নামাজ পড়ার সঠিক ও সহিহ, শুদ্ধ নিয়ম সম্পর্কে জানুন



নামাজ বেহেস্তের চাবি। প্রত্যেকটা মুসলিম নর-নারীর উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। কি হলো। অনেক মুসলিম ভাই বোন আছে যাদের নামাজ পড়ে কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে হয় না বা ভুল হয়। তাই নামাজ পড়ার সঠিক ও সহিহ,শুদ্ধ নিয়ম জানুন এবং সে অনুযায়ী নামাজ পড়ুন।
নামাজ পড়ার সঠিক ও সহিহ, শুদ্ধ নিয়ম জানুন
নামাজ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। আর ভুল নামাজ আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হবে না। তাই সঠিক পদ্ধতিতে নামাজ আদায় সম্পর্কে জানুন এবং সেই ভাবে নামাজ আদায় করুন। রাসুল সালাম বলেছেন তোমরা সালাত আদায় করবে সেভাবে যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখছো।

ভূমিক
ইসলামের মূল স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। তার মধ্যে নামাজ অন্যতম। নামাজ হচ্ছে মুমিনদের জন্য মিরাজ স্বরূপ। দিনে রাতে মুসলিমদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যখন মেরাজে যান, মিরাজ থেকে আসার সময় এই পাঁচ ওয়াক্ত আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য উপহারস্বরূপ দিয়েছেন।

নামাজ পড়ার সঠিক ও সহিহ, শুদ্ধ নিয়ম জানুন
নবীজির নামাজের নিয়ম
নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম ও সুরা
নামাজ কেন আদায় করতে হয়
বুখারী শরীফে নামাজের নিয়ম

নামাজ পড়ার সঠিক ও সহিহ, শুদ্ধ নিয়ম জানুন

আমরা সবাই জানি আমাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। যে কোন নামাজ পড়ার আগে আমাদেরকে সুন্দর করে ওযু করে নিতে হয় এবং কেবলা মুখী হয়ে কোন নামাজ পড়ছি সে নামাজের নিয়ত করতে হয়। আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে নামাজ শুরু করতে হয়। 

প্রথমে সানা পাঠ করতে হবে এরপর সূরা ফাতিহা এবং অন্য যে কোন একটি সূরা বা অংশবিশেষ পড়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হয়। এমন ভাবে করতে হবে যেন মাথা এবং পিঠের দাড়ি সোজা হয়ে থাকে এবং সামনের অংশের ভার দুই হাটুতে হাত দিয়ে রাখতে হবে। 

রুকুতে থাকা অবস্থায় রোকন নির্দিষ্ট তাসবীহ পাঠ করতে হবে কমপক্ষে তিন বার উপরে যত বেশি পারা যায়। সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা বলে দুই কাঁদ পর্যন্ত হাত ওঠাতে হবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট দোয়াটি পাঠ করতে হবে, দোয়া পাঠ করা শেষ হলে তবে সেজদায় যেতে হবে। 

সেজদায় গিয়ে নির্দিষ্ট তাসবিহ পাঠ করতে হবে কমপক্ষে তিনবার উর্ধ্বে যত খুশি তাসবিহ পাঠ করতে পারেন। সেজদা থেকে উঠে বাসা অবস্থায় দুই সিজদার মাঝের দোয়াটি পাঠ করতে হবে। 

কোন সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না। মনে রাখবেন আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছি, আল্লাহর পায়ে সেজদা করছে, আল্লাহ আমাদের দেখছেন। নামাজের মধ্যে বিনয়ী মনোভাব থাকতে হবে।

নবীজির নামাজের নিয়ম

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যেভাবে নামাজ আদায় করেছেন ঠিক সেভাবে নামাজ আদায় করায় হচ্ছে নামাজ আদায়ের বিশুদ্ধ পদ্ধতি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন-
অর্থঃ তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দে দেখো, সেভাবে সালাত আদায় কর। তাই আমাদের সকলের উচিত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর মতো সালাত আদায় করা।

আল্লাহ তাআলা তার বাণীতে নির্দেশ দিয়েছেন- হে মমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুেই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত কর আর যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। 

আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা স্ত্রী সহবাস করো অতঃপর পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ হাত দ্বারা মাসেহ কর। 

আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যার সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো। পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল হয় না। 

রাসুল সাঃ বলেছেন তোমরা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর, দাঁড়িয়ে না পারলে বসে সালাত আদায় কর যদি বসেও সালাত আদায় করতে না পারো তবে শুয়ে-সালাত আদায় কর তবুও সালাত বাদ দেওয়া যাবে না। রাসুল সাঃ যেভাবে সালাত আদায় করতেন ঠিক সেভাবে সৌদি আরবে সালাত আদায় করা হয়। 

সৌদি আরবের নামাজের জামায়াত টেলিভিশনে লাইভ দেখানো হয়, চাইলে আপনারা সেটিও দেখে নিতে পারেন।

নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ

যেকোনো নামাজ পড়ার আগে অবশ্যই অজু করে নিতে হবে। জায়নামাজে দাঁড়িয়ে প্রথমে নিয়ত করে নিতে হবে এরপর ফরজ নামাজ হলে একামত দিতে হবে। 

আল্লাহ হু আকবার বলে তাকবীরে তাহরমা বেঁধে প্রথমে সানা পাঠ করতে হবে, সানা পড়ার পর আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে, সুরা ফাতেহা শেষে অন্য একটি সূরা অথবা অংশবিশেষ পড়তে হবে। 

তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে, রুকুতে গিয়ে- সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম কমপক্ষে তিনবার এটা পড়তে হবে, সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা বলে সোজা হয়ে দণ্ডায়মান হতে হবে এরপর রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান তৈয়েবান মুবারাকান ফী এই দোয়াটি পড়তে হবে, দোয়াটি পড়া শেষ হলে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে, 

সেজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আলা এই তাসবিহ তিনবার পাঠ করতে হবে কমপক্ষে, এবার আল্লাহু আকবার বলে উঠে বসতে হবে এবং আল্লাহুম্মা মাগফিরলি ওয়ারহামনি ওাদিনি ওয়াফিনি ওয়ারজুকনি দোয়াটি পাঠ করতে হবে, আল্লাহু আকবার বলে আবার সিজদায় যেতে হবে 

এবং প্রথম সিজদার ন্যায় কমপক্ষে তিনবার সুবহানা রাব্বিয়াল আলা এই তাসবীহটি পড়তে হবে এবার আল্লাহু আকবার বলে উঠে দাঁড়াতে হবে এভাবে এক রাকাত নামাজ শেষ হলো। দুই রাকাত নামাজ শেষ হলে বৈঠকে বসতে হয়। বৈঠকে বসে তাশাহুদ পাঠ করতে হয়, আর শেষ বৈঠক হলে তাশাহুদের পর দুরুদ শরীফ এরপর মাগুরা পড়ে অথবা আরো দোয়া পড়ে সালাম ফিরতে হবে।

নামাজ কেন আদায় করতে হয়

প্রথমত নামাজ এ কারণে পড়বো এটি আল্লাহর হুকুম। প্রতিদিন একজন মুসলিমকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্ত হচ্ছে ফজর ‘‘সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এ নামাজের সময়। এরপর যোহর বেলা দ্বিপ্রহর হতে আসল ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত । 

তৃতীয় ওয়াক্ত হচ্ছে আসর যোহরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর থেকে সূর্য অস্তের আগ পর্যন্ত আসল নামা্জের সময়কাল। এরপর হচ্ছে মাগরিব সূর্যাস্তের পর পরে এ নামাজ আদায় করতে হয়। 

এরপর হচ্ছে এশার নামাজ এশার নামাজটা একটু দেরি করে পড়া ভালো হবে রাত এগারো বারোটার আগেই পড়া উচিত। এর বাইরে অনেক নামাজ আছে সুন্নত নামাজ/তাহাজ্জুদের নামাজ। নামাজ হচ্ছে মোমিনদের জন্য মিরাজ স্বরূপ। 

নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে তারা অন্যদের চাইতে বেশি সুস্থ থাকে। কারণ নামাজের পূর্বে সুন্দর করে ওযু করতে হয় এই ওজুর মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করেন। আবার নামাজের মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়ামটাও হয়ে যায়। নামাজ অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে।

বুখারী শরীফে নামাজের নিয়ম

সালাত বা নামাজ সম্পর্কে মুসলমানদের ভিতর অনেক মত-বিরোধ রয়েছে। বিভিন্ন মাযহাবের আলেম ওলামারা সালাত অথবা নামাযের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি বলে থাকেন। এতে করে সাধারন মুসলমানরা দ্বিধায় পড়ে যায়। অথচ আমরা যদি বিশদ্ধতম হাদিস গ্রন্থ বুখারী শরীফ থেকে বুখারী শরীফ সালাত অধ্যায় টি পড়ি তাহলে আর কোন দ্বীধা থাকবেনা। 

কেননা হাদিস শাস্রের বিখ্যাত গ্রন্থ হচ্ছে বুখারি শরীফ। ইমাম ইসমাইল হোসেন বুখারি করতিক সংকলিত এই সহীহ বুখারী শরীফ কিতাবটি। তবে শুধু বুখারী শরীফ মানলেই হবে না তার সাথে অন্য হাদিসগুলোও মানতে হবে। নামাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোন পার্থক্য নেই। 

পার্থক্য শুধু এটা যে সর্ব অবস্থায় পর্দা করবে, তারা পর্দার মধ্যে নামাজ পড়বে এবং পুরুষরা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে, জামাতে নামাজ পড়বে, পাক-পবিত্র সব জায়গায় নামাজ পড়তে পারবে। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে মসজিদে যাওয়া, এবং জামাতে নামাজ পড়া জরুরী নয়। 

নামাজ পড়ার সময় একটা কথা মনে রাখবেন আপনি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে সেজদা করছেন, ধীর স্থির ভাবে বিনয়ের সাথে নামাজ আদায় করতে হবে, এটাই রাসূলের কথা হাদিসের বানী।

উপসংহারঃ শেষে বলতে চাই নামাজ এমন একটি এবাদত যেটি অন্য কাউকে দিয়ে পড়ানো যায় না, অসুস্থ হলে রমজান মাসের ফরজ রোজা ও গরিব মানুষকে হাদিয়া দিয়ে করানো যায়, কিন্তু নামাজ প্রত্যেকটি মুসলিম নর নারীকে নিজেই আদায় করতে হবে। কেয়ামতের দিন বিচারের সময় সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। 

নামাজের হিসাবে যদি পাশ করা যায় তাহলে অন্য হিসাবগুলো সহজ হয়ে যাবে। আসুন আমরা যারা মুসলিম বলে পরিচয় দেই অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নামাজ আদায় সহ বিভিন্ন ফরজ বিধানগুলো মেনে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন। 

সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। লেখার মধ্যে কোন ভুল থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন পরামর্শ দিবেন। ভালো লাগলে অন্যকে উৎসাহিত করুন এবং শেয়ার করে দিন। আল্লাহ হাফেজ।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪