দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায় - বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার কৌশল

আপনি কি দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারছেন না ? সংসারে কি প্রায় অশান্তি লেগে থাকে ? আহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার কিছু উপায় জানা থাকলে আপনি এই সমস্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে আসুন জেনে নিন দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায় - বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার কৌশল।
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার উপায় - বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার কৌশল
এখানে আরো জানতে পারবেন- দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে কি অনেক টাকার প্রয়োজন, নাকি সৌন্দর্যের। আসলে কোন গুণগুলো থাকলে সংসারে সুখ শান্তি বিরাজ করে তা এই লেখাগুলো পড়লেই অনেকটা উত্তর পেয়ে যাবেন।

ভূমিকা

প্রচুর টাকা-পয়সা কিংবা সৌন্দর্য বিবাহিত জীবনকে সুখী করতে পারে না। বৈবাহিক সম্পর্কে সম্মান, ভালোবাসা ও বিশ্বাস না থাকলে সে সংসার জীবন সাধারণত সুখের পাওয়া যায় না। এ জন্য দাম্পত্য জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আন্তরিকতা ও একে অপরের সঙ্গে বোঝাপড়া। 

যে কোন কাজ করার আগে দুজনে আলোচনা করে নেয়া। আর ব্যক্তিগত পারিবারিক কলহ নিজেরা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলা। তবেই সুখী হওয়া সম্ভব। বিষয়গুলো যত ঘোলা করবেন ততই সংসারে অশান্তি বাড়বে।

সূচীপত্র

দাম্পত্য জীবরে সুখী হওয়ার উপায়
বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার কৌশল
দাম্পত্য জীবন কিভাবে মধুর হয়
দাম্পত্য জীবনের সমস্যা
দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে ইসলামের নির্দেশনা
দাম্পত্য জীবন নিয়ে বই
দাম্পত্য জীবন সুখী হোক

দাম্পত্য জীবরে সুখী হওয়ার উপায়

দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ছাড় দিয়ে চলতে হবে। এক পক্ষকে ছাড় না দিলে দাম্পত্য জীবন সুখের দুরের কথা সংসারেই হবে না। সব সময় ছোট খাটো ভুলত্রুটি ধরে বসে থাকনেবনা।  দাম্পত্য জীবন সুখের করতে নিচের লেখাগুলো পড়ে মেনে চলার চেষ্টা করুন-

মনের মিল
দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মনের মিল থাকা। মনের মিল না থাকলে সংসার জীবনে একেবারে সুখী হওয়া যায় না। আর সবসময় মনের মিল না-ও হতে পারে, কিছু অমিল থাকতেই পারে। তাই বলে অন্য কারও তুলনা টেনে না আনায় ভালো। এতে হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন আপনার সঙ্গী।

জোর করবেন না
আপনার স্ত্রীকে শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় জোর করবেন না বা কোনো কিছু চাপিয়ে দেবেন না। অনেকেই মুখ ফুটে নিজের চাহিদার কথা বলতে পারেন না। ঠান্ডা মাথায় কথা বলুন। বুঝে নিন ঠিক কী চান তিনি। জোর করে হয়তো অল্প সময়ের জন্য দেহটা পাবেন, কিন্তুু মনটা পাবেন না। চিরদিনের জন্য হারাতে পারেন।

ব্যক্তিগত বিষয় জন সম্মুখে আনা যাবেনা
নিজেদের পারিবারিক কলহ বা সমস্যা নিজেরাই আলোচনা করে সারিয়ে ফেলুন। নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও বলবেন না। সমস্যাকে যত বেশি হোকনা কেন জনসম্মুখে আসলে তত বেশি সংসারে অশান্তি বাড়তে পারে।

সঙ্গীর পছন্দকেও গুরুত্ব দিন
স্বামী বা স্ত্রী দুজন দুজনের পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দিন। ভালোবাসা যেন শরীর সর্বস্ব না হয়। বরং মন জয় করুন। ভালোবাসা শুধু শরীরের সাথে না করে মনের সাথে মন দিয়ে ভালোবাসা করুন। সম্পর্কটা মধুর হবে ইনশাল্লাহ।

বিশেষ দিনে উপহার দিন
বিশেষ দিন যেমন, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন। এই দিনগুলোতে বিশেষ আয়োজন রাখতে পারেন। এ ছাড়া উভয়ে উভয়কে (অর্থাৎ সঙ্গির পছন্দের) উপহার দিতে পারেন। এত সংসার আনন্দময় হবে। বিশেষ দিন ছাড়াও উপহার দিতে পারেন, উপহার পেলে সবারই মন ভালো হয়।

ভুল বুঝাবুঝি
সংসার জীবনে ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া হতেই পারে। এই ভুল বোঝাবুঝি বেশি দনি পুশে রাখবেন না। তা নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা করুন। সংসারে শান্তি ফিরাতে প্রয়োজনে নিজে ভূল স্বীকার করুন। এতে করে আপনি ছোট হয়ে যাবেন না বরং সে ভূল বুঝতে পারলে আপনাকে ঠিক সম্মান করবে। 

আর ছোট খাটো সব বিষয়ে অন্য কাউকে টেনে আনার আগে সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। আর মনের মধ্যে কষ্ট চেপে রাখবেন না। এতে সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস কমে যায়। মনের কথা সঙ্গিনীকে বললে মনটা হালকা হবে এবং দুজনের ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে।

হঠাৎ পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন না
জোর করে কিছু পাল্টে ফেলার চেষ্টা করবেন না। আরোপিত কোনো কিছুই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এতে করে সংসারের শান্তি নষ্ট হয়। তাই সবকিছুর মধ্যে সংযত ভাব বজায় রাখুন। তার কোন অভ্যাস বা যে কোন কিছু আপনার অপছন্দ হলে আস্তে আস্তে পাল্টাতে চেষ্টা করুন। কোন অবস্থাতেই তাড়াহুড়া করবেন না।

সপ্তাহে একদিন ঘুরতে যান
দাম্পত্য জীবনে সুখে থাকার অন্য আরেকটি উপায় হচ্ছে বাইরে বেড়াতে যাওয়া। কারণ সারা সপ্তাহ কাজ করে মন ও শরীর ঠিক রাখতে এবং সঙ্গীকে সময় দিতে ঘুরে বেড়াতে পারেন। এতে করে সংসারের একঘেয়ামী দুর হবে এবং মনটা আনন্দে ভরে যাবে। শুধু বেড়ালেই হবে না, তার পছন্দের খাবার খাওয়াতে হবে।

বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার কৌশল

দম্পতিরা চাইলেই নিজেদের বিবাহিত জীবনকে সুখের করতে পারেন। স্বামী-স্ত্রী যদি একে অন্যকে সহযোগিতা করেন ও নিজেদের মধ্যকার বোঝাবুঝি ভালো রাখেন তাহলে বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়া সম্ভব। জেনে নিন বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার ৫ কৌশল-

সঙ্গীকে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করুন
সঙ্গীকে নিয়ে পজেটিভ কিছু ভাবলে ডোপামিন (এক জাতিয় সুখী হরমোন) হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। যা মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। তাই সব সময় ভালো চিন্তা করুন সঙ্গীকে নিয়ে। এমনকি মন খারাপ হলেও সঙ্গীর ভালো দিক কিংবা দুষ্টু-মিষ্টি মুহূর্তের কথা ভাবুন, দেখবেন ভালো বোধ করবেন। এ ধরনের চিন্তা দাম্পত্যে সুখ আনতে সহায়তা করে।

কৃতজ্ঞতা জানান প্রিয়জনকে
প্রিয়জনের প্রতি সবারই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। সব সময় মাথায় রাখবেন, আপনার প্রিয়জন কিংবা পরিবার এরা সবাই আপনার চারপাশে আছেন বলেই জীবন এতো সুন্দর। তাই প্রিয়জনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এ অভ্যাসের গুণে আপনার জীবন সুখের হবে। এতে জীবনের বাধা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করাও সহজ হয়ে ওঠবে। কারণ তখন মনে হবে আপনি একা নন, আপনার পাশে সঙ্গী ও পরিবারের সবাই আছেন।

সঙ্গীর প্রশংসা করুন
প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে কিংবা যে কোনো সময়ে আপনি সঙ্গীর প্রশংসা করুন। এতে আপনার আত্মসম্মান কমবে না বরং বাড়বে। প্রশংসা শুনতে সবারই ভালোলাগে। আপনার কোনো কাজে খুশি হয়ে সঙ্গী যখন আপনার প্রশংসা করেন, তখন নিশ্চয়ই আপনিও খুশি হন! তাই সময় ও সুযোগ পেলেই সঙ্গীর প্রশংসা করুন। এতে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা আরও দৃঢ় হবে।

নেতিবাচক চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করুন
বিভিন্ন গবেষণা দেখা গেছে, আমাদের মস্তিষ্ক ইতিবাচকের তুলনায় নেতিবাচক ঘটনাগুলো নিয়ে বেশি ভাবে। অতীতের কোনো ভুল, অপ্রাপ্তি কিংবা দুর্ঘটনা মানুষের মস্তিষ্কে তীব্র প্রভাব ফেলে। তাই যতটা সম্ভব নেতিবাচক চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইতিবাচক চিন্তা করার চেষ্টা করবেন।

অনেকেই সঙ্গীর বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি নিয়ে এতোটাই ভাবেন যে, একসময় দুজনের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যায়। এর কারণ হলো আপনার মস্তিষ্ক নেতিবাচক বিষয় নিয়ে ভাবতেই বেশি উৎসাহিত করে। তাই আপনি যখন সঙ্গীর কোনো ভুল নিয়ে চিন্তা করবেন, ঠিক তখনই সেটি নিয়ন্ত্রণ করে তার কোনো ভালো গুণের কথা মনে করুন। দেখবেন দাম্পত্য জীবন সুখের হবে।

বিশ্বাসের মর্যাদা রাখুন
বেশিরভাগ দাম্পত্য কলহের মূলেই থাকে অবিশ্বাস, সন্দেহ কিংবা পরকীয়ার ঘটনা। সব সময় চেষ্টা করুন সঙ্গীর বিশ্বাসের কদর করতে। সেটি যেমন একজন স্বামীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য আবার স্ত্রীরও এই বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে দেখবেন ওই দম্পতির মাঝে কোনো অশান্তি থাকবে না।

দাম্পত্য জীবন কিভাবে মধুর হয়

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিছুটা অশান্তি হতেই পারে। তবে তা যদি নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয় তবেই শুরু হয় অশান্তির। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবার। সংসারের সুখ আসলে নির্ভর করে কে কতটুকু ছাড় দিতে পারে, কতটুকু সহ্য করতে পারে, কতটুকু যত্মবান হতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে। চলুন জেনে নিই দাম্পত্য জীবন সুখী করতে কোন অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা প্রয়োজন-

১. পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধঃ
শ্রদ্ধাবোধ প্রত্যেক ভালো দাম্পত্য জীবনের একটি সু-অভ্যাস, সুখী দাম্পত্য জীবন এটার অংশ। তবে শুধু এই নয় যে প্রিয়জনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে, নিজের প্রতিও থাকতে হবে। তবে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এটাকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখছেন। তারা মনে করেন, উচ্চাশার ফল ভালো। অন্যদিকে নিম্ন আশা হতাশা তৈরি করে। এটা কোনো ধাপে ইতিবাচক আবেগ নয় যা দাম্পত্য জীবন বিপরীতভাবে প্রভাবিত করে।

২.একে অন্যকে সঙ্গ দেওয়াঃ
স্বামী-স্ত্রীর একে অপরকে সঙ্গ দেওয়ার উপকারিতা অনেক। সঙ্গ একজন আরেকজনের প্রতি মনোসংযোগ এবং নির্ভশীলতা বাড়ায়। কিন্তু মানসিক সমর্থনের অভাবে ধীরে ধীরে সঙ্গীর উপর চাপ বাড়তে থাকে। এর ফলে সম্পর্কে অবনতি হবে।

৩. খুশি থাকা-খুশি রাখাঃ
সঙ্গীর মেজাজকে ভালো রাখতে মজার যে কোনো কাজ করতে পারেন। এটা আপনার সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে। নিজের খুশি থাকার বিষয়গুলো বাহ্যিক কারণের সঙ্গে যুক্ত করা এবং সঙ্গীর উপর নির্ভরশীল না হওয়া।

৪.ভালো মুহূর্ত উপভোগঃ
একে অন্যের প্রাপ্তি স্বীকারের জন্য প্রতিটা ভালো মুহূর্ত উপভোগ করুন। দীর্ঘ ভ্রমণের পরিকল্পনা করে বেরিয়ে পড়ুন। এর ফলে হ্যাপি হরমোন নিঃসরণ হয়ে চাপ কমবে। এটা আগে শুনেছেন এবং পুনরায় করতে পারেন। সব কিছু এক সঙ্গেই করতে হবে এমটা নয়। প্রকৃতপক্ষে অন্যের আগ্রহের প্রতি নজর রাখতে হবে যাতে সে চায়লে আলাদাভাবে সে সময় ব্যয় করতে পারে।

৫.শুয়ে গল্প করাঃ
আপনি কি এই মুহূর্তে শুয়ে স্বপ্নের সাগরে ভাসছেন। শুয়ে থেকে একা একা স্বপ্ন দেখে বন্ধ করুন। আর সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরে কিছু সময় ব্যয় করুন। দুইজন বালিশে শুয়ে কিছুক্ষণ গল্প করুন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা করুন। সামনের দিনগুলিতে কি কি করতে চান, একে অন্যের কাছে জানতে চান মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে।

৬.কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
সফল এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি সঙ্গীকে সাদরে গ্রহণ করা। তাই যেকোনো ভালো কাজের জন্য একে অন্যকে ধন্যবাদ বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন, প্রশংসা করুন। সমীক্ষায় দেখা গেছে,যারা সঙ্গীদের ধন্যবাদ জানান, তার কাজের প্রশংসা করেন তাদের দাম্পত্য জীবন অনেক সুখের ও আনন্দদায়ক।

দাম্পত্য জীবনের সমস্যা

প্রেম ভালোবাসা করা আর বিয়ে করে সংসার করা পুরোটাই আলাদা। বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক যতই গভীর থাকুক না কেন, বিয়ের পর আবার শূন্য থেকেই সব শুরু করতে হয়। বিয়ের পর দু'পক্ষের অত্যাধিক আত্মবিশ্বাস আর উদাসীনতার জন্যই সম্পর্কের অবনতি দেখা দিতে পারে। আর হঠাৎ করেই ভেঙে যেতে পারে সাজানো সংসার।

এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই সাবধান করে নেওয়া উচিত। প্রেম করে বিয়ে করার পরও কেন সুন্দর সম্পর্কে হঠাৎ করেই অবনতি দেখা দেয়, সে বিষয়ে জানিয়েছেন অভিজ্ঞজনরা।

১. ভালোবাসা ​কমে গেলেঃ
দাম্পত্য জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র ভালোবাসা আর ভালোবাসা। এই ভালোবাসার অভাব হলে দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া সম্ভব নয়। তাই সময় থাকতে সম্পর্কের দিকে নজর দিতে হবে। পরস্পরকে বেশি বেশি ভালোবাসতে হবে।

২. সম্মান না করাঃ
বর্তমানে অধিকাংশ নারীই স্বাধীন ভাবে ঘুরতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে চায়। আর এটাই তাদের জীবনযুদ্ধে এগিয়ে দিয়েছে। তবে এখনও কোন কোন পুরুষ মানুষ নিজের স্ত্রীকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে চান না। এর ফলেই স্ত্রীর মনে জমা হয় ক্ষোভের বিশাল পাহাড়। 

এমনকি তারা এই কারণে বিচ্ছেদের পথে যেতেও দ্বিধাবোধ করেন না। একই বিষয় পুরুষদের জন্যেও প্রযোজ্য। স্বামীকেও তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হব। তাই নিজেদের সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে পরস্পরকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু অবশ্যই দিতে হবে।

৩. সময় না দেওয়াঃ
একসাথে থাকতে গেলে একে অপরকে সময় দেওয়াটা খুবই জরুরি। সব সময় টাকার পেছনে না ছুটে পরিবারকে সময় দিন। পরস্পরকে সময় না দিলে হাসিখুশি সম্পর্কও ভেঙে যেতে সময় লাগে না। যে নারীরা গৃহিনী, তাদের বেশিরভাগ সময়টাই বাড়িতেই কাটে। তখন স্ত্রীকে সময় না দেওয়ায় তাদের মনে তৈরি হয় এক বিরাট শূন্যতা। আর এই শূন্যতার জন্য সম্পর্কের রং ধীরে ধীর বদলাতে থাকে।

​৪. অযথা রাগ দেখানোঃ
সারাদিন অযথা রাগ দেখানোর অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যগ করুন। আপনার এই অভ্যাসের জন্য আপনার সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে। তাই অযথা রাগ না দেখিয়ে তার সাথে ভালো এবং শান্তশিষ্ট ব্যবহার করুন।

৫. ঘনিষ্ঠতার অভাবঃ
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার জন্য শারীরিক ঘনিষ্ঠতা গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘনিষ্ঠতার অভাব হলে সম্পর্কের একাধিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমনকি সংসার ভেঙে যেতেও পারে। তাই সম্পর্কের স্বার্থেই পরস্পরের প্রতি শারীরিক আকর্ষণ বজায় রাখতে চেষ্টা করুন।

দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলামে স্বীকৃত এবং হালাল পন্থা হলো বিবাহ করার মাধ্যমে একটি নতুন পরিবারের সৃষ্টি করা। বিবাহ পদ্ধতি অবলম্বন করার মাধ্যমে একজন নারী এবং একজন পুরুষ একটি পরিবার তৈরি করে থাকেন।

বিবাহ নারী-পুরুষের মধ্যে যেমন পরিবার সৃষ্টিতে অবদান রাখে; তেমনি দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসা অনুরাগ সৃষ্টি করে এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন ও শান্তি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে দুজনের জীবনকে। পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপুরক।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা) তাদের পোশাক’। (বাকারা:১৮৭)

পবিত্র কুরআনে বিবাহ ও পারিবারিক জীবনকে পারস্পরিক সহমর্মিতা, অন্তরের অনাবিল সুখ ও শান্তির উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

বৈবাহিক সম্পর্কের দ্বারা দু’জন মানুষের মনে যে প্রেম ভালোবাসা জন্ম নেয় তা তুলনাহীন

বিবাহের পর থেকে সাংসারিক জীবনের শুরু একজন মানুষের জীবনের টার্নিংপয়েন্ট। তখন থেকে কারো কারো জীবনে নেমে আসে অনাবিল শান্তি ও সুখ। স্বর্গের সুখ তারা এ দুনিয়াতে থেকেই উপভোগ করতে শুরু করেন। এর জন্য প্রয়োজন পাত্র-পাত্রী যোগ্য হওয়া। ইবনে মাজার এক হাদিসে এসেছে, তাকওয়ার পর একজন মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে যোগ্য পাত্রী বা পাত্র পাওয়া।

নবী করিম (সা.) সেখানে যোগ্য পাত্রীর কিছু বর্ণনা দিয়েছেন। যোগ্য পাত্রীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পাত্রী নেককার, স্বামীর অনুগত, স্বামীর আনন্দের কারণ ও স্বামীর আমনত হেফাজতকারী হওয়া আবশ্যক। স্বামীরও কিছু গুণাগুণ আছে, যেগুলো থাকলেই স্বামী যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। 

তিরমিজী শরিফের এক হাদিসে এসেছে, স্বামীর গুণাগুণের অন্যতম দু’টি গুণ হচ্ছে, স্বভাব-চরিত্র ঠিক থাকা ও দ্বীনদার হওয়া বাধ্যতা মূলক। মূলত এ দু’টি ঠিক থাকলে জীবনের বাকিগুলো এমনিতেই চলে আসবে অনাবিল সুখ ও শান্তি।

উভয়ের কর্তব্য হল, পরস্পরের হকগুলো যথাযথভাবে জানা এবং তা আদায় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। কোনো ক্ষেত্রে দোষ-ত্রুটি হয়ে গেলে তা অকপটে স্বীকার করে নেওয়া এবং অতিদ্রুত সেটাকে শুধরে নেওয়া। এভাবে সবকিছুকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। 

তাহলে সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। এরকম শুধরে নেওয়া ও মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে না তুললে সামান্য মনোমালিন্যেও অন্তরে প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করবে। এখানে স্বামী-স্ত্রীর কিছু শরয়ী হক তুলে ধরা হল।

মহানবী (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। তিনি শুধু ঘরোয়া বিষয়ে তাদের মতামত নিতেন তা নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির ক্ষেত্রেও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। 

ইসলামের ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে তিনি উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.) থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। সেই মতামতের অসাধারণ কার্যকারিতা পরে। (বুখারি, হাদিস : ২৭৩১)

মহানবী (সা.) তার স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সব স্ত্রীর খোঁজ নিতেন এবং সবার সঙ্গে সময় কাটাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, ‘ফজরের নামাজের পর নবী কারিম (সা.) নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। 

সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত লোকেরাও তার চারপাশে বসে থাকত। অতঃপর তিনি তার প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে যেতেন, তাদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন আর যার দিন থাকত তার কাছে গিয়ে বসতেন।’ (তাবরানি, হাদিস : ৮৭৬৪)

অনেকে আচরণ ও কাজে ভালোবাসা প্রকাশ করে। কিন্তু সরাসরি কিংবা মুখে প্রকাশে লজ্জাবোধ করেন। কিন্তু উচ্চারণে ও কথার মাধ্যমে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর কথা বলতেন। হৃদয়াপ্লুত কথায় তাদের মুগ্ধ করতেন।

দাম্পত্য জীবন নিয়ে বই

১. মুমিন জীবনে পরিবার। লেখক ড. ইউসুফ আল কারযাভী।
২. বিবাহ ও স্বামী স্ত্রীর অধিকার। লেখক মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী।
৩. বিবাহ-শাদী ও দাম্পত্য জীবন। লেখক মাওলানা আশরাফ আলী থানভী র.।
৪. দাম্পত্য রসায়ন। লেখক ড. ইয়াসির ক্বাদি।
৫. আদর্শ দাম্পত্য জীবন। লেখক মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন।
৬. লাভ এন্ড রেসপেক্ট। লেখক ড. এমারসন এগারিচেস।
৭. সম্পর্কের ঘুলঘুলি। উপন্যাসের লেখক লতিফুর রহমান।
৮. প্রিয়তমা – সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর
৯. বিয়ে – রেহনুমা বিনতে আনিস
১০. বিয়ে: করণীয় ও বর্জনীয় – নাসিরুদ্দীন আলবানী
১১. সৌভাগ্যময় জীবনের পূর্ণাঙ্গ উপায় – শাইখ আবদুর রহমান ইবন নাসের আস-সাদী
১২. আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য – আব্দুল হামীদ মাদানী

দাম্পত্য জীবন সুখী হোক

দাম্পত্য জীবন সুখের হোক যারা প্রত্যাশা করেন তাদের অবশ্যই এ ব্যাপারে ইসলাম থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

মানব ইতিহাসের প্রথম দাম্পত্য জীবন শুরু হয় জান্নাতে। প্রথম মানুষ আদম আ. এবং হাওয়া আ. এর বিয়ের মধ্য দিয়ে। বিয়ের পরে তারা জান্নাতেই বসবাস করছিলেন। অতপর আল্লাহর প্রতিনিধি করে দুনিয়াতে তাদের পাঠানো হয়।

তবে আদম আ. সৃষ্টির আগেই ফেরেশতাদের সামনে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে মানুষ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

দাম্পত্য জীবন সুখের হোক চাইতে হলে আল কুরআন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নিচে এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত লক্ষ করি। দাম্পত্য জীবন নারী পুরুষ উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা জোড়া সৃষ্টি করেছেন যাতে একে অপরের কাছে তারা স্বস্থি পায় (আরাফ ১৮৯)। 

মূলত বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবজাত ও চিরন্তন। মানুষ বিভিন্ন উপায়ে তার বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে যেমন বিয়ে, জিনা ও ব্যভিচার।

আর ইসলাম যেহেতু ফিতরাতের ধর্ম তাই প্রকৃতি যা দাবী করে ইসলাম তা অস্বীকার করে না। আর এ কারনেই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নর-নারীর সম্পর্ক একমাত্র বিয়ে দ্বারা বৈধ স্থাপনের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিয়ে সম্পর্কে মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন,

আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতি থেকে সৃষ্টি করেছেন স্ত্রীগণকে, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই এর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে। (আল রুম ২১)

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বৈবাহিক জীবন সুখের ও শান্তিময় করতে চাইলে উপরে বর্ণিত উপায় বা কৌশলগুলো মেনে চললে দাম্পত্য জীবন ‍সুখের হবে ইনশাআল্লাহ। আর একটি বিষয় তা হচ্ছে সংসারে শান্তি বজায় রাখতে অবশ্যই দুজনকেই অবশ্যই ধর্যশীল হতে হবে। 

সর্বপরি ইসলামের বিধি বিধান মেনে চললে যে কোন সংসারে সুখ-শান্তি বজায় থাকবে। শয়তান এখানে কখনোই কুমন্ত্র ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারবেনা। আপনাদের সকলের দাম্পত্য জীবন সুখের হোক, আনন্দদায়ক হোক এই কামনায় বিদায় নিলাম। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪