যে আমল করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যায় জেনে নিন এক্ষুনি

জান্নাত অফুরন্ত সুখের স্থান। প্রতিটি মুমিনের শেষ ঠিকানা যেন জান্নাত হয় এই দোয় করে শুরু করছি আজকের লেখা। যে আমল করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যায় তা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো এবং জাহান্নাম থেকে বাচার কিছু আমলও এখানে উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ--
যে আমল করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যায়

আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ইবাদত বন্দেগী করার মাধ্যমে সন্তোষ্টি অর্জন করা যায়। আর আল্লাহর সন্তোষ্টি এবং অনুগ্রহ ছাড়া কোন ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবেনা। জান্নাত লাভের সহজ ও ছোট ছোট অনেক আমল রয়েছে। এখানে কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হলো-

ভূমিকা

সর্ব প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ)। তিনি শুধু প্রথম মানুষ ছিলেন তা কিন্তুু নয়, তিনি মানব জাতির জন্য প্রথম নবী ছিলেন। সব নবী ও রাসুলগণ মানুষদের আল্লাহর পথে চলার জন্য, এক আল্লহর আনুগত্য করার জন্য দাওয়াত দিয়ে গেছেন যে সকলে জান্নাতে যেতে পারে।

যে আমল করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যায়

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে মেনে চলা

ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পড়া

মুখ ও গোপনাঙ্গের হেফাজত করা

কালেমা শাহাদাত পড়া

সাইয়েদুল ইসতেগফার পাঠ করা

নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া

মাতা-পিতার সেবা করা

যে আমল করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যায়

সালামের প্রচার-প্রসার ঘটানোঃ- রাসুল (সা.) বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি ইমান আনবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ কোনো মুসলমান পরস্পর একে অন্যকে ভালোবাসবে না, ততক্ষণ তারা পূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না। 

আমি কী তোমাদের সে কাজটি বাতলে দেব, যা করলে পরস্পর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রচার-প্রসার করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪)

এতিমদের লালন পালন করাঃ-  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, আমি ও এতিমের লালন পালনকারী জান্নাতে এক সঙ্গে এমন ভাবে থাকবো -এ কথা বলে তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয়কে একত্রিত করে ও পৃথক করে দেখালেন (বুখারি, হাদিসঃ৫৩০৪)

বেশি বেশি সদকা করা ঃ- রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা বেশি বেশি সদকা করো, কেননা সদকা পূণ্য অর্জণের অনেক বড় মাধ্যম।

ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পড়া

হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে-

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা থাকবে না।’ (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)

মুখ ও গোপনাঙ্গের হেফাজত করা

মুখ ও গোপনাঙ্গের হেফাজত করা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি উভয় ঠোঁটের মধ্যভাগ (জিহ্বা) ও দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জাস্থান) হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)

কালেমা শাহাদাত পড়া

হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে ওজু করার পর (কালেমা শাহাদাত) বলে-

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যে কোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)

সাইয়েদুল ইসতেগফার পাঠ করা

সে মারা যাবে; সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে তা পড়বে আর সে ভোর হওয়ার আগে মারা যাবে; সে জান্নাতি হবে।’ (বুখারি)

أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া

নামাজ আদায়ে যত্নবান হতে হবে। নামাজ হচ্ছে মুমিনের জন্য মেরাজ স্বরুপ। যখনই নামাজের সময় হবে তখনি নামাজ আদায় করতে হবে। দেরি করে নামাজ আদায় করা ঠিক নয়। কাজের বাহানা দিয়ে নামাজ দেরিতে পড়া যাবেনা। নামাজের পূর্ব শর্ত হচ্ছে শরীর পাক, বস্ত্র পাক এবং পাক হতে হবে। 

নামাজ পড়ার আগে সুন্দর করে উত্তমরুপে ওজু করে নিতে হবে তারপর কেবলামুখি হয়ে কোন নামাজ পড়ছি তার নিয়ত করে নামাজ শুরু করতে হবে। নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার স্থানে এবং কোন প্রকার নড়া-চড়া করা যাবেনা। মনে রাখতে হবে আমি আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে আছি। তাড়াহুড়া করে নামাজ আদায় করা যাবেনা। 

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ আদায় করতে দেখছো ঠিক সেই ভাবেই তোমরা নামাজ আদায় করবে। সিজদা ও রুকুতে তাসবীহ গুলো ধীরস্থির ভাবে পড়তে হবে। আল্লাহর কাছে সব চাইতে প্রিয় ইবাদত হচ্ছে নামাজ। নারী এবং পুরুষের নামাজের নিয়ম একই।

মাতা-পিতার সেবা করা

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এবং তার রাসুল (সাঃ) এর পরই পিতা-মাতার স্থান। আমাদের জন্মের আগে থেকে পিতা-মাতার অনুগ্রহ পেয়ে আসছি। রক্তের প্রথম সম্পর্ক হচ্ছেন তারা। তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ আমাদের এই পৃথিবীর আলোবাতাস উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। 

পিতা-মাতার আমাদের জন্য কত কষ্ট সহ্য করেছেন তা শুধু পিতা-মাতায় জানেন। নিজে না খেয়ে আমাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। আদর যত্ন করে, কোলে-পিঠে করে শেষ্ঠ ও আদর্শ মানুষ বানাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। এই জন্যই মাতা-পিতা আমাদের কাছ থেকে সব চাইতে ভালো ব্যবহার পাওয়ার হকদার। 

কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন; وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ‘ তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তারই ইবাদত করো এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করো। আল্লাহ তায়ালা নিজের ইবাদতের পাশাপাশি পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, ইবাদতে পরপরই তার উল্লেখ। 

 আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا তরজমা: ‘তাদের (পিতা-মাতা) কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়। তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটি বলো না এবং তাদেরকে ধমকও দিওনা। 

এবং তাদের সঙ্গে ভালো ভালো কথা বলো’। (সূরা বনি ইসরাঈল আয়াত নম্বর: ২৩) সহিহ বুখারীর একটি বর্ণনায় প্রমাণ পাওয়া যায়--
عَنْ عَبْدِ اللّه بن مَسْعُودٍ رضي اللّه عنه قال: " سَأَلْتُ رَسُولَ اللّه صَلَّى اللّه عَلَيْهِ وَسلَّمَ: أَي الْعَمَلِ أَحَبُّ إلى اللّه؟ قال: " الصَّلاةُ عَلَى وَقْتِهَا". قُلْتُ: ثُمَّ أيٌّ ؟ قال: " بِرُّ الْوالِدَيْنِ ". قُلْتُ: ثُمَّ أيٌّ ؟ قال: " الجِهَادُ في سَبِيلِ اللّه

অনুবাদঃ- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন- কোনো এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল, আল্লাহর কাছে সর্বাদিক প্রিয়বস্তু কোনটি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নামাজকে তার সময় (মুস্তাহাব ওয়াক্ত) মতো পড়া। 

সে আবার প্রশ্ন করল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। সে আবার প্রশ্ন করল তারপর কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ (বুখারি ও মুসলিম)।

উপসংহারঃ- পরিশেষে বলা যায় আল্লাহ আমাদের রব। আমরা যা করবো সব কিছুতেই যেন আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ) এর অনুমোদন থাকে। আল্লাহ আমাদের একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর বিধান মেনে চলবো সদা সত্য কথা বলবো জিকিরাজগারে জিহবা সতেজ রাখবো। 

আল্লাহর বিধান মেনে সবায় যেন জান্নাতের অধিবা উপরের আলোচনা যদি আপনাদের ভালোলাগে তবে অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করবেন এবং সেয়ার করেদিবেন। আপনারা ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪