মাথা ব্যথার কারণ ও মাথা ধরা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানুন
আপনি কি প্রতিনিয়ত মাথা ব্যথার সমস্যায় ভোগেন ? আপনি কি মাথা ধরা থেকে মুক্তি চান ? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। মাথা ব্যথার উল্লেখযোগ্য কারণ ও নিরাময় নিয়ে আলোচনা করা হলো। তাই মাথা ব্যথার কারণ ও মাথা ধরা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানুন।
মাথা ব্যথা নেই এমন মানুষ নেই বললেই চলে। কমবেশি সবায় এসমস্যায় ভোগে। কথায় আছে যার মাথা আছে, তার ব্যথা আছে। এখানে জানতে পারবেন- কি কি ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বণ করলে খুব জলদি এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।
ভূমিকা
জীবনে মাথা ব্যথা হয়নি এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। প্রচন্ড মাথা ব্যথা হলেই অনেক মানুষ মনে করেন মাইগ্রেনের ব্যথা। কিন্তুু আসলে বিষয়টা সে রকম না। মাথা ব্যথার সঠিক কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে জানা থাকলে এই সমস্যা থেকে বেচে থাকা যায়। আজকে এই সব খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
সূচীপত্র
মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি
মাথা ভারী লাগার কারণ
মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ
মাথার পিছনে ডান পাশে ব্যথা হওয়ার কারণ
মাথার পিছনে ব্যথার চিকিৎসা
মাথা ব্যথা দ্রুত দূর করার ঘরোয়া যত উপায়
মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
মাথা ব্যথায় ভোগেননি এমন লোক পৃথিবীতে পাওয়া সত্যিই অসম্ভব। মাথা ব্যথা অনেক কষ্টদায়ক। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যা স্থায়ী হতে অনেকক্ষণ। যদিও সামান্য মাথা ব্যথা হলে কিছুটা বিশ্রাম, কিছু তরল খাবার খাওয়া অথবা ঔষধের মাধ্যমে উপশম করা যায়। মাথা ব্যথা সাধারণত সব লোকেরই হয়, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটিকে অনেকে গুরুতর কোন রোগ বলে গণ্য করেন না।
মাথা ব্যথার কারণ
ঘরে-বাইরে বা অফিসে কাজের চাপে বিশ্রাম নেয়ার সময় না পেলে চাপ পড়ে চোখ আর মাথায়। তখন অনেকের মাথা ব্যথা করে।
মাইগ্রেনঃ মাইগ্রেন মাথা ব্যথার কমন একটি কারণ। মাইগ্রেনের কারণে অনেকেই মাথা ব্যথার সমস্যায় পড়ে থাকেন। অতিরিক্ত টেনশনেও মাথা ব্যথায় ভোগেন অনেকে। এক গবেষনায় দেখা গেছে মাথা ব্যথার প্রায় ৭০% টেনশন টাইপ হেডেক।
এছাড়াও ধুমপান, মদ্যপান, মাদকাসক্তি, অনিয়মিত ও অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ সেবন, অতিরিক্ত গরম বা রোদেলা আবহাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক-মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধা, মানসিক চাপ ইত্যাদি মাথা ব্যথার উল্লেখ্য যোগ্য কারণ।
মাথা ব্যথার ধরণ
বিশ্ব হেডেক সোসাইটি মাথা ব্যথাকে দুভাগে ভাগ করেছেন- (১) প্রাইমারি হেডেক (২) সেকেন্ডারি হেডেক।
প্রাইমারি হেডেকঃ প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে মাথা ব্যথাগুলো প্রাইমারি হেডেক। এগুলো বড় ধরণের বা সিরিয়াস কোন রোগ নির্দেশ করে না।
সেকেন্ডারি হেডেকঃ এটি মাথা, ঘাড় বা শরীরের অন্য কোন অংশের সিরিয়াস কোন রোগ নির্দেশ করে।
এছাড়াও আর রয়েছে। যেমন-
(১) সবচেয়ে বেশি মাথা ব্যথার নাম টেনশর হেডেক। এই ধরণের মাথা ব্যথা সারা মাথাজুড়ে হয় এবং খুব বেশি তীব্র না হলেও সারাক্ষণ থাকে।
(২) এটা হলো মাইগ্রেন। এই সমস্যায় ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি ভোগেন। সাধারণত মাথার একপাশে এ ব্যথা অনুভুত হয়। এটি টি,টি,এইচ এর মতো সারাক্ষণ চিনচিন করে না বরং থেমে থেমে হয় এবং ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
(৩) ক্লাস্টার হেডেক সাধারণত চোখ বরাবর যে ব্যথা হয় তাকে বলে। ক্লাস্টার হেডেকে চোখ লাল হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের দৃষ্টিতেও সামান্য ব্যঘাত ঘটে। দিনে রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর হয় এবং নির্দিষ্ট সময় নিয়ে থাকে বলে একে ক্লাস্টার হেডেক বলে।
(৪) মেয়েদের শরীরের হরমোনের তারতম্যের জন্য প্রায়ই মাথা ব্যথা হয়, একে হরমোনাল হেডেক বলে। সাধারণত পিরিয়ডের সময় বা আগে পরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় বলে এই ব্যথা হয়। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ও হরমোনের তারতম্যের জন্যে মাথাব্যথা হয়।
মাথা ব্যথা কমাতে করণীয়
মাথাব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক ভালো করতে হলে বিভিন্ন ব্যথানাশক ঔষধ, যেমন প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। ব্যথানাশক ঔষধের সঙ্গে অবশ্যই পেপটিক আলসাররোধী ঔষধ খেতে হবে। তবে খুব প্রয়োজন না হলে ঘন ঘন ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া ঠিক নয়।
(১) পর্যাপ্ত পানি পান করুন। কখনো খালি পেটে থাকবেন না। কম্পিউটার বা মোবাইলের পর্দা থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিন। হলকা শরীর চর্চা করুন।
(২) রগের দুটো পাশ ও ঘাড়ের কাছে যদি কিছুক্ষণ আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করেন তবে আরাম অনভব করবেন ও ক্লান্তি দুর হবে। ক্লান্তির কারণে মাথা ধরলে এই ম্যাসাজ অন্তাত্য কার্যকরি।
(৩) অতিরিক্ত আলোর কারণে অনেক সময় মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। তাই মাথা যন্ত্রনা করলে ঘরের আলো কমিয়ে দিন বা নিভিয়ে দিন।
(৪) খুব বেশি মাথা ব্যথা হলে এবং অসহনীয় যন্ত্রনা হলে দ্রুত ডাক্তারের মরামর্শ নিন।
ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি
ঘন ঘন মাথা ব্যথা হলে কারণ হতে পারে অনেকগুলো, যেমন শারীরিক বা মানসিক থাকার অবস্থা, চোখের অস্থিগতিসম্পর্কিত সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ শর্তসাপের কারণে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। শারীরিক বা মানসিক থাকার অবস্থা থেকে উত্থিত মাথা ব্যথা হলে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করাতে হবে চিকিৎসকের কাছে।
চিকিৎসকের পরামর্শ দিয়ে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারেন। সাধারণত এই ধরনের ব্যথা ক্ষেত্রে একটি প্যারাসিটামল যুক্ত প্যানাডল প্রস্তাব করা হয়।
মাথা ভারী লাগার কারণ
আপনার মাথা সব সময় ভারী লাগা একটি সাধারণ সমস্যা হতে পারে যা নির্দিষ্ট সমস্যার লক্ষণ হতে পারে না। মাথায় ভারী অনুভব করা একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন অতিরিক্ত শারীরিক শ্রম, মাথার বৃদ্ধি বা মাথায় চিন্তা এবং তাপমাত্রা পরিবর্তন এমন সাধারণ কারণের কারণে এটি হতে পারে।
তবে, মাথায় ভারী ভারী লাগা যদি অন্যান্য লক্ষণসহ সঙ্গতি প্রদর্শন করে তাহলে এটা কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে। কিছু সাধারণ সমস্যার উদাহরণ হতে পারে মাইগ্রেন, সিনাসাইটিস, তন্দ্রা, স্বাস্থ্যসম্মত রাশির চেপ বা কোনও অন্যান্য মেডিকেল শর্তের লক্ষণ হতে পারে।
যদি আপনি মাথা ভারী ভারী লাগার সাথে অন্যান্য লক্ষণসহ অভিজ্ঞতা করছেন, তবে সবচেয়ে ভাল হবে যদি আপনি একজন চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলুন।
মাথা ব্যথা কোন রোগের লক্ষণ
সময়ের সাথে সাথে মাথা ব্যথা বাড়তে থাকা মানে মাথা ব্যথাটা শুরু হওয়ার পর থেকে দিনে দিনে এটার সংখ্যা ও মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকা। যেমন ব্রেন টিউমারে এ রকম দেখা যায়। ব্রেন টিউমার ছাড়াও টিবি মেনিনজাইটিস, সারকোইডোসিস, লিম্ফোমা বা অন্যান্য কর্কট রোগ বা মেটাস্টেসিসের মতো দেখা যায়।
হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা, ডায়াবেটিস বা রক্তনালির সমস্যা আছে—এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে হঠাৎ তীব্র মাথা ব্যথা হলে স্ট্রোক, সাব-অ্যারাকনয়েড হেমারেজ ইত্যাদি নির্দেশ করে।
মাথার পিছনে ব্যথা হওয়ার কারণ
মাথার পিছনে ব্যথার বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং অন্তর্নিহিত সমস্যার উপর নির্ভর করে উপসর্গগুলি পরিবর্তিত হয়ে থাকে। মাথার পিছনে ব্যথার সাথে যুক্ত কিছু সাধারণ লক্ষণ এখানে রয়েছে-
(১) নিস্তেজ ব্যথা বা কাঁপুনি ব্যথাঃ অনেকে মাথার পিছনের ব্যথাকে নিস্তেজ ব্যথা বা কম্পন সংবেদন বলে বর্ণনা করেন।
(২) চিন্তার মাথা ব্যথাঃ মাথার পিছনে ব্যথা টান মাথা ব্যথার সাথে যুক্ত হতে পারে, যা প্রায়শই মাথার চারপাশে একটি ধ্রুবক, ব্যান্ডের মতো চাপ সৃষ্টি করে।
(৩) ঘাড় ব্যথাঃ মাথার পিছনে ব্যথার সাথে ঘাড়ের ব্যথা বা শক্ত হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি কারণটি পেশী টান বা সার্ভিকাল মেরুদণ্ডের সমস্যাগুলির সাথে সম্পর্কিত হয়।
(৪) একদিকে মাথাব্যথাঃ কারণের উপর নির্ভর করে, ব্যথা মাথার একপাশে ঘনীভূত হতে পারে, যেমন অক্সিপিটাল নিউরালজিয়ার মতো নির্দিষ্ট ধরণের মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে।
(৫) বমি বমি ভাব এবং বমিঃ মাইগ্রেন এবং কিছু অন্যান্য ধরণের মাথাব্যথা যা মাথার পিছনে ব্যথার কারণ বমি বমি ভাব এবং বমির সাথে যুক্ত হতে পারে।
(৬) তীক্ষ্ণ বা শ্যুটিং ব্যথাঃ কিছু ক্ষেত্রে, ব্যক্তিরা মাথার পিছনে তীক্ষ্ণ বা শ্যুটিং ব্যথা অনুভব করতে পারে, যা নিউরালজিয়া বা স্নায়ু-সম্পর্কিত সমস্যার সাথে যুক্ত হতে পারে।
মাথার পিছনে ব্যথার চিকিৎসা
ঘরোয়া প্রতিকারগুলি প্রায়ই মাথাব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে, তবে যে কোনও অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থাকে বাতিল করার জন্য আরও ঘন ঘন বা গুরুতর মাথাব্যথার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক মাথাব্যথা উপসর্গ ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথা উপশমকারী দিয়ে ব্যথা লাঘব করা যেতে পারে।
মাথাব্যথার চিকিৎসার কার্যকারিতা নির্দিষ্ট কারণ(গুলি) এর উপর নির্ভর করে। ঔষধ
(১) আর্থ্রাইটিস মাথাব্যথা কার্যকরভাবে প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ এবং হিট থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।
(২) হার্নিয়েটেড ডিস্কের মাথাব্যথার জন্য, চিকিৎসার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে শারীরিক থেরাপি, মাঝারি স্ট্রেচিং, প্রদাহ কমাতে এপিডুরাল ইনজেকশন এবং গুরুতর ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচার।
(৩) টেনশনের মাথাব্যথা প্রায়ই ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথানাশক দিয়ে উপশম করা যায়।
(৪) প্রেসক্রিপশন ঔষধগুলি সাধারণত মাইগ্রেনের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়, যদিও তাদের কার্যকারিতা বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য পরিবর্তিত হতে পারে।
(৫) অক্সিপিটাল নিউরালজিয়ার চিকিৎসার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে উষ্ণ/তাপ থেরাপি, এনএসএআইডি, শারীরিক চিকিৎসা, ম্যাসেজ, এবং প্রেসক্রিপশন পেশী শিথিলকারী, যা সব কার্যকর হতে প্রমাণিত হয়েছে।
উপসংহারঃ যদিও অনেক মাথাব্যথা নিজে থেকেই কমে যায়। কিছু কিছু মাথা ব্যথা গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত বহন করতে পারে। যে কেউ তাদের মাথার পিছনে ব্যথা অনুভব করছেন তাদের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
যদি কোন অন্তর্নিহিত কারণ থাকে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের সমাধান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একবার মাথা ব্যথার ধরন চিহ্নিত হয়ে গেলে, চিকিৎসা সাধারণত সোজা হয়। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url