সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুন সম্পর্কে জেনে নিন

আপনি কি সজনে পাতার উপকারিতা এবং গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আর্টিকেলটি পড়লে সজনে পাতার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়েন এবং সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুন সম্পর্কে জেনে নিন।
সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুন সম্পর্কে জেনে নিন
আপনারা হয়তো সজনে পাতা রান্না করে অনেকবার খেয়েছেন। কিন্তু জানেন কি এই সজনে পাতা খাওয়ার উপকারিতা ওষুধে কোন সম্পর্কে। গাছ থেকে নামিয়ে অথবা বাজার থেকে কিনে সজনে ডাঁটা আমরা প্রতি নিয়তাই খেয়ে থাকি। কিন্তু কোন কোন রোগের ওষুধ তা আমরা অনেকেই জানিনা।

ভূমিকা

আশ্চর্য গুনাগুন সম্পন্ন এই সজনে পাতায় রয়েছে কমলালেবু থেকে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দূধের থেকে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, গাজরের থেকে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ, কলা থেকে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম, দই এর থেকে ২ গুণ বেশি প্রোটিন।

তাহলে আসুন এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আমরা সজনে পাতার বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিই। সজনে পাতা কিভাবে খেলে উপকার পাওয়া যাবে, এবং কোন কোন ঔষধি গুণ এর মধ্যে রয়েছে তা বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হলো। তাহলে আর দেরি নয়, সজনে পাতার এবং ডাটার এ টু জেড সম্পর্কে আমরা জেনে নিই।

সূচি পত্রঃ

সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতার ঔষধি গুন
ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতা খাওয়া ও গুড়া করার নিয়ম
সজনে পাতার ব্যবহার ও পাউডার খাওয়ার নিয়ম
সজনে পাতার জুস
ওজন কমাতে ও ত্বকের যত্নে সজনে পাতা

সজনে পাতার উপকারিতা

সজনে পাতার গুনাগুন এবং খাদ্যমান এত বেশি যে বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন অলৌকিক পাতা। কেন বলা হচ্ছে অলৌকিকতা, এত কিছু থাকতে সজনে পাতাকে অলৌকিক কথা বলার কারণই বা কি ? আসুন জানার চেষ্টা করি, আসলে সজনে পাতায় যে পরিমাণ ফুড ভ্যালু(খাদ্যমান), পুষ্টি এবং আরো অন্যান্য যে ভিটামিন রয়েছে তা জানলে সবাই বিস্মিত হবে। 

সে কারণে বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন অলৌকিক পাতা। আমাদের দেশে সজনে পাতা খাননি এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ সজনে পাতা প্রতি নিয়ত রান্না করে খেয়ে থাকেন।

 কিন্তুু তারা কি সবায় জানেন এর উপকারিতা এবং কিভাবে রান্না করলে এর পুষ্টিগুন ঠিক থাকে। ছোটকাল থেকে সজনে পাতার শাক ও সজনে ডাঠা খেয়ে আসছি, এ আবার এমন কি এই রকম মনে হতে পারে অনেকের কাছে।

সজনে পাতায় কী আছে ?
১ কেজি সোজা পাতায় ২৭০ গ্রাম আমিষ থাকে, ৩৮ শতাংশ শর্করা, দুই শতাংশ ফ্যাট, সজনে পাতায় এমনও এসিড আছে ৮টি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে। আরও রয়েছে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, আয়রন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। এতগুলো নিউট্রিয়েন্ট থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা বলছেন সুপার ফুড, বা অলৌকিক পাতা।

সজনে পাতার ঔষধি গুন

সজনে পাতায় অনেকগুলো ঔষধি গুন রয়েছে। ইতিমধ্যে এটি পরিক্ষিত যে, যাদের হাঁটু ব্যথা আছে, তারা ফজরের পাতার জুস, ভর্তা অথবা ‍গুড়া করে খান, ছয় মাসের মধ্যে কাঙ্খিত ফলাফল পেয়ে যাবেন। প্রত্যেকটা মানুষের শরীরে ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন সেল বা কোষ রয়েছে। প্রত্যেকটা কোষের ভেতর লক্ষাধিক রিঅ্যাকশন হয় প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে। 

এই লক্ষাধিক ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া, বিক্রিয়া হতে গিয়ে ভয়াবহ কিছু টক্সিন বা বর্জ এবং ক্ষতিকর পদার্থ সেলের ভেতর তৈরি হয়। এগুলো যদি সেলের ভিতর থেকে যায় তাহলে আপনি কোনদিন সুস্থ থাকতে পারবেন না। এ বর্জ্য পদার্থ বের করার জন্য আপনি নিয়মিত সজনে পাতা খেতে পারেন। এটি দারুন একটি ডিটক্স হিসেবে কাজ করবে। 

সজনে পাতা খাওয়ার ফলে অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা এবং বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি জানিত রোগের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। সজনে পাতা শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সজনে পাতা খাওয়ার ফলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই।

ডায়াবেটিস নিরাময়ে সজনে পাতার উপকারিতা

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ। বিভিন্ন প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ডাঠা ও পাতা খুবই উপকারী। সজনে পাতার শাক রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি এটিকে শুকিয়ে গুড়া করে সংরক্ষণ করে অনেকদিন ধরে খাওয়া যায়। পরে ের পাতার মত ব্যবহার করা যায়। 

পাতা ফুটানো পানি দিয়েও চা বানানো যায়। তাজা সদিনে পাতা পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মত খাওয়া যায়। সজনে পাতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছয় দিনে পাতার চা অনেক উপকারী। 

নিয়মিত সজনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে তার পাশাপাশি অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত ্য জীবন যাপন ও সঠিক খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে। তা না হলে শুধুমাত্র ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয়।

সজনে পাতা খাওয়া ও গুড়া করার নিয়ম

সজনে পাতা খাওয়ার সবচাইতে প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে শাক রান্না করে খাওয়া এবং চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া। কারণ যখন মরিঙ্গা ঘোড়া চায়ের সাথে মেশানো হয় তখন তা গলে সব পুষ্টিগুণ পানিতে মিশে যায়। আর যখন সে পানি গ্রহণ করা হয় তাও তাদের জন্য উপকারী হিসেবে কাজে লাগে। বিভিন্ন রোগের নিরাময়ের জন্য এক এক পদ্ধতিতে সজনে পাতা খাওয়া হয়। 

মূলত কাঁচা সবুজ সজিনা পাতার রস বা পাকা পাতার রস ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। তাছাড়া অনেকে আছেন যারা প্রতিদিন কাছে পাতা পায় না তারা ইচ্ছে করলে শুকিয়ে গুড়া করে পরিষ্কার কাচের বোতলে সংরক্ষণের মাধ্যমে অনেকদিন ধরে খেতে পারেন। এই পাতার গুড়া এখন বাজারেও কিনতে পাওয়া যায়। আমি যাব বানাবো ।

গুড়া করার নিয়মঃ
গাছ থেকে পাতা নামিয়ে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিন, যদি পাতায় ধোলা ময়লা লেগে থাকে তবে পরিষ্কার পানি ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন, এবার শুকনা পাতা ব্লেন্ডারে অথবা সিলভাটার সাহায্য করা করে নিতে পারেন।

সজনে পাতার ব্যবহার ও পাউডার খাওয়ার নিয়ম

সজনে পাতার নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। যেমন- রান্না করে খাওয়া যায়, সজনে পাতার সুস্বাদু পাকোড়া বানিয়ে খাওয়া যায়। ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, সজনে গাছ থেকে প্রায় ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞান সমর্থন করে। বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাও ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়। 

সজনে পাতা শাক হিসেবে খাবার টেবিলে সবচাইতে বেশি ব্যবহার হয়। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সজনে ডাটা বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়। সজনে দিয়ে মসুরের ডাল তরকারিতে বেশ জনপ্রিয়। সজনা পাতার ভর্তা, বড়া এতে বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।

সজনে পাতা হৃদরোগীদের জন্য ওষুধের মত কাজ করে। রক্তচাপ কমায়, কোলেস্টেরল কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন সকালে একটা চামচ শুকনা গুড়া পানিতে মিশিয়ে খেলে পেটের প্রদাহ ও গ্যাস্টিক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সজনে পাতা কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে কর্মঠ রাখে। 

সজনে পাতার পাউডার তোদের সাথে মিশেও খাওয়া যায়। আবার এক গ্লাস নরমাল পানির সাথে ১-২ চামচ সজনে পাতার পাউডার মিক্স করে খাওয়া যায়। চা এবং কফির সাথে এই পাউডার মিশিয়ে খাওয়া যায়। সজনে পাতার জুস বানালেও অনেক সুস্বাদু হয় এবং অনেক পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে ও ত্বকের যত্নে সজনে পাতা

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে সজনে পাতা মেটাবলিক রেট বাড়ায়, যা ওজন কমাতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। মেটাবলিক রেট বেশি হলে শরীরে ক্যালোরি খরচে সক্ষম হয়। এছাড়াও সজনে পাতায় প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা দীর্ঘক্ষণ পেটকে পূর্ণ রাখে, যা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে আপনাকে বিরত রাখবে।

ত্বকের যত্নে সজনে পাতাঃ
  • বয়সের ছাপ এবং পিগমেন্টেশন দূর করতে সাহায্য করে।
  • ব্রণ বা পিম্পল প্রতিরোধ করতে দারুণভাবে কার্যকর।
  • এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • সজনে পাতার ব্যবহারে ত্বকের প্রয়োজনে পুরো টিম তৈরি করে।
  • ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে এবং শুষ্কতা দূর করে।
এক টেবিল চামচ মরিঙ্গা পাউডারের সাথে এক টেবিল চামচ দুধ এবং গোলাপ জল মিশিয়ে আধা টেবিল চামচ লেবুর রস দিন। এবার ঘন ও মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। ১০ মিনিট আপনার মুখে ব্যবহার করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এবার মুখে মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। আপনার মুখের ত্বকের অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।

শেষ কথাঃ সজনে পাতার উপকারিতা অনেক। এটি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দূর করা থেকে, ত্বকের উজ্জ্বলতা, দাগ দূর করার পাশাপাশি চুলের বিভিন্ন যত্নে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সজনে পাতা যে শুধু শরীরের উপকার করে থাকেন তো নয়। এতে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ তোকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। এজন্য শয়নে পতাকে সুপারফুট হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। 

বিজ্ঞানীরা এই পাতাকে অলৌকিক পাতার নামকরণ করেছেন। তাই আসুন আমরা সবাই সঠিক নিয়ম মেনে প্রতিনিয়ত এই পাতার ব্যবহার করি এবং খায়। তাহলে আমরা কম খরচে অনেক সমস্যা থাকে তো থাকতে পারি। আপনাদের স্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছে। আল্লাহ হাফেজ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪