২০২৪ সালে রমজানের রোজা ও ঈদুল ফেতরের সম্ভাব্য তারিখ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আশা করি ভাল আছেন। প্রিয় পাঠক আপনি কি ২০২৪ সালের রমজান মাসের রোজা কত তারিখ থেকে শুরু হবে জানতে চান। তাহলে একটু সময় নিয়ে ধৈর্য সহকারে নিচের পোস্টটি পড়ুন এবং জেনে নিন ২০২৪ সালে রমজানের রোজা ও ঈদুল ফেতরের সম্ভাব্য তারিখ।
এখানে আরো জানতে পারবেন এই সিয়াম সাধনার মাসে আর কোন কোন ইবাদত গুলির মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। রমজান কখন হবে কিভাবে নির্ধারণ করা হয়। লাইলাতুল কদরের তালাশ কোন কোন রাতে করতে হয় এবং আমল গুলো কি কি ? এই সমস্ত তথ্য জানতে নিচের পোস্টটি পড়ুন।
ভূমিকা
দীর্ঘ একটি বছর পর সিয়াম সাধনার এই রমজান মাস ফিরে আসে আমাদের মাঝে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম এই মহিমান্বিত মাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। অন্য মাসের চেয়ে এ মাসের যে কোন ভালো কাজের আমলের সওয়াব আল্লাহ নিজ হাতে দিবেন রোজাদার ব্যক্তিদের। সামনে ২০২৪ সালে রমজানের রোজা শুরু হতে আর বাকি কিছুদিন।
গত রমজান শুরু হয়েছিল তেইশ মার্চ ২০২৩। ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছিল একুশে এপ্রিল। সেই হিসাবে বাংলাদেশ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে ১০ এপ্রিল। ২০২৪ সালের রমজানের রোজা এবং ঈদুল ফিতর এর সম্ভাব্য তারিখ জানানো হলেও, রমজানের রোজা এবং ঈদুল ফিতর কবে হবে এটি সম্পন্ন চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।
সূচিপত্রঃ
২০২৪ সালে রমজানের রোজা ও ঈদুল ফেতরের সম্ভাব্য তারিখ
রমজান কখন হবে কিভাবে নির্ধারণ করা হয়
প্রতি বছর রমজান ১১ দিন আগে হয় কেন
রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি?
রোজা রাখার উদ্দেশ্য ও উপকারিতা
রোজা সম্পর্কে হাদিস
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা
২০২৪ সালে রমজানের রোজা ও ঈদুল ফেতরের সম্ভাব্য তারিখ
রমজান মাসের রোজা শুরু হয়, রমজানের চাঁদ দেখার পরের দিন থেকে। অর্থাৎ রমজান মাস শুরু হওয়াটা রমজানের চাঁদ ওঠার নির্ভর করে। রমজান মাস ২৯ কিংবা ৩০ দিনের হয়ে থাকে। তাদের উপর নির্ভর করে। যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
এ মাসের রোজা অত্যান্ত ফজিলত পূর্ণ। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন, জ্ঞান সম্পন্ন মুসলিম নর নারীর উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। অসুস্থ, গর্ভবতী, ডায়াবেটিক রোগী এবং ঋতুবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এইরকম শিথিল করা হয়েছে। সাহাবীদের জীবনী পড়লে জানা যায় তারা রমজান উপলক্ষে বাড়তি এবাদতের পরিকল্পনা করতেন।
আমাদের সবার উচিত রমজানের রোজা আসার আগে প্রস্তুতি নেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা গুলো রাখে, তার আগের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের পবিত্র মাহে রমজানের রোজা ও ঈদুল ফিতর উদযাপনের সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক সংস্থা আমিরাতস অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি।
আমিরাতস অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির গণনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের রমজানের রোজা শুরু হবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে, অর্থাৎ ১২ই মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে চলেছে।
রমজান কখন হবে কিভাবে নির্ধারণ করা হয়
রমজান মাস হল হিজরী বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস। যে মাসের রোজা কে ফরজ করে দেওয়া হয়েছে আমাদের উপর। সারা বিশ্বের মুসলিম নর-নারী মাসব্যাপী এ রোজা পালনের জন্য অপেক্ষা করে। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজানের রোজা হচ্ছে তৃতীয়তম। রমজানের রোজা রাখা চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে।
কবে রোজা শেষ হবে এটাও নির্ভর করে চাঁদ দেখার উপর। তাই কোন বছর রমজানের রোজা ২৯ টি হয় আবার কোন বছর সৃষ্টি হয়। এটা সম্পূর্ণ ছাদের উপর নির্ভর করে। রমজানের রোজা একটি ফজিলত পূণ্য এবাদত। এই মাসে জাহান্নামের দরজা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয়।
এ মাসে বেশি সংখ্যক জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হয়। জাহান্নামের এবং কবরের আজাব বন্ধ রাখা হয়। আরও যে সমস্ত ইবাদত আছে যেমন- (নামাজ, যাকাত, হজ্জ) দেখানো যায় কিন্তু রোজা এমন একটি এবাদত যেটা মানুষকে দেখানো যায় না। শুধুমাত্র আল্লাহ কে ভয় করে তাকে রাজি খুশি করার জন্য এই এবাদত করা হয়।
এজন্য আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা বলেছেন, রোজা আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজে দেব। আল্লাহ রব্বুল আলামীন অন্য যাকে বলেছেন, রমজান মাসের রোজা তোমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে যেমনটি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপরে। যেন তোমরা পরহেজগার ওমর তাকে হতে পারো।
রমজান মাসের রোজা আসলে বাড়িতে মেয়েদের কাজ অনেক বেড়ে যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি ইফতারি তৈরিতে ব্যস্ত থাকতে হয় গৃহিণীদের। আবারো সবার জন্য অনেক রাতে উঠে রান্না করতে হয় সেহরি খাওয়ার জন্য।
প্রতি বছর রমজান ১১ দিন আগে হয় কেন ?
চন্দ্র পঞ্জিকা বা চন্দ্র বছর ( লুনার ক্যালেন্ডার) থেকে সূর্য পঞ্জিকা বা সৌর বছর (সোলার ক্যালেন্ডার) এর চেয়ে প্রায় ১১ দিন বেশি থাকে। অর্থাৎ সৌর বছর থেকে চন্দ্র বছর ১১ দিন কম হয়। সেই কারণে প্রতিবছর রমজানের রোজা এবং ঈদুল ফিতর ১১ দিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়। সেই মোতাবেক প্রতিবছরে ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ ১১ দিন করে এগিয়ে আসে।
সৌর বছরের দিন রাত বারোটার পর থেকে শুরু হয় কিন্তু চন্দ্র বছরের দিন গণনা শুরু হয় মাগরিবের পর থেকে। যেহেতু চাঁদ দেখার উপরে আরবি মাসের শুরু এবং শেষ নির্ভর করে আর চাঁদ সব সময় পশ্চিম আকাশে ওঠে মাগরিবের পরে। এ কারণে মাগরিবের পর থেকে আরবি মাসের দিন গণনা শুরু হয়।
যেহেতু চাঁদ ওঠা এবং শেষ হওয়ার পর নির্ভর করে আরবি মাসের দিন তাইতো কোন মাস ২৯ বা ৩০ দিনে হয়ে থাকে। সে হিসেবে আরবি মার ১২ মাসে দিনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫৪ দিন পক্ষান্তরে সৌর বছরের দিনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬৫ দিন। যেহেতু সৌর বছরের থেকে চন্দ্র বছর ১১ দিন কম এই কারণেই প্রতিবছরে চাঁদ নির্ভর আমল এবং অনুষ্ঠানাদি ১১ দিন আগে শুরু হয়।
রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত কি কি ?
দ্বিতীয় হিজরীতে মুসলমানদের উপর আল্লাহ সুবহানাতায়ালা রমজানের রোজা কে ফরজ করেছেন। রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত যাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে তাদের উপর রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ সবার আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন তোমাদের মধ্যে যারা, রমজান মাস পাবে তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে। (সূরা বাকার: আয়াত ১৮৫)
রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়া হওয়ার জন্য কিছু শর্ত বা বিধান রয়েছে। যেমন-
মুসলিম হওয়া (অমুসলিমের ওপর রোজা পালনেরকোন বিধান নেই)
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ( অর্থাৎ ছোট ছেলে মেয়ের উপর রোজা ফরজ নয়)
জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া (অর্থাৎ পাগল বা মস্তিষ্ক বিকৃত কোন ব্যক্তির উপর রোজা ফরজ নয়)
মেয়েদের (হায়েজ) ঋতুকাল ও নেফাস (অর্থাৎ সন্তান জন্ম দান পরবর্তী সময়ে পবিত্র থাকা)
রোজা পালনে সামর্থ্যবান হওয়া (অর্থাৎ শারীরিক এবং আর্থিকভাবে সুস্থ থাকা)
মুসাফির না হওয়া
গর্ভবতী ও দ্রুত দানকারী নারীর অপর রোজা রাখা আবশ্যক নয়।
চির রোগী বা অক্ষম ব্যক্তির উপর রোজা রাখা আবশ্যক নয়।
রোজা রাখার উদ্দেশ্য ও উপকারিতা
রোজা রাখার উদ্দেশ্যঃ আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমরা রোজা পালন করে থাকি। সকল অন্যায় পাপাচার, মিথ্যা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, কামনা বাসনা হতে নিজেকে বিরত রাখার জন্য সিয়াম পালন করে থাকি। এ ব্যাপারে মহান রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন-
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৬৩)।
রোজা রাখার উপকারিতাঃ রোজা রাখার অনেক উপকারিতা রয়েছে। রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপের কাছ থেকে, মিথ্যা বলা থেকে, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা পরিহার করে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি করে সহায়তা করে। অতীত জীবনের গুনাহ মাফ সহ জাহান্নাম থেকে মুক্তির পাওয়া যায়।
গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় রোজা রাখার মাধ্যমে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়। যেমন-
হজম শক্তিজনিত সমস্যা দূর করে।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ স্থুলতা প্রতিরোধ করে।ৎ
স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে গিয়ে ব্রেনের কর্ম ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে।
নেশাদ্রব্য থাকে মুক্তি থাকা যায়।
শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রোজা রাখার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে করতে লাভ করা যায়।
রোজা সম্পর্কে হাদিস
পবিত্র মাহে রমজানের রোজার বিধান সম্পর্কে কোরআন এবং হাদীসে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো- হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন,
আদম সন্তানদের (মানুষের) সকল আমলে তাদের জন্য, রোজা ব্যতীত যা আমার জন্য এবং এটির প্রতিদান আমি দেব। রমজানের রোজা জাহান্নামের আগুন এবং পাপ থেকে ঢাল হয়ে রক্ষা করে।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা (রমজানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোজা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোজা বন্ধ করবে।
আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ৩০ দিন রোজা রাখবে। সহীহ বুখারী, হাদিস-১৯০৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস- ১০৮০ (১৭-১৮) এছাড়াও কোন কোন মুসলিম যদি শারয়ী িক কোন অজর ছাড়া যদি রমজান মাসের একটি রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে তাহলে সে পাবে জঘন্য অপরাধে বলে গণ্য হবে।
হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি- আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তির আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এলো। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের উপর উঠুন। আমি বললাম আমি তো উপরে উঠতে পারবো না।
তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দেব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌছালাম, হঠাৎ ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এসব কিসের আওয়াজ, তারা বললো, এটা জাহান্নামিদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল।
হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা ? তারা বলল যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোজা ভেঙে ফেলে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোজা রাখলেও ওই রোজার হক আদায় হবে না। সহীহ বুখারী ৪/১৬০।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- রমজানের রোজা উপলক্ষে মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকির সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০ গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু রোজা আলাদা।
আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং এর বিনিময় আমি নিজে প্রদান করব। সব ইবাদতে আল্লাহর জন্য তবে অন্যান্য এবাদত মানুষ দেখতে পাই কিন্তু একমাত্র রোজা এমন একটি এবাদত যেটি কেউ দেখতে পায় না শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়ে প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ এবং পানাহার পরিত্যাগ করে রোজা পালন করা হয়।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা
লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত এবং বরকতময় একটি রাত্রি। এই একটি রাত এর এবাদত হাজার মাসের এবাদতের চেয়ে উত্তম। এই রাতে আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজীদ নাযিল করেছেন, অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করেছেন। সেখান থেকে জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপর অবতীর্ণ করতেন আল্লাহর হুকুমে।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কুরআনুল কারীম লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি ? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
মিশকাত শরীফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) ফাতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে এবাদত কর। যেহেতু কোরআন নাজিল হওয়ার কারণে এ রাতের এত মর্যাদা তাই এ রাতে কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত অনেক বেশি।
এ রাতে বেশি বেশি করে আল্লাহর জিকির করতে হয়, তারাবি না পড়লে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়। অর্থাৎ সারারাত জেগে বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই হবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে এ রাত্রিটা কোন রাত্রে, অর্থাৎ কত রমজানের রাত্রিতে আমরা লাইলাতুল কদর খুঁজবো?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। সেই মোতাবেক ২১, ২৩, -২৫, ২৭ ও ২৯ রমজান এর রাত গুলি জাগরণ করে এবাদত করতে হবে। শেষ দশকের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে এতেকাফ করা।এটিও একটি মর্যাদা এবং ফজিলতপূর্ণ আমল।
রাসুলুল্লাহ সাঃ রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতেকাফ করতেন। ইতেকাফ শেষ হয় ঈদের চাঁদ উঠার পর। এরপর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার আগে আরেকটি বিধান পালন করে যেতে হয়, সেটি হচ্ছে ফিতরা।
এই ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে রোজার মধ্যে যে ছোট ছোট ভুল বা অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে তারই কাফফারা স্বরুপ এই ফিতরা আদায়ের বিধান রয়েছে। নারী-পুরুষ ছোট-বড় সবার জন্য এই ফিতরা আদায় বাধ্যতামূলক।
শেষ কথাঃ রমজান মাস প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে সংবাদ নিয়ে। এ রমজান মাসের রোজাকে আমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে। আরবি বারোটি মাসের মধ্যে সবচাইতে বরকতম এবং ফজিলতপূর্ণ মাস হচ্ছে রমজান মাস। বেশি সওয়াব লাভের আশায় প্রতিবছরই লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান রমজানের প্রতীক্ষায় থাকেন।
কোন মাসের কত তারিখ থেকে শুরু হবে, খোঁজ করতে থাকেন, শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্যে অনেক সওয়াব হাসিল এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা সবাই এই রমজানের গুরুত্ব অনুধাবন করে, রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করব।
বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য এবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করব। এ মাসে প্রত্যেকটা আমলের সওয়ার ১০ গুন থেকে ৭০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। তাই আমরা এখন থেকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে রমজান মাসের রোজা এবং এর এবাদত গুলি পালনের প্রস্তুতি নিতে থাকি। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url