বিশ্ব ভালোবাসা দিবস - ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিন
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের সঠিক ইতিহাস কি আপনি জানেন ? না জানলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। এখানে জানতে পারবেন ভ্যালেন্টাইন ডে নামক যে দিবস পালন করা হয় তার সঠিক ইতিহাস এবং এর পেছনের ঘটনা। আসুন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস - ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিন।
এখানে আরো যা জানতে পারবেন এটি কোন দেশের সংস্কৃতি এবং এই দেশে কিভাবে এলো। এই দিবসের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে। কেন এটিকে পবিত্র প্রেমের সাথে তুলনা করে উৎযাপন করা হচ্ছে এই দেশে।
ভূমিকা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশেও এই দিবসটি পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে যুবক/তরুন সমাজের মধ্যে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি ও বাংলাদের নিজেস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নভাবে পালিত হয় এই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। অথচ অনেকেই জানেনা বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারী বসস্ত উৎসব তথা পহেলা ফাল্গুন।
খ্রিস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদ্যাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অথচ বাংলাদেশে এটি খুব আনন্দের সাথে উৎযাপন করা হয়।
সূচীপত্র
ভ্যালেন্টাইন ডে এর অর্থ কি
ভ্যালেন্টাইন ডে এর প্রকৃত ইতিহাস
ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়
বাংলাদেশে কিভাবে এলো এই দিবস
ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্যালেন্টাইন ডে
ভ্যালেন্টাইন ডে এর অর্থ কি
একজন বিখ্যাত সেইন্ট বা ধর্ম যাজকের নাম থেকে দিনটি এমন নাম পেয়েছে। তবে তিনি কে ছিলেন - তা নিয়ে বিভিন্ন গল্প রয়েছে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস যাকে অন্যভাবে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স উৎসব ও বলা হয়ে থাকে। একটি বার্ষিক উৎসবের দিন যা ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা এবং অনুরাগের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হয়।
প্রথম দিকে এটি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক একজন অথবা দুজন খ্রিষ্টান শহিদকে সম্মান জানাতে খ্রিষ্টধর্মীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল, পরবর্তীতে লোক ঐতিহ্যের ছোঁয়ার মধ্যে দিয়ে এটি বিভিন্ন দেশে আস্তে আস্তে প্রেম ও ভালোবাসার সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক একটি আনুষ্ঠানিক দিবসে পরিণত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থাকলেও বাংলাদেশ সহ অধিকাংশ দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়।
ভ্যালেন্টাইন ডে এর প্রকৃত ইতিহাস
২৬৯ সালে ইতালির রোম শহরে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে নয়,বরং অনেকের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল, আর নৈতিকতার অবক্ষয়ও রোধ করা প্রয়োজন ছিল সেই সময়ে।
বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এর পেছনে কালো সত্যি আরো ভয়াবহ, সেই অন্ধ মেয়েকেও ইনি অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করতে ছাড় দেননি। এদিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল।
অতঃপর ৪৯৬ সালে (অর্থাৎ ২২৭ বছর পর) পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। খ্রিস্টান জগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে।
যেমন: ২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ দিবস, ১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন দিবস, ২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম দিবস, ১ নভেম্বর - আল সেইন্টম দিবস, ৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু দিবস, ১৭ মার্চ - সেন্ট প্যাট্রিক দিবস।
পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খ্রিস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদ্যাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যান করা হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলাম বিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত। বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদ্যাপন করা হয়।
যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে কিভাবে এলো এই দিবস
বাংলাদেশেও বর্তমানে এই দিবস পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে। এই দিনটি বাংলাদেশের অধুনা তরুণ সমাজ আরও ভিন্ন উপায়ে উদ্যাপন করতে উৎসাহিত হয়।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শফিক রেহমান, যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক এবং সম্পাদক, ১৯৯৩ সালে ভালোবাসা দিবস পালন করেন। তিনি লন্ডনে পড়ালেখা করার সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন। যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর নিকট ভালোবাসা দিবসের কথা তুলে ধরেন।
এই কারণে তাকে বাংলাদেশে তাকে ভালোবাসা দিবসের জনক বলা হয়। এই দিনে, বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষ প্রেমিক প্রেমিকা, বন্ধু বান্ধবী, স্ত্রী এবং স্বামী, মা এবং সন্তান, ছাত্র এবং শিক্ষক ফুল, চকলেট, কার্ড এবং অন্যান্য জিনিস আদান প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রসমুহ কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। বাংলাদেশে এই দিনটিতে কোন সাধারণ ছুটি নেই।
এই "ভালোবাসা দিবস" পালন করার আয়োজন হিসেবে সামাজিক গণমাধ্যম খুব বড় একটা ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ফুলের দোকান, ফ্যাশন হাউজ, উপহারএর দোকান, বেকারি ও ফাস্ট ফুড দোকানগুলোতে বিশেষ কিছু অফার চালু রাখে।
তাছাড়া টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে "ভালোবাসা দিবসের গান", "ভালোবাসা দিবসের নাটক" ইত্যাদি প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের কিছু কিছু মানুষ মনে করেন সাংস্কৃতিক এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা দিবস পালন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ শরীয়তে দিবসটির কোন ভিত্তি নেই।
১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস কেন
ভালোলাগা আর ভালোবাসার প্রবৃত্তি মানুষের সহজাত ধর্ম। কিন্তু সহজাত এই প্রবৃত্তি প্রকাশ করায় জীবনও দিতে হয়েছে কাউকে কাউকে। তাই জন্মসূত্রে পাওয়া ভালোবাসা নামের সেই অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যাদের জীবন দিতে হয়েছে তাদের মহিমান্বিত করতেই প্রতি বছরের নিদিষ্ট একটি দিনে পালন করা হয় এই 'ভ্যালেন্টাইন ডে' বা ভালোবাসা দিবস।
তবে প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রয়ারিই কেন ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয় এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ভালোবাসার জন্য এই দিনে মানুষের জীবন ত্যাগের ইতিহাস সম্পর্কে।
এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত ইতিহাসটি হচ্ছে রোমের ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। তিনি ছিলেন মানবপ্রেমিক ও খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। আর রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী।
সম্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করায় ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ আদম অমান্য করায় ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। সেই থেকেই দিনটির শুরু।
আরেকটি প্রচলিত কাহিনী আছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়েই। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর সেই দেশের অনেক যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসত এবং ফুল উপহার দিত। তারা বিভিন্ন উদ্দীপনামূলক কথা বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখত। এক কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত।
অনেকক্ষণ ধরে তারা দুজন প্রাণ খুলে গল্প করত। একসময় ভ্যালেন্টাইন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় অন্ধ মেয়েটি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা সম্রাটের কানে গেলে তিনি রাগান্নিত হয়ে ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
এছাড়া খ্রিস্টীয় ইতিহাস মতে, রক্ত পিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্য বাহিনীর। কিন্তু কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি হচ্ছিলনা। সম্রাট লক্ষ করলেন যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে অত্যধিক ধৈর্যশীল হয়ে থাকে। ফলে তিনি যুবকদের বিবাহ কিংবা যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
যাতে তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অনীহা প্রকাশ না করে। তার এ ঘোষণায় দেশের যুবক-যুবতীরা ক্ষীপ্ত হয়ে যায়। যুবক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক ধর্মযাজকও সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি। প্রথমে তিনি সেন্ট মারিয়াসকে ভালোবেসে বিয়ের মাধ্যমে রাজার আদেশকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার গির্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজও চালাতে থাকেন।
একটি রুমে বর-বধূ বসিয়ে মোমবাতির স্বল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন ফিস ফিস করে বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। কিন্তু এ বিষয়টি একসময়ে সম্রাট ক্লডিয়াসের পৌছেগেলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করা হলে তাকে হত্যার আদেশ দেন।
আরেকটি খ্রিস্টীয় ইতিহাস মতে, গোটা ইউরোপে যখন খ্রিস্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত যুবতিদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করত।
অতঃপর ওই বাক্স হতে প্রত্যেক যুবক একটি করে চিরকুট তুলে নিত, যার হাতে যে যুবতির নাম উঠত, সে পূর্ণ অবসরে ওই যুবতির প্রেমে মগ্ন থাকত। আর তাকে চিঠি লিখত, এ বলে যে, 'প্রতিমা মাতার নামে তোমার প্রতি এ পত্র প্রেরণ করছি।' বছর শেষে এ সম্পর্ক নবায়ন বা পরিবর্তন করা হতো।
এ রীতিটি কয়েকজন পাদ্রীর গোচরীভূত হলে তারা একে সমূলে উৎপাটন করা অসম্ভব ভেবে শুধু নাম পাল্টে দিয়ে একে খ্রিস্টান ধর্মায়ণ করে দেয় এবং ঘোষণা করে এখন থেকে এ পত্রগুলো 'সেন্ট ভ্যালেনটাইন'-এর নামে প্রেরণ করতে হবে। কারণ এটা খ্রিস্টান নিদর্শন, যাতে এটা কালক্রমে খ্রিস্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
অপর আরেকটি ইতিহাস অনুসারে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রানি জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোনো বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় র্যাফেল ড্র'র মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত।
এ উৎসবে উপস্থিত তরুণীরা তাদের নামাঙ্কিত কাগজের স্লিপ জনসম্মুখে রাখা একটি বড় পাত্রে ফেলত। সেখান থেকে যুবকের তোলা স্লিপের তরুণীকে কাছে ডেকে নিত। কখনও এ জুটি সারা বছরের জন্য স্থায়ী হতো এবং ভালোবাসার সিঁড়ি বেয়ে বিয়েতে পরিণতি পেত ওই সম্পর্ক। ওই দিনের শোক গাঁথায় আজকের এই 'ভ্যালেন্টাইন ডে'।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্যালেন্টাইন ডে
মুসলমানদের দ্বীন 'ইসলাম'। ইসলাম অর্থ শান্তি। কাজেই মুসলমানদের উপর শান্তির সব নিয়ামতই বিরাজমান। মুসলমান স্বামী-স্ত্রী যে অভাবিত শান্তিতে থাকে ও ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে তা ইহুদী-খ্রিস্টান তথা পাশ্চাত্য বিশ্ব কল্পনাও করতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমানুর রহিম।
আর রেহেম শব্দের এক অর্থ হলো বন্ধন। অর্থাৎ মুসলমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রহমানুর রহিম উনার রহমতে যে রেহেম বা বন্ধন তৈরি হয় তা বিধর্মীদের জীবনে বিরল। কারণ, এটা খোদায়ী নিয়ামত আর মুসলমান স্বামী-স্ত্রীই কেবল সে নিয়ামত পেয়ে থাকে।
এ দিবস পালন করার ব্যাপারে ইসলামের কোন সমর্থন নেই কোরআন ও সুন্নাহের আলোকে তথাকথিত এই ভালোবাসা দিবস উদযাপন অবৈধ। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এরশাদ করেন, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দপথ।
হাদীছ শরীফ-এ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার চেতনা ও প্রেরণা দিয়ে বলা হয়েছে, "তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।" আবার স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, "আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া যদি অন্য কাউকে সিজদা করা জায়িয হতো তবে আমি স্ত্রীদের বলতাম তারা যেনো স্বামীদের সিজদা করে।
" হাদীছ শরীফ-এ সব সময়ই স্ত্রীদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, স্ত্রীর দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকানোর জন্য, স্ত্রীর কাজে সাহায্য করার জন্য, স্ত্রীকে ক্ষমা করার জন্য, স্ত্রীকে সম্মান দেয়ার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে।
তথাকথিত ভালবাসা দিবস পালন মূলত অভালবাসা তথা নোংরামীর বিস্তার ঘটায় যা ইসলাম বিরোধী। পাশ্চাত্যে ভালবাসা দিবস প্রচলনের পেছনে ছিলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ। পাশাপাশি এদেশে তা প্রবর্তনের পেছনে আছে পাশ্চাত্য গোলাম শফিক রেহমান ও ইহুদী খ্রিস্টানদের সুদূর প্রসারী ইসলাম বিরোধী স্বার্থ। এটা এদেশে মুসলমানিত্ব নষ্টের গভীর ষড়যন্ত্র।
মূলকথা হলো- যারা 'ভ্যালেন্টাইন ডে' পালন করবে তারা কুফরী করবে। কারণ ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস সম্পূর্ণরূপেই ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিক তথা কাফিরদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি । যা মুসলমানদের মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্রও বটে। তাই মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- ভ্যালেন্টাইন ডে'সহ সর্বপ্রকার কুফরী প্রথা থেকে বিরত থাকা ।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে আসলে মানুষের চরিত্রকে ধ্বংস করে ব্যসায়িক উদ্দেশ্যে তৈরি করা একটি দিবস। এই দিনটিতে নুংরামি এবং নষ্টামির চরম শিখরে উন্নিত হয়েছে।
পাশ্চাত্যে কেমন ভাবে পালন হয় জানি না, তবে আমাদের দেশের মুসলমান নামধারী পরিবারের অনেক ছেলে-মেয়েরা এই দিবস পালনে উৎগ্রীব হয়ে থাকে যা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থি এবং বাংঙ্গালি সংস্কৃতির উল্টো। তাই আসুন এই দিবসের আসল ইতিহাস সম্পর্কে জেনে এই দিবস পালন থেকে বিরত থাকি। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url