শিশুর মোবাইল ফোনে আসক্তি কমানোর উপায় সমূহ জানুন

  আপনি কী আপনার শিশুকে নিয়ে চিন্তিত। আপনার শিশুর মোবাইল আসক্তি কোন ভাবে কমাতে পারছেন না। শিশুর মোবাইল ফোনে আসক্তি কমানোর উপায় গুলো জানুন এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে এবং মোবাইল থেকে দুরে রাখুন আপনার শিশুকে।

শিশুর মোবাইল ফোনে আসক্তি কমানোর উপায় সমূহ জানুন

শিশুদের মোবাইল আসক্তির কুফল সম্পর্কে সবারই জনা দরকার। এখানে জানতে পারেবেন মোবাইল ফোন বাদ দিয়ে বাইরে গিয়ে কিভাবে অন্য খেলায় অভ্যাস্ত করাবেন তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই লেখাগুলো পড়লে আপনার সমস্যার অনেকটা সমাধান পেয়ে যাবেন।

ভুমিকা

মানুষ দুই ভাবে বসবাস করে একটি হচ্ছে ভার্চু্য়াল এবং একচুয়াল। অর্থাৎ কেউ সারাক্ষন অনলাইনে থাকে এবং দুনিয়াকে হাতে মুঠোয় নিয়ে সব কাজ করে। আবার কেউ এই গুলো ব্যবহার না করেই জীবন পার করেন। তবে মোবাইল ব্যবহার করেন না এই রকম লোকের সংখ্যা কিন্তু খুব কম। 

আমাদের মোবাইল ব্যবহার দেখে আমাদের সন্তানেরা এর ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। মোবাইল একটি দরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। তবে সবার জন্য সব সময় ব্যবহার ভালো ফলের পরিবর্তে এর বিপরিত হতে পারে।

শিশুর মোবাইল ফোনে আসক্তি কমানোর উপায় সমূহ জানুন

শিশুদের মোবাইল আসক্তির কুফল

বাচ্চাদের মোবাইল দেখলে কি হয়

শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি

মোবাইল আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায়

মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার

শিশুর মোবাইল ফোনে আসক্তি কমানোর উপায় সমূহ জানুন

শিশুদের মোবাইল ফোনের আসক্তি কামাতে হলে সর্ব প্রথম আপনাকে মোবাইলের ব্যবহার কমাতে হবে। শিশুদের সামনে বেশি মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। তাদের সামনে বই পড়ুন। তারা যদি নাচ, গান, বা খেলাধুলা করতে চাই তা তাদেরকে উৎসাহ দিন। 

যে সময়টি সে বেশি ফোন ব্যবহারে সময় কাটায় সেই সময় তাকে অন্য খেলায় বা কাজে ব্যস্ত রাখুন এবং আপনি ওদেরকে সময় দিন। আপনি বাবা-মা হিসেবে সময় দেয়াটা খুব জরুরি। বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য অথবা বাচ্চার বিরক্তি থেকে বাচার জন্য কখনোই তার হতে মোবাইল তুলে দিবেন না। 

কারণ এই সময় সে আসক্তি হয়ে পড়বে এবং এর ফলে ওর অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে যা আপনি আমি চাইনা।

শিশুদের মোবাইল আসক্তির কুফল

মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে আরো সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু শিশুদের জন্য খুব বিপদজনক। এর মাত্রারিক্ত ব্যবহার শৈশবে সামাজিক মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। 

বাস্তব জীবনে যে সব শিশু পর্দায় আসক্ত তারা বিভন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন- খেলাধুলা, দৌড়ঝাপ, সাইকেল চালানো, দলগত ভাবে খেলাধুলা এইগুলো মিস করবে এবং মানসিক বিকাশে ও দক্ষতা বাড়াতে বাধাগ্রস্ত হবে। শারীরিক ভাবে কোন খেলায় অংশ গ্রহণ না করলে তার খাবারের প্রতি চাহিদা কমে যাবে যার ফলে সে অপুষ্টিতে ভুগবে। 

চোখের চরম ক্ষতি করবে। ঘাড় ব্যথা করবে। চঞ্চল ও জেদি হবে। লেখাপড়ায় ভালো করবেনা ফলে ভবিষ্যৎ কর্ম জীবনে তার মান কমে যাবে। মোবাইল ফোন বা টিভি বাড়ির জন্য খুব দরকারি ও অতি প্রয়োজনীয় জিনিস, বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী নয়। বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় বা ঘুম পাড়ানোর সময় এই ধরনের ডিভাইস কখনোই ব্যবহার করবেন না। 

বাচ্চাদের মোবাইল দেখলে কি হয়

অনেক গবেষনায় দেখা গিয়েছে মোবাইল বা টিভির রেডিয়েশনের প্রভাব সরাসরি তাদের দেহের উপর গিয়ে পড়ে। এর ফলে তাদের নার্ভ সিস্টেমের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি তাদের ক্যান্সারের মত জটিল ব্যধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এই জন্য প্লিজ দয়া করে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিবেন না। 

তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ‍তুলুন। এর আগে প্রথমে আপনি বই পড়ার অভ্যাস গড়ুন দেখবেন আপনার সন্তানও এক সময় আপনার মত অভ্যাস গড়ে তুলবে। কারণ প্রত্যেকটা শিশুর কাছে তার বাবা হচ্ছে হিরো, এবং তাদের মা তাদের কাছে হিরোইন। তাই তারা প্রথমে তাদের বাবা-মাকে অনুস্বরণ করে। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে এক থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনে ব্যবহারে আসক্তির কারণে আচরণগত সমস্যা মনোযোগের ঘাটতি, চোখের রেটিনা ও কর্ণিয়া অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার কোন কোন শিশু অটিজমেও আক্রান্ত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি

শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়ার নতুন এক উপদ্রব হলো মোবাইল ফোন। এখন প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি অনেকাংশে বেড়েগেছে। করোনাকালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়েছে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। 

এই সময় অনলাইনে ক্লাশ করানো হতো তখন বেশির ভাগ সময় মোবাইল তারাই ব্যবহার করতো এর ফলে তারা পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক/অসামাজিক বিভিন্ন সাইটে বিচরণ করতো এটাও একটা আসক্তির কারণ। অনেক ছাত্র-ছাত্রী মোবাইলে আসক্তির কারণে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।  পড়াশোনা করতে ভালোলাগে না। 

লেখা পড়ার নাম করে মোবাইল বিভিন্ন অ্যাপস ভিত্তিক গেমস, পর্নোগ্রাফি ভিডিও, পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মত মরণঘাতি গেমসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে প্রত্যেকটা মানুষের প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। অথচ যেই শিক্ষার্থীরা মোবাইল ব্যবহার করে তারা গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল ব্যবহার করে যা মোটেও কাম্য নয়। 

মোবাইল আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায়

কথায় আছে অলস মস্তিস্ক শয়তানের আড্ডাখানা। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে ফলে অনলাইন/প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম। আশেপাশে একটু লক্ষ করলে দেখা যায, কিশোর-কিশোরিরা ইন্টারনেটে ফাইটিং গেমস ফ্রি-ফায়ার নিয়ে পড়ে থাকে। 

এদের মধ্যে বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে ফোন থেথে আলো চোখের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি হতে পারে। আস্তে আস্তে ডেকে আনতে পারে সর্বনাশ, এমনকি অনেকে সারা রাত জেগে এসব গেম খেলে। 

অনেক অভিভাবক এই নেশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। উল্টো সংসারে আরো অশান্তি নেমে আসে। আবার অনেকে হেড ফোন ব্যবহার করে। হেড ফোন বেশি ব্যবহার করলে শ্রবণ শক্তি হারাতে পারে এবং কানের ক্যান্সার হতে পারে। 

মোবাইল আসক্তির কারণ ও প্রতিকার

অনেক ভাবে সতর্ক করার পরও দেখা যায় অনেক বাবা-মাকে শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দিতে। প্রযুক্তি আমাদের বহুক্ষেত্রে এগিয়ে নিচ্ছে ঠিকই কিন্ত এর ক্ষতিকারক দিকটা খেয়াল রাখাও জরুরি। বর্তমান মোবাইল সেটগুলো ফুল মাল্টিমিডিয়া এবং এর ব্যবহারকারি বেশির ভাগ শিশু-কিশোররা। 

প্রাথমিক শিক্ষা পার না হওয়া শিশু থেকে শুরু করে উঠতি বয়সি কিশোরদির হাতে এখন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন গেমস নিয়ে মেতে থাকে তারা। ইন্টাারনেট ও স্মার্টফোন হাতের মুঠোয় থাকার কারণে সহজেই পর্নোগ্রাফি ভিডিও, অশ্লীল ও অনৈতিক ভিডিও দেখার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে তারা। 

আর এসব শিশু-কিশোররাই একটু বড় হলে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে বা অপকর্মে। দল বেধে আড্ডা দেওয়া, মাদকদ্রব্য সেবন এবং মেয়েদেরকে ইভটিজিং করা এমনিকি ভয়াবহ সাইবার অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এই জন্য ছোট বেলা থেকেউ শিশুকে পারিবারিক শৃঙ্খলা, ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা, সুস্থ বিনোদন এবং উন্মুক্ত মাঠে খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। 

তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে মোবাইল ফোন থেকে দুরে রাখতে হবে। তাদের সাথে মা-বাবাকে খেলাধুলা করতে হবে। তারা যদি পড়ার জন্য অল্প সময়ের জন্য ফোন ব্যবহার করতে চাই তবে ফোন ব্যবহারের সময় সন্তানের পাশে বাবা অথবা মাকে বসে থাকতে হবে। 

উপসংহার ঃ- বর্তমান পৃথিবী হচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবী। এখানে আপনি আমি প্রযুক্তির বাইরে থাকলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়বো। মোবাইল এবং ইন্টারনেটের কারণে আজ কাল আমরা ঘরে বসেই সরকারি বেসরকারি অনেক কাজ বাসা থেকেই করতে পারি। সেই জন্য আমাকে আপনাকে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে সময় নষ্ট করতে হয় না। 

তাই বলে এর অতিমাত্রা ব্যবহার কিন্ত মারাত্বক ক্ষতি সাধন করতে পারে। এটা সবার জন্য। তবে শিশুদের এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রনে রাখায় ভালো। এর পরিবর্তে বন্ধু বান্ধবের সাথে খেলাধুলা করবে এত তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে  ইনশাআল্লাহ-। 

আমার এই লেখা পড়ে ভালো লাগলে এবং উপকৃত হলে অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করুন  এবং শেয়ার করে দিন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪