পেঁপের পুষ্টিগুণ ও পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

পেঁপে অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভান্ডার। আমরা প্রতিনিয়ত সবজি হিসেবে পেঁপে খেয়ে থাকি। কিন্তুু অনেকেই জানেনা এর পুষ্টিগুন সম্পর্কে। পেঁপের পুষ্টিগুণ ও পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
পেঁপের পুষ্টিগুণ ও পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে পাঁকা ও কাঁচা পেঁপে নিয়মিত খেলে দেহের কোন কোন ঘাটতিগুলো পুরণ হয় তাও জানতে পারবেন। তবে কেউ কাঁচা খেতে পছন্দ করে আবার কেউ পাঁকা পেঁপে খেতে পছন্দ করে। একটা কথা খেয়াল রাখবেন পেঁপে আপনি যেভাবেই খান আপনার দেহকে সুস্থ্য রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

ভূমিকা

পেঁপে একটি ফল যা আামরা কাঁচা থাকতে সবজি হিসেবে এবং পাকলে ফল হিসেবে খেয়ে থাকি। এই পেঁপেতে প্রচুর ভেষজ গুনাগুন রয়েছে। পেঁপে বাসার সব সময় পাওয়া যায়। এটি রোগীদের জন্য পথ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অনেকে কাঁচা ও পাকা পেঁপে খেয়ে থাকেন। 

বিশেষ করে যাদের পেটের নানা সমস্যায় ভোগেন তাদের নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকসকরা। তবে কিছু কিছু জন্য ব্যক্তির জন্য পেটে খাওয়া ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন- সন্তান সম্ভাবাদের পেঁপে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এর কিছু উপাদান ধরনের ক্ষতি করতে পারে, শুধু তাই নয় নির্দিষ্ট সময়ের আগে সন্তান জন্ম লাভ করতে পারে। তাই চিকিৎসকরা পেটে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন।

সূচিপত্রঃ

পেঁপের পুষ্টিগুণ
পেঁপের উপকারিতা
পেঁপে খাওয়ার অপকারিতা
পাকা পেপেতে কোন ভিটামিন থাকে
পেঁপে পাতার রসের পাঁচ উপকারিতা
কাঁচা নাকি পাকা কোন পেঁপে খেলে বেশি উপকার
পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি

পেঁপের পুষ্টিগুণ

পেঁপে একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল। পুষ্টিগুণ বিবেচনায় অনেক ফলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে এই পেঁপে। তাই পেঁপে কে পাওয়ারফুলও বলা হয়ে থাকে। কারণ এতে অনেক রোগের নিরাময় ক্ষমতা থাকে। কম দামে এবং বছরজুড়ে পাওয়ার কারণে আর জনপ্রিয়তা অনেক। পেঁপে কাঁচা পাক দুভাবে খাওয়া যায়। 

পেঁপের পেপেইন নামক উপাদান আমিষকে সহজে হজম করতে এবং পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। পেঁপের মধ্যে প্রচুর ভিটামিন এ, সি ও ই রয়েছে। এই ভিটামিন গুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে রাখে। এর ভিটামিন সি ত্বক, চুল ও মাড়ির জন্য উপকার। আর এর ভিটামিন এ চোখের জন্য দারুন উপকারী।

পুষ্টি বিজ্ঞানী সহকারী অধ্যাপক ফারাহ মাসুদা বলেন- প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে ৭.২ গ্রাম শর্করা, ৩২ কিলো ক্যালরি খাদ্যশক্তি, ০.৮ গ্রাম আঁশ, ০.৬ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম খনিক পদার্থ, ৬.০ মিঃ গ্রাম সোডিয়াম, ৬৯ মিঃ গ্রাম পটাসিয়াম ও ০.৫ ‍মিঃ গ্রাম আয়রন থাকে।

এছাড়াও পেঁপেতে অল্প পরিমান ভিটামিন ই, বিটাক্যারটিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বক ও শরীর ভালো রাখতে সহায়তা করে। পেঁপে পেট ঠান্ডা রাখে, তাই গরমেরে সময় বেশি বেশি পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন ফারাহ মাসুদা।

পেঁপের উপকারিতা

পাকা পেঁপে ফল হিসেবে খুব তুপ্তিদায়ক ও উপকারী। তরকারি হিসেবে কাঁচা পেঁপে অতুলনীয়।
(১) উচ্চ রক্তচার কমাতে কার্যকরিঃ বিশেষ করে ৪০-৪৫ বছরের পর মানুষের রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। কারো রক্তচাপ বেড়ে যায়, আবার কারো কমে যায়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা কাঁচা বা পাকা পেঁপে কয়েক টুকরো করে নিয়মিত খেতে পারেন, উপকার পাবেন।

(২) প্লীহা বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেকের শরীরে নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নিয়মিত পাকা পেঁপে খেলে উপকার পাবেন।

(৩) স্নায়ু ব্যথা কমাতে পেঁপের পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে ব্যথা যুক্ত স্থানে সেদ্ধ পাতার সেক দিলে ব্যথার উপশম হবে। সপ্তাগে পাঁচ দিন ৫ মিনিট করে এই ভাবে লাগান দেখবেন ব্যথা সেরে গেছে।

(৪) যকৃতের বৃদ্ধি কমাতে পেঁপের আঠা অনেক ফলপ্রসু। ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠার সাথে এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিনে ৩বার খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যে যকৃত বৃদ্ধি কমতে থাকে। তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

(৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পেঁপের রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ, সি ও ই। এই ভিটামিন গুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়াও পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ যা চোখের জন্য খুবই উপকারী।

(৬) ব্রণ ভালো করতে ও কালো দাগ তুলতে সাহায্য করেঃ পাকা পেঁপে কালো দাগ দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকা পেঁপে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে ঘষে নিন, আধা ঘন্টা রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩/৪ বার এভাবে ব্যবহার করতে থাকেন। উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ। প্যাপিন মরা কোষ দূর করে ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করে তোলে।

(৭) ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ কাঁচা পেঁপে শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে রয়েছে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম, এই উপাদানটি প্রটিন হজম করতে সাহায্য করে। ক্যান্সার নিরাময়েও ভূমিকা রাখে, এই জন্য পেঁপে রান্না করে খাওয়ার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়াই উত্তম। আরও পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনোক্সিড যা দেহের ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাঁধা দেয়।

(৮) ডায়াবেটিস প্রতিরোধকঃ চিনির পরিমান কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেঁপে একটি আদর্শ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেঁপে রাখা খুবই জরুরি। পেঁপে ডায়াবেটিস হওয়া প্রতিরোধ করে।

(৯) হাড়ের ব্যথা রোধকঃ পেঁপেতে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার রয়েছে, নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে ব্যথা হ্রাস করে।

(১০) ক্রিমি নাশকঃ যে কোন প্রকারের ক্রিমি হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১ চা চামচ এক সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা পরে আধা কাপউঞ্চ পানি খেতে হবে। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে। ক্রিমি বিনাশের ক্ষেত্রে পেঁপে এটি ফলপ্রদ ঔষধ।

পেঁপে খাওয়ার অপকারিতা

  • অতিরিক্ত পেঁপে খেলে শরীর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • গর্ভবর্তী নারীদের জন্য পেঁপে খাওয়া ক্ষতিকর।
  • অতিরিক্ত পেঁপে খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের আশস্কা দেখা দিতে পারে।
  • কাঁচা পেঁপের রস বিষাক্ত ও ক্ষতিকর।
  • অনেক সময় কাঁচা পেঁপের নির্যাস শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করে।

পাকা পেপেতে কোন ভিটামিন থাকে

পেঁপেতে আছে ভিটামিন এ, সি, কে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও প্রোটিন। এছাড়্রাও প্রচুর পরিমান ফাইবারও রয়েছে। এছাড়াও পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমান খুবই কম। সেই সঙ্গে স্বাদেও মিষ্টি যে কারণে সুগার রোগীদের প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেতে দেওয়া হয়। 

পাকা পেঁপেতে থাকে ফোলেট, ভিটামিন এ, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ফাইবার এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিডের মতো উপকারী উপাদান। আপনি যদি নিয়মিত পাকা পেঁপে খেতে পারেন তবে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ক্যালশিয়াম ও কিছু উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে। আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে এই ফল।

পেঁপে পাতার রসের পাঁচ উপকারিতা

পেঁপে পাতারও অনেক উপকারিতা রয়েছে। ভারতের জীবনধারা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েব সাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁপে পাতার রস স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনই থাকার জন্যও ভালো কাজ করে। পেঁপে পাতায় রয়েছে পাপাইন, যা হজমে সাহায্য করে। 

পেট ফুলে যাওয়া ও অন্যান্য সংক্রান্ত ব্যাধি প্রতিরোধ করে। হজমের পাশাপাশি কারপেইনের মতো শক্তিশালী যৌগ খুশকি ও চুল পড়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আসুন পেঁপে পাতার কয়েকটি গুণ সম্পর্কে জেনে নেই-

লিভারের জন্য ভালো
পেপে পাতার রস লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তাই এই রস প্রতিদিন পরিমিত খেলে লিভারের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জন্ডিস ও লিভার সিরোসিস হবার ভয় থাকেনা।

রক্তের শর্করা মাত্রা হ্রাস করে
ডায়াবেটিসে দারুন কাজ করে পেঁপে পাতার রস। পেঁপে পাতার রস ইনসুলিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট উপাদান কিডনি ড্যামেজ এবং ফ্যাটি লিভার এর মত জটিলতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। পেঁপে পাতার রস রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
পেঁপে পাতার রসের ভিটামিন সি ও এ থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পেঁপে পাতার রস ফ্রি রেডিক্যালের ক্রিয়াকে দমন করতে সহায়তা করে। ব্রণসহ নানা সমস্যা দূর করতে পেঁপে পাতার রসের জুড়ি মেলা ভার।

চুলের যত্নে
ত্বকের পাশাপাশি চুল ভালো রাখতেও পেঁপে পাতার রস অনেক কার্যকরি। চুল পড়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া কমায়। খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। পেঁপে পাতার রস নারীদের হরমোন ও মাসিকচক্র ঠিক রাখে। ঋতুকালীন ব্যথা কমাতেও সহায়তা করে।

কাঁচা নাকি পাকা কোন পেঁপে খেলে বেশি উপকার

তুলনামূলক ভাবে কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটেক্সের অনুপাত বেশি থাকে। তার প্রভাবে শরীরে শোধন প্রক্রিয়া চলে। কাঁচা পেঁপেতে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাসের ভান্ডার। তাই শারীরিক সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেউ বলেন কাঁচা তো আবার কেউ বলেন পাকা পেঁপের ্উপকার বেশি। 

তবে পুষ্টিবিদরা কেমন পেঁপে খেতে বলেন তা জানা দরকার- কাঁচা পেঁপের মধ্যে পাপাইন নামের একটি উৎসেচক। যা আমাদের হজমে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে কিন্তু গ্যাস, বদহজমের প্রকোপ কমবে। পাকা পেঁপের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি এছাড়াও পাকা পেঁপের মধ্যে শর্করা নেই বললেই চলে। যে কারণে তা সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। 

ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে প্রতিদিন একবাটি করে পাকা পেঁপে খেলে। ডায়াবেটিস রোগীদের পাকা পেঁপেকে ডায়েটে রাখতেই পারেন। এতে তাঁদের শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি মিটে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন ১০০ গ্রামের বেশি পাকা পেঁপে খাবেন না। 

এই ভাবে নিয়ম মেনে চললেই সুগারকে বশে রাখতে পারবেন। এমনকি ঔষধও খেতে হবে না। তাই কোন রকম বিতর্কে না জড়িয়ে এই দই রকম পেঁপেই রাখুন প্রতিদিনের ডায়েটে নিজে সুস্থ থাকতে পারবেন।

পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি

প্রতি গর্তে ২/৩ করে চারা রোপন করার পর, ফুল আসলে ১টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে। পরাগায়ণের জন্য প্রতিটি বাগানে ১০% পুরুষ গাছ থাকা দরকার। আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ এ সফলতা পেতে বীর বপন ও যারা লাগাবার উত্তম সময়, আশ্বিন এবং পৌষ মাস। বীজ বপনের চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ দিন পর চারা রোপনের উপযোগী হয়। 

পেঁপে চাষ লাভজনক হওয়ায় আমাদের দেশে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে পেতে চায় করছেন। বেশির ভাগ চাষী আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার না করায় পেঁপে চাষের তেমন ফল পাচ্ছেন না। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করলে পেঁপের ফলন দ্বিগুন পাওয়া সম্ভব। 

খুব অল্প সময়ের ফল পেঁপের চাষ করার জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই। বাড়ির আঙ্গিনায় দুচারটি গাছ লাগালে সারাবছর ফলন পাওয়া যায়। এবার জানব পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি-

জমি নির্বাচনঃ মোটামুটি সব মাটিতে পেঁপে চাষ করা যায়। তবে দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। পেঁপে গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা। এজন্য পেঁপের চারা রোনের জন্য যথা সম্ভব পানি নিস্কাশন ও সেচ সুবিধা আছে এমন উচুঁ জায়গা নির্বাচন করতে হবে।

জমি তৈরিঃ পেঁপে চাষের আগে ভালোভাবে জমি বারবার চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেঃমিঃ চওড়া এবং ২০ সিঃমিঃ গভীর নালা তৈরি করতে হবে। নালাসহ প্রত্যেকটি বেড ২ মিটার চওড়া এবং জমি অনুযায়ী লম্বা হতে হবে।

সার প্রয়োগঃ চারা রোপনের ১৫ দিন আগে বেডের মাধ বরাবর ২ মিটার দুরত্বে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে মাটিতে সার মিশাতে হবে। প্রতিটি গর্তে ১৫ কেজি পচা গোবর সার, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫০০ গ্রাম, টিএসপি সার, ৫০০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাাম জিপসাম, ২০ গ্রাম বরিক এসিড এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে। 

ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়্রা সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। এরপর সার মিশ্রিত গর্তে সেচ দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা গজালে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি মাসে একবার করে প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে ১০০ গ্রাম করে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে যথেষ্ট রস না থাকলে সার গেওয়ার পর সেচ দিতে হবে।

চারা তৈরি ও রোপণ
পেঁপের চারা পলিথিন ব্যাগে তৈরি করায় ভালো। প্রতি হেক্টরের জন্য ১৫০-৩০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজ পড়ে। তবে হাইব্রিড পেঁপের জন্য ১০০-১৫০ গ্রাম বীজই যথেষ্ট। পলেথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপনের পর গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

পরিচর্যাঃ আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে সফল হতে হলে অবশ্যিই পরিচর্যার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পেঁপে চাষের জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখা খুব জরুরি। তাছাড়া গাছের গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। পেঁপের ফলন ও আকার সেচের উপর নির্ভর করে।

পেঁপের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনঃ পেঁপে গাছে রোগবালাইয়ের মধ্যে ঢলে পড়া ও কান্ড পচা, এ্যানথ্রাকনোজ, মোজাইক ও পাতা কোঁকড়ানো রোগ অন্যতম। তাছাড়া পোকার মধ্যে মিলিবাগ ‍উল্লেখযোগ্য।

শেষ কথাঃ পেঁপে বারো মাসি সবজি ও ফল। সবজি হিসেবে সবুজ পেঁপে সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করা হয়। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত বাজারে পেঁপের দাম বেশি পাওয়া যায়। পেঁপে কাঁচা-পাকা দুভাবেই খেলে উপকার পাওয়া য়ায়। 

পেঁপের চারা রোপন করে বাড়ির আঙ্গিনাসহ বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করি এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করি। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন- আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪