দেশি মুরগি পালনে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায় জেনে নিন
আপনি কি বেকার ? চাকরি পাচ্ছেন না ? চাকরির পেছনে না ছুটে দেশি মুরগি পালনে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায় জেনে নিন। অনেকেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আজ স্বাবলম্বি হয়েছেন। আপনিও হতে পারেন তাদের একজন।
গ্রামে প্রায় সবার বাড়িতে দেশি মুরগি পালন করা হয়। কিন্তু পদ্ধতি না জানার কারণে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হওয়ার কারণে বাড়ির সমস্ত মুরগি মারা যায়। মুরগি পালন প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনি স্বাবলম্বি হতে পারবেন।
ভূমিকা
দেশি মুরগি পালনে এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেক বেকার যুবক। ছাত্র বেকার যুবক গৃহিণী সবাই এখন দেশি মুরগি পালন করে সফল হচ্ছেন। আপনারা সকলে জানেন যে দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু বেশি।
দেশি মুরগির মাংস ও ডিম অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। মুরগি পালনের মাধ্যমে নিজের পরিবারের এবং দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আপনারাও সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে কম খরচে অন্য কাজের পাশাপাশি মুরগি পালন শুরু করতে পারেন।
দেশি মুরগি পালনে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায় জেনে নিন
মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি
দেশী মুরগী পালন ও চিকিৎসা
দেশি মুরগি পালনের কৌশল
দেশি মুরগীর খামার
ছাদে দেশি মুরগি পালন
দেশি মুরগি পালনে স্বাবলম্বি হওয়ার উপায় জেনে নিন
দেশি মুরগির ডিম এবং মাংস অন্যান্য মুরগির চাইতে অনেক বেশি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। বর্তমান বাজারে সোনালী ও বয়লার মুরগি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও দেশি মুরগি এবং ডিম বাজারে অনেক কম ও এর চাহিদা অনেক বেশি। এই মুরগির দাম ও ডিমের দাম বেশি হওয়াই লাভও অনেক বেশি হয়।
দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় সোনালী ব্রয়লার এবং লেয়ার মুরগির বড় বড় খামার থাকলেও দেশি মুরগির খামার তেমন চোখে পড়ে না। ঠিক সেই কারণেই তৈরি হয়েছে বড় সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করে আপনিও হতে পারেন স্বাবলম্বী।
মুরগি পালন প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি পরিবারে এই দেশি মুরগি পালন করা হয়। বিদেশি মুরগির তুলনায় এদের উৎপাদন কম কিন্তু এদের চাহিদা অনেক বেশি। এরা খাবার কম খায় এবং জায়গায় অনেক কম লাগে এদের উৎপাদন খরচও কম। মুরগি চাষের উন্নত ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মুরগি পালন করলে দেশি মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশি মুরগি উৎপাদনের উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। তাদের থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ গ্রহণ করে উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাড়িতে এবং খামারে মুরগি পালনের মাধ্যমে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে পারেন।
দেশি মুরগি আবদ্ধ ও ছেড়ে পালন করা যায় তবে ছেড়ে পালন করলে লাভবান হওয়া যায় বেশি কারন ছেড়ে পালন করলে নিজের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করে থাকে।
আপনি যদি দেশি মুরগি পালন করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে ভালো মানের মোরগ ও মুরগি নির্বাচন করতে হবে তাই দেখে শুনে সুস্থ-সবল মুরগী সংগ্রহ করতে হবে। দেশি মুরগি পালনের জন্য ঘর হতে হবে খোলামেলা।
দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি
বাচ্চা উঠানোর পূর্বে ব্রডার ঘরের সমস্ত জিনিস ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ব্রুডার ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঘরের চারপাশ ঘেরে দিতে হবে। ঘরের তাপমাত্রতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। বাচ্চা ঘরে নিয়ে আসার আগেই পানির পাত্র এবং খাবার যথাযথ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে।
প্রথমে দুই ঘন্টা শুধু মাত্র জীবাণুন মুক্ত সাদা পানি দিতে হবে। দুর্বল বাচ্চা পৃথক করে সেগুলোকে গ্লুকোজের পানি ফোটায় ফোটায় খাওয়াতে হবে। বাচ্চাগুলো ঘরের মধ্যে ছাড়ার ১০ মিনিট পর প্রথমবারের মতো পেপারের ওপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এরপর থেকে অবশ্যই ট্রেতে খাবার দিতে হবে।
বাচ্চার অবস্থা তিন ঘন্টা পর পর্যবেক্ষণ করতে হবে তাপমাত্রা বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং কোন সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করতে হবে। কোন বাচ্চা মারা গেলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
দেশি মুরগিকে প্রথম এক মাস ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে এবং বাইরে ছাড়া যাবে না। সকল প্রকার শিকার এই প্রাণী (কাক, শকুন, বিড়াল ও বেজি) থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
দেশী মুরগী পালন ও চিকিৎসা
যদি আপনি দেশি মুরগির খামার করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যদি না জানেন তাহলে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে পারবেন না। আদিকাল থেকে গ্রামের মেয়েরা বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে মুরগি পালন করে আসছে।
মুরগির বিষ্ঠা উন্নত মানের একটি জৈব সার যা ব্যবহার করে কৃষক ফসল উৎপাদনে লাভবান হচ্ছেন। ছেড়ে মুরগি পালন করলে মুরগির পরিচর্যার জন্য সময় ও লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। আমাদের দেশে দুই পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করা হয়। , একটা সনাতন পদ্ধতি একটা আধুনিক পদ্ধতি।
আধুনিক পদ্ধতি বলতে আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন করাকে বোঝায়। আর এই পদ্ধতিতে খুব কম মানুষ মুরগি পালন করে থাকে। আবদ্ধ অবস্থায় মুরগি পালন করলে খরচ একটু বেশি হয়। দেশি মুরগির এক বছরের ত্রিশ থেকে ৪০টি ডিম দিয়ে থাকে।
গ্রামে যারা সনাতন পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে থাকেন মুরগির অসুখের ক্ষেত্রে তারা কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। যার ফলে অসুখ-বিসুখ হলে সমস্ত মুরগি একা একা মারা যায়। কোন অসুখে মারা যাচ্ছে তাও তারা জানে না। মুরগি পালনের ক্ষেত্রে আগে থেকেই প্রতিষেধক ব্যবহার করলে নিচের এই অসুখগুলি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
রানীক্ষেত রোগ
পুলোরাম রোগ
বসন্ত রোগ
গামবোরা রোগ
আমাশয় রোগ
হিট স্টোক রোগ
ফাউল কলেরা রোগ ইত্যাদি।
দেশি মুরগি পালনের কৌশল
দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি ও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যায়। তবে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করলে দেশি মুরগির উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব। দেশি মুরগি থেকে লাভজনক উৎপাদন পেতে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো -
এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশি মুরগির ডিমের উৎপাদন বাড়ানো এবং বিক্রি করার চেয়ে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা বিক্রি করা বেশি লাভজনক। আপনি প্রথমে ১০ থেকে ১৫ টি মুরগি নিয়ে লালন পালন শুরু করতে পারেন। প্রথমে মুরগিকে কৃমিনাশক ঔষধ এবং এরপরে রানীক্ষেতের টিকা দেওয়া উচিত।
যদি কোন মুরগির উকুন থাকে তবে তা মেরে ফেলা উচিত। তাছাড়া প্রতিটি মুরগিকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম হারের সুষম খাদ্য দেওয়া উচিত। ৮ থেকে ১০ টি মুরগির জন্য একটি বড় মোরগ অবশ্যই সাথে দিতে হবে, তা না হলে বাচ্চা ফুটানো যাবে না। ডিমপাড়া শেষ হলে বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
একটা মুরগির নিচে ১৩ থেকে ১৫ টি ডিম দেওয়া যায়। মুরগির সব সময় যতনে নিতে হবে। খাবার এবং পানির নিশ্চিত করতে হবে বিশেষ করে পানি একটা পাত্রে মুরগির সামনে রেখে দিতে হবে।।
দেশি মুরগীর খামার
বেকারত্ব দূরীকরণসহ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেশি মুরগি পালনকে বেছে নিয়েছেন অনেক যুবক। অল্প পুঁজি দিয়ে মুরগি পালন শুরু করা যায়। দেশি মুরগির খামার করতে হলে প্রথমে একটি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। আবার কেউ চাইলে ইন্টারনেট অথবা ইউটিউব দেখেও এর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
মুরগির খামার করতে হলে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে তার মধ্যে মুরগি নির্বাচন, মুরগির ঘর তৈরি, কোন সিজনে কোন অসুখ হতে পারে তার প্রতিশোধক আগে থেকে প্রয়োগ করা এবং খাবার ও যত্ন নেওয়া এ কয়েকটা জানলেই খামার করে সফল হতে পারবেন। বাংলাদেশের অনেক যুবক আছেন যারা দেশি মুরগির খামার করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন।
প্রয়োজনে যারা খামার করে সফল হয়েছে তাদের খামার পরিদর্শন করে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার খামার। তবে মনে রাখতে হবে এই খামারের পেছনে আপনার শ্রম এবং সময় ব্যয় করার উপর নির্ভর করবে আপনার সফলতা।
ছাদে দেশি মুরগি পালন
যাদের বাড়িতে অথবা বাড়ির আশপাশে মুরগি পালনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নাই তারা চাইলে বাড়ির ছাদে মুরগি পালন করতে পারেন। অল্প জায়গায় অল্প টাকা বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে অধিক আয় করা সম্ভব এই মুরগি পালনের মাধ্যমে।
বাসর বাড়ির ছাদে মুরগি পালন হচ্ছে একটি সহজ ও লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিণীরাও খামার পরিচালনা করতে পারেন। বাজারে দেশি মুরগি এবং এর ডিমের চাহিদা অনেক বেশি এবং বিদেশি মুরগির চাইতে এর দাম দ্বিগুণ।
উপসংহারঃ- বাংলাদেশের সব ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে ছুটেন। যারা চাকরি নামের সোনার হরিণটি পেয়ে যায় তারা মনে করে আমি সফল হয়েছি। আর যারা চাকরি পায় নাম, বেকার করে বেড়ায় তারা মনে করে এত দুর লেখাপড়া এই সামান্য কাজ করব কিন্তু তারা জানে না এই কাজে স্বাধীনতা আছে।
এখানে সফল হলে তিনি অন্য বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান করতে পারেন, তাদের চাকরি দিতে পারেন। আর হতাশা নয়, সামান্য কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করে দিন আপনার স্বপ্নের খামার।
সফল আপনি হবেন ইনশাল্লাহ। পরিশেষে আমার এই লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করুন। এবং পারলে শেয়ার করে দিন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url