকটি জেলায় স্থানীয় খামারীদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে এই জাতের গরু উৎপাদন শুরু করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। সে সাথে প্রায় সকল অন্যত জাতের গরুর বীজ খুব সামান্য দামে হাতের খুব কাছাকাছি পাওয়া যায়। এটি সম্ভব হয়েছে বেসরকারিভাবে বিদেশ থেকে গরুর আমদানি করার সরকারি অনুমোদন আশায়।
কয়েকটি উন্নত জাতের গরুর বীজের নাম- (১) রেড চিটাগাং (বাংলাদেশী), (২) ফ্রিজিয়ান (দুধ), (৩) ব্রাহমা (মাংস), (৪) শাহীওয়াল (মাংস ও দুধ), (৫) গির (দুধ ও মাংস), (৬) ফ্লেকভি (, দুধ ও মাংস)।
কম খরচে গরু পালন
কম খরচে উন্নত জাতের গাভীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে বেশ কিছু করণীয় খামারিদের ভালোভাবে জেনে রাখা দরকার। গাভী পালনে লাভবান হতে চাইলে কম খরচে পুষ্টি চাহিদা
মিটানোর জন্য নিম্নের পদ্ধতিগুলো অনুস্বরণীয় ঃ- স্বাল্প মূল্যে সহজ প্রাপ্য খাদ্য দ্বারা রেশন তৈরি করতে পারেন। কম মূল্যের খাদ্য দিয়ে রেশন তৈরি করলে গাভী পালনে অনেক খরচ কমে যাবে।
খাদ্যগুলো প্রয়োজনমত প্রক্রিয়াজাত করণ করলে সহজেই গরুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে খাদ্য সংগ্রহ করে খারতে পারলে খরচ কমে যাবে। খামারে পালন করা গরুর দৈনিক খাদ্য চাহিদা কত ও গরু কি কি খাদ্য খেতে পছন্দ করে সেই হিসাব করে গরুকে খাদ্য প্রদান করতে হবে।
গরুর খাদ্য প্রদানের মাধ্যমেই সেই খাদ্য উপাদান দিয়ে যাতে গরু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে তেমন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
গরু পালন প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে আমাদের বিশাল যুবসমাজকে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ করতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর দেশব্যাপী কর্মপ্রত্যাশী যুবক ও যুবনারীদের জন্য SDG এর লক্ষ্যমাত্রা ৮.৬ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কর্মমূখী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে আসছে।
বেকার যুবক ও যুবনারীদের আধুনিক প্রযুক্তিতে হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমূখী সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বিশ্বায়নের সাতে সংগঠিত রেখে যুবদের দেশ-বিদেশের শ্রমবাজারের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদে পরিনত করা। ১-৬মাস মেয়াদী প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ৪১টি ট্রেডে ৬৪টি জেলা কার্যালয়ে অনাবাসিক এবং ৬৪টি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আবাসিকভাবে পরিচালনা করা হয়।
১০টি মেট্রোপলিটন থানাসহ ৪৯৮টি উপজেলায় ৭-২১দিন মেয়াদী অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ৪২টি ট্রেডে স্থানীয় চাহিদারভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে উন্নত জাতের গাভী/গরু পালনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়া যায়।
গরুর রোগ পরিচিতি ও চিকিৎসা
গাভী/গরুর রোগ পরিচিতি ও চিকিৎসা গরু পালন খামারের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ষুষ্ঠ খামার পরিচালনা করতে হলে খামারিকে গরুর রোগ পরিচিতি ও চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হবে।
গবাদি পশুর নিউমোনিয়া ও ঠান্ডা জনিত রোগ, চিকিৎসা ও ঔষধ। শীতকালে গবাদি পশুর মধ্যে ঠান্ডা কাশি ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গবাদি পশুর নিউমোনিয়া বলতে ফুসফুসের প্রদাহ এবং তার সংঙ্গে ব্রংকিউলের প্রদাহকে বুঝায়। গবাদি পশুর নিউমোনিয়ার কারণ গবাদি পশু বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। যেমন- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ইত্যাদি।
রোগের লক্ষণ --
প্রচল্ড জ্বর (১০৫-১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট )
মুখ, জিহবা ও পায়ে ফোসকা দেখা দিবে
মুখের ও পায়ের ব্যাথায় মহিষ খাওয়া-দাওয়া করবে না
মুখ দিয়ে লালা ঝরবে
চিকিৎসা--
জীবাণুনাশক দ্বারা মুখ ও পায়ের ক্ষত পরিষ্কার করতে হবে
অ্যান্টিবায়োটিক অথবা সালফোনামাইড ইনজেকশন দিলে সুফল পাওয়া যায়
আক্রান্ত প্রাণীকে শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে এবং নরম বা তরল খাবার দিতে হবে
লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে চিকিৎসা করালে ভাল ফল পাওয়া যায়
উপরের পরামর্শগুলো মেনে খামার অথবা বাড়িতে গাভী/গরু পালন করলে আশা করা যায় স্বাবলম্বি হতে পারবেন এবং চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেকে সাবলম্বি করে তুলুন। অনেকে শিক্ষা অর্জন করে কৃষি কাজ করতে চায়না অনেক টাকা ঘুস দিয়ে চাকরির পেছনে ছুটেন কেউ পান আবার কেউ টাকা পয়সা হারিয়ে হতাশ ও দুশ্চিন্তা দিয়ে বাড়িতে বসে থাকেন।
এই সব না করে আপনার বাড়ির পাসের খালি জায়গায় খামার করতে পারেন সরকার আপনার পাশে দাড়াবে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে। অর্থ দিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে, চিকিৎসা দিয়ে। তাই আসুন আর দেরি না করে নিজেকে খামারি হিসেবে গড়ে তুলুন অথবা পুজি কম থাকলে একটি গরু/গাভী নিয়ে শুরু করুন।
উপসংহার
পরিশেষে বলতে চাই কখনো হতাশ হবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা করে, নিষ্ঠার সাথে কাজ শুরু করুন। দেখবেন আল্লাহ আপনার ভাগ্য খুলে দিবে, ইনশা-আল্লাহ। লেখা-পড়া শিখলেই যে চাকরী করতে হবে, এমনটি নয়।
অনেক শিক্ষিত লোক এই পেশাকে সাদরে গ্রহণ করে স্বাবলম্বি হয়েছেন। তাই আপনিও পারবেন। আমার লেখা গুলো পড়ে ভালো লাগলে উপকৃত হলে শেয়ার করুন এবং অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করুন। এতক্ষণ সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url