শীতকালে শিশুর শরীরের ও ত্বকের যত্নে করণীয়

 বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এদের মধ্যে শীতকাল একটি। শীতকালে আপনার শিশুর যত্ন নিয়ে চিন্তিত । তাহলে আপনার জন্য আজকের এই পোষ্ট। শীতকালে শিশুদের নানা রকম সমস্যা হবেই। তাই শীতকালে শিশুর শরীরের ও ত্বকের যত্নে করণীয় সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি।

শীতকালে শিশুর শরীরের ও ত্বকের যত্নে করণীয়
অন্য মৌসুমের চেয়ে শীতকাল একটু আলাদা। শীতকালে শিশুর শরীরের ও ত্বকের যত্নে করণীয় সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। শীতের সময় শিশুদের একটু অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়। এখানে জানতে পারবেন শীতে শিশুদের যত্ন কিভাবে নিবেন। কোন খাবারগুলো শীতকালে বেশি বেশি খাওয়াতে হবে।

ভূমিকা
বাংলাদেশে ছয় ঋতু থাকলেও মানুষ আসলে তিন ঋতু বেশি চেনে। গ্রীস্ম, বর্ষা আর শীত। শীতকালে সকলকেই একটু বেশি সাবধানে থাকতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। শিশুদের শরীর ও ত্বক বড়দের চাইতে লাজুক। এই শীতে শিশুদের অসুস্থতা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই তাদের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

শীতকালে শিশুর শরীরের ও ত্বকের যত্নে করণীয়

শীতকালে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

শীতকালে বাচ্চাদের যত্ন

শীতে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো

শীতে শিশুদের প্রসাধনী

শীতকালে নবজাতক শিশুর যত্ন

শীতকালে বাচ্চাদের পোষাক ও খাদ্য

শীতকালে শিশুর শরীরের ও ত্বকের যত্নে করণীয়

শীতকালে ফ্লুয়ের প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। বাইরের তাপমাত্রা কমে যায় যার ফলে শরীরের তাপ হারাতে থাকে। এই কারণে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সংক্রমনের ঝুকিও অনেক বেড়ে যায়। বাচ্চাদের রোদে ও আলো বাসাত পড়ে এমন জায়গায় খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। 

সূর্যের আলো শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং অসুস্থতার হার অনেক কমে যায়। এই সময় ফ্রিজের খাবার ও ঠান্ডা খাবার শিশুদের না দেওয়াই ভালো। এসময় অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের গোসল করাতে চান না। তারা মনে করেন প্রতিদিন গোসল করালে ঠান্ডা লেগে যাবে। এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। শিশুদের সব সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

প্রতিদিন গোসল করালে শরীর মন ভালো থাকে যার ফলে পর্যাপ্ত ঘুম হয় যা শিশুদের জন্য খুবই উপযোগী। এসময় শিশুদের ত্বক কোমল থাকে। তাই শীতের সময় বাড়তি যত্বেন প্রয়োজন হয়। শীতে আবহাওয়া শুস্ক থাকার কারণে শিশুদের ত্বক সেনসেটিভ হয়ে উঠে। শিশুর ত্বকের যত্নে ভালো মানের লোশন করাই ভালো।

শীতকালে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

শীতে প্রধানত শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বেশি দেখা দেয়। যদিও এই রো সাধারণত ভাইরাস তবুও তাপমাত্রার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। শীতের শুরুতে ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশি হয়ে থাকে। এসময় বাচ্চাদের ঠান্ডা না লাগে এই রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। শীতের সময় শিশুদের মধু খাওয়াবেন তাহলে তাদের শরীর গরম থাকবে। 

শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জাও বেশি হয়। এই রোগ মূলত ভাইরাস জনিত। ঠান্ডার কারণে জ্বর,কাশি, সর্দি-কাশি-জ্বর হয়। এই দুর করতে স্বাস্থ্যকর ও খোলামেলা শুষ্ক পরিবেশে বসবাস করতে হবে। শীতে আরো একটি মারাত্মক অসুখ হয় সেটি হলো নিউমোটিয়া। এই রোগে বেশি ভোগান্তির শিকার হয় নবজাতকরা।

নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখাদিলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান এবং তার পরামর্শ মত চিকিৎসা নিন। শীতের উপযোগী হালকা ও নরম গরম কাপড় ব্যবহার নিশ্চিত করুন।

শীতকালে বাচ্চাদের যত্ন

প্রচন্ড শীতে রোগাক্রান্ত হয় বেশি শিশু ও বৃদ্ধরা। নিজেকে শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনা। তাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীল কালটা তাদের কাছে অনেক কষ্টকর হয়ে উঠে। গোসলর সময় অবশ্যই হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করাবেন। টাটকা ও গরম খাবার খাওয়াবেন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। বেশি ঠান্ডা পড়লে অবশ্যই গরম কাপড় পারাবেন।

 শীতের সময় শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই তাদের শরীর এসময় খারাপ হয়ে যায়। তাদের ঘনঘন পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন ডিম, ফলমুল, মাছ, মাংশ খাওয়াতে হবে। শিশুর বেশি সংবেদনশীল তাই এসময় তাদের শরীর বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে। রুক্ষতা থেকে দুরে রাখতে মুখে এবং সারা শরীরে বেবি লোশন মাখাতে হবে।

শীতে বাচ্চাদের জন্য কোন ক্রিম ভালো

শীতে বাচ্চাদের জন্য যে ক্রিম/লোশন ভালো নিম্নরুপ
জনসন বেবি লোশন
কিউট বেবি লোশন
তিব্বত বেবি লোশন
সিয়া বাটার বেবি লোশন
হিমালায় হারবার বেবি লোশন
ময়শ্চারাইজিং ক্রিম শুষ্কতা দুর করতে পারে এবং ত্বককে উন্নত করতে সাহায্য করে এর ফলে শিশুর ত্বককে পরিবেশের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করে। আজকাল বাবা-মা শিশু জন্মগ্রহণের পরপরই বিভিন্ন পাউডার, ক্রিম ও লোশন ব্যবহারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এত করে শিশুর অনেক রকম ক্ষতি হতে পাতে পারে সঠিক পন্যটি না চেনার কারণে।

শীতে শিশুদের প্রসাধনী

শীতে শিশুদের একটু বাড়তি যত্ন নিতে হয়। মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত সব কিছুতেই একটু বেশি মনোযোগী হতে হবে। শীতে প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন আসে তার সাথে মানিয়ে নিতে শিশুদের একটু কষ্ট হয়। তাই তাদের প্রতি একটু বেশি যত্নবান হতে হবে। 

এজন্য শিশুদের নিয়মিত হেয়ার ওয়েল চুলের জন্য, বডি ওয়েল যা শরীরের জন্য, বেবি শ্যাম্পু, বেবি সোপ বা বেবি ওয়াশ, বেবি ক্রিম, বেবি লোশন বা বডি লোশন ব্যবহার করতে হবে। বডি লোশন ব্যবহারের ফলে শীতের রুক্ষতাকে দুর করে শিশুর ত্বককে নরম, লাবন্যময় ও মসৃণ করে তোলবে।

পায়ে দিতে পারেন গ্লিসারিন এতে তার পা নরম ও মসৃণ থাকবে। শীতের সময় বাচ্চাদের ঠোট ও হাত-পায়ের তালু ফাটা থেকে রক্ষা পেতে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ঠোট ও হাত-পা নরম ও কোমল রাখতে এর ব্যবহার অপরিহার্য।

শীতকালে নবজাতক শিশুর যত্ন

একটি শিশু পৃথিবীতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার চারপাশের পরিবেশ বদলে যায়। মায়ের পেটে উষ্ণ তাপমাত্রায় থাকে তাই পৃথিবীতে আসার পার শীত অনুভব করে। এঅবস্থায় স্যাঁতসেঁতে কোন ঘরে না রেখে উষ্ণ তাপমাত্রার ঘরে রাখুন। হালকা শীত হলে পাতলা নরম সুতি কাপড় পরিয়ে বা মুড়িয়ে রাখুন।

অনেকে হালকা শীতে গরম কাপড় পরিয়ে রাখেন যার ফলে শিশুর শরীর ও মাথা গেমে ঠান্ডা লেগে যায। নবজাতক শিশুকে মায়ের কোলঘেঁষে শোয়াবেন এতে শিশু উষ্ণ থাকবে। জন্মে পর প্রথমে মায়ের সাল দুধ খাওয়াবে এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়াবেন অন্যকিছু নয়। 

এই সময় মাকে বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ২৪ ঘন্টায় যদি আপনার শিশু ছয় বার প্রসাব করে তাহলে বুঝবেন সে ঠিকমত তার মায়ের দুধ পাচ্ছে। শিশুর কাপড় চোপড় ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকাবেন। এছাড়াও শিশুর বিছানা ও বালিশ প্রতিদিন রোদে শুকালে ভালো হয়।

শীতকালে বাচ্চাদের পোষাক ও খাদ্য

দিনের বেশি ঠান্ডা না লাগলেও ভোরে এবং সন্ধ্যার দিকে বেশ ঠান্ডা লাগে। এই সময় মানুষ বেশ অবহেলা করে বলে ঠান্ডাজনিত অনেক সমস্যা দেখা দেয়। ৫ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুর ২৪% কারণ হলো নিউমোনিয়া। তাই সর্বপ্রথম চলে আসে শীতের পোশাকের ভাবনা। 

শীতের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে শীতের তীব্রতা ও শিশুর বয়স বিবেচনায় নির্বাচন করা উচিৎ। হালকা শীতে যেমন ভারী পোশাক নির্বাচন করা উচিৎ নয় তেমনি খুব বেশি শীতে হালকা কাপড় শিশুদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মাথায় টুপি, হাতে মোজা ও পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে পারেন। 

যারা স্কুলে যায় তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু তারা সকালে স্কুলে যায় এই সময় শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকে, ওদের স্কুল ড্রেসের পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি শীতের পোশাক পরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে ‍টুপি ও মাফলাব ব্যবহার করতে পারেন। খালি গরম পোশাক পরালেই হবে না তাদেরকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। 

শিশুরা এমনিতেই খাবার খেতে চাই না। তার শীতে আরো খাবারের প্রতি তাদের অনিহা বেড়ে যায়। এসময় তাদের দুধ, ডিম ও মধু নিয়মিত খেতে দিন। বাচ্চারা সবজি খেতে চায়না, তাই তাদেরকে সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে দিতে পারেন। এতে তারা অনেক পুষ্টি পাবে।

উপসংহারঃ- বেশি গরম বেশি ঠান্ডা দুটোই আমাদের কাছে বেশ বিরক্তিকর। তবে শীতে মানুষ বেশি কষ্টপায় গরম কাপড় না থাকায়। আবার অনেকে যত্নের অভাবেও কষ্ট পায়। তেমনি ছোট সোনামনিরাও এই কষ্ট থেকে বাদ পড়েনা। আমাদের সহ্য করার ক্ষমতা একটু বেশি, আমাদের মত তারাও শীত সহ্য করতে পারে এমন ভাবা মোটেও উচিৎ নয়। 

কারণ তারা কোমলমতি শিশু, তাদের ত্বক একটু সংবেদশীল। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ এবং খাবার দাবারের ব্যাপারে একটু ্বেশি সতর্ক থাকতে হবে মা-বাবাকে। এই লেখাগুলো পড়ে যদি আপনার ভালোলাগে এবং উপকৃত হন তবে অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করুন। আর সম্ভব হলে শেয়ার করে দিন। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ হাফিজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪